ভেজাল/নকল ইঞ্জিন অয়েল চেনার উপায় জেনে নিন

 আজ আমরা আলোচনা করব নকল ইঞ্জিন অয়েল চেনার উপায় এবং ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড এ সম্পর্কে। আপনারা হয়তো এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান, তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

নকল ইঞ্জিন অয়েল চেনার উপায় জেনে নিন
এই আর্টিকেলে আরো আলোচনা করছি ইঞ্জিন অয়েল এর কাজ কি ও ইঞ্জিন অয়েল কত প্রকার হায়। এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক অবিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া অনুরোধ রইল

ভূমিকা


ইঞ্জিন ওয়েল মূলত এক ধরনের তরল লুব্রিকেন্ট, যা ইঞ্জিনের ভেতরের বিভিন্ন ছোট ছোট পার্টসকে চলতে সহায়তা করে। আমরা যখন গাড়ি চালায় তখন ইঞ্জিন চলে এই ইঞ্জিন চলার ফলে ইঞ্জিনের ভেতর যে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থাকে তার মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় ঘর্ষণ হয়। এই ঘর্ষণের ফলে ইঞ্জিনের সাপোর্টগুলো ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে ইঞ্জিনের পিচ্ছিলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ক্ষয় রোধে করে।

ইঞ্জিন অয়েল কমে যাওয়ার কারণ


মানুষের শরীরের প্রধান অঙ্গ বলতে হার্ট বা হৃদয়। তেমনি যানবাহনের ক্ষেত্রে তার প্রধান যন্ত্র হলো ইঞ্জিন। আর ইঞ্জিন পরিচালনা করে ইঞ্জিনকে সুস্থ রাখে ইঞ্জিন অয়েল। ইঞ্জিন থেকে তাপ ও চাপ উৎপাদনের মাধ্যমে উৎপাদিত শক্তি দ্বারা গাড়ি গতিপ্রাপ্ত হয়। আর ইঞ্জিনের তাপ ও ঘর্ষণজনিত কারণে ইঞ্জিন ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ইঞ্জিন অয়েল তাপ ও ঘর্ষণকে কমিয়ে আনার মাধ্যমে মসৃণ গতি প্রদান করে। ফলে ইঞ্জিন দীর্ঘস্থায়ী হয়।

ইঞ্জিন অয়েল এর কাজ কি


ইঞ্জিন অয়েল এর কাজ হলো ইঞ্জিনের ভিতরে যে যন্ত্রপাতি থাকে তার পিচ্ছিলতা নিশ্চিত করা, ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখে ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তাপ কম করতে সাহায্য করে। ইঞ্জিনের ঘর্ষণজনিত ক্ষয় রোধ করে,আয়ু ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া ইঞ্জিনের চেম্বারের ভেতরে ময়লা জমলে ইঞ্জিন অয়েল সেটা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। 

কিছু উন্নত মানের ডিটারজেন্ট যুক্ত ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের ফলে ইঞ্জিন কে প্রায় নতুনের মত পরিষ্কার রাখে এবং ইঞ্জিন এর কার্বন নিঃসরণ কম করে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। নিম্নমানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে গাড়ির ইঞ্জিন স্থায়িত্ব কমে যাবে, জ্বালানি খরচ বেড়ে যাবে ও ইঞ্জিন থেকে কালো ধোয়া নিঃসরণ হবে। নিম্নমানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে পেট্রোল ইঞ্জিন এ স্পার্ক প্লাগ এ কার্বন জমা হবে। 

ইঞ্জিন অয়েল কত প্রকার


ইঞ্জিন অয়েল দুই প্রকার মিনারেল এবং সিনথেটিক। আপনার বাইকের জন্য কোন ধরণের অয়েল উপযুক্ত তা অবশ্যই যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন। ল্যাবে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয় সিনথেটিক অয়েল যা মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল থেকে অনেক বেশি কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। খনিজ তৈল থেকে যে ইঞ্জিন অয়েল তৈরি হয় তাকে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল বলে।

সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের অনুগুলি সর্বদা আকার ও আয়তনের সমান হয়ে থাকে এবং ইঞ্জিনের সঙ্গে উচ্চ তাপ ও চাপেও অণুগুলোর আকারের তেমন কোন পরিবর্তন হয় না ফলে ইঞ্জিন দীর্ঘস্থায়ি ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হয়। এছাড়া বর্তমানে আরো এক ধরনের ইঞ্জিন অয়েল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যা পুরাতন ইঞ্জিন অয়েল রিসাইকেলিং করে তৈরি হয়। 

মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল যা সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল থেকে কয়েক গুণ দামে সাশ্রয় হয়ে থাকে। এছাড়া মিনারেল ৭০ শতাংশ ও সিনথেটিক ৩০ শতাংশের সমমিশ্রণের যে ইঞ্জিন অয়েল তৈরি করা হয় তাকে সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল বলে। এটি সিন্থেটিক ওয়েল থেকে অনেকটা সাশ্রয় মূল্য বাজারে পাওয়া যায়।

নকল ইঞ্জিন অয়েল চেনার উপায়


আপনি যখন আপনার যানবাহনের জন্য ইঞ্জিন অয়েল কিনবেন তখন ইঞ্জিন অয়েল অরজিনালিটি যাচাই করে নিয়ে কিনবেন। এখন বাজারে বিভিন্ন ভেজাল ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায় এই ভেজাল ইঞ্জিল অয়েল ব্যবহারে মাইলেজ কমে যায়। আপনি নকল তেল ব্যবহারে করেন তাহলে ইঞ্জিনিয়ার অতিরিক্ত ফুয়েল খরচ হবে। আমরা যদি ভেজাল তেল ইঞ্জিনে ব্যবহার করি তাহলে ইঞ্জিন থেকে বেশ শব্দ আসবে। নিচে দশটি নকল ইঞ্জিন অয়েল চেনার উপায় দেওয়া হলোঃ
  • ইঞ্জিন অয়েলের গন্ধ থেকে আসল ও নকলের পার্থক্য বুঝে নিন ।
  • নকল ইঞ্জিন ওয়েলের রং পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
  • ইঞ্জিনে অয়েলের গাদ বা ময়লা জমে যায়।
  • ইঞ্জিনে অয়েলের পরিমাণ কমে যাবে।
  • নকল ইঞ্জিল অয়েল ব্যবহারের ফলে গিয়ার শিফটিং হার্ড হয়ে যাবে।
  • ইঞ্জিন পারফরম্যান্স নষ্ট হয়ে যায় নকল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে।
  • নকল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে গাড়ির সাউন্ড নষ্ট হয়ে যায়।
  • ইঞ্জিন অয়েল ভেজাল ব্যবহারে গাড়ির হিটিং ইস্যু অতিরিক্ত বেড়ে যায়।
  • যখন গাড়ির রেডি পিকাপ কমে যাবে তখন বুঝবেন এটি নকল ইঞ্জিন অয়েল।
  • নকল ইঞ্জিন অয়েলের রং দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।

ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড


ইঞ্জিন অয়েলের মধ্যে ও দুটি গ্রেড দেখা যায় প্রথমটি মনোগ্রেড আর একটি মাল্টিগ্রেট।মাল্টিগ্রেট ইঞ্জিন অয়েল সাধারণত দুইটি সংখ্যা দ্বারা বোঝানো হয় যেমন 5w - 30, 10w - 40, 20w - 40, 20w - 50, 20w - 60। এক্ষেত্রে w মানে উইন্টার আর পরে সংখ্যাটি (30/40/50) ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড  বোঝানো হয়। 

শীত প্রধান দেশগুলোতে 10w - 30, 10w - 40 এবং অধিক শীত যেখানে বিরাজমান তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি থাকে সেখানে 0w - 20 অথবা 0w - 30 ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা হয়। উপরের উল্লেখিত 10w - 40 যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে প্রথম w যুক্ত সংখ্যাটির দ্বারা তাপমাত্রা এবং পরের সংখ্যাটি 40 দ্বারা ইঞ্জিন অয়েল এর ঘনত্ব ভিস্কোসিটি, ডেনসিটি কে বোঝানো হয়।

ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড কম ইঞ্জিন তেলের সান্দ্রতা গ্রেড একটি "W" দিয়ে শেষ হয় এবং সাধারণত শীতকালে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। যেমন: SAE 0W, 5W, 10W, 15W, 20W এবং 25W ইঞ্জিন তেল। উচ্চ ইঞ্জিন তেল সান্দ্রতা গ্রেড "W" চিহ্নিত করা হয় না এবং গ্রীষ্মে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। যেমন: SAE 8, 12, 16, 20, 30, 40, 50 বা 60 ইঞ্জিন তেল ।

শেষ কথা


আমরা যারা গাড়ি ব্যবহার করি তারা সবাই ইঞ্জিন অয়েল এর সম্পর্কে কমবেশি জানি। আপনারা গাড়ির সুরক্ষা ক্ষেত্রে সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করবেন। আর বিশ্বস্ত দোকান থেকে আপনার ইঞ্জিন অয়েল কোম্পানী ব্রেক মন ইঞ্জিন অয়েল কিনবেন। আমার পরামর্শ হলো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সময় নিজে গ্যারেজে উপস্থিত থেকে পরিবর্তন করবেন এবং পরবর্তীতে কেন্টি কেটে ফেলুন। 

এতে করে অন্যরা প্রতারিত হবে না। ওই কেন দিয়ে আমাদের সাথে ইঞ্জিন অয়েল রিফিল করে বিক্রি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আশা করি আপনারা নকল ইঞ্জিন অয়েল চেনার উপায় এবং প্রয়োজনে তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন। আপনাদের এই বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটি ফলো এবং কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন