মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায়

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় এবং মানসিক চাপ কমানোর উপায় এ সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনারা হয়তো এই সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায়
মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায়এই আর্টিকেলে আরো আলোচনা করছি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেগুলো জানতে হলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া অনুরোধ রইল।

ভূমিকা


মানসিক চাপ মানুষের জীবনের একটি অত্যন্ত সাধারণ এবং প্রাকৃতিক অংশ। এটি অবশ্যই অস্থির জীবনের প্রতিস্থাপন নয়, তবে এটি কখনও কখনও আমাদের জীবনে সাময়িক এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যার কারণে দেখা যেতে পারে। মানসিক চাপ ব্যক্তিগত, সামাজিক, ও পেশাদার অবস্থানে উত্পন্ন হতে পারে এবং তার কারণ ব্যক্তির পরিবেশ, বেশি চাপ এবং সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে সংশ্লিষ্ট হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়


মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্রেইনের কিছু কিছু নার্ভ শুকিয়ে যেতে থাকে, যার কারণে স্মরণ-শক্তি আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে। আর পানি কম পান করার দরুন এগুলো আরো দ্রুত শুকিয়ে যায়। তবে সব ধরনের বেরী ফল হিউম্যান ব্রেইনের উন্নতি সাধন করে স্মরণ-শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। তাই আমাদের নিজেদের এবং সন্তানদের বেশী বেশী করে এই ফলগুলো নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। যেমন: কালোজাম, লেবু, আমড়া, আমলকি, স্ট্রবেরী, বুবেরী, ব্ল‍্যাকবেরী, রাসবেরী ইত্যাদি।

মানসিক শান্তির জন্য স্বাস্থ্য ভাল রাখা খুবই প্রয়োজন


  • খাওয়ার শুরু ও শেষে দু'আ পড়া।
  • খুব ক্ষুধা না লাগলে না খাওয়া। প্রতি তিন ঘন্টা পরপর হালকা কিছু খাওয়া।
  • অতিরিক্ত পরিমাণ আহার না করা।
  • অতিরিক্ত চর্বি-মশলা ও লবণযুক্ত খাদ্য এবং নেশা-জাতীয়/উত্তেজক পানীয় গ্রহণ না করা।
  • প্রতিদিন টক-ঝাল-মিষ্টি-তেতো স্বাদের খাদ্য খাওয়া।
  • পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া, প্রচুর পরিমাণে সবজী খাওয়া।
  • সারাদিন প্রচুর পানি পান করা।
  • খাওয়ার পরপরই শুতে না যাওয়া অথবা কোন ব্যায়াম না করা।
  • খাদ্য ভাল করে চিবিয়ে খাওয়া।
  • রেগে থাকলে অথবা কোন কারণে মেজাজ খারাপ (আপসেট) থাকলে ঐমুহূর্তে না খাওয়া, এতে হজমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
  • দ্রুত খাবার না খাওয়া, ধীরে-সুস্থে এন্জয় করে খাওয়া।
  • দিনে দু'বার দাঁত ব্রাশ করা। রাতে ঘুমাবার আগে অবশ্যই।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায়

  • পরিমাণ মত খাবার-দাবার গ্রহণঃ আমাদের ধারণা আছে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে বা বেশি পরিমাণে খাওয়া-দাওয়া করলে স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস মানসিক চাপ কমানোর বদলে তাবাড়িয়ে তোলে। তাই মানসিক চাপ বেশি হলে পরিমাণমত খাবার খেতে হবে। খুব বেশি খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
  • নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবেঃ অন্যদের ইচ্ছা পূরণ করার পাশাপাশি নিজের ইচ্ছা পুরণের দিকেও নজর দিতে হবে। প্রত্যেকেরই কিছু কিছু। নিজস্ব ইচ্ছা আছে এবং তা পূরণ করা বা সেই ইচ্ছা অনুসারে জীবনধারণ করার অধিকার সবারই আছে, তবে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নার বিপরীত নয়।
  • খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করাঃ স্ট্রেস-ফ্রি হতে গিয়ে খুব বেশি চা বা কফি পান বা সিগারেট খাওয়ার মতো বদ অভ্যেসে অভ্যস্ত হওয়া যাবে না। এর মধ্যে যে নিকোটিন থাকে তা স্ট্রেস বাড়িয়ে তোলে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ খুব কঠিন নয় এমন কিছু ব্যায়াম দৈনিক চর্চা করা যার ফলে শরীর থেকে 'এন্ডোফিন' নির্গত হয় যা স্ট্রেস কমে যায় এবং পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা জাগিয়ে তোলে। নিয়মিত পড়াশোনা করা, নিজেকে রিল্যাক্স রাখা। রিল‍্যাক্সেশনে বিভিন্ন প্রক্রিয়া জেনে নেয়া। অবসর সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান বাড়ানের জন্য নিয়মিত পড়াশোনার চর্চা করা। স্ট্রেসের কারণ কম করার চেষ্টা করা।
  • নিজের গুরুত্ব উপলদ্ধি করাঃ নিজের কাজে নিজের চিন্তাধারা বা বিচার বুদ্ধির বাস্তব রূপ তুলে ধরা। আমি কতটা ব্যস্ত তা কারো কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। তাই নিজের গুরুত্ব এবং ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করা।
  • জীবাণুর বিস্তার রোধঃ হাত পরিষ্কার রাখা হাত পরিষ্কার রাখা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? হাতের মাধ্যমেই জীবাণু বহন করে ও ছড়ায় সবচেয়ে বেশি। বাইরে থেকে এসে প্রথমেই হাত না ধুয়ে সে হাত দ্বারা চোখ, নাক অথবা মুখ স্পর্শ করলে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকতে পারে। যদি কোনও ব্যক্তি নিজের হাতের উপর হাঁচি দেন বা কাঁশেন এবং তারপর দরজার হাতল বা নব, সিড়ির রেলিং কিংবা টেলিফোন স্পর্শ করেন, তাহলেও জীবাণু ছড়ায়। অন্য কেউ ওগুলি ধরামাত্র জীবাণু তাঁর শরীরে উঠে যেতে পারে। যদি তিনি হাত পরিষ্কার না করেই সে হাত দিয়ে চোখ, নাক অথবা মুখ স্পর্শ করেন তবে জীবাণুর প্রকোপে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
  • পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটানঃ আপনি যদি কোন পোষা প্রাণী সাথে নিয়মিত সময় কাটান কিংবা তাদের যত্ন করেন তাহলে এতে আপনার মানসিক চাপ অনেকটা হলেও কমে যাবে। এই পোষা প্রাণীর সাথে আপনি প্রতিদিন যদি হাঁটা চলাফেরা করেন তাহলে এতে করে আপনার মস্তিষ্কের ব্যায়াম হবে এবং মানসিক চাপ কমে যাবে।
  • ভ্রমণে বের হওয়াঃ আপনার যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে থাকে তাহলে আপনি সময় নিয়ে ভ্রমণে করতে পারেন। এতে করে আপনার অনেকটাই মানসিক চাপ কমে যাবে এবং মনও ভালো থাকবে। যদি মন ভাল থাকে তাহলে শরীর অসুস্থ থাকবে ও মানসিক চাপ কমে যাবে।
  • উপকারিতা ও দানঃ অন্যদের সাহায্য করা এবং উপকারিতা করা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। নেতিবাচক মনের চিন্তা ও ধারণা উপস্থাপনের প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই সব উপায়গুলি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে তবে এটা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা নয়, তাই যদি মানসিক সমস্যা বা চাপ অধিক হয় তবে এটা পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

মানসিক চাপ কমানোর উপায়


আপনার যদি কোন মানসিক চাপ থাকে তাহলে আপনাকে বেশি বেশি করে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া উচিত। আমরা নিয়ম মত যদি গভীরভাবে শ্বাস প্রশ্বাস ছাড়তে পারি তাহলে অনেকটাই চাপ কমে যাবে এবং স্নায়ু বিশ্রাম পাবে। এই শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার কিছু পদ্ধতি রয়েছে পদ্ধতি হলো নাক দিয়ে পরপর দুইবার বড় করে শ্বাস টানা তারপর মুখ দিয়ে পুরো বাতাস বের করে দেওয়া। এভাবে যদি আমরা শ্বাস প্রশ্বাস নিয়মিত নিয়ে থাকি তাহলে আমাদের অনেকটাই মানসিক চাপ কমে যাবে। আর নিয়মিত নিচের ব্যায়াম গুলো করতে হবে।
  • হাঁটা
  • সাইক্লিং
  • জগিং
  • ইয়োগা
  • মেডিটেশন

শেষ কথা


মানসিক চাপ একজন ব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন দিকে প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন স্বাস্থ্য, সম্পর্ক, কর্মজীবন, আর্থিক ইত্যাদি। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল সাহায্য করতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও সুখের উন্নতি করতে পারে। তবে, মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বা পেশাদারের সাথে যোগাযোগ উচিত।

আশা করি আপনারা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন। আপনাদের এই বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো এবং কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন