সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস
সন্তানদের পড়ালেখায় ভাল করার বিষয়ে বাবা-মায়ের ১৫টি কাজআজ আমরা আলোচনা করব ইসলামে সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনাদের সুবিধার্থে সন্তান প্রতিপালনে পিতা-মাতাকে যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হয় তা আলোচনা করা হলো।
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি আধুনিক যুগে ইসলামী দাওয়াতের পদ্ধতি ও প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু হয় যেভাবে এ সম্বন্ধে। এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়া অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
ইসলামে সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিতা ও মাতা সন্তানের শিক্ষা প্রদানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এদের উপর সন্তানের পালন-পোষন, শিক্ষা, সৎ আচরণ, ধর্ম ও মেধাতাত্ত্বিক শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
আন্তরিক নসিহা ও দিকনির্দেশনা প্রদান
সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস অত্যন্ত সহায়ক স্তম্ভগুলির মধ্যে অন্যতম হল, তাদেরকে নিরবচ্ছিন্নভাবে আন্তরিক নসিহা এবং দিকনির্দেশনা দেওয়া। বিশেষত তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে বিশেষ পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়া। তাদের উত্তম চরিত্র গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করা।
তাদেরকে দ্বীনের আক্বীদার বিষয়গুলো এবং ইসলামের ফরয বা আবশ্যকীয় বিধান ও রুকনগুলি শিক্ষা দানের পাশাপাশি শরী'আহর যাবতীয় বিষয় শিক্ষা দানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা করা। একইভাবে নিষিদ্ধ ও সতর্কতাপূর্ণ বিষয়াবলীর ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা ও ভীতি প্রদর্শন করা।
প্রথমত এক্ষেত্রে তাদেরকে যাবতীয় কাবীরাহ গুনাহ ও পাপ থেকে ভীতি প্রদর্শনের পাশাপাশি শরী'আহর দৃষ্টিতে সব ধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখার আন্তরিক নসিহা করা। সুতরাং সন্তান ও সন্তানাদিকে আন্তরিক নসিহা ও বিশেষ দিকনির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে এসব দায়িত্বগুলো আবশ্যিকভাবে পালন করা এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলো একজন ব্যক্তির জীবন থেকে বড় একটি অংশ ব্যয় করা।
সন্তান প্রতিপালনে পিতা-মাতাকে যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হয়
এরপরে পিতা-মাতা সন্তানদের পার্থিব জীবনের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও বিশেষ যত্নবান হবেন। তাদের খাদ্য-পানীয় ও পোশাক-আশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাদের জন্য যেগুলো বেশি উপকারী হবে সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া। আর অত্যন্ত উপকারী ও কল্যাণময় উপদেশগুলোর অন্যতম হলো যেগুলো আল্লাহ তা'আলা তাঁর কিতাবে লুকমান হাকীম কর্তৃক তাঁর পুত্রের প্রতি প্রদত্ত যেসব উপদেশ উল্লেখ করেছেন।
লুকমান হাকীম তিনি সূরা লুকমানে তাঁর পুত্রকে সর্বপ্রথম যে উপদেশ দিয়ে শুরু করেছেন তা হলো তাওহীদের উপদেশ। এরপর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আনুগত্য প্রকাশের উপদেশ দিয়েছেন। আর এর পরই আল্লহর মর্যাদার সীমারেখার বিষয়েও কঠিনভাবে সতর্ক করেছেন যে, কোনভাবে আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে অংশীদার স্থাপন না করা।
অর্থাৎ আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তাঁর মর্যাদার একটি সীমারেখা রয়েছে। যেখানে কোন সৃষ্টির জন্য বৈধ নয় যে, আল্লাহর সাথে কোন সৃষ্টিকে শরীক হিসেবে স্থাপন করা। আর এটাও জোরালভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বান্দার সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। এরপর শারীরিক আমলসমূহের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল সলাত আদায়ের প্রতি বিশেষ অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ সুন্দর চরিত্র গঠন ও মহান ব্যক্তিত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশেষ সতর্কতা আরোপ করে লুকমান হাকীমের উপদেশমালা সমাপ্ত করা হয়েছে।
সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস
আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, 'প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলম'। আর আমি মানুষকে সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু'বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর।
প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই। আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে। আর অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়। তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন।
তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে। 'হে আমার প্রিয় বৎস, নিশ্চয় তা (পাপ-পুণ্য) যদি সরিষা দানার পরিমাণ হয়, অতঃপর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমানসমূহে বা যমীনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন।
আধুনিক যুগে ইসলামী দাওয়াতের পদ্ধতি
নবী এবং সৎকর্মশীলরা এই কর্মসূচী অনুসরণ করেছিলেন, যেমনটি পূর্বে লুকমানের নসিহায় উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবী ইবরাহীম ও ইয়াকুব উভয় নাবীর উপদেশগুলোর কথাও উল্লেখ কর আর এরই উপদেশ দিয়েছে ইবরাহীম তার সন্তানদেরকে এবং ইয়াকূবও (যে,) 'হে আমার সন্তানেরা, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে চয়ন করেছেন সুতরাং তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেয়ো না।
নাকি তোমরা সাক্ষী ছিলে, যখন ইয়াকুবের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে তার সন্তানদেরকে বলল, 'আমার পর তোমরা কার ইবাদাত করবে'? তারা বলল, 'আমরা ইবাদাত করব আপনার ইলাহের, আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের, যিনি এক ইলাহ। আর আমরা তাঁরই অনুগত'।
প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু হয় যেভাবে
সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস সমস্ত কিছুর পালনকর্তা আল্লাহ তা'আলা তাঁর নাবী ইসমাঈল (১) এর প্রশংসা করেছেন। কারণ তিনি তাঁর পরিবারকে সলাত আদায় ও যাকাত প্রদানের নির্দেশ দিতেন আল্লাহ তা'আলা বলেন আর সে তার পরিবার-পরিজনকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তার রবের সন্তোষপ্রাপ্ত।
একইভাবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (স)-কে ফরয সলাত সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর পরিবারকে একই নির্দেশ দিয়েছিলেন ও তা আদায় করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যেমনভাবে আল্লাহ তা'আলা বলেন, আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার উপর অবিচল থাক।
নবীগণের দিকনির্দেশনা এবং আন্তরিক নসিহার মধ্যে যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তা হল, পিতা তাঁর সন্তানদের এমন সেসব বিষয় থেকে দূরে রাখবেন যা তাদের নৈতিকতা ও দ্বীনকে কলুষিত করবে উদাহরণস্বরূপ, সংগীত, ক্ষতিকারক টিভি চ্যানেল এবং সকল নিষিদ্ধ উপকরণ থেকে বিরত রাখবেন একইভাবে পিতা-মাতা সন্তানদের সব নিষিদ্ধ ও প্রবৃত্তি তাড়িত সব ধরনের বিনোদনের স্থানগুলিতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক সতর্ক হওয়া উচিত
শেষ মন্তব্য
আশা করি আমাদের সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন এ ধরনের আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ। আমাদের ওয়েবসাইটের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে তাহলে ওয়েবসাইট কমেন্ট শেয়ার এবং ফলো করুন।