ব্রেইনকে প্রখর রাখতে ৮টি অভ্যাস - মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায়
ব্রেইনকে প্রখর রাখতে ৮টি অভ্যাস এই বিষয় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। আপনি যদি মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায় এই বিষয় নিয়ে যদি জানতে চান তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি ঘুম আমাদের কেন প্রয়োজন? যে কাজগুলো দুশ্চিন্তা কমায় এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
সাধারণভাবে আমরা শারীরিক গঠনটাকে সুন্দর করার প্রতি বেশি মনোযোগী। আদৌ কি আমরা তার কিছুটা সময় মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পেছনে ব্যয় করি, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। এই মস্তিষ্কের কল্যাণেই আমরা প্রাণীকূল থেকে আলাদা। মেধায়, মননে, বুদ্ধিদীপ্ততায় মানুষের অগ্রগতি থেমে নেই।
বিশ্ব যেভাবে এগোচ্ছে, সেটাই প্রমাণ করে আমরা পূর্বের চেয়ে বহুগুণে বেশি মস্তিষ্কের উপর নির্ভরশীল। জীবনের বহু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, এখানে মস্তিষ্ককে শাণিত করার প্রাকৃতিক ও সহজ ৮টি স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কথা অলোচনা করা হলো।
মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায়
সক্রিয় থাকা ও নিয়মিত ব্যায়াম করা। দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, অ্যারোবিক ব্যায়াম স্মৃতিশক্তিকে চাঙ্গা রাখবে। বয়স বাড়তে থাকলেও, মস্তিষ্কের জটিল কোন সমস্যা দেখা দেয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। তবে, মাঝবয়স থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরচর্চার তালিকা নির্ধারণ করে নিতে হবে।
ব্যায়ামে আকার বাড়ে মস্তিষ্কের
মাস্তিষ্কেরও ব্যায়াম রয়েছে। অঙ্ক বা গণিতচর্চা, ধাঁধার সমাধান বের করা, প্রোগ্রামিং, পাজল গেইম বা দাবা খেলার মতো যে কাজগুলোতে মাথা খাটাতে হয়, সে ধরনের কাজ বেছে নিয়ে ও নিয়মিত তা করা।কারণ, স্নায়ুকোষের মধ্যে নতুন নতুন সংযোগ তৈরি হয় এ ধরনের চর্চার মাধ্যমে। আর তা মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট অনুসরণ করা। চিনি কিংবা সম্পৃক্ত চর্বিসমৃদ্ধ খাবার, ফাস্ট ফুড, ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার যতোটা সম্ভব পরিহার করা। পর্যাপ্ত পানি পান করা। সাধারণভাবে, প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ফরমালিন মুক্ত নানা রঙের টাটকা ফলমূল ও শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা। মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরটাও ভালো থাকবে। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা হার্টের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
যে কাজগুলো দুশ্চিন্তা কমায়
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপমুক্ত থাকার অভ্যাস করা। অনেক চাপের মধ্যেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চর্চাটা আমাদের মস্তিষ্ককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেবে। নিয়ম করে মাঝে-মধ্যে একটু প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া উচিত। শহরে থাকলে, সময় বের করে একটু দূরে কোন গ্রাম থেকে ঘুরে আসা উচিত।
ঘুম আমাদের কেন প্রয়োজন?
পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো উচিত। বয়সভেদে ঘুমের সময়ের পার্থক্য হলেও, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। সুনিদ্রা মস্তিষ্ককে আরও সক্রিয় করে তোলে। সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, জেগে থাকা নয় বরং ঘুমিয়ে থাকার সময়টাতেই মানুষের মস্তিষ্ক অধিক সক্রিয় থাকে।
সারাদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম কিংবা মানসিক চাপের পর মস্তিষ্কে যেসব ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়, তা পরিস্কার করে ঘুম। পর্যাপ্ত বিশ্রামে মস্তিষ্কের কোষগুলো পরিশোধিত হয়। সতেজতা ফিরে পায়। নতুন কাজ করার উদ্দীপনা তৈরি হয়। চিন্তা করার সময় জড়তা থাকে না। স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীলভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজতর হয়। স্বল্প বা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণতর হয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর খাবার
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার আমাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে যেন না ভুলি। যেমন গাঢ় রঙের আঙুর, ডালিম, রসুন ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই প্রথমেই জেনে নিতে হবে কোন খাবারগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এরপর ডায়েট চার্টে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার
প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা। বার্ধক্যজনিত কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ যে ক্ষয় শুরু হয়, তা প্রতিরোধে অন্যতম ভূমিকা পালন করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। সারা জীবন মস্তিষ্কের ভারসাম্য রক্ষা ও মাথা খাটানোর কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করে বিশেষ এ পুষ্টি উপাদানটি।
তাই আমাদের উচিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারগুলোকে খুঁজে বের করা ও তা প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা। যেমন: তেলাপিয়া, টোনা, চিংড়ি, সালমান মাছ, সয়াবিন তেল, ক্যানোলা তেল, ডিম, দুধ, কুমড়া বিচি ইত্যাদি।
সামাজিক জীবনে সক্রিয় থাকা মস্তিষ্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে মেলামেশার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা সে কাজগুলোর মধ্যে পড়ে। অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, আলোচনা করা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং চিন্তার শক্তিকে তীক্ষ্ণতর করে।