চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এর অবদান
আমরা আলোচনা করব চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের কত বড় যে অবদান তা নিয়ে। মানব কল্যাণে প্রতিদিন বিজ্ঞানের যে অবদান চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূচনা করে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্য অনেক বেশি।
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করব বিজ্ঞানের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান আজ যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া অনুরোধ রইল ।
ভূমিকা
শাব্দিক অর্থে জ্ঞান হলো বিজ্ঞান। মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান যে কত ব্যাপক তা প্রতিদিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়। চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান আজ যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। বিজ্ঞান চিকিৎসা ক্ষেত্রে নব আশীর্বাদ রূপে আবির্ভূত হয়েছে। স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য সকলেরই চায় উন্নততর চিকিৎসা ব্যবস্থা।
তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে বিজ্ঞান মানুষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। মানুষের দুরারোগ্য ও জটিল সব রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে, নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকা নিশ্চয়তা পাচ্ছে।
সনাতন চিকিৎসা ব্যবস্থা
প্রাচীন চিকিৎসা বিদ্যার শুরু আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে। আদিম মানুষ রোগবালায় ও অন্যান্য দুর্যোগকে স্রষ্টার অভিশাপ, শরীরে ভূত পেতে অসুখ আছর বা দুষ্ট গ্রহের কুপ্রভাবের ফল মনে করত। সে সময় মানুষ রোগ মুক্তির জন্য বিভিন্ন ধরনের কবিরাজি ওষুধ, গাছ-গাছালি, দোয়া, তাবিজ- কবজ, পানি পড়া ইত্যাদির উপর নির্ভর করত।
সনাতন পদ্ধতিতে চিকিৎসা ও উপশম কৌশল উদ্ভিদ প্রাণী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের প্রথাগত ব্যবহার ও সাংস্কৃতিক আচরণ সামাজিক সংস্কার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনেক ক্ষেত্রে বর্তমান ও পূর্ববর্তী প্রজন্মে বিভিন্ন কুসংস্কারের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বস্তুত ও সেসময় চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি না থাকায় জটিল রোগ নির্ণয় করা ছিল দুঃসাধ্য।
ফলে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাবে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হতো এবং সুচিকিৎসার অভাবে মারা যেত অনেকে। পরবর্তীকালের মানুষ চিকিৎসা বিদ্যার অনেক উন্নতি ঘটায় এবং বিভিন্ন দ্রব্যাদি রোগে নিরাময় ব্যবহার করে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূচনা
সনাতন স্বাস্থ্য সেবায় ইউনানী পদ্ধতির উৎপত্তি গ্রীসে সেখানে উন্নয়ন প্রদেশে এ পদ্ধতি প্রথম প্রচলন ও উন্নয়ন ঘটে বলে একে ইউনানী পদ্ধতি বলে এর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রথম পরিচিত করে তোলেন গ্রিসের হাকিম এসকালি বাস আর এলোপ্যাথিক চিকিৎসার প্রচলন হয় ব্রিটিশ আমলে। আধুনিক চিকিৎসার ধ্যান ধারণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
বিজ্ঞানের অবদানে আবিষ্কৃত হয় চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতি ও রোগ নির্ণয়ের নতুন নতুন যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রের সাহায্যে জটিল সব রোগ নির্ণয় করা সম্ভবপর হয়েছে আধুনিক যুগে। বিজ্ঞানের অবদান আধুনিক যুগে ও সনাতন চিকিৎসার পরিবর্তে হোমিওপ্যাথিক এলোপ্যাথিক চিকিৎসার প্রবর্তন হয়েছে।
ফলে বিজ্ঞানের এ যুগে মানুষ ক্রমেই প্রাচীনকালের মতো লোকজ ও সনাতন অপ্রচলিত পদ্ধতি ধর্মীয় বিশ্বাস ও সামাজিক সংস্কারের উপর নির্ভর না করে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুফল পেতে থাকে।
অতীতের গুটি বসন্ত প্লেগ জাতীয় সব কঠিন রোগ ও মহামারীর হাত থেকে মানুষ মুক্তি পেয়েছে আধুনিক চিকিৎসার বদলতেই।
বিজ্ঞানের অবদানে পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন ইত্যাদি কঠিন বাধির ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে । তাই আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সূচনায় বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য ।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্য
বিংশ শতাব্দীর পূর্বে চিকিৎসা পদ্ধতি ততটা উন্নত ছিল না। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলেই আজ মানুষের গড় আয়ু 50 থেকে 70 বছর। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির পরিসংখ্যান নিলে আমরা স্পষ্ট তো যে, মানব সভ্যতার বিগত সাত-৮০০০ বছরের ইতিহাসে চিকিৎসা শাস্ত্রে যে উন্নতি সাধিত হয়েছে তার সিংহ ভাগ হয়েছে ১৯২০ থেকে বর্তমান পর্যন্ত।
যেখানে গত শতাব্দীতেও বসন্ত, ম্যালেরিয়্ টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, প্রভৃতি রোগে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের জীবনাবসন ঘটেছ্ সেখানে বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের অপারাপর শাখার মতো চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রভৃতি উন্নতি সাধিত হওয়ায় এসব মহামারী নিয়ন্ত্রণ যেমন সহজ হয়েছে তেমনি মানুষ এসব জটিল রোগ এর হাত থেকেও রক্ষা পেয়েছে অতি সহজে।
চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান
চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান আজযুগান্তকারী পরিবর্তনে এনেছে। দুরারোগ্য বাধিতে মৃত্যুর সংখ্যা আজ হ্রাস পেয়েছে। স্ট্রেপটোমাইসিন, পেনিসিলি্ এক্স-রে প্রভৃতি আজ মৃত্যুবরযাত্রীকে দান করেছে নিশ্চিত বিশ্বাস ও আশা। কর্নিয়া, অস্থিমজ্জা, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এবং যকৃতের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক সাফল্য অভাবনীয়।
বিজ্ঞানের এসবের সাফল্যে এর গোরাতেই রয়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাফল্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছেঃ কালা জ্বরের জীবাণু আবিষ্কার, সহযোগী হৃদপিণ্ড আবিষ্কার, কোলেস্টেরল ও পেনিসিলিন হার্টের প্রেস মেকার, ওপেন হার্ট সার্জারি ও হার্টের বাইপাস সার্জারিতে প্রয়োজনীয় হাঁটলাম মেশিন তৈরি ইত্যাদি। এছাড়া যে আল্ট্রাসনিক স্ক্যানিং এর মাধ্যমে শরীরের ভেতরের যকৃত। ,
রোগ নিরাময় বিজ্ঞান
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বিশ্ব মানবতা কখনো উল্লাসিত হয় আবার অনেক সময় তার বিভীষিকাময় রূপে বিশ্বসভ্যতা থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে শুধু আশীর্বাদ আর আশীর্বাদ আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে সম্ভব হয়েছে। রোগ নিরাময়ের আধুনিক সব ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে।
বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির ফলেই পেনিসিলিন স্টেপটোমাইসিন ক্লোরোমাইসিন ইত্যাদি মহসদ এর আবিষ্কার হয়েছে। এছাড়াও সর্দি জ্বর কাশি মাথাব্যথা জন্ডিস practic আলসার ইত্যাদি ছোটখাটো যেসব রোগ, যা প্রতিনিয়তই মানুষের জীবনে লেগে আছে।
তারও অনেক প্রকার ওষুধ বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে। জটিল সব রোগ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পেয়েছে। কঠিন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও রোগ মুক্তি লাভের আশায় আলো দেখছে। অধ্যাপক কুড়ি ও মাদাম কুরির আবিষ্কৃত রেডিয়াম ব্যবহার করে দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগের ও চিকিৎসা করেছেন চিকিৎসকরা।
প্লাস্টিক সার্জারি করে মানুষের শরীরের আকৃতি বা চেহারা পরিবর্তনের মত দুঃসাধ্য কাজ সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে। আজকাল জেনেটিক রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দুরারোগ্যবাদী সনাক্ত ও চিকিৎসা আবিষ্কার এর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
ক্লোনিং পদ্ধতিতেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত, প্রোটিন প্রভৃতি আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। মোট কথা , চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসম্ভব বলে আর কিছুই থাকছে না।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের গুরুত্ব
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে অনেক অসাধ্য ও দুঃসাধ্য রোগ নির্ণয় ও তার চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। বিজ্ঞান মানুষের জন্যই বিশ্ব সুস্থ সবল মানুষই জাতিকে উন্নতির দিকে ধাবিত করে। বিজ্ঞান যদি চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন না আনতো তাহলে কঠিন সব রোগব্যাধি থেকে মানুষ মুক্তি পেত না কিন্তু বিজ্ঞান মানুষকে সচল রাখছে মানুষের জীবনে সুখ শান্তি বয়ে এনেছে বিজ্ঞান।
উপসংহার
মানুষ বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়েছে যে জীবন ধারণের জন্য মানুষের মাঝে বাঁচার আশা জাগিয়েছে একদেশে চিকিৎসা সুব্যবস্থা না হলে অন্য দেশে ছুটে চলেছে উন্নত চিকিৎসার আশায় হয়তো চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে অর্থের তবুও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে মানুষ অকাল মৃত্যুকে অনেকটাই রোধ করতে সক্ষম হয়েছে।