সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা

সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা ও সন্তানের ভালো বন্ধু হবেন কীভাবে এ বিষয়ে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। এ সম্বন্ধে আরো তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এ আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধু নির্বাচন এবংআমার সন্তানের উন্নয়নে আমি কি করতে পারি। এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

ভূমিকা


সন্তানের সাথে সম্পর্ক যেন একটি সমস্যা বা বাধা না, বরং একটি মজার এবং সহযোগিতাপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়। মনে রাখবেন, আপনি সম্পূর্ণরূপে একজন শ্রেষ্ঠ পিতা/মাতা হতে চাইলে আপনার সন্তানদের সাথে খুব সাবলীলভাবে সম্পর্ক উন্নত করতে হবে। আপনি যদি আপনার সন্তানের কাছে সতর্কতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করেন, তারা আপনাকে ভালো বন্ধু হিসেবে মনে করতে পারে।

সন্তানের ভালো বন্ধু হবেন কীভাবে


সৎ সন্তান গড়ার ভিত্তি ও উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, অবশ্যই সন্তানের সাহচর্য ও বন্ধুত্বের বিষয়ে সতর্কভাবে খেয়াল রাখা জরুরি। কেননা সঙ্গী বা সাথী অবশ্যই তার সাহচর্যে থাকা সাথীকে তার দিকে আকৃষ্ট করে টেনে ফেলে এবং নিশ্চিতভাবে তার সাহচর্যে থাকা সাথীকে তার প্রভাবে প্রভাবিত করবে। আর অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ভালো কিংবা মন্দ সাথীর প্রভাব যে তার অপর সাথীর উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে তাঁর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছেন।

আবু মুসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হল, কস্তুরীওয়ালা ও কামারের হাপরের ন্যায়। কস্তুরীওয়ালা হয়ত তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি সুবাস পাবে। আর কামারের হাপর হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তার নিকট হতে পাবে দুর্গন্ধ।

ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধু নির্বাচন


আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। অতএব তোমাদের প্রত্যেককে খেয়াল রাখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।অতএব, পিতামাতার এটি দেখা আবশ্যক তাদের সন্তানরা কাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে এবং কাদের সাথে স্কুলে সঙ্গ দেয় ইত্যাদি এবং সেই জায়গাগুলিতে তাদের পরিদর্শন করা ও খোঁজ-খবর নেওয়া উচিত। 

ইমান এবং ইবাদতের মাধ্যমে পরীক্ষা করা: বন্ধুত্বের সুবিধা ও মূল্য ইমান এবং ইবাদতের প্রতি প্রতিষ্ঠিত হলে সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয়। একে অন্যের আত্মীয়তা, বাস্তবায়ন ও ইমান পরীক্ষা করা উচিত। ইসলামে বন্ধুত্বের ভিত্তি প্রেম এবং সহানুভূতি। একজন মুসলিম বন্ধু হতে হলে সমালোচনা ও সহানুভূতির দিকে তাকিয়ে চলা উচিত। ইসলামে বন্ধুত্ব প্রেরণা এবং নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। একটি মুসলিম বন্ধু হতে হলে আপনার বন্ধুর প্রেরণা ও নিরাপত্তার মধ্যে সম্মতি থাকতে হবে।

আমার সন্তানের উন্নয়নে আমি কি করতে পারি


এই যুগে একটি নতুন ধরণের সহচর এবং বন্ধু অস্তিত্বে এসেছে যা পূর্ববর্তী সময়ে ছিল না এবং এটি পূর্ববর্তীর চেয়ে এর সহচরের উপর অনেক প্রভাব ফেলে থাকে। এটি হল, স্যাটেলাইট টিভি, বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া। যা শিশুরা তাদের বাড়িতে কিংবা বাইরে অথবা যেখানেই থাকুক না কেন তারা তাদের হাতে নিয়ে যেতে পারে। 

এই ডিভাইসগুলি, যদি তারা পিতামাতার তত্ত্বাবধানে এবং পর্যবেক্ষণের অধীনে না থাকে তবে তাদের মন, দ্বীন, নৈতিকতা এবং শিষ্টাচারগুলির জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। যুবক-যুবতীদের মধ্যে এর ফলে কতজন ধ্বংস ও বিচ্যুত হয়েছে?! বিষয়টি তাদেরকে মহা-দুষ্ট ও মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে, যার ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই জানেন না।

সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা


সৎ সন্তান প্রতিপালনে দুর্দান্ত সহায়ক স্তম্ভগুলির মধ্যে অন্যতম হলো, পিতা তার সন্তানদের জন্য একটি আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তি হবেন। সুতরাং তিনি যদি তাদের সৎকাজের আদেশ দেন, তবে তিনিই হবেন উক্ত সৎকাজের প্রতি বেশি আগ্রহী ও গতিশীল এবং যদি তিনি তাদের অসৎকাজ ও পাপ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে নিষেধ করেন, তবে তিনিই হবেন তা থেকে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অবলম্বনকারী। 

সুতরাং পিতার অবস্থা যেন এমন না হয় যে তিনি কোন এক উপত্যকা থেকে সন্তানদের কিছু উপদেশ দিলেন কিন্তু তিনি নিজেই আবার ঐ উপদেশ অপর উপত্যকায় তা পালন করেন না। অর্থাৎ তিনি নিজে সন্তানদেরকে যে সৎকাজের পরামর্শ দিবেন তা নিজেও তিনি পালন করবেন। কেননা পিতা যদি এমন না হন তাহলে সন্তান প্রতিপালনের সময় সন্তানদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী ও বিপরীতমুখী বিশৃঙ্খলা নীতির প্রতিফলন ঘটবে। 

এছাড়াও তারা পিতামাতার নির্দেশনা এবং শৃঙ্খলা এড়িয়ে যেতে এবং উপেক্ষা করার পথে পরিচালিত হবে। কেননা ঐ ব্যক্তির কথা ও কর্ম দ্বারা মানুষের আত্মাগুলো কল্যাণের ওপর গঠিত হয় না যে ব্যক্তি তার ইলম অনুযায়ী আমল করে না এবং যে ইলম বা জ্ঞান দ্বারা উপকার সাধিত হয় না। আর এ বিষয়টি ঠিক ঐ ডাক্তারের মত যে ডাক্তার এমন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করছেন, যে রোগে ডাক্তার নিজেই আক্রান্ত। 

যেখানে ডাক্তার নিজেই অসুস্থ সেখানে ডাক্তার কিভাবে অন্যের চিকিৎসা করবেন? অবশ্যই এমন ডাক্তারকে মানুষেরা পরিহার করবে এবং তার দিকে কখনো ভ্রূক্ষেপ করবে না। সত্যিকার এমনতাবস্থায় এমন ডাক্তার ঐ সকল মানুষের নিকট কেবল প্রিয় ও পছন্দের হবেন, যেসব অভিভাবক সন্তানদের যে উপদেশ দিয়ে থাকেন কিন্তু অভিভাবকগণ নিজেরাই সে উপদেশ পালন করেন না। 

কেননা এমন ডাক্তার প্রয়োজনীয় উপযুক্ত ঔষুধের স্থলে অন্য ঔষুধ দিয়ে দিবে। আবার কখনো দেখা যাবে যে তার দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ না করেই সুস্থতা লাভ করা যায় এবং কখনো প্রকৃতিগত কর্মের দ্বারাও ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয়ে থাকে ইত্যাদি তবুও এমন নিজ সত্ত্বায় অসুস্থ ডাক্তারের চিকিৎসা কেউ গ্রহণ করবে না। 

সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যা দ্বারা উপদেশ দেওয়া হবে তা যেন অবশ্যই মুক্তি পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ পথ ও পদ্ধতি থাকে। সে নির্দিষ্ট পথ ও পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন পন্থায় উদ্দিষ্ট মুক্তির পথ সুগম হবে না। আর এজন্যই শুআইব (আ.) তার কাওমের মানুষদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন তারা যেন তার দাওয়াতি উপদেশকে অবজ্ঞা ও ঘৃণা না করে। 

তিনি নিম্নের আয়াত পড়ে তার উপদেশ দানের মূলনীতি উপস্থাপন করেছিলেন। আল্লাহর বাণী, যে কাজ থেকে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি, তোমাদের বিরোধিতা করে সে কাজটি আমি করতে চাই না। আর কতক সালাফ বলেছেন, যখন তুমি কামনা করবে যে, তোমার আদেশ ও নিষেধমূলক উপদেশমালা গ্রহণ করুক কিংবা যখন কাউকে কোন বিষয়ে কিছু করার আদেশ দিবে, তখন সে আদেশ প্রথমে তোমাকেই আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। 

অনুরূপভাবে যখন তুমি কাউকে কোন বিষয় থেকে বিরত থাকতে বলবে, তখন তুমি তার আগেই সে নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকবে। আর অবশ্যই এভাবে বলা হয়, অন্যকে শিক্ষাদানকারী হে মহান শিক্ষক। অপরকে যা শিক্ষা দিবেন তা আগে নিজের জন্য শিক্ষা অর্জন করুন। অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিবেন এমতাবস্থায় আপনি নিজেই অসুস্থতায় অতিবাহিত করছেন।

উত্তম ও আদর্শ অনুকরণীয় ব্যক্তি হওয়া


আপনি কাউকে কোন চরিত্র থেকে বারণ করবেন না অথচ আপনি নিজেই সে চরিত্রে নিয়োজিত আছেন, যখন আপনি এমন কাজ করবেন তখন লজ্জার ভার আপনার উপরেই আপতিত হবে।
নিজ আত্মা থেকেই শুরু করুন আর আত্মাকে ভ্রষ্টতা থেকে বিরত রাখুন। যখন আপনি তা থেকে বিরত থাকবেন, তখনই বুঝা যাবে আপনি মহান জ্ঞানী ও পণ্ডিত। তখন আপনি যা বলবেন সে তা গ্রহণ করবে ও আপনার প্রদত্ত বাণীর অনুসরণ করবে এবং আপনার শিক্ষা উপকার লাভ করবে।

মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ কে


ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহিমাহুল্লাহু তা' আলা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মালিক বিন দিনার (রহিমাহুল্লাহু তা' আলা) একজন ব্যক্তিকে দেখলেন যে তিনি তার সলাতকে ভালোভাবে আদায় করছেন না। তার সলাতে মনোযোগ ও ধৈর্য না দেখে তাকে ভালোভাবে সলাত আদায় করতে বললেন, তখন তিনি বলেলেন, কি আশ্চর্য! 

তিনি আমার প্রতি তার পরিবারের রহম ও দয়া করার কথা বলছেন? অতঃপর তাকে বলা হলো, হে আবু ইয়াহইয়া! এর পরিবারের জন্য করুণা হচ্ছে! প্রশ্ন করা হলো, নামাজ অসুন্দর এর, অথচ আফসোস করছেন এর পরিবারের জন্য?! তিনি বললেন, এ-ই তো ওদের বড়। এর কাছ থেকেই তো ওরা শিখবে। 

সুতরাং আমরা বলতে পারি, যখন একজন পিতা সন্তানের জন্য আদর্শের ব্যক্তি হন, তখন ফরজ বিধান বর্জন ও হারাম কাজ করণে সন্তানের চেয়ে পিতার অপরাধ বেশি মারাত্মক ও ভয়াবহ। এমতাবস্থায় দ্বীনদার ও সৎ সাথীর সাহচার্য গ্রহণ বেশিরভাগ সন্তানেরা তাদের অভিভাবক পিতার আচার-আচরণ ও আখলাকের প্রভাবে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। 

কেননা পরিবারের পিতাই হলো তাদের বয়োজ্যেষ্ট ও মুরব্বী ব্যক্তি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ তাদের মুরব্বী ও বড়জনের থেকেই সবকিছু শিখবে। তাই আসুন, বানী-ইসরাঈলের প্রতি আল্লাহ তা'আলা তাঁর তিরস্কারের যে বাণী বলেছিলেন তা স্মরণ করি।

শেষ কথা


তোমরা কি মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত কর। তোমরা কি বুঝবে না? এছাড়াও আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা তা কেন বল, যা তোমরা কর না? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর নিকট বড়ই ক্রধের বিষয়।

আশা করি আমাদের এই সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা গুলি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা অপকৃত হবেন। এই ধরনের আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ। আমাদের ওয়েবসাইটের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে তাহলে ওয়েবসাইটে কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন