পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি

পেঁপে চাষের উপযুক্ত সময় - পেঁপে চাষের জন্য মাটি প্রস্তুতকরণপেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি এবং পেঁপে গাছের ফলতোলা ও ফলন এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি পেঁপের বংশবিস্তার ও চারারোপণ এবংপেঁপে গাছের সার প্রয়োগ। এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়া অনুরোধ রইল।

পেঁপে বীজ থেকে চারা উৎপাদন পদ্ধতি


বীজতলায় চারা তৈরী (Raising of seedlings in the nursery) বীজ থেকে পেঁপে গাছ তৈরী হয়। বীজতলায় চারা তৈরী করে স্থায়ী জমিতে লাগানোই সুবিধাজনক। চারা তৈরীর জন্যে সুপক্ক, বড় ও নিখুঁত পেঁপে থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজে ছাই মিশিয়ে অল্প ঘষে ওপরের পিচ্ছিল আবরণটিকে নষ্ট করে দিতে হবে। 

তার পর জলে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়ে বায়ুশূন্য পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। বীজের সাথে বীজশোধনকারী ঔষধ (যেমন মনোসান ইত্যাদি) মিশিয়ে সংরক্ষণ করাই ভাল। পেঁপে বীজ একবছর পর্যন্ত ভাল থাকে। তবে তাজা বীজই চারা তৈরীর জন্য সবচেয়ে বেশী উপযোগী। পেঁপে বীজকে ২৪-৪৮ ঘন্টা গোমূত্রে ভিজিয়ে রেখে বুনলে অঙ্কুরোদগমের হার বেশী হয় ও চারাও তাড়াতাড়ি বাড়ে। 

বীজ শোধন করে লাগানোই ভাল। এ জন্যে প্রতি গ্রাম বীজের সাথে তিন মিলিগ্রাম হিসাবে বীজ শোধনকারী ঔষধ মনোসান মিশিয়ে নিতে হবে। একটি কৌটার মধ্যে বীজ ও ঔষধ নিয়ে মুখ বন্ধ করে কৌটটা বারবার নাড়ালে বীজের গায়ে ঔষধ লেগে যাবে ও বীজ শোধিত হবে। 

পেঁপের বংশবিস্তার ও চারারোপণ (Propagation & planting of papaya)


সাধারণতঃ বীজ দিয়েই পেঁপের বংশবিস্তার হয়। আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পেঁপে বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। ছয় ফুট (১৮০ সেমি) লম্বা , তিন ফুট চওড়া (৯০ সেমি) ও ছয় ইঞ্চি (১৫ সেমি) উঁচু বীজতলা তৈরী করতে হবে। দুটো বীজতলার মাঝে এক ফুট (৩০ সেমি) চওড়া নালা রাখতে হবে। বীজতলার মাটিতে অনেক সময় ঢলে (Damping off) পড়া রোগের জীবাণু থাকে। 
এই রোগের আক্রমণে বীজতলায় চারা ঢলে পড়ে। বীজতলার মাটি শোধন করে নিলে ঢলে পড়া রোগের কবল থেকে চারা গাছকে রক্ষা করা যায়। বীজতলা শোধনের ১৫ দিন পরে বীজ বুনতে ৪। বীজতলার ওপর শুকনা খড় কুটা বিছিয়ে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েও বীজতলা শোধন করে হবে। নেওয়া যায়। বীজতলায় ৬ ইঞ্চি (১৫ সেমি) দূরে দূরে সারি করে সারিতে ২ ইঞ্চি (৫ সেমি.) দূরত্বে ও এক সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বুনতে হবে। 

বীজ বোনার পর ঝুরো মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। বীজ বোনার পর প্রয়োজনমত ঝাঁঝরি (Water Can) দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে। রোয়ার আগে বীজকে অংকুরিত করে নিলে তাড়াতাড়ি চারা গজায়। পেঁপে বীজ বীজতলায় ঘনভাবে বোনা উচিত নয়। কারণ ঘনভাবে বীজ বুনলে চারাগুলো অতিরিক্ত লম্বা ও ক্ষীণ হয়ে পড়ে। 

এই চারা তুলে লাগাবার সময় ধকল সহ্য করতে পারে না। বীজ বোনার প্রায় ১৫-২০ দিনের মধ্যে চারা বের হয়। বীজ বোনার পর বীজতলার চারদিক বি-এইচ-সি ১০ শতাংশ ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। এতে পিপীলিকা বীজতলার বীজের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। মাটির ভাঁড়ে বা গেলাসে বা পলিথিন ব্যাগে মাটি ভরে তাতে একটা একটা চারা তৈরী করে নেওয়া যায়। এক একরে চারা রোপণের জন্যে ২০০ গ্রাম বীজ দরকার।

পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি


লাগাবার উপযোগী চারা (Size of seedlings for transplanting) চারা রোপণের সাফল্য চারার বয়স ও উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। চারার বয়স ৩০-৪০ দিন হলে সেটি লম্বায় ৬-৮ ইঞ্চি (১৫-২২-৫ সেমি) ৪-৬টি পাতাযুক্ত হয়। এ রকম চারা বীজতলা থেকে তোলার সময় কম আঘাত লাগে। এজন্য লাগানোর পর সাধারণতঃ মরে না। 
চারা বেশী বড় হলে তোলার সময় মূলে আঘাত লাগে। এজন্য স্থায়ী জমিতে চারাটি ধরতে (establish) সময় বেশী লাগে ও এটি অনেকদিন পর্যন্ত দুর্বল থাকে। চারা তুলে স্থায়ী জমিতে লাগাবার আগে চারাকে শক্ত করে নেওয়া ভাল। চারাকে শক্ত ও ছোট করার জন্যে বীজ বপনের ৪-৬ সপ্তাহ পরে প্রথম বীজতলা থেকে চারা তুলে অপর একটি বীজতলায় লাগানো হয়। 

এই বীজতলায় পাতা পচা সার ও বালি প্রয়োগ করে মাটি দ্রুত জল নিকাশী করা (Porous) হয়। বীজতলায় ধীরে ধীরে জল কমিয়ে দেওয়া ও চারাকে ধীরে ধীরে বেশী রোদ খাওয়ানো দরকার। এই বীজতলার চারা খুব বেশী বড় হয় না। কিন্তু চারা শক্ত-সমর্থ ও প্রচুর মূলযুক্ত হয়। বীজতলা থেকে এই চারাকে সহজে তোলা যায় এবং সাফল্যের সাথে রোপণ করা যায়। চারা শক্ত করে লাগালে জমিতে চারা মরবে খুবই কম।

পেঁপে বীজতলা থেকে চারা তোলা (Lifting of seedlings from the nursery)


বীজতলা থেকে চারা তোলার কয়েক ঘন্টা আগে বীজতলায় জল প্রয়োগ করলে বীজতলা থেকে চারা তোলা সহজ হবে ও চারার শিকড় ছিঁড়বে না। বীজতলা থেকে সাবধানে চারা তুলে মূল জমিতে লাগাতে হবে। পেঁপে চারার মূল লম্বা, মোটা, আগার দিকে ক্রমশঃ সরু (tapering) ও ছোট মূলার মত দেখতে হয়। মূলের গোড়ার দিকে মোটা অংশে বেশী সংখ্যক শাখামূল থাকে এবং এগুলোই ভবিষ্যতে পেঁপের স্থায়ী মূলতন্ত্র (root system) গঠন করে। তাই বীজতলা থেকে সবল, সতেজ ও বেশী পাতাযুক্ত চারাগুলোকে বেছে নিয়ে মাটিশুদ্ধ তুলতে হবে।

পেঁপে চারারোপণ (Planting)


অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে বর্ষার শেষে (অর্থাৎ শ্রাবণ মাসের শেষে) ও কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বর্ষার শুরুতে চারা লাগাতে হবে। মেঘলা ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় চারা রোপণ করা দরকার। বর্ষার পরে চারা লাগাতে হলে বিকাল বেলায় চারা রোপণ করাই ভাল।

চারা লাগাবার পদ্ধতি

সারির দূরত্ব

গাছের দূরত্ব

একর প্রতি গাছের সংখ্যা

বর্গাকার পদ্ধতি

৭ ফুট (২-১৩ মি.)

৭ ফুট (২.১৩ মি.)

৮৮৯

আয়তাকার পদ্ধতি

৬ ফুট (১-৮ মিটার)

৮ ফুট (২.৪ মি.)

৯০৭

প্রতি গর্তে দু-তিনটে করে চারা লাগাতে হবে। মাটির ভেতর চারার মূল যেন সোজাভাবে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চারা লাগানোর পর চারার গোড়ার চারদিকের ভেজা মাটি অল্প চেপে দিতে হবে। চারা রোপণের পর প্রয়োজন অনুযায়ী গাছে জল প্রয়োগ করতে হবে।

পেঁপে গাছের সার প্রয়োগ (Manuring)


পেঁপে গাছ দ্রুত বাড়ে এবং এক বছরের মধ্যে প্রচুর ফল উৎপন্ন করে। তাই পেঁপে গাছে প্রচুর পরিমাণে সার প্রয়োগ করা একান্ত দরকার। চারা লাগাবার আগে গর্তে সার প্রয়োগ ছাড়াও গাছে বছরে দু'বার সার প্রয়োগ করতে হবে। যেমনঃ

   সারের নাম

লাগাবার সময় প্রতি গর্তে সারের পরিমাণ

প্রতি গাছে প্রতিবছর সারের পরিমাণ

জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়

আশ্বিন-কার্তিক

গোবর সার

২০ কেজি

৭.৫ কেজি

৭.৫ কেজি

ইউরিয়া

৯০ গ্রাম

১৫০ গ্রাম

১৫০ গ্রাম

সুপার ফসফেট

৭৫ গ্রাম

৪৫০ গ্রাম


মিউরিয়েট অব পটাশ

৭৫ গ্রাম

১৫০ গ্রাম

১৫০ গ্রাম

বড় গাছের গোড়া থেকে দু'ফুট দূরে সার ছড়িয়ে কোদাল দিয়ে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে সার মেশানোর সময় যেন শেকড় না কেটে যায়। মাটিতে যথেষ্ট রস না থাকলে সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে। ফলের বাগানে পেঁপে গাছকেই অন্তর্বর্তীকালীন ফল হিসাবে চাষ করা হয়।

অন্তর্বর্তী পরিচর্যা (Interculture operation)


পেঁপে বাগান পরিষ্কার রাখা দরকার। এজন্যে বর্ষার আগে ও বর্ষার পরে গাছের গোড়ার মাটি কুপিয়ে আগাছা দমন ও মাটি আলগা করে দিতে হবে। পেঁপে জমির মাটি গভীর করে কোপানো কোনমতেই উচিত নয়। কারণ পেঁপের শিকড় মাটির অল্প নীচে থাকে এবং গভীর করে কোপালে গাছের ক্ষতি হয়। গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে মাটি দেওয়া দরকার। 

এতে গাছ ভালভাবে বসবে ও ঝড়ে পড়ে যাবে না। চারা লাগাবার চার-পাঁচ মাস পরে গাছে ফুল এলে প্রতি গর্তে একটি করে স্ত্রী গাছ রেখে বাকী গাছগুলো তুলে দিতে হবে। বাগানে মোট গাছের শতকরা ১০টি পুরুষ গাছ রাখা দরকার। এগুলো বাগানের চারদিকে ছড়িয়ে থাকবে। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমে তার জন্যে জলনিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। 

পেঁপে গাছে এক জায়গায় গাদাগাদি করে অনেক ফল ধরে। গাছে সব ফল থাকলে কোন ফলই ঠিকমত বাড়ে না ও ফল মিষ্টিও হয় না। বড় পেঁপে পাওয়ার জন্যে ছোট অবস্থায় কিছু পেঁপে পাতলা করে দেওয়া দরকার। ছোট অবস্থায় অনেক সময় পেঁপে ঝরে যায় (Premature falling)। এটি রোগের আক্রমণ, সেচের অভাব ও হরমোনের অভাবের জন্যে হতে পারে। সেচের অভাব প্রয়োজনীয় সেচ দিয়ে পূরণ করা যায়। রোগের আক্রমণ হলে প্রয়োজনীয় রোগনাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। হরমোনের জন্য হলে প্লানোফিক্স প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যায়।

পেঁপে গাছের পানিসেচ (Irrigation)


পেঁপের আকার ও ফলন সেচের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে পেঁপে জমিতে জলসেচ করা দরকার। সাধারণতঃ শীতকালে ১০-১৫ দিন পর ও গ্রীষ্মকালে ৭-৮ দিন পর একটি করে সেচ দেওয়া দরকার। বেলে মাটিতে ঘন ঘন সেচ দেওয়া উচিত। পেঁপে গাছের গোড়ার চারদিকে বৃত্তাকার গর্তে জলসেচ দেওয়া হয়। 

গাছের গোড়ায় যাতে জল জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ গাছের গোড়ায় জল জমলে গোড়া পচা রোগ দেখা যায়। সেচের পর 'জো' এলে কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে। জমি ভাসিয়ে সেচ দিলে বা সেচের জল বেশী হলে গাছের পাতা হলদে হয়ে ঝরে গাছ অকালে মরে যেতে পারে।

পেঁপে গাছের ফলতোলা ও ফলন (Harvesting & Yield)


সাধারণতঃ এক বছরের মধ্যেই পেঁপে গাছে প্রথম ফল আসে ও বাগানে চারা রোপণের ১০-১৪ মাস পরে ফলগুলো পরিণতি লাভ করতে শুরু করে। গাছ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন সব সময়ই অল্পবিস্তর ফল ধরে। পার্বত্য অঞ্চলে ফাল্গুন মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত ফল পাকে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সাধারণতঃ পেঁপে পাকে না। উত্তর ভারতের সমতল অঞ্চলে গ্রীষ্ম ও বসন্ত কালে পেঁপে পাকে। দক্ষিণ ভারতে বছরের সব সময়েই পেঁপে পাকতে থাকে। তবে আষাঢ় থেকে ফাল্গুন মাসেই বেশী।

পেঁপে গাছের ফল পাড়া (Picking)


পেঁপে পাকা ও কাঁচা উভয় অবস্থাতেই তোলা যায়। পেঁপের রঙ ধরলে ও দুধের মত আঠা জলের মত হলেই পেঁপে তুলে নিতে হবে। সুপক্ক পেঁপের রঙ হলদে অথবা গোড়ার দিকে ফিকে সবুজ আভাযুক্ত হয়। কোন কোন জাতের পেঁপে পাকলেও সবুজ থেকে যায়। গাছে ফল পাকাতে পারলে স্বাদ ভাল হয়। স্থানীয় বাজারে বিক্রীর জন্যে কিংবা বাড়ীতে খাবার জন্যে গাছ থেকে সুপক্ক ফল তোলা উচিত। পাখির উপদ্রবে গাছে ফল পাকানো সম্ভব যদি না হয়, তাহলে পুষ্ট ফল গাছ থেকে তুলে ঘরে পাকিয়ে নেওয়া ভাল। বড় গাছে মই লাগিয়ে সাবধানে হাত দিয়ে পেঁপে তোলা দরকার।

পেঁপে প্যাক করা (Packing)


  • পেঁপে খুব নরম ফল ও অতি সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্যে পেঁপে সাবধানে প্যাক করা দরকার।
  • বাঁশের ঝুড়ির তলায় খড় বা ওই জাতীয় কোন নরম জিনিস বিছিয়ে দূরের বাজারে পাঠান যায়।
  • প্যাক করার সময় ফলের চারদিকে খড় ভাল করে সাজিয়ে দিতে হবে।
  • ফল বড় হলে ঝুড়িতে এক স্তর ফলের ওপর আর ফল না চাপানোই ভাল।
  • কারণ তা হলে উপরের ফলের চাপে নীচের ফল জখম হবার সম্ভাবনা থাকে না।
  • অবশ্য ছোট পেঁপেকে দু-স্তরে প্যাক করা যায়। তবে দুটো স্তরের মাঝে ভাল করে খড় বিছিয়ে দেওয়া দরকার।

পেঁপে পাকানো (Ripening of fruits)


বস্তায় ভরে বা খড়ের মধ্যে রাখলে পরিণত পেঁপে দু-এক দিনে পেকে যায় এবং কমলা বর্ণের সুন্দর রঙ ধারণ করে। ২০° সেলসিয়স তাপমাত্রায় ফলকে ভালভাবে পাকান ও সংরক্ষণ করা যায়। এর বেশী তাপমাত্রায় পাকা ফল ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়।

ফলন (Yield)


পেঁপে গাছে প্রথম দু-বছর ভাল ফলন হয়। তৃতীয় বছর বা তার পরে ফলন কমতে থাকে। এজন্যে সাধারণতঃ তিন বছর পর বাগানে পুরানো গাছ রাখা উচিত নয়। গাছগুলো দু'বছরের হলে দুটো গাছের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় নতুন করে চারা রোপণ করা দরকার। এগুলোতে ফল ধরা শুরু হলে পুরানো গাছগুলোকে কেটে দিতে হবে। প্রতি গাছে গড়ে ২৫-৭৫টি ফল ধরে এবং প্রতি ফল ১/২-৩ কেজি পর্যন্ত হয়। ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি একরে পেঁপের বাৎসরিক ফলন ১৫০-৩০০ কুইন্টাল হয়।

পেঁপের জাত (Varieties of Papaya)


পেঁপের বিভিন্ন জাত আছে যেমনঃ ওয়াশিংটন, মধুবিন্দু (Honey dew), কূর্গ মধুবিন্দু (Coorg Honey dew), রাঁচি, সিঙ্গাপুর, সিলোন, হাওয়াই, সোলো প্রভৃতি। তামিলনাড় কৃষি-বিশ্ববিদ্যালয়, কোয়েম্বাটোর থেকে কো-১ (Coimbatore-1), কো-২, কো-৩ ও কো-৪ জাতগুলো বের হয়েছে। বিহারের পুসায় ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের আঞ্চলিক কেন্দ্রে পেঁপের কয়েকটি সম্ভাবনাময় জাত চিহ্নিত হয়েছে। যেমন পুসা ডেলিসাস (পুসা-১-১৫), পুসা মেজেষ্টি (পুসা ২২-৩), পুসা জায়েন্ট (পুসা ১-৪৫ ভি), পুসাঃ ডোয়ার্ফ (পুসা ১-৪ ডি) প্রভৃতি। এ ছাড়া জি. বি-পন্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পন্থনগর থেকে কয়েকটি পেঁপের জাতকে নির্বাচন করা হয়েছে। যেমন পন্থ পেঁপে (Pant Papaya)-১, পন্থ পেঁপে-২ পন্থ পেঁপে-৩।

পেপেন সংগ্রহ (Collection of papain)


কাঁচা পেঁপের আঠায় পেপেন থাকে। পেপেন সংগ্রহের জন্যে বড় আকারের ফলই ভাল। তিনমাস বয়সের পেঁপে থেকে আঠা সংগ্রহ করা দরকার। ফলগুলোর গায়ে ৪-৫ জায়গায় বাঁশের ছাল বা স্টেনলেস স্টীলের ছুরি দিয়ে ১-২৫ সেমি অন্তর ০-৩ সেমি গভীর লম্বালম্বি আঁচড় (incisions) দিতে হবে। একটা ফল থেকে ৪-৫ বারের বেশী আঠা নেওয়া যায় না। 

পরিষ্কার কাঁচের বা পাথরের পাত্র করে আঠা সংগ্রহ করতে হবে। এই আঠা কড়া রোদে বা গরমে (৫০-৫৫০ সেলসিয়স তাপমাত্রায়) শুকিয়ে নেওয়া হয়। আঠার সাথে পটাসিয়াম মেটাবাইসালফাইড ০-০৫ শতাংশ (Potassium metabisulphide) মিশিয়ে আঠা শুকনা করা দরকার। এতে পেপিন অনেকদিন সংরক্ষিত থাকে। 

শুকনা পেপিনকে গুঁড়া করে ও চেলে নিয়ে পলিথিন ব্যাগে বা অন্য কোন উপযোগী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। জাত, গাছের বৃদ্ধি ও ফলের আকার এবং চাষ পদ্ধতির ওপর গাছ প্রতি বা একর প্রতি পেপেন উৎপাদনের পরিমাণ নির্ভর করে। প্রথম বছরে প্রতি গাছ থেকে ৫৬-১১২ গ্রাম পেপিন পাওয়া যায় এবং সেই হিসাবে একর প্রতি ৭০-৮০ কেজি পেপিন পাওয়া যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন