লেবু গাছের ডাল ছাঁটাই - লেবু গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি

লেবু গাছের ডাল ছাঁটাই এবং লেবু গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পরতে হবে।
লেবু গাছের ডাল ছাঁটাই
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি লেবু গাছে ফুল আনার উপায় এবং লেবু গাছে ফুল আসে কোন মাসে। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

লেবু চারা রোপণ করা হয় কি ভাবে


জমি চাষ ভালভাবে তৈরী করতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট দূরত্বে ২×২×২ ফুট (৬০ X ৬০ X ৬০ সেমি) মাপের গর্ত করে সপ্তাহ দুয়েক রেখে দিতে হবে। গর্তের মাটির সঙ্গে নিম্নলিখিত পরিমাণ সার মেশাতে হবে।
গোবর বা আবর্জনা সার ১৫ কেজি।
সুপার ফসফেট ৫০০ গ্রাম।

সার মেশান মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। চারা লাগাবার সময় প্রতি গর্তে ১৫-২০ গ্রাম বি-এইচ-সি-১০ শতাংশ প্রয়োগ করা দরকার। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস লেবুর চারা রোপণের পক্ষে ভাল সময়। বিকেলের দিকে গর্তের মাঝখানের মাটি সরিয়ে কলমের বা বীজের চারা রোপণ করতে হবে। লেবুর জাত অনুযায়ী চারা রোপণের দূরত্বের তারতম্য হয়। যথাঃ

লেবুর প্রকার

সারির দূরত্ব

গাছের দূরত্ব

হেক্টর প্রতি গাছের সংখ্যা

পাতি ও কাগজী

১৫ ফুট বা ৪.৫ মিটার 

১৫ ফুট বা ৪.৫ মিটার 

৪৯০

বাতাবীলেবু

২০ ফুট বা ৬ মিটার 

২০ ফুট বা ৬ মিটার 

২৭৮

কমলালেবু

৬ মিটার

৬ মিটার

২৭৮

(ক) কলমের চারা

৮ মিটার

৮ মিটার

১৫৬

(খ) বীজের চারা মুসঙ্গী

৬ মিটার

৬ মিটার

২৭৮

লেবুর চারা সাধারণতঃ বর্গাকার পদ্ধতিতে লাগান হয়। চারা রোপণের পর চারার গোড়ার চারদিকে মাটি অল্প চেপে দিতে হবে এবং বৃষ্টি না হলে জলসেচ দিতে হবে।

লেবু গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি


লেবুর ভাল ফলন পাওয়ার জন্যে লেবু গাছের গোড়ায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা দরকার। বছরে দু'বার (অর্থাৎ মাঘ মাসে ও আশ্বিন মাসে) সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পরিমাণ নিম্নরূপঃ

সারের নাম

এক বছর বয়স্ক গাছে সারের পরিমাণ

বছর প্রতি সারের বৃদ্ধির হার

৬ বছর বা তার বেশী বয়সের গাছে সারের পরিমাণ

গোবর বা আবর্জনা সার

১০ কেজি

১০ কেজি

৬০ কেজি

অ্যামোনিয়াম সালফেট

২৫০ গ্রাম

২৫০ গ্রাম

১.৫০০ কেজি

সুপার ফসফেট

৫০০ গ্রাম



খইল

১০০০ কেজি

১০০০ কেজি

১.৫০০ কেজি

মিউরিয়েট অব পটাশ

২৫০ গ্রাম

২৫০ গ্রাম

১.৫০০ কেজি 

বা কাঠের ছাই

১০০০ গ্রাম

১০০০ গ্রাম

৯.০০০  কেজি 

ছ'বছর পরেও প্রতি বছর ২৫০ গ্রাম হিসাবে বাড়িয়ে ১১/২ কেজি পর্যন্ত ইউরিয়া প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। লেবু জাতীয় ফলের গাছে অনেক সময় নানাবিধ অণুখাদ্যের অভাবজনিত রোগ দেখা যায়। যেমন: শাখাগুলো ডগার দিক থেকে থেকে শুকিয়ে আসা (Die back), ছোট পাতা ও পাতায় হলদে সবুজ ছিট্ ছিট দাগ (Mottling), শাখার বৃদ্ধি কম হওয়ায় কোন পর্বে গোছা গোছা পাতা উৎপন্ন হওয়া ইত্যাদি। 

সাধারণতঃ লেবু গাছে লৌহ, তামা, দস্তা, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি অণুখাদ্যের অভাব দেখা যায়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নিম্নলিখিত মিশ্রণ প্রয়োগ করলে এসব অভাবজনিত রোগ দূর হয়। যথাঃ প্রতি ১০ লিটার জলের জন্যে।
  • কপার সালফেট ৭ গ্রাম।
  • জিঙ্ক সালফেট ১০-২০ গ্রাম।
  • বোরাক্স ২ গ্রাম।
  • ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৪-৫ গ্রাম।
  • চুন ২০-৪০ গ্রাম।
  • ফেরাস সালফেট 8 গ্রাম।

অন্তর্বর্তী পরিচর্যা (Interculture Operation)


জলসেচের পর 'জো' এলে গাছের গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা ও আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে এমনভাবে বেঁধে দিতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে।

লেবু গাছের ডাল ছাঁটাই


লেবু গাছের গোড়া থেকে অনেক সময় খুব সতেজ পেন্সিলের মত নতুন ডাল বের হয়ে খাড়া ওপরের দিকে উঠতে দেখা যায়। এ গুলোকে অকেজো ডাল বা জোলো ডাল বা ডবকা ডাল (Water Sucker) বলে। এসব ডালে লেবু ধরে না ও ডালগুলো গাছে থাকলে লেবুর ফলন কম হয়। অতএব এগুলোকে নিষ্ফলা ডাল বলা চলে। গাছে এসব শাখা দেখা মাত্রই কেটে দেওয়া দরকার। এছাড়া রোগগ্রস্ত ও শুকনা শাখাগুলোকে ছেঁটে দিতে হবে।

লেবু গাছে ফুল আনার উপায়


গাছে ফল ধরার বয়সে গাছে ফল না ধরলে ফল ধরার প্রায় দু'মাস আগে (অর্থাৎ বর্ষার প্রারম্ভে) ও শীতকালে গাছের গোড়ার মাটি খুঁড়ে কিছু সরু শিকড় ও দু-একটা মোটা শিকড় কেটে দিতে হবে। তারপর পরিমিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করে গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে। এ রকম ব্যবস্থা করলে গাছে ফুল আসতে পারে।

লেবু গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ


ভারতবর্ষে লেবু গাছে অধিক সংখ্যায় ফল ঝরে যাওয়া একটি অন্যতম সমস্যা। কতিপয় হরমোন জাতীয় ঔষধ প্রয়োগ করে অকালে ফল ঝরে যাওয়া রোধ করা সম্ভব।

লেবু গাছের পানিসেচ


লেবু বাগিচায় পানিসেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাটির প্রকৃতি ও পানি হাওয়ার ওপর পানিসেচ নির্ভর করে। মাটির রস শুকিয়ে গেলে ও গাছের পাতা গুটিয়ে গেলে অবশ্যই সেচ দেওয়া দরকার। লেবু বাগিচায় ঠিকমত সেচ দিলে গাছের পাতার সংখ্যা বাড়ে ও গাছও তাড়াতাড়ি বড় হয়। সাধারণতঃ ৩-৪ সপ্তাহ অন্তর পানিসেচ দিলেই চলে। গাছের গোড়ায় অঙ্গুরীয়কাকার গর্তে পানিসেচ দেওয়া দরকার। কারণ সরাসরি গোড়ায় পানি লাগলে গাছের ক্ষতি হয়।

লেবু গাছে ফুল আসে কোন মাসে


লেবু জাতীয় গাছে সাধারণতঃ তিন বছর বয়স থেকেই অল্প অল্প ফল ধরতে শুরু করে। তবে বীজ থেকে উৎপন্ন গাছে ৬-৭ বছর বয়স থেকে ফল ধরে। উত্তর ভারতে মালটা, মোসাম্বী প্রভৃতি কমলা লেবুর মার্চ মাসে ফুল আসে এবং ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে ফল চয়ন করা । হয়। দক্ষিণ ভারতে গাছে দু'বার ফুল আসে। ও ফল ধরে এবং অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ফল চয়ন করা হয়। ফুল ফোটার পর ফল পাকতে নয় মাস সময় লাগে। কাগজী ও পাতিলেবুর বছরে একাধিকবার ফুল আসে এবং ছ'মাস পরে ফল চয়ন করা যায়।

লেবু গাছের ফল সংগ্রহ


সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বেশী ফলন পাওয়া যায়। বাতাবী লেবু উত্তর ভারতে জানুয়ারী-মার্চ মাসে, দক্ষিণ ভারতে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে ও পূর্ব ভারতে জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে তোলার উপযোগী হয়। লেবুর মধ্যে চিরহরিৎ গাছগুলোতে বছরে তিনবার (যথা জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী, মে-জুন ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে) ফুল ও পাতা আসতে পারে। 

মে-জুন মাসের ফুলকে শ্রীগ বাহার, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসের ফুলকে অম্বী বাহার ও সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসের ফুলকে হসৎ বা হাতী বাহার বলে। ফল পুষ্ট হলেই রং বদলাতে শুরু করে এবং পাকার সময় হলদে বর্ণ ধারণ করে। এছাড়া তৈলরন্ধ্রগুলো স্পষ্ট হলে ফল তোলার উপযুক্ত হয়। ফল তুলে ও আকার অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ (grading) করে কাঠের বাক্সে প্যাকিং করে দূরের বাজারে পাঠানো যায়। 

৪০-৬০ সেলসিয়স তাপমাত্রায় ও ৮৫-৯০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় কমলালেবু হিমঘরে তিনমাস পর্যন্ত রাখা যায়। কাগজী ও পাতিলেবুকে ১১° সেলসিয়স তাপমাত্রায় ও ৮০-৯০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় দু-মাস পর্যন্ত রাখা যায়। কমলা, মোসাম্বি ও বাতাবীলেবু সম্পূর্ণ পাকলে গাছ থেকে তোলা উচিৎ।

ফলন (Yield)


গাছ প্রতি কমলালেবুর ৫০০-৬০০টি ফল, কাগজী ও পাতি লেবুর ২০০০-৪০০০টি ফল এবং বাতাবী লেবুর ৩০০-৬০০টি ফল পাওয়া যায়। কমলালেবুর একর প্রতি গড় ফলন উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ুতে ৪০ কুইন্টাল ও অন্ধ্রপ্রদেশে ৭২ কুইন্টাল হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন