কাজুবাদামের বংশবিস্তার - কাজুবাদামের অন্তর্বর্তী পরিচর্যা

কাজুবাদামের বংশবিস্তার এবং কাজুবাদামের অন্তর্বর্তী পরিচর্যা সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
কাজু বাদামের চারা লাগানোর পদ্ধতি
ব্রকলির কোন মাটিতে ও কোন জলবায়ু চাষ করা হয়এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি কাজুবাদাম কোন মাটিতে চাষ করা হয় এবং কাজুবাদামের গাছে কোন মাসে ফুল ও ফল হয়। এছাড়া আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

কাজুবাদাম বৈজ্ঞানিক নাম (Cashewnut Scientific name)


Anacardium occidentale L.
গোত্রঃ (Family or Natural order): Anacardiaceae.

ভূমিকা


কাজুবাদাম একটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী ফল। এটি আজকাল খুবই পরিচিত এবং উপাদেয় মুখরোচক খাবার। দক্ষিণ আমেরিকা এর জন্মস্থান। ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগীজরা ভারতবর্ষের মালাবার উপত্যকায় প্রথম কাজুবাদামের গাছ আমদানী করে। ভূমিক্ষয় (Soil erosion) রোধের জন্যে প্রথমতঃ এই গাছ লাগান হত। 
বিংশ শতাব্দীতে কাজুবাদাম বাণিজ্যিক ফসল হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কাজুবাদামের নানান গুণের জন্যে এবং এদেশের জল-হাওয়াতে গাছটি খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্যে কাজুবাদাম বর্তমানে খুবই সমাদর পাচ্ছে। ভারতবর্ষে ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্যে এর যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। পৃথিবীর চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ ভারত থেকে পূরণ করা হয়। 

অবশ্য ভারতে সমগ্র চাহিদার পঞ্চাশ শতাংশের বেশী কাজু উৎপন্ন হয় না। প্রধানতঃ পূর্ব আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে থেকে কাঁচা কাজু আমদানী করে ভারত তৈরী কাজু বিদেশের বাজারে বিক্রী করে। কাজু উৎপাদনে আফ্রিকা, ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, মালয় ও ইন্দোনেশিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য।

ভারতের কোথায় কাজু বাদাম চাষ হয়


পৃথিবীর মধ্যে ভারতে এর উৎপাদন সব থেকে বেশী হয়। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু উড়িষ্যা, কর্ণাটক, বোম্বাই, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি ভারতের প্রধান প্রধান কাজু উৎপাদক রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলায় অল্পবিস্তর কাজুবাদামের চাষ হয়। তন্মধ্যে মেদিনীপুর জেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলে ঝোপঝাড়ে প্রচুর কাজুবাদামের গাছ দেখা যায়।

কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ


কাজুবাদামের প্রতিটি অংশ মানুষের কাজে লাগে। বাদাম বা ফলটির খাদ্যগুণ প্রচুর। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট (Unsaturated fats), খনিজ পদার্থ (যেমন ক্যালসিয়ম, ফসফরাস, লৌহ প্রভৃতি) এবং খাদ্যপ্রাণ থাকে। সব রকম অ্যামাইনো অ্যাসিড সমন্বয়ে কাজু-প্রোটিন সুষম খাবার। এজন্যে প্রোটিন হিসাবে সয়াবিন এবং প্রোটিনজাত দ্রব্য হিসাবে মাছ, মাংস ও দুধের সমান বলে বিবেচনা করা হয়।

কাজুবাদাম কোন আবহাওয়া বা জলবায়ুতে চাষ করা হয়


কাজুবাদাম সম্পূর্ণরূপে উষ্ণমণ্ডলীয় গাছ। আর্দ্র ও গরম আবহাওয়া কাজুবাদাম চাষের পক্ষে উপযোগী। কাজুবাদামের জন্যে বছরে ৩০ সেমি বৃষ্টিপাত দরকার। তবে ৩০০-৪০০ সেমি- পর্যন্ত বৃষ্টিপাতও সহ্য করতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯০০ মিটার উঁচুতে এই গাছ হলেও ৪৫০ মিটারের চেয়ে নীচু জমিই অধিকতর উপযুক্ত বলে বিবেচিত। 
কাজুবাদামের গাছ খুব শক্ত ও খরা-সহনশীল (Drought resistant)। তাই গ্রীষ্ম-কালের শুকনা আবহাওয়াতেও গাছের বিশেষ ক্ষতি হয় না। কাজুবাদাম গাছ বেশ মজবুত বলে ঝড়ে কোন ক্ষতি হয় না। তাই ঝড় নিবারক গাছ (Wind break) হিসাবেও কাজুবাদাম গাছ লাগানো হয়। তবে ফুলের মরসুমে আবহাওয়া শুষ্ক এবং উত্তপ্ত হলে ভাল ফল ধরে না।

কাজুবাদাম কোন মাটিতে চাষ করা হয়


কাঁকুড়ে বা বেলে মাটি থেকে এঁটেল পর্যন্ত প্রায় সবরকম মাটিতেই কাজুবাদামের চাষ করা যেতে পারে। তবে গভীর দোআঁশ মাটিতে এই গাছের বাড় ভাল হয়। অনুন্নত, অনুর্বর ও পতিত জমিতে কাজুবাদামের চাষ করা যায়। কাজুবাদাম গোড়ায় জল দাঁড়ানো সহ্য করতে পারে না। তাই জমিতে, বিশেষ করে এঁটেল মাটিতে, জলনিকাশের ভাল ব্যবস্থা থাকা দরকার।

কাজুবাদামের বংশবিস্তার (Propagation)


কাজুবাদামের বীজ দিয়ে ও কলম করে বংশবিস্তার করা যায়। বীজ থেকেই সাধারণতঃ কাজুবাদামের চারা তৈরী করা হয়। ঝাঁকালো ও সবল গাছ এবং নিয়মিত ভাল ফলন দেয় এমন গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরী করা দরকার। সাধারণতঃ ১৫-২৫ বছরের সুস্থ-সবল ও সতেজ গাছের বীজই চারা তৈরীর পক্ষে ভাল। 

প্রতিটি বীজের ওজন ৬-৮ গ্রাম হওয়া চাই। সাধারণতঃ সদ্য বছরের পরিপক্ক (matured seed) বীজই চারা তৈরীর পক্ষে ভাল। আষাঢ় মাসে লাগানোর জন্যে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ সংগ্রহ করে বালতির জলে ফেলে দিয়ে পুষ্ট বীজ বাছাই করে নিতে হবে। বালতির জলে যে বীজগুলো ডুবে যাবে, সেগুলোই বীজ হিসাবে উৎকৃষ্ট এবং চারা তোলার উপযুক্ত।

কাজু বাদামের চারা লাগানোর পদ্ধতি


কাজুবাদামের বীজ সরাসরি মূল জমিতে বপন করা দরকার। কারণ বীজতলায় চারা তৈরী করে লাগালে বাঁচে না। অবশ্য পলিথিন ব্যাগে মাটি ভরে তাতে বীজ পুঁতে চারা তৈরী করা যায়। এজন্যে পলিথিন ব্যাগ সার-মাটি দিয়ে ভর্তি করে ব্যাগগুলি বেশ ভালভাবে নার্শারিতে উপরদিকে খোলামুখ রেখে মাটির ২-৩ ইঞ্চি (৫-৭-৫ সেমি) গভীরে পুঁতে দিতে হবে। 

এর পর প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ হাত দিয়ে পুঁতে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন পরে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হয়। জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে মাটি সমেত (পলিথিন ব্যাগটা কেটে দিয়ে) বলিষ্ঠ চারাটি, রোপণ করতে হবে। বীজ জলে ২-৩ দিন রেখে বপন করাই ভাল। কারণ এতে বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়।

কাজু বাদাম চাষ পদ্ধতি


চারা বা বীজ যাই লাগানো হোক না কেন জমি তৈরী করে ৭-৮ মিটার অন্তর ৫০ × ৫০ × ৫০ সেমি. মাপের গর্ত করে মাটিকে কয়েকদিন ভালভাবে রোদ খাওয়ানো দরকার। তারপর গর্তের মাটির সাথে জৈব সার (মাটি ও জৈব সারের পরিমাণ-১:১) মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করে দিতে হবে। আষাঢ় মাসে প্রতি গর্তে ২-৩টি করে বীজ ৫-৭ সেমি গভীরে হাত দিয়ে পুঁতে লাগাতে হবে। 

বীজের আপেল সংলগ্ন দিকটা উপরে রেখে ও একটু হেলিয়ে বীজ পুঁততে হবে। অঙ্কুরোদগমের সময় বীজপত্র দুটো মাটির উপরে উঠে এলে পশু-পাখীতে তা খেয়ে নষ্ট করে দিতে পারে। এজন্যে বীজ বোনার পর চারা গাছকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চারা একটু বড় হলে অর্থাৎ বীজ বোনার এক মাস পরে সতেজ ও বলিষ্ঠ চারাটিকে রেখে বাকীগুলোকে তুলে ফেলতে হবে। 

চারা লাগালে প্রতি গর্তে একটি করে লাগাতে হয়। কাজুবাদামের অঙ্গজ বিভাজন (Vegetative Propagation) পদ্ধতির সাহায্যে বিশেষ করে গুটি কলমের দ্বারা বংশবিস্তার করানো যায়। ভাল জাতের গাছ পেতে হলে অঙ্গজ বিভাজন বা কলমের গাছ ব্যবহার করা দরকার। কলমের গাছও ৭-৮ মিটার দূরে দূরে লাগান হয়। মাটি উর্বর হলে ১০ মিটার পর্যন্ত দূরত্বে গাছ লাগানো যায়। গাছ লাগাবার আগে প্রতি গর্তে নিম্নলিখিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। যেমনঃ
  • খামারের সারঃ ১৫ কিলোগ্রাম
  • বা সরষের খইলঃ ১.৫
  • সুপার ফসফেটঃ ১০০
  • পটাসিয়াম সালফেটঃ ১.৫০ গ্রাম

কাজুবাদাম সার প্রয়োগ পদ্ধতি


সাধারণতঃ কাজুবাদাম গাছে কোন সার দেওয়া হয় না। তবে বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, সার প্রয়োগ করলে গাছ ভালভাবে বাড়ে ও ফলন ভাল হয়। কেন্দ্রীয় ফল অনুসন্ধান সংস্থার (Central Plantation Research Institute) সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি গাছে ২৫০ গ্রাম নাইট্রোজেন, ১২৫ গ্রাম ফসফরাস ও ১২৫ গ্রাম পটাশিয়াম প্রয়োগ করতে হবে। এই সার প্রতি বছর দু'বারে (অর্থাৎ বর্ষার আগে একবার ও বর্ষার পরে দ্বিতীয় বার) প্রয়োগ করতে হবে। একর প্রতি কাজু বাদাম বাগানের সার প্রয়োগের পরিমাণ নিম্নরূপঃ

গাছের বৃদ্ধিদশা (Stage of growth)

একর প্রতি সারের পরিমাণ (কেজিতে) (Fertilizer requirement per acre)

মে-জুন

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর

না

না

প্রথম বছর

৪০

৩২

-

২০

১৬

-

দ্বিতীয় বছর

২০

১৬

১২

২০

১৬

১২

তৃতীয় বছর

৪০

২৪

২৪

৪০

২৪

২৪

চতুর্থ বছর বা তারপর

৫০

২৪

২৪

৫০

২৪

২৪

                        না = নাইট্রোজেন, ফ = ফসফরাস, প = পটাশিয়াম।

কাজুবাদামের অন্তর্বর্তী পরিচর্যা


কাজুবাদাম বাগিচায় সাধারণতঃ বিশেষ মাধ্যমিক পরিচর্যা করা হয় না। বাগানের প্রাথমিক অবস্থায় মাঝে মাঝে আগাছা তুলে দিলে উপকার হয়। মাটির কাছাকাছি শাখা-প্রশাখা এবং শুকনা ও রোগগ্রস্ত-শাখা কেটে দিতে হবে। কাজুবাদাম গাছ ছোট থাকাকালীন বাগিচায় মধ্যবর্তী ফসল (Inter Crops) চাষ করা যায়। 

মধ্যবর্তী ফসল হিসাবে লংকা, আদা, হলুদ, মিষ্টি আলু, কলাই চাষ করা যায়। কাজুবাদাম গাছে ফুল ধরতে শুরু করলে আর এসব ফসল চাষ করা উচিত নয়। মধ্যবর্তী ফসল চাষ করলে সার ও সেচের খরচ বাঁচে এবং গাছ বাড়তে সুবিধে পায়। কাজুবাদাম গাছ কষ্টসহিষ্ণু বলে সেচ দেওয়ার বিশেষ প্রচলন নেই। তবে ছোট অবস্থায় তিন-চার বছর পর্যন্ত খরার সময় ৩-৫টি সেচ দেওয়া ভাল। এতে গাছের বৃদ্ধি ভাল হবে। মধ্যবর্তী ফসলে সেচ দিলে কাজুবাদাম গাছের কিছুটা উপকার হয়।

কাজুবাদামের গাছে কোন মাসে ফুল ও ফল হয়


বীজের গাছে তিন-চার বছর পরেই ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। কলমের গাছ লাগানোর পরের বছরই ফুল আসতে পারে। দশ বছর বয়সে গাছ পূর্ণ ফলবতী (Full bearing age) হয় ও ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। গভীর মাটিতে চাষ করা গাছ ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের গাছ ঝাঁকালো (Spreading) হয় ও পাহাড়ী এলাকায় গাছ সোজা ও লম্বা (Erect & tall) হয়। 

সাধারণতঃ কাজু গাছে আবহাওয়ার তারতম্য অনুযায়ী নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ফুল আসতে দেখা যায় এবং মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত গাছে ফল থাকে। গাছে দু-তিনবার ফুল আসে এবং মাঝখানের ফোটা ফুল থেকে বেশী ফল হয়। বর্ষাকালে ভাল বৃষ্টি হলে ফলন ভাল হয়। কিন্তু ফুল ফোটার সময় বৃষ্টিপাত ও মেঘলা আবহাওয়া ফসলের পক্ষে ক্ষতিকর। 

কাজুবাদাম গাছে পুরুষ ফুল (Male flower) ও উভলিঙ্গ (Hermaphrodite) ফুল দেখা যায়। কাজুবাদাম গাছে পুরুষ ফুল আগে ও সারা শীতকাল ধরেই আসতে পারে এবং উভলিঙ্গ ফুল পরে অর্থাৎ শীতের শেষে আসে। উভলিঙ্গ ফুল থেকে কাজুবাদাম উৎপন্ন হয়।

কাজুবাদাম সংগ্রহ ও ফলন


বৃদ্ধির প্রথম অবস্থায় কিডনীর মত দেখতে বীজের অংশটি পরিপুষ্ট হতে থাকে। কিছুদিন পরে বোঁটার অংশটি মোটা হয়ে ন্যাসপাতির আকার ধারণ করে। তখন মনে হয় যেন বীজটি ফল থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েছে। পাকার সময় বীজের রং ধূসর বা কালো এবং ফলের রং হলুদ, কমলা বা লাল হয়। ফুলের পরাগযোগের পর ফল পাকতে ৬০/৬৫ দিন সময় লাগে। 

গাছে ফুল ফোটার ৫৫-৭০ দিন পর থেকে কিছু কিছু ফল পাকে। পাকা ফল ঝরে পড়লে সেগুলোকে কুড়িয়ে নেওয়া হয়। আঁকশি দিয়েও ফল পাড়া যায়। পুষ্ট ও পাকা ফল থেকেই ভাল বাদাম পাওয়া যায়। ফল সংগ্রহ প্রায় মাসখানেক ধরে চলে। বাগান থেকে বাগানের, এমন কি গাছ থেকে গাছের ফলনের যথেষ্ট তারতম্য দেখা যায়। দুটো গাছ কখনোই একই রকম হয় না প্রতিটি গাছের ৫০-৬০ কেজি ফলন হয় এবং তা থেকে ১৬-২০ কেজি বাদাম পাওয়া যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন