স্ফেরোমিটারের সাহায্যে গোলীয় তলের বক্রতার ব্যাসার্ধ নির্ণয়
পরীক্ষার নাম: স্ফেরোমিটারের সাহায্যে গোলীয় তলের বক্রতার ব্যাসার্ধ নির্ণয়।
কোনো বক্রতল যে গোলকের অংশ সেই গোলকের ব্যাসার্ধকে ঐ বক্রতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ বলে। বক্রতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ r = r = d2/6h + h/2 …….(1)
এখানে, d = স্ফেরোমিটারের যেকোনো দুই পায়ের মধ্যবর্তী গড় দূরত্ব
h = তিন পায়ের শীর্ষবিন্দু তিনটির অবস্থান তল থেকে বক্রতলের পৃষ্ঠের উচ্চতা বা নিম্নতা
স্ফেরোমিটারের মোট পাঠ = রৈখিক স্কেল পাঠ+ বৃত্তাকার স্কেল পাঠ × লঘিষ্ঠ ধ্রুবক।
যন্ত্রপাতি
- স্ফেরোমিটার,
- সমতল কাচপাত,
- বক্রতল ও স্কেল।
কাজের ধারা
- ১. রৈখিক স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ঘরের মান ও বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা দেখে নিয়েছিলাম। ক্রুকে সম্পূর্ণ এক পাক ঘুরিয়ে যন্ত্রের পিচ নির্ণয় করে তাকে বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে লঘিষ্ঠ ধ্রুবক নির্ণয় করেছিলাম।
- ২. স্ফেরোমিটারকে সমতল কাচপাতের উপর স্থাপন করে ক্রুকে এমনভাবে ঘুরিয়েছিলাম যেন এর নিম্নপ্রান্ত পাতকে স্পর্শ করে। ঐ অবস্থায় বৃত্তাকার স্কেলের উপরের তল রৈখিক স্কেলের যে কয়টি ঘর অতিক্রম করেছে তা দেখে রৈখিক স্কেল পাঠ এবং বৃত্তাকার স্কেলের যে সংখ্যক দাগ রৈখিক স্কেলের গায়ে লেগে থাকে তা দেখে বৃত্তাকার স্কেল পাঠ নির্ণয় করেছিলাম।
- ৩. বৃত্তাকার স্কেলের পাঠকে লঘিষ্ঠ ধ্রুবক দ্বারা গুণ করে গুণফলের সাথে রৈখিক স্কেলের পাঠ যোগ করে মোট পাঠ নির্ণয় করেছিলাম।
- ৪. উপর্যুক্ত প্রক্রিয়ায় সমতল পাতের উপর কয়েক জায়গায় পাঠ নেওয়ার পর তাদের গড় মান বের করেছিলাম। এভাবে সমতল কাচপাতের পাঠ (h₁) পেয়েছিলাম।
- ৫. এরপর ত্রুটিকে কয়েক পাক ঘুরিয়ে উপরে তুলে স্ফেরোমিটারটিকে বক্রতলের উপর বসিয়েছিলাম যাতে স্ফেরোমিটারের তিনটা পা বক্রতলের উপরে থাকে। তারপর ক্রুকে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে এর শীর্ষকে বক্রতল স্পর্শ করিয়েছিলাম। উপর্যুক্ত পদ্ধতি অনুসারে রৈখিক স্কেল ও বৃত্তাকার স্কেলের পাঠ নিয়ে মোট পাঠ বের করেছিলাম। কয়েক বার পাঠ নিয়ে গড় মান (h₂) নির্ণয় করেছিলাম। প্রথম পাঠ (h₁) এবং দ্বিতীয় পাঠ (h₂)-এর পার্থক্য থেকে h-এর মান পেয়েছিলাম।
- ৬. একখণ্ড অনুভূমিক সাদা কাগজের উপর স্ফেরোমিটারটিকে বসিয়ে আস্তে চাপ দিয়ে কাগজের উপর স্ফেরোমিটারের তিনটি পায়ের ছাপ ফেলেছিলাম। যেকোনো দুই পায়ের মধ্যবর্তী দূরত্বই । ঐরূপ তিনটি দূরত্ব মেপে গড় ঐ নির্ণয় করেছিলাম।
- ৭. পরিশেষে h ও d-এর মান বক্রতার ব্যাসার্ধ নির্ণয়ের সূত্রে বসিয়ে প্রদত্ত বক্রতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ নির্ণয় করেছিলাম।
পর্যবেক্ষণ
রৈখিক স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ঘরের মান = 1 mm
পিচ = 1 mm: বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা = 100
লঘিষ্ঠ ধ্রুবক k = পিচ / বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা = 1mm/100
=0.01 mm = 0.001 cm
ছক ১: h নির্ণয়
হিসাব
r = d²/6h+h/2 =(2.35)2 / (6)(0.252) + 0.252 = 3.652+0.126 = 3.778 cm = 0.03778 m
ফলাফল
প্রদত্ত বক্রতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ r = 0.03778 m
ফলাফলের উপর আলোচনা
এ পরীক্ষার কার্যক্রম নিয়মমাফিক সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই আশা করা যায়, পরীক্ষালব্ধ বক্রতার ব্যাসার্ধ r- এর মান সঠিক। বক্রতার বক্রতলের ব্যাসার্ধের সঠিক মান পেতে যেসব বিষয় খেয়াল করেছিলাম তা হলো:
- ১. স্ফেরোমিটার ব্যবহার করার পূর্বে বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগসংখ্যা ও পিচ জেনে নিয়েছিলাম।
- ২. পিছট ত্রুটি পরিহার করার জন্য ক্রুকে যতদূর সম্ভব একই দিকে ঘুরিয়েছিলাম।
- ৩. ক্রুর নিম্নপ্রান্ত সমতল কাচপাত ও বক্রতলের পৃষ্ঠকে আলতোভাবে স্পর্শ করে কিনা তা ক্রু-শীর্ষের প্রতিবিম্ব দেখে নিশ্চিত হয়েছিলাম
উল্লেখ্য বক্রতার ব্যাসার্ধ r নির্ণয়ে d² থাকায় d-কে সূক্ষ্মভাবে মাপা দরকার। কিন্তু যেহেতু d মিটার স্কেলে চোখের আন্দাজে মাপা হয়, তাই r-এর প্রাপ্ত মান সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হওয়া কঠিন।
প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্র: ফেরোমিটার কী? একে স্ফেরোমিটার কেন বলা হয়?
উ: এটি একটি মাইক্রোমিটার স্তুবিশেষ যার সাহায্যে গোলকীয় তলের বক্রতার ব্যাসার্ধ, পাতলা পাতের পুরুত্ব ইত্যাদি পরিমাপ করা যায়। এই যন্ত্রের সাহায্যে গোলকীয় তল বা spherical surface-এর বক্রতার ব্যাসার্ধ পরিমাপ করা যায় বলে একে স্ফেরোমিটার বলা হয়।
২. প্র: পিচ কী?
উ: বৃত্তাকার স্কেলটি সম্পূর্ণ একবার ঘুরালে এটি রৈখিক স্কেল বরাবর যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে পিচ বলে।
৩. প্র: লঘিষ্ঠ ধ্রুবক কাকে বলে?
উ: স্ফেরোমিটারের সাহায্যে ক্ষুদ্রতম যে দূরত্ব পরিমাপ করা যায় তাকে এর লঘিষ্ঠ ধ্রুবক বলে। বৃত্তাকার স্কেলকে মাত্র এক ঘর ঘুরালে এটি রৈখিক স্কেল বরাবর যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে তা-ই লঘিষ্ঠ ধ্রুবক। যন্ত্রের পিচকে বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে লঘিষ্ঠ ধ্রুবকের মান পাওয়া যায়।
৪. প্র: স্ফেরোমিটারে কী কী ত্রুটি থাকতে পারে?
উ: স্ফেরোমিটারে দুই ধরনের ত্রুটি থাকতে পারে। যথা: যান্ত্রিক ত্রুটি ও পিছট ত্রুটি।
৫. প্র: স্ফেরোমিটারে যান্ত্রিক ত্রুটি কিভাবে হতে পারে?
উ: স্ফেরোমিটারের তিন পা এবং ক্রু-শীর্ষ যখন একটি সমতলকে স্পর্শ করে তখন বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ যদি রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে না যায় তাহলে যন্ত্রে ত্রুটি রয়েছে। এই ত্রুটিই যান্ত্রিক ত্রুটি। 100
৬. প্র: স্ফেরোমিটারের যান্ত্রিক ত্রুটি কিভাবে নির্ণয় করা যায়?
উ: ফেরোমিটারের তিন পা এবং ক্রু-শীর্ষ একটি সমতলকে স্পর্শ করলে যদি বৃত্তাকার স্কেলের উপরি- তল রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের উপরে থাকে তবে বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ রৈখিক স্কেল থেকে যত ঘর দূরে থাকে তাকে লঘিষ্ঠ ধ্রুবক দ্বারা গুণ করে ধনাত্মক যান্ত্রিক ত্রুটির মান পাওয়া যায়। আবার যদি বৃত্তাকার স্কেলের উপরিতল রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের নীচে থাকে তবে বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ রৈখিক স্কেল থেকে যত ঘর দূরে থাকে তাকে লঘিষ্ঠ ধ্রুবক দ্বারা গুণ করে ঋণাত্মক ত্রুটির মান পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, সমতল পাতের উপর স্ফেরোমিটারের পাঠের মানই যান্ত্রিক ত্রুটি।
৭. প্র: স্ফেরোমিটারের যান্ত্রিক ত্রুটি নির্ণয় করতে হয় না কেন?
উ: পাতলা পাতের বেধ নির্ণয় বা বক্রতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ নির্ণয়, উভয় ক্ষেত্রে দুই পাঠের বিয়োগফল বের করতে হয়। ফলে যান্ত্রিক ত্রুটি নির্ণয়ের প্রয়োজন হয় না।
৮. প্র: বক্রতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ কাকে বলে?
উ: তত্ত্ব দেখ।
৯. প্র: বক্রতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ নির্ণয়ের সূত্রটি কী?
উ: r = d² h- + -; এখানে, d = 6h 2' স্ফেরোমিটারের যেকোনো দুই পায়ের মধ্যবর্তী গড় দূরত্ব এবং
h = তিন পায়ের শীর্ষবিন্দু তিনটির অবস্থান তল থেকে বক্রতলের পৃষ্ঠের উচ্চতা বা নিম্নতা।
১০. প্র: উত্তল ও অবতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ নির্ণয়ের সূত্র কি একই?
উ: হ্যাঁ।
১১. প্র: সমতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ কত?
উ: সমতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ অসীম।
১২. প্র: কোনো তলের বক্রতা বেশি হলে এর ব্যাসার্ধ কমে না বাড়ে?
উ: ব্যাসার্ধ কমে। কারণ বক্রতলের বক্রতা এর বক্রতার ব্যাসার্ধের ব্যস্তানুপাতিক।