আনারসের রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থা - আনারসের জাতের নাম এবং বৈশিষ্ট্য
আনারসের পোকা এবং দমন ব্যবস্থা এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এ আর্টিকেলটি পড়তে হবে।
এ আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি আনারসের জাতের নাম এবং বৈশিষ্ট্য। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ রইল।
আনারসের কয়টি জাত দেখা যায়
আনারসের তিন প্রকারের জাত আছে। যথাঃ
- (ক) কিউ (Kew): কিউ, জায়েন্ট কিউ ইত্যাদি।
- (খ) কুইন (Queen): সিলোন ইত্যাদি।
- (গ) মরিশাস (Mauritius): রেড স্প্যানিস, ইয়েলো স্প্যানিস, সিঙ্গাপুরী ইত্যাদি।
আনারসের জাতের নাম এবং বৈশিষ্ট্য
জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য নীচে দেওয়া হলঃ
(ক) কিউ (Kew)
এটি একটি নাবি জাতের আনারস। ফলের মরশুম আষাঢ়ের শেষ থেকে ভাদ্রের মাঝামাঝি। গাছ বেশ তেজী, পাতা লম্বা ও সরু, খসখসে এবং পাতার কিনারে কাঁটা থাকে না। ফল উপরে ও নীচে প্রায় সমান মোটা; পুষ্ট ফলের রঙ সবুজ; কিন্তু পাকলে হলদে হয়। শাঁসের রঙ ফিকে হলদে। ফল বেশ রসাল, মিষ্ট, সুগন্ধী ও সুস্বাদু এবং ফলের ছিবড়ে খুব কম।
ফলের চোখগুলো অগভীর ও সাদা আবরণে ঢাকা থাকে। তাই যন্ত্রের সাহায্যে ছাড়ানো ও টিনজাত করার পক্ষে সুবিধা। এই জাতের আনারস ও এর রস ক্যানিং (Canning) অর্থাৎ টিনে প্যাক করার উপযোগী। প্রতি গাছে পাতার কোণ থেকে সাধারণত দু-তিনটে ও ফলের বোঁটা থেকে তিন-চারটে করে চারা বের হয়। ফলের ওজন দু থেকে আড়াই কেজি হয়।
(খ) কুইন (Queen)
এটি জলদি জাতের আনারস। ফলের মরশুম আষাঢ়ের প্রথম থেকে শ্রাবণের মাঝামাঝি পর্যন্ত (Mid June to end of July)। গাছ তুলনামূলকভাবে ছোট, পাতাও ছোট এবং পাতার ধার বরাবর কাঁটা থাকে। কিন্তু কাঁটাগুলো দূরে দূরে অবস্থিত। পাতার রঙ নীলচে সবুজ। ফল লম্বাটে; ফলের গোড়ার দিকটা মোটা ও আগার দিকটা সরু হয়।
ফলের ওজন এক থেকে দেড় কেজি হয়। ফল পাকলে গাঢ় হলদে রঙের হয়। ফলের গায়ে চোখগুলো এলোমেলো ভাবে থাকে ও চোখগুলো গভীর। ফলের শাঁস সোনালী হলদে ও শক্ত। শাঁস শক্ত হওয়ার জন্যে দূর দূরান্তে ফল চালান দেওয়া যায়। ফল রসাল ও মিষ্ট। টাটকা ফল হিসাবে এর ব্যবহার বেশী। অধিকাংশ গাছে একসাথে ফল আসে ও পাকে। প্রতিটি গাছের পাতার কোল থেকে ও ফলের বোঁটা থেকে তিনচারটে করে চারা বা তেউড় বের হয়। গায় হজে
(গ) মরিশাস (Mauritius)
এটি মাঝারী জাতের আনারস। ফলের মরশুম আষাঢ়-শ্রাবণ (জুলাই-আগষ্ট) মাস। ফল ছোট আকারের (ওজনে ১-২ কেজি) হয়। কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে ফলগুলো হলুদ বা লালচে দেখায়। শাঁসের রঙও লাল।
আনারসের রোগ এবং পোকার নাম
- কাণ্ড বা হৃৎপচন রোগ (Heart rot or stem rot: C.O. Phytophthora parasitica)
- ফল পচন রোগ (Fruit rot: C.O. Ceratostomella paradoxa)
- পাতায় দাগ রোগ (Leaf Spot: C.O. Phytophthora Sp.)
- দৈয়ে পোকা (Mealy bug)
- নেমাটোড (Nematode)
আনারসের রোগ এবং দমন ব্যবস্থা
কাণ্ড বা হৃৎপচন রোগ (Heart rot or stem rot: C.O. Phytophthora parasitica)
জলবসা জমিতে আনারস গাছে এ রোগের উপদ্রব দেখা যায়। এ রোগের আক্রমণে গাছের সবুজ পাতা হলদে সবুজ বর্ণের হয়ে যায় এবং পাতার আগা বাদামী বর্ণ ধারণ করে। আক্রান্ত মাঝপাতা ধরে টানলে সহজে উঠে আসে এবং পাতার গোড়ায় পচা দাগ থাকে ও তা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
দমন ব্যবস্থা (Control measures)
- (১) জমির জল নিকাশের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
- (২) চারাগুলোকে ঔষধ গোলা জলে শোধন করে লাগাতে হবে।
- (৩) প্রতি লিটার জলে দু'গ্রাম ক্যাপটান বা ডাইফোলাটান বা ৪ গ্রাম কপার অক্সি-ক্লোরাইড গুলে আক্রমণের প্রথম দিকে গাছে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায়।
ফল পচন রোগ (Fruit rot: C.O. Ceratostomella paradoxa)
এ রোগের আক্রমণে ফলের চোখগুলো কালো হয়ে যায়। পরে গোটা ফলটি পচে যায়।
দমন ব্যবস্থা (Control measures)
- (১) সূর্যালোকের হাত থেকে ফলকে রক্ষা করার জন্যে খড় দিয়ে ফল ঢাকা দেওয়া চলবে না।
- (২) প্রতি লিটার জলে তিন মিলিলিটার কুমান-এল বা ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম গুলে রোগাক্রমণের শুরুতে গাছে স্প্রে করতে হবে।
- (৩) পরিণত ফল চয়ন ও বাজারজাত করার সময় যাতে ফলে আঘাত না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ আঘাত লাগা ফল তাড়াতাড়ি পচে যায়।
পাতায় দাগ রোগ (Leaf Spot: C.O. Phytophthora Sp.)
আর্দ্র আবহাওয়ায় মাঝে মধ্যে আনারসের পাতায় দাগ রোগ দেখা যায়। এ রোগের আক্রমণে পাতায় জলে ভেজা ছোট দাগ দেখা যায়। পরে দাগগুলো আকারে বড় হয়। আক্রান্ত অংশ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা
- (১) জমির জল নিকাশের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
- (২) চারাগুলোকে ঔষধ গোলা জলে শোধন করে লাগাতে হবে।
- (৩) প্রতি লিটার জলে দু'গ্রাম ক্যাপটান বা ডাইফোলাটান বা ৪ গ্রাম কপার অক্সি-ক্লোরাইড গুলে আক্রমণের প্রথম দিকে গাছে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায়।
আনারসের পোকা এবং দমন ব্যবস্থা
দৈয়ে পোকা (Mealy bug)
দৈয়ে পোকা সাদা রঙের হয়। এরা গাছের কাণ্ড, পাতা এবং ফলের ওপর দলবদ্ধভাবে থাকে এবং ক্রমাগত গাছের রস শোষণ করে। আক্রান্ত পাতা গোড়ার দিক থেকে শুরু করে সমস্ত পাতা ঢলে পড়ে। মাটির তলার কাণ্ডেও দৈয়ে পোকার আক্রমণ হতে পারে।
দমন ব্যবস্থা (Control measures)
- (১) চারাগুলোকে মিথাইল প্যারাথিয়ন যেমন মেটাসিড ৫০ শতাংশ মিশ্রিত জলে ডুবিয়ে নিয়ে লাগাতে হবে। প্রতি লিটার জলে আধ মিলিলিটার হিসাবে ঔষধ মেশাতে হবে।
- (২) প্রতি লিটার জলে এক মিলিলিটার ডাইমিথোয়েট যেমন রোগর-৩০ ই-সি বা অক্সিডেমিটন মিথাইল যেমন মেটাসিসটক্স গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।
নেমাটোড (Nematode)
আনারস গাছে মাঝে মধ্যে নেমাটোডের আক্রমণ হয়। এদের আক্রমণে আক্রান্ত গাছের ফুলগুলো ফুলে ওঠে। ফলে গাছের রস চলাচল বিঘ্নিত হয়। গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও গাছে ফল ধরে না।
দমন ব্যবস্থা (Control measures)
কলার নেমাটোড দমনের অনুরূপ।