নিক্তির সাহায্যে দোলন পদ্ধতিতে একটি বস্তুর ভর নির্ণয়।
পরীক্ষার নামঃ নিক্তির সাহায্যে দোলন পদ্ধতিতে একটি বস্তুর ভর নির্ণয়।
তত্ত্বঃ হাতল ঘুরিয়ে নিক্তির অনুভূমিক দণ্ড উপরে উঠালে সূচকটি একটি স্কেলের ডানে-বামে দুলতে থাকে। এ অবস্থায় বাম দিকের দিক পরিবর্তন বিন্দুর তিন পাঠের গড় ও ডান দিকের দিক পরিবর্তন বিন্দুর দুই পাঠের গড় নিয়ে, এ দুই গড় পাঠের গড় নিলে সূচকের স্থিতিবিন্দু পাওয়া যায়।
চিত্র ২.ক: উদস্থিতি নিক্তি
ধরি,
- W = বস্তুর সঠিক ভর
- W₁ = বাম পাল্লায় বস্তু থাকা অবস্থায় ডান পাল্লায় যে ভর রাখলে সূচকটি স্কেলের মধ্যে দোলে
- P = দুই পাল্লা খালি থাকা অবস্থায় দোলায়মান সূচকের স্থিতিবিন্দুর অবস্থান
- Q = বাম পাল্লায় বস্তু এবং ডান পাল্লায় w₁ g ভর থাকা অবস্থায় সূচকের স্থিতিবিন্দুর অবস্থান
- R = বাম পাল্লায় বস্তু এবং ডান পাল্লায় (w₁g + 10 mg) ভর থাকা অবস্থায় সূচকের স্থিতিবিন্দুর অবস্থান
(Q-R) ঘর সরে যায় 10 mg-এর জন্য; তাহলে, 1 ঘর সরে যায় 10 Q-R mg-এর জন্য।
∴ (Q-P) ঘর সরে যায় 10(Q-P) / Q-R mg-এর জন্য।
বস্তুর সঠিক ভর w = w₁g + 10(Q-P) / Q-R mg
বা, w = W₁g + 0.01(Q-P) / Q-R g ... ... ... (1)
চিত্র ২.খ: বিভিন্ন ভরের জন্য সূচকের স্থিতিবিন্দু
যন্ত্রপাতি
- নিক্তি,
- ওয়েট বাক্স,
- পরীক্ষণীয় বস্তু ইত্যাদি।
কাজের ধারা
- ১. প্রথমে নিক্তিকে লেভেলিং ক্রুর সাহায্যে অনুভূমিক করেছিলাম এবং নিক্তির দণ্ডটি উপরে উঠালে সূচকটি মধ্যদাগের প্রায় সমান সংখ্যক ঘর বিক্ষেপ দিয়েছিল।
- ২. সূচক যে স্কেলে দোলে সে স্কেলের সর্ববামের দাগটিকে শূন্য ধরে সূচকের পাঠ নিয়েছিলাম।
- ৩. নিক্তির উভয় পাল্লা খালি থাকা অবস্থায় দোলায়মান সূচকের বাম দিকের দিক পরিবর্তন বিন্দুর তিনটি পাঠের গড় ও ডান দিকের দিক পরিবর্তন বিন্দুর দুটি পাঠের গড় নিয়েছিলাম। গড় দুটি যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ করে স্থিতিবিন্দু P বের করেছিলাম।
- ৪. বস্তু বাম পাল্লায় রেখে, ডান পাল্লায় এমন মানের বাটখারা (w₁ g) চাপিয়েছিলাম যেন স্থিতিবিন্দু P-এর সামান্য ডানে হয়। এ ক্ষেত্রে উপরের নিয়মে স্থিতিবিন্দু নির্ণয় করেছিলাম।
- ৫. বস্তু বাম পাল্লায় এবং ডান পাল্লায় (w₁g + 10 mg) চাপিয়ে ৩নং কাজের ধারা অনুযায়ী স্থিতিবিন্দু R নির্ণয় করেছিলাম। (1-0)
- ৬. P, Q এবং R-এর মান সমীকরণ (1)-এ বসিয়ে পরীক্ষণীয় বস্তুর প্রকৃত ভর w নির্ণয় করেছিলাম।
ছক ১: স্থিতিবিন্দু নির্ণয়
হিসাব
W = W₁ + 0.01(Q-P) / Q-R = 4.35 g + 0.01(12.63 - 9.38) / 12.63 - 10.88 g
= 4.35 g + 0.01857 g = 4.36857 g ≈ 4.369 g
ফলাফল
পরীক্ষণীয় বস্তুর প্রকৃত ভর w = 4.369 g।
ফলাফলের উপর আলোচনা
পরীক্ষাটির সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয় বলে বস্তুটির প্রাপ্ত ভরও সঠিক পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া বস্তুর ভর সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য নিম্নের বিষয়গুলো খেয়াল করেছিলাম।
- ১. ওজন নেওয়ার পূর্বে পাল্লা দুটি মুছে পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম যেন ভর পরিমাপের ক্ষেত্রে ত্রুটি ঘটতে না পারে।
- ২. ওজন নেওয়ার পূর্বে পাল্লা মোটামুটি ঠিক আছে কিনা দেখে নিয়েছিলাম।
- ৩. যথাসম্ভব সুবেদী নিক্তি ব্যবহার করেছিলাম।
- ৪. ভর পাল্লায় উঠানো-নামানোর সময় চিমটা ব্যবহার করেছিলাম।
- ৫. সূচকের দোলনের দিক-পরিরর্তনের পাঠ নেওয়ার সময় নিক্তির বাক্স বন্ধ রেখেছিলাম।
- ৬. সূচকের পাঠ নেওয়ার সময় দৃষ্টিরেখা স্কেলের সাথে লম্বভাবে রেখেছিলাম।
প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্র: নিক্তি কিভাবে অনুভূমিক করতে হয়?
উ: নিক্তির পাটাতনের উপর একটি বুদ্বুদ রয়েছে। পাটাতনের নীচের লেভেলিং ক্রুদ্বয় ঘুরিয়ে বুদুটিকে কেন্দ্রে আনা হলে নিক্তি অনুভূমিক হয়।
২. প্র: সূচক কিভাবে দোল দিলে নিক্তি ঠিক আছে ধরা যায়?
উ: দোল দেওয়ার সময় সূচকটি যদি মধ্যদাগের সমান সংখ্যক ঘর ডানে ও বামে যায় তবে নিক্তি ঠিক আছে বলা যায়।
৩. প্র: বস্তুর ভর ও ওজন বলতে কী বোঝ? এদের একক কী?
উ: কোনো বস্তুর মধ্যে যতটুকু পদার্থ আছে তাকে তার ভর বলে। ভর হচ্ছে ধ্রুবক রাশি। ভর কখনও পরিবর্তিত হয় না। এর একক কিলোগ্রাম (kg) বস্তুকে পৃথিবী যে বলে তার কেন্দ্রের দিকে টানে তাকে ঐ বস্তুর ওজন বলে। বস্তুর ওজন স্থান ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। বস্তুর ভর m হলে, বস্তুর ওজন W = mg। ওজনের একক নিউটন (N)।
৪. প্র: দোলন পদ্ধতিতে কেন ভর নির্ণয় করা হয়?
উ: নিক্তির অনুভূমিক দণ্ড উপরে উঠালেই সূচকটি ডানে-বামে দুলতে থাকে এবং দোলনের বিস্তার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক সময় সূচকটি স্থির হয়ে যায়। তবে সূচকটি স্থির হতে বেশ সময় D.SI - নেয়। কিন্তু দৌলন অবস্থায় ভর নির্ণয় করলে অযথা কালক্ষেপণ করতে হয় না।
৫. প্র: স্থিতিবিন্দু কিভাবে পাওয়া যায়?
উ: স্কেলের সর্ববামের দাগকে শূন্য ধরতে হয়। সূচকটি স্কেলের মধ্যে দোল দিতে থাকলে বামের দিক পরিবর্তন বিন্দুর পর পর তিনটি পাঠের গড় নিতে হয়। আবার ডানের দিক পরিবর্তন বিন্দুর পর পর দুটি পাঠের গড় নিতে হয়। এই দুই গড়কে যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ করলে স্থিতিবিন্দু পাওয়া যায়।
৬. প্র: বাম পাল্লায় বস্তু এবং ডান পাল্লায় 5g চাপালে যে স্থানে স্থিতিবিন্দু পাওয়া যাবে, ডান পাল্লায় আরও 10 mg চাপালে স্থিতিবিন্দু আগের স্থিতিবিন্দুর ডানে না বামে হবে?
উ: ডান পাল্লায় যত বেশি ভর চাপানো হবে সূচক তত বাম দিকে বিচ্যুত হবে। অতএব পরের স্থিতিবিন্দু আগের স্থিতিবিন্দুর বামে হবে।