ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় আক্রমণ - ঢেঁড়স গাছের রোগ ও প্রতিকার

ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় আক্রমণ এবং ঢেঁড়স গাছের শ্যামা পোকা সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
ঢেঁড়স গাছের কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি ঢেঁড়সের মোজাইক ভাইরাস এবং ঢেঁড়স গাছের কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হলো সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

ঢেঁড়স গাছের রোগ ও প্রতিকার


পাতার উপরের অংশে সাদা গুঁড়ার মত স্তর দেখা যায়। পাতার বৃদ্ধি কমে যায় এবং পাতা ঝরে যায়।
সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা। ২০-২৫ দিন পর পর পরিমাণ মতো পানি স্প্রে করা। পাতার শিরা হলদে হওয়া কুটে রোগ এই রোগ ঢেঁড়স গাছে শীতের শেষ থেকে শরৎকাল অবধি দেখতে পাওয়া যায়। আক্রমণের লক্ষণ পাতাতেই দেখা যায়।

প্রথমে ধীরে ধীরে পাতার শিরাগুলি হলদে হয়ে যায়। শিরার মধ্যবর্তী অংশ ফ্যাকাসে সবুজ থেকে ফিকে হলুদ হয় এবং পাতায় নকশার সৃষ্টি করে। পরে গোটা পাতা হলদে হয়ে যায়। পাতার নিচে হলদে দাগ এবং সাদা ফাংগাস দেখা যায়। পাতা শুকিয়ে যায় এবং গাছ দুর্বল হয়। এই রোগ হলে মেটালাক্সিল জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা। গাছের চারপাশে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা।

ঢেঁড়সের মোজাইক ভাইরাস


আক্রান্ত ঢেঁড়স গাছের ফল স্বাভাবিক থেকে ছোট, হলদেটে ও বাঁকা হয়। ফলে বাজার দর খুবই কম পাওয়া যায়। গাছ কুটে রোগ ধরলে ফলন ধীরে ধীরে কমে যায়। যদিও এই কুটে রোগ পোকার মাধ্যমে ছড়ায়, কিন্তু পোকা দমনের কোন ওষুধ ব্যবহার করে প্রতিকারের কোন সুফল পাওয়া যায় না। এই রোগ প্রতিকারের একমাত্র উপায় হচ্ছে রোগ প্রতিরোধক জাতের চাষ করা, যথা-পারভানি ক্রান্তি, পুসা সাওয়ানিতেও রোগের প্রকোপ কম হয়। লাল সাতধারিতেও কম হয়।
পাতায় ছোট ছোট বাদামী বা কালো দাগ দেখা যায়। পাতার দাগগুলো বড় হয়ে পাতা ঝরে যায়। কপার অক্সিক্লোরাইড বা ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা। আক্রান্ত পাতা এবং অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলা। গাছের গোড়া পঁচে যায়। ঢেঁড়স গাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং গাছ মারা যায়। ভাল নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা মাটি ব্যবহার করা। ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করা যেমন ট্রাইকোডার্মা।

ঢেঁড়স গাছের বিভিন্ন রোগের নাম


  • ক. পাউডারি মিলডিউ (Powdery Mildew)
  • খ. ডাউনি মিলডিউ (Downy Mildew)
  • গ. লিফ স্পট (Leaf Spot)
  • ঘ. ভিরাল রোগ (Viral Diseases)
  • ঙ. রুট রট (Root Rot)

ঢেঁড়স গাছের কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা


সবুজ রঙের বা সবুজ দাগটানা ডানাওয়ালা প্রজাপতি গাছের কাণ্ডে বা ফলের ফলের মধ্যে ঢোকে এবং ভিতরের অংশ কুরে কুরে খায়। কচি ডগা শুকিয়ে যায়, গায়ে ডিম পাড়ে। সেই ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ডাঁটা, ফুলের কুঁড়ি বা কচি ফল বা কুডি অকালে ঝরে পড়ে, ফল ছোট হয়। এই পোকা ঢেঁড়স গাছের ও ফলনের প্রচুর ক্ষতি করে। এই পোকা দমনের জন্য নিম্নলিখিত ওষুধের দ্রবণ স্প্রে করতে হবে।
  • (১) এন্ডোেসালফান (থায়োেডান, হিলডান, থায়োনেল, এন্ডেসেল প্রতি লিটার পানিতে ২১/২ মিলিলিটার)।
  • (২) কুইনালফস ই.সি. (যথা-একালাক্স প্রতি লিটার পানিতে ২১/২ মিলিলিটার),
  • (৩) কারবারিল (সেভিন, কিলেক্স কারবারিল প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম),
  • (৪) মনোক্রোটোফস (নুভাক্রন, সুফস)- প্রতি লিটার পানিতে ১১/২ মিলিলিটার),

ঢেঁড়স গাছের শ্যামা পোকা


ছোট সবুজ শ্যামা পোকা পাতা ও ফলের রস চুষে খায়। পাতায় ছোট ছোট হলদেটে দাগ পড়ে। দাগ কখনও কখনও সাদাটেও হয়। ফলের গায়ে ছোট ছোট ফোস্কার মতো সাদাটে বা হলদে দাগ পড়ে। ফলের আকারের কিছুটা বিকৃতি ঘটে। এই পোকার হাত থেকে ফসলকে বাঁচাতে হলে নিচের যে কোন একটি ওষুধের দ্রবণ স্প্রে করতে হবেঃ
  • ১) মনোক্রোটোফস (প্রতি লিটার পানিতে ১১/২ মিলিলিটার),
  • ২) ডাইমিথোয়েট (রোগর, তারা-৫০৫ প্রতি লিটার পানিতে ১১/২ মিলিলিটার),
  • ৩) মেটাসিসটক্স (প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার),
  • ৪) ফসফামিডন (ডিমেক্রন, সুমিডন- প্রতি লিটার পানিতে ১/২ মিলিলিটার)।

ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় আক্রমণ


ক. অ্যাফিড (Aphid)
লক্ষণঃ পাতার নিচে ছোট ছোট পোকা বসে। পাতা কুঁকড়ে যায় এবং ঢেঁড়স গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
প্রতিকারঃ ইমিডাক্লোপ্রিড বা অন্য কোন কীটনাশক প্রয়োগ করা। নিয়মিত গাছের পাতা পরীক্ষা করে পরিষ্কার করা।
খ. জ্যাসিড (Jassid)
লক্ষণঃ পাতার উপর হলুদ দাগ দেখা যায়। পাতার কিনারা রোল হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ গাছের চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
গ. হোয়াইটফ্লাই (Whitefly)
লক্ষণঃ পাতার নিচে সাদা ছোট ছোট মাছির মত পোকা। পাতার রস শুষে নেয় এবং পাতা হলুদ হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ অ্যাজাডিরাচটিন বা অন্য কীটনাশক প্রয়োগ করা। ঢেঁড়স গাছের চারপাশে হলুদ স্টিকার ট্র্যাপ ব্যবহার করা।

ঢেঁড়স গাছের রোগ ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত গাছের যত্ন নেওয়া, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন। রোগ এবং পোকামাকড় প্রতিরোধে নিয়মিত পরিদর্শন ও সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন