খাদ্যলবণ বা অবিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে বিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইডের কেলাস প্রস্তুতি

খাদ্যলবণ বা অবিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে বিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইডের কেলাস প্রস্তুতি
খাদ্যলবণ বা অবিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে বিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইডের

পরীক্ষাকার্য-৬ঃ কেলাসন পদ্ধতিতে খাদ্যলবণ বা অবিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে বিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইডের কেলাস প্রস্তুতি


মূলনীতি (Theory): খাদ্যলবণে বা অবিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইডে CaCl2, MgCl2, MgSO4, Na2SO4 প্রভৃতি দ্রবণীয় ভেজাল ছাড়াও বেশ কিছু অদ্রবণীয় ভেজাল মিশ্রিত থাকে। অবিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্যলবণের জলীয় দ্রবণকে পরিস্রাবণ করে অদ্রবণীয় অপদ্রব্যসমূহ দূরীভূত করা হয়। এখন সম্পৃক্ত দ্রবণকে গাঢ় করে এতে গাঢ় HCI যোগ করলে অতিরিক্ত CI (সম-আয়ন) উৎপন্ন হয়।

NaCl (s) ⇌ Na+ (aq) + Cl- (aq) [সম্পৃক্ত দ্রবণে।
HCl (aq) → H+ (aq) + Cl- (aq)

এর ফলে দ্রবণে Cl-এর ঘনমাত্রা বেড়ে যায়, যার প্রভাবে প্রথম বিক্রিয়াটির বিপরীত বিক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় (ল্য শাতেলিয়ারের নীতি)। এতে বিশুদ্ধ NaCl কেলাসিত হয়ে দ্রবণ থেকে বের হয়ে আসে (সম-আয়ন প্রভাব) এবং দ্রবণীয় অপদ্রব্যসমূহ দ্রবণে থেকে যায়। প্রাপ্ত কেলাসসমূহকে পরিস্রাবণ করে পৃথক করে শুষ্ক করা হয়।
যন্ত্রপাতি (Apparatus) 
  • (১) দুটি 250 মি.লি. বীকার, 
  • (২) একটি কাঁচদন্ড, 
  • (৩) একটি ফানেল, 
  • (৪) একটি বুনসেন বার্ণার, 
  • (৫) একটি ত্রিপদী স্ট্যান্ড, 
  • (৬) একটি তারজালি, 
  • (৭) কিছু ফিল্টার পেপার, 
  • (৮) একটি ডেসিকেটর এবং 
  • (৯) একটি ব্যালান্স।
রাসায়নিক দ্রব্যাদি (Chemicals) 
  • (১) খাদ্যলবণ (অবিশুদ্ধ NaCl), 
  • (২) গাঢ় HCI এবং 
  • (৩) পাতিত পানি।
পরীক্ষাকার্য পদ্ধতি (Experimental Procedure):
(১) একটি বীকারে প্রায় 100 মি.লি. পাতিত পানি নিয়ে এতে প্রদত্ত খাদ্য লবণ ধীরে ধীরে যোগ করতে থাক এবং সমগ্র মিশ্রণটিকে একটি কাঁচদন্ডের সাহায্যে নাড়তে থাক। সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি হলে খাদ্য লবণ যোগ করা বন্ধ কর (দ্রবণটি সম্পৃক্ত হলে বীকারের তলায় খুবই সামান্য লবণ অদ্রবীভূত অবস্থায় থাকবে)।
(২) এখন দ্রবণটিকে পরিস্রাবণ করে পরিদ্রুত দ্রবণকে একটি বীকারে (বা চীনামাটির বেসিনে) লও।
খাদ্য লবণ দ্রবণের বাষ্পীভবন ও পরিস্রাবণ
(ক) বীকারে খাদ্য লবণ দ্রবণের বাষ্পীভবন পরিস্রত। (খ) ঘনাভূত খাদ্য লবণ দ্রবণের পরিস্রাবণ

চিত্র-১০ খাদ্য লবণ দ্রবণের বাষ্পীভবন ও পরিস্রাবণ


(৩) দ্রবণসহ বীকারটিকে (বা বেসিনকে) ত্রিপদের উপর রক্ষিত একটি তারজালির উপরে স্থাপন কর এবং বুনসেন বার্ণার দিয়ে বীকারটিকে ধীরে ধীরে তাপ দাও (ফুটাবে না)। তাপ প্রদানকালে দ্রবণকে একটি কাঁচদন্ডের সাহায্যে ধীরে ধীরে নাড়তে থাক (চিত্র-১০)।
(৪) দ্রবণটি ঘনীভূত হলে দ্রবণে প্রায়। মি.লি. (১০-১২ ফোঁটা) গাঢ় HCI যোগ কর।
(৫) অতঃপর তাপ দেওয়া বন্ধ করে গাঢ় দ্রবণকে কক্ষ তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে ঠান্ডা কর। ঠান্ডা হওয়ার সময় দ্রবণ হতে বিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইডের সাদা কেলাস বের হয়ে আসবে। কেলাসনকালে বীকারের দ্রবণ যাতে কোনক্রমেই আলোড়িত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।
(৬) সৃষ্ট কেলাসকে পরিস্রাবণের মাধ্যমে (ফানেলে ফিল্টার কাগজ রেখে) পৃথক কর।
(৭) সবশেষে প্রাপ্ত কেলাসসমূহকে ফিল্টার পেপার বা ব্লটিং পেপার দ্বারা বারবার শুষ্ক কর। (ফিল্টার পেপারসহ কেলাসকে ডেসিকেটরে (শোষকাধারে) অনেকক্ষণ রেখে ভালোভাবে শুষ্ক করা যায়।) [প্রয়োজনবোধে প্রাপ্ত শুষ্ক কেলাসগুলোর ভর নির্ণয় করে রোল নম্বরসহ শিক্ষকের নিকট জমা দাও।।
ফলাফল (Result)
  • (১) কেলাসের বর্ণঃ সাদা।
  • (২) কেলাসের গঠনঃ কিউবিক বা ঘনকাকৃতি।
  • (৩) কেলাসের পরিমাণঃ ........... গ্রাম।
ব্যাখা (Explanation): অবিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্যলবণের সম্পৃক্ত জলীয় দ্রবণকে পরিস্রাবণ করলে অদ্রবণীয় অপদ্রব্যসমূহ দূরীভূত হয়। এতে গাঢ় HCI যোগ করলে অতিরিক্ত CI (সম-আয়ন) উৎপন্ন হয়।
NaCl (s) ⇌ Na+ (aq) + Cl- (aq) [সম্পৃক্ত দ্রবণে।
HCl (aq) → H+ (aq) + Cl- (aq)
এর ফলে দ্রবণে Cl-এর ঘনমাত্রা বেড়ে যায়, যার প্রভাবে প্রথম বিক্রিয়াটির বিপরীত বিক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় (ল্য শ্যতেলিয়ারের নীতি)। এতে বিশুদ্ধ NaCl কেলাসিত হয়ে দ্রবণ থেকে বের হয়ে আসে (সম-আয়ন প্রভাব) এবং দ্রবণীয় অপদ্রব্যসমূহ দ্রবণে থেকে যায়। প্রাপ্ত কেলাসসমূহকে পরিস্রাবণ করে পৃথক করে শুষ্ক করা হয়।
সতর্কতাঃ 
  • ১) বাম্পিং করে দ্রবণ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য বীকারের দ্রবণকে কাঁচদন্ডের সাহায্যে অবিরত নাড়বে। কিন্তু কেলাসন শুরু হলে দ্রবণকে কখনই নাড়বে না।
  • ২) গাঢ়ীকরণকালে দ্রবণকে কখনও ফুটাবে না। দ্রবণকে সমভাবে ধীরে ধীরে তাপ প্রদান করবে।
  • ৩) কেলাসনকালে দ্রবণকে নাড়াচাড়া করবে না।
  • ৪) কেলাসন দ্রুত করতে দ্রবণে সোডিয়াম ক্লোরাইডের একটি কেলাস যোগ করতে পার।
  • ৫) কেলাসের গায়ে লেগে থাকা HCI দূর করার জন্য কেলাসকে নূন্যতম (1/2 মি.লি.) সোডিয়াম ক্লোরাইডের গাঢ় দ্রবণ দ্বারা ধৌত করতে পার; তবে দ্রবণ পাতলা হলে সৃষ্ট কেলাসের কিছু অংশ গলে যাবে। সেক্ষেত্রে ধৌত না করাই উত্তম।
  • ৬) দ্রবণকে সর্বদা ধীরে ধীরে শীতল করে কেলাসন কাজ সমাধা করা উচিৎ; কেননা এর ফলে বড় আকারের কেলাস পাওয়া যায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
  •  ১) কেলাসের বর্ণ ও পরিমাণের উপর পরীক্ষার নম্বর নির্ভর করতে পারে বলে কেলাসন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করবে।
  • ২) দ্রবণ যথেষ্ট গাঢ় হয়েছে কিনা (ধাপ-৪) বুঝতে একটি কাঁচদন্ডের অগ্রভাগ দ্রবণে সিক্ত করে ফুঁ দাও। শুকালে যদি লবণ পাওয়া যায় তবে বুঝবে দ্রবণটি যথেষ্ট গাঢ় হয়েছে।
  • ৩) কেলাসন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ বলে এটি করতে দিয়ে অন্য পরীক্ষা বা বিশ্লেষণ করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url