পানির ডাইপোলের উপস্থিতির প্রমাণ
পরীক্ষাকার্য- পানির ডাইপোলের উপস্থিতির প্রমাণ।
পানির ডাইপোলের উপস্থিতির প্রমাণ
মূলনীতি (Theory): যদি কোন বস্তু সামগ্রিকভাবে তড়িৎ নিরপেক্ষ হয়, কিন্তু এর একজোড়া সমান কিন্তু বিপরীতধর্মী চার্জ ক্ষুদ্র দূরত্বে পৃথকীকৃত থাকে, তবে বস্তুটিকে ডাইপোল (Dipole) বলে। পানিতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণু সমযোজী বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ থাকে। অক্সিজেন পরমাণু হাইড্রোজেন পরমাণু অপেক্ষা অধিক ইলেক্ট্রোনেগেটিভ হওয়ায় O-H বন্ধনের বন্ধন ইলেকট্রন যুগল অক্সিজেন পরমাণুর দিকে বেশি আকর্ষিত হয়।
এর ফলে অক্সিজেন পরমাণু আংশিক ঋণাত্মক চার্জ (δ+) ও হাইড্রোজেন পরমাণু আংশিক ধনাত্মক চার্জ (δ-) লাভ করে, যা ডাইপোলের সৃষ্টি করে। এজন্য পানি একটি পোলার অণু যার ডাইপোল মোমেন্টের মান ১.৮৫ ডিবাই।
পানির ডাইপোলের উপস্থিতি প্রমাণ করার জন্য বস্তুতে ঘর্ষণের দ্বারা স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় (ট্রাইবোইলেকট্রিক পদ্ধতি - Triboelectric effect)। যেমন- একটি কাঁচদন্ডকে সিল্কের কাপড় দ্বারা ঘষলে কাঁচদন্ডে ধনাত্মক চার্জ (কাঁচের ইলেকট্রন সিল্কে যায় বলে) এবং একটি প্লাস্টিকের চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ালে চিরুনিটিতে ঋণাত্মক চার্জ (চুলের ইলেকট্রন চিরুনিতে যায় বলে) উৎপন্ন হয়।
এ কাঁচদন্ড বা চিরুনি ট্যাপের পানির ধারার নিকট ধরলে ধারাটি কাঁচদন্ড বা চিরুনির দিকে আকর্ষিত হয়। কারণ কাঁচদন্ডের ধনাত্মক চার্জ পানির ডাইপোলের ঋণাত্মক চার্জকে আকর্ষণ করে এবং চিরুনির ঋণাত্মক চার্জ পানির ডাইপোলের ধনাত্মক চার্জকে আকর্ষণ করে।
যন্ত্রপাতি (Apparatus)
- (১) একটি কাঁচদন্ড,
- (২) একটি চিরুনি,
- (৩) একটি বেলুন,
- (৪) একটি প্লাস্টিক পাইপ,
- (৫) এক টুকরো সিল্কের কাপড়,
- (৬) একটি পানির কল (পানির সংযোগ আছে)।
রাসায়নিক দ্রব্যাদি (Chemicals):
- (১) তুলা এবং
- (২) পাতিত পানি।
চিত্র-৫ঃ পানির ডাইপোলের উপস্থিাতির পরীক্ষা
পরীক্ষাকার্য পদ্ধতি (Experimental Procedure):
(১) একটি ট্যাপকে এমনভাবে ছাড় যেন পানি ক্ষীণ ধারায় (প্রায় ১/৮ ইঞ্চি পুরু) পড়ে। একটি প্লাস্টিকের / নাইলনের শুষ্ক চিরুনি দিয়ে তোমার শুষ্ক চুল ৮-১০ বার আঁচড়াও। চিরুনিটিকে ধীরে পানির ধারার কাছে নিয়ে (স্পর্শ না করে) কী ঘটে দেখ (চিত্র-৫) ও তা লিপিবদ্ধ কর।
(২) একটি বেলুনকে ফুলিয়ে সুতা দিয়ে বেঁধে তোমার শুষ্ক চুল দ্বারা কয়েক সেকেন্ড ঘর্ষণ কর। অতঃপর বেলুনটিকে ধীরে ট্যাপের পানির ক্ষীণ ধারার কাছে নিয়ে (স্পর্শ না করে) কী ঘটে দেখ ও তা লিপিবদ্ধ কর।
(৩) এবার একটি কাঁচদন্ডকে সিল্কের বা রেশমের কাপড় দিয়ে কয়েকবার ঘর্ষণ কর। তারপর কাঁচদন্ডটিকে ধীরে ট্যাপের পানির ক্ষীণ ধারার কাছে নিয়ে (স্পর্শ না করে) কী ঘটে দেখ ও তা লিপিবদ্ধ কর।
(৪) পরিশেষে একটি প্লাস্টিকের পাইপকে শুকনো তুলা দিয়ে কয়েকবার ঘর্ষণ কর। পাইপটিকে ধীরে ট্যাপের পানির ক্ষীণ ধারার কাছে নিয়ে (স্পর্শ না করে) কী ঘটে দেখ ও তা লিপিবদ্ধ কর।
উপাত্ত সমূহ (Data) [নমুনা মাত্র Specimen only]:
টেবিল-৪ঃ পানির ডাইপোলের উপস্থিতির পর্যবেক্ষণ।
ফলাফল (Result): উৎপন্ন স্থির ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ পানিকে আকৃষ্ট করে বলে পানিতে ডাইপোল বিদ্যমান।
ব্যাখা (Explanation): ট্রাইবোইলেকট্রিক পদ্ধতিতে বস্তুতে ঘর্ষণের দ্বারা ধনাত্মক বা ঋণাত্মক ছির বিদ্যুৎ
উৎপন্ন হয় যা পানির ধারাকে আকর্ষণ করে। এর কারণ উৎপন্ন চার্জ পানির ডাইপোলের বিপরীতধর্মী চার্জকে আকর্ষণ করে। O পরমাণু H পরমাণু অপেক্ষা অধিক ইলেক্ট্রোনেগেটিভ হওয়ায় পানির O-H বন্ধন পোলার হয় অর্থাৎ O পরমাণু আংশিক ঋণাত্মক চার্জ (δ+) ও H পরমাণু আংশিক ধনাত্মক চার্জ (δ-) লাভ করে, যা ডাইপোলের সৃষ্টি করে। এ ডাইপোলই উৎপন্ন স্থির বিপরীতধর্মী চার্জ দ্বারা আকর্ষিত হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
( ১) O ও H পরমাণুর ইলেক্ট্রোনেগেটিভিটির মান যথাক্রমে 3.5 ও 2.1।
(২) ট্যাপ দিয়ে পানির ক্ষীণ ধারা পাওয়া না গেলে, বুরেটে পানি নিয়েও এবং নীচে একটি বড় বীকার রেখেও পরীক্ষণটি সম্পন্ন করা যায়।