আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই - আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন

আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই এবং আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
আঙ্গুর চাষের জন্য কিভাবে জমি তৈরি করতে হয়
এই আর্টিকেলে আরো আলোচনা করছি আঙ্গুর চাষের জন্য কিভাবে জমি তৈরি করতে হয় এবং আঙ্গুর চাষের জন্য সার প্রয়োগের সময়। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হলো সেগুলো জানতে হলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়া অনুরোধ রইল।

বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে আঙুর উৎপাদন


প্রবাদ আছে আঙ্গুর ফল টক। আর এ কথাটি আমাদের জন্য বেশ কার্যকর। কারণ, এই ফলটি আমরা এদ্দিন ফলাতে পারিনি। পুরোটাই আমদানী করে খেতে হয়। স্বভাবত উচ্চমূল্যের কারণে বরাবরই সাধারণের নাগালের বাইরেই থাকে। কখনও কেউ অসুস্থ হলে কিংবা কালেভদ্রে সাধারণ পরিবারে আঙ্গুর খাওয়া হয়। 

কিন্তু আমাদের মাটি ও জলবায়ু আঙ্গুর চাষের জন্য উপযোগি, এটা সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুচারটি আঙ্গুর গাছ থাকলেও সেটা পরিবারের আওতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আঙ্গুর চাষের চেষ্টা চালানো হয় ১৯৯০ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরস্থ বিএডিসির উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে।

আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন


দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙ্গুর চাষ ভাল হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা আঙ্গুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

আঙ্গুর চাষের জন্য কিভাবে জমি তৈরি করতে হয়


ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝরঝরে করে নিতে হবে। তারপর ৭০/৭০/৭০ সেমি মাপের গর্ত করে তাতে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে ১০/১৫ দিন রেখে দিতে হবে যেন সারগুলো ভঅলভাবে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর সংগৃহিত চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করে একটি কাঠি গেড়ে সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙ্গুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল মাস।

আঙ্গুর চাষের জন্য সার প্রয়োগের সময়


আঙ্গুর যেহেতু লতানো গাছ তাই এর বৃদ্ধির জন্য সময়মত বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপনের ১ মাসের মধ্যে বাড়বাড়তি না হলে গোড়ার মাটি আলগা করে তাতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা দরকার। ১-৩ বছরের প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সার ব্যবহারে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম হয়। গাছ বেড়ে ওঠার জন্য গাছের গোড়ায় শক্ত কাঠি দিয়ে মাচার ব্যবস্থা করতে হবে- সেই মাচাতে আঙ্গুরের শাখা-প্রশাখা ছড়াবে।

আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই


রোপনের পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাচায় ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই করতে হবে। অধিকাংশ খামারিরই প্রশ্ন গাছে ফুল হয় কিনউত ফল হয় না। এর কারণ কী? কান্ড ছাঁটাই-এর মাধ্যমে আঙ্গুর গাছের ফলন বৃদ্ধি হয় এবং ফুল ঝরে পড়া কমে যায়। ছাঁটাইয়ের ৭ দিন আগে এবং পরে গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হবে। গাছ রোপনের পর মাচায় ওঠা পর্যন্ত প্রধান কান্ড ছাড়া অন্যসকল
আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই

প্রথম ছাঁটাই
মাচায় কান্ড ওঠার ৩৫/৪৫ সেমি পর প্রধান কান্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে ঐ কান্ডের দুই দিক থেকে দুটি করে চারটি শাখা গজায়।
আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই
দ্বিতীয় ছাঁটাই
গজানো চারটি শাখা বড় হয়ে ১৫-২০ দিনের মাথায় ৪৫/৬০ সেমি লম্বা হবে তখন ৪টি শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যেখানে থেকে আরও ১৬টি শাখা গজাবে।

তৃতীয় ছাঁটাই
এই ১৬টি প্রশাখা ১৫/২০ দিনের মাথায় ৪৫/৬০ সেমি লম্বা হবে তখন আবার এদের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে প্রতিটি প্রশাখার দুদিকে দুটি করে ৪টি নতুন শাখা এবং এমনিভাবে ১৬টি শাখা থেকে সর্বমোট ৬৪টি শাখা গজাবে। অবশ্য সর্বক্ষেত্রেই যে ৬৪টি শাখা গজাবে এমন কোন কথা নেই। এই শাখার গিরার মধ্যেই প্রথমে ফুল এবং পরে এই ফুল মটর দানার মত আকার ধারণ করে আঙ্গুর ফলে রূপান্তরিত হবে। 
আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই


প্রথম বছর ফল পাবার পর শাখাগুলোকে ১৫/২০ সেমি লম্বা রেখে ফেব্রুয়ারি মাসে ছেঁটে দিতে হবে ফলে বসন্তের প্রাক্কালে নতুন নতুন শাখা গজাবে এবং ফুল ধরবে। এই পদ্ধতি ৩/৪ বছর পর্যন্ত চলবে এবং ফলের স্থিতি লাভ করবে। পরিমিত সার এবং উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছ কমপক্ষে ৩০ বছর ফলন দিতে পারবে। 

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রতি একরে ৪৩৬টি আঙ্গুর গাছ লাগানো যায় এবং জাতিতে ভিন্নতায় গড়ে প্রতি গাছে প্রতিবছর ৪ কেজি হিসাবে মোট ১৭৪৪ কেজি আঙ্গুর এক একরে উৎপাদন করা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন