পটল গাছের মূল বা ছিদ্রকারী পোকা - পটল গাছের রোগ ও পোকা দমন প্রতিকার ব্যবস্থা

পটল গাছের মূল বা ছিদ্রকারী পোকা এবং পটল গাছের রোগ ও পোকা দমন প্রতিকার ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

পটল গাছের রোগ ও পোকা দমন প্রতিকার ব্যবস্থা

পটলের লতা লাগানোর নিয়মএই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি পটল গাছের গোড়াপচা রোগ এবং পটল গাছের ফলের মাছি। এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

পটল গাছের কাণ্ডপচা, ফলপচা বা ঢলে পড়া রোগ


এই রোগ বর্ষাকালে বা অন্য কোন ও বিস্তৃতি খুবই কারণে জমিতে পানি জমলে মারাত্মক আকার ধারণ করে। কারণ রোগ-সৃষ্টিকারী রোকের মাটিতে পানি বেশি থাকলে বা পানি জমলে বৃদ্ধি উড়াতাড়ি হয়, ফলে গোড়া, কচি কাণ্ড ও ফল সহজে আক্রান্ত হয় এবং পচে যায়।

প্রতিকার ব্যবস্থাঃ
  • (১) লতার কাটিং বা কন্দমূল রোপণের আগে শোধন করে নেওয়া।
  • (২) জমিতে পানি নিকাশের সুবন্দোবস্ত থাকা।
  • (৩) রোগের সূচনা দেখা দিলে ১০-১২ দিন অন্তর কপার অক্সি-ক্লোরাইড, যথা- ব-াইটক্স, ফাইটোল্যান বা কু-কপার দ্রবণ (প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম পরিমাণ ওষুধ) স্প্রে করতে হবে গাছের গোড়ায়, ডগায় ও কচি ফলে।পটল গাছের পাতার ধসা রোগ
এই রোগের আক্রমণ বর্ষাকালে পাতায় দেখা যায়। আক্রান্ত পাতার নিচের দিকে ধূসর বা নীলচে রঙের পাতলা আস্তরণ দেখতে পাওয়া যায় এবং পাতার উপরের দিকের রঙ হলদেটে হয়। রোগের আক্রমণের ফলে গাছ নিস্তেজ হয়, ফলনও কম হয়। এই রোগের প্রতিকারের উপায় তাম্রঘটিত ওষুধ কপার অক্সি-ক্লোরাইড, যার প্রয়োগের কথা ডগাপচা, ফলপচা ও গোড়পচা রোগের বলা হয়েছে, তা প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পাতার নিচের দিকে যেন ওষুধ ভালোভাবে লাগে।

পটল গাছের গোড়াপচা রোগ


পাটের জমিতে পটলের চাষ করলে অনেক সময় এই রোগ দেখা যায়। গোড়ার অংশ আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায় বা পচন ধরে, তবে রোগের বিস্তৃতি ঘটে খুব ধীরে ধীরে। শেকড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রতিকার ব্যবস্থাঃ রোগ দেখা দিলে মাত্রঘটিত ওষুধ কপার অক্সি-ক্লোরাইড দ্রবণ গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে, যার প্রয়োগের কথা ডগাপচা, গোড়াপচা রোগে বলা হয়েছে। জমিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

পটল গাছের মূল বা ছিদ্রকারী পোকা


নীল রঙের ছোট পোকা, দেখতে পিঁপড়ের মতো। পোকার কীড়া বা গ্রাব (grub) লতার মধ্যে গর্ত বা ফুটো করে ঢুকে পড়ে। ফলে লতা শুকিয়ে মারা যায়। গ্রাব কন্দের মধ্যে প্রবেশ করে কুরে কুরে গর্ত করে। যার জন্যে মূল ও লতার ক্ষতি হয়।

প্রতিকার ব্যবস্থাঃ পোকামুক্ত লতা মাঠে লাগানোর জন্যে ব্যবহার করা উচিত। আক্রান্ত লতা ও কন্দমূল মাঠ থেকে সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে। মূল বা কাটিং কোনো সংবাহী কীটনাশক ওষুধে ভিজিয়ে শোধন করে লাগালে পোকার প্রকোপ কম হয়। চারা রোপণের মাস দেড়েক পর গাছ যখন লতিয়ে ওঠে, মাদার মাটিতে আইমোট ১০ কি. বা (একর প্রতি ৪ কেজি.) বা ফুরাডাল ৩ কেজি, (একর প্রতি ১২ কেজি, প্রয়োগ করলে পোকার আক্রমণ কম হয়। 
পুরোনো ক্ষেতেও এইভাবে মাটিতে ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত। বাড়ন্ত ফসলে পোকার আক্রমণ দেখা দিলে কীটনাশক ওষুধের দ্রবণ (প্রতি লিটার পানিতে দেড় মিলিমিটার এন্ডোসালফান, আধ মিলিলিটার ফসফামিডন বা ১ মিলিলিটার ডাইমিথোয়েট) স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে। ওষুধ স্প্রে করার পর ৮-১০ দিনের মধ্যে পটল তোলা নিষেধ।

পটল গাছের মাকড় হলুদ ও লাল এর পোকা


মাকড় আকারে অতি ছোট, খালি চোখে সহজে দেখা যায় না। পাতার নিচে থাকে। আক্রান্ত পাতার নিচের দিকে খুবই সূক্ষ্ম সাদাটে জালিকা দেখা দেয়। এদের আক্রমণ গ্রীষ্মকালে বা বষাকালে বেশি হয় যখন কিছুদিন বৃষ্টি বন্ধ থাকার দরুন আবহাওয়া গরম ও শুকনো থাকে। মাকড়ের আক্রমণ বন্ধ করতে হলে– (ক) এন্ডোসালফান (থায়োেডান, থায়ানেল, হিলডান, এন্ডোসেল, প্রতি লিটার পানিতে আড়াই মিলিলিটার) স্প্রে বা (খ) কেলথেন বা ডাইকোফল গুঁড়া ৩০% একরপ্রতি ৭-৮ কেজি, ছড়াতে হয়। বিকল্পে মনোেক্রোটোফস, নভাক্রিন, সুফস প্রতি লিটার পানিতে দেড় মিলিলিটার স্প্রে করতে হবে।

পটল গাছের ফলের মাছি


গ্রীষ্মকালে এর আক্রমণ বেশি হয়। ফুল ও ফল বের হবার সঙ্গে সঙ্গে মাছ কচি ফলে বসে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের নরম অংশ কুরে কুরে খায়, ফলে গ্রীষ্মকালে ফল শুকায় এবং আবহাওয়া স্যাঁতসেঁতে থাকলে ফল পচে যায়।

প্রতিকার ব্যবস্থাঃ আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে। গাছে বিশেষ করে ফলের ওপর ম্যালাথায়ন ৫০% ই.সি. (প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার) দ্রবণ স্প্রে করতে হবে। মাঠের মধ্যে মাটির সরা বা অন্য কোনো পাত্রে ২০ গ্রাম ম্যালাথায়ন পাউডার ৫%, ২০০ গ্রাম গুড় ও ২ লিটার পানিতে মিশ্রণ করে রাখতে হবে। মাটি আকৃষ্ট হয়ে এই ফাঁদে পড়বে, বিনাশ হবে। বিনাশ হলে মাছির সংখ্যাও তার দরুন আক্রমণ বা ক্ষতি কমবে।

জোনাকি পোকা ও কালো হলদে রঙের নকশাওয়ালা ছোট গোলপোকা


লাল, নীল, কালো ও ধূসর রঙের পোকা ফসলের মধ্যে দেখা যায়। পূর্ণাঙ্গ পোকা পাতা, কুঁড়ি ও ফুল খায় এবং কীড়া (গ্রাব) শেকড় কুরে কুরে খায়, ফলে গাছ শুকিয়ে যায়। গাছের ওপর কারবারিল ডাস্ট একর প্রতি ১০ কেজি, প্রয়োগ করতে হবে, কিংবা মাথায়ন ৫০% উ.ঈ. (প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার) দ্রবণ স্প্রে করতে হবে।

পটল গাছের বাঘা পোকা


মাটির গায়ে কালো ফোঁটা ফোঁটা দাগ থাকে। পাতায় এক জায়গায় হলদে রঙের চুরুটের আকারে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে হলদেটে গ্রাব ও কীড়া বের হয়ে, যার গায়ে লম্বা গাঢ় বাদামি কাঁটা থাকে। অপূর্ণাঙ্গ মাছি পাতা আঁচড়ে আঁচড়ে রস গ্রহণ করে।
পোকার জাত থেকে ফসল রক্ষা করতে হলে-
  • (ক) কারবারিল দ্রবণ (সেভিন, কিলেক্স কারবারিল প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম পাউডার),
  • (খ) ডাইক্লোরোভস (ভ্যাপোনো, ডিডিভিপি প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার),
  • (গ) এন্ডোসালফান (থায়োডান, হিলডান, থায়োনেল, এন্ডোসেল প্রতি লিটার পানিতে ২১/২ মিলিমিটার) দ্রবণ স্প্রে করতে হবে।

পটল গাছের রোগ ও পোকা দমন প্রতিকার ব্যবস্থা


পটল গাছ চাষে বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ হতে পারে, যা গাছের ফলন কমাতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু প্রতিকার ব্যবস্থা দেওয়া হলো একই জমিতে এক প্রকার ফসল বারবার না চাষ করা। নিয়মিত পানি সেচ, সার প্রয়োগ, ও গাছ পরিচর্যা। রোগ ও পোকায় আক্রান্ত গাছ দ্রুত অপসারণ। বিভিন্ন জৈবিক পদ্ধতি যেমন লেডিবাগ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক শত্রু ব্যবহার। এই প্রতিকার ব্যবস্থাগুলি নিয়মিত প্রয়োগ করলে পটল গাছের রোগ ও পোকা দমনে কার্যকর হবে এবং ভালো ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন