ভার্নিয়ার পদ্ধতিতে একটি তারের উপাদানের ইয়ং-এর গুণাঙ্ক নির্ণয়
চলে এসেছে এইচএসিস পরীক্ষার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে HSC 25 অনলাইন ব্যাচপরীক্ষার নামঃ ভার্নিয়ার পদ্ধতিতে একটি তারের উপাদানের ইয়ং-এর গুণাঙ্ক নির্ণয়।
একটি স্প্রিং-এর বিভবশক্তি নির্ণয় (ব্যবহারিক)তত্ত্বঃ স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে দৈর্ঘ্য পীড়ন ও দৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাতকে ইয়ং-এর গুণাঙ্ক বলে।
ইয়ং-এর গুণাঙ্ক
Y = দৈর্ঘ্য পীড়ন / দৈর্ঘ্য বিকৃতি = F/A / l/L = FL/Al ..............(1)
এখানে,
- F = প্রযুক্ত বল
- L = তারের আদি দৈর্ঘ্য
- A = তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল
- l = দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি
তারের প্রান্তে M ভার ঝুলানো হলে F = mg; g হচ্ছে অভিকর্ষজ ত্বরণ। আবার তারের ব্যাসার্ধ যদি r হয়, তবে তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A = πr² । সমীকরণ (1) থেকে আমরা পাই, Y = MgL / πr²l ........... (2)
যন্ত্রপাতি
- ভার্নিয়ার যন্ত্র,
- ক্রু গজ,
- মিটার স্কেল ও
- 0.5 kg বাটখারা।
চিত্র ৬: ভার্নিয়ার যন্ত্র
কাজের ধারা
- ১. ক্রু গজের লঘিষ্ঠ ধ্রুবক ও যান্ত্রিক ত্রুটি নির্ণয় করেছিলাম। ক্রু গজের সাহায্যে পরীক্ষাধীন তারের ব্যাস বিভিন্ন জায়গায় বের করে গড় ব্যাস নির্ণয় করেছিলাম। ব্যাসকে দুই দ্বারা ভাগ করে ব্যাসার্ধ পেয়েছিলাম।
- ২. তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A = πr² নির্ণয় করে তাকে তারের উপাদানের অসহ পীড়ন দ্বারা গুণ করে অসহ ওজন নির্ণয় করেছিলাম।
- ৩. পরীক্ষাধীন তারটিকে টান টান করার জন্য তারের প্রান্তে কিছু ভার চাপিয়েছিলাম (চিত্র ৬)। এটি প্রাথমিক ভার বা মৃত ভার।
- ৪. পরীক্ষণীয় তারের ঝুলনবিন্দু থেকে ভার্নিয়ার স্কেল V-এর উপরের বিন্দু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য মিটার স্কেলের সাহায্যে মেপেছিলাম।
- ৫. ভার্নিয়ার ধ্রুবক নির্ণয় করে প্রধান স্কেল ও ভার্নিয়ার পাঠ নিয়েছিলাম।
- ৬. এরপর পরীক্ষণীয় তারের নীচের প্রান্তে 0.5 kg ভর চাপানোর ফলে তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হওয়ায় ভার্নিয়ার স্কেল নীচে নেমে যায়। এই অবস্থায় প্রধান স্কেল ও ভার্নিয়ার স্কেলের পাঠ নিয়েছিলাম। এই পাঠ থেকে আদি পাঠ বিয়োগ করে 0.5 kg ওজনের জন্য তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি নির্ণয় করেছিলাম।
- ৭. একইভাবে পর পর কয়েক বার 0.5 kg বাটখারা চাপিয়ে প্রত্যেক বার পাঠ নিয়ে তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি বের করেছিলাম। তবে লক্ষ রেখেছিলাম ওজন যেন অসহ ওজনের অর্ধেকের বেশি না হয়।
- ৮ . তারপর পাত্র থেকে একটি করে 0.5 kg বাটখারা নামিয়ে উপর্যুক্ত নিয়মে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি নির্ণয় করেছিলাম। ফলে প্রতিটি ওজনের জন্য দুটি করে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়েছিলাম। একটি ওজন বৃদ্ধির সময় ও অন্যটি ওজন হ্রাসের সময়। ঐ দুই দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির গড় মানই নির্দিষ্ট ওজনের জন্য তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি l।
- ৯. ছক কাগজের x অক্ষ বরাবর ভর M ও y অক্ষ বরাবর আনুষঙ্গিক দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ।-এর মান বসিয়ে একটি লেখচিত্র অঙ্কন করেছিলাম (চিত্র ১৩)। লেখচিত্রটি একটি মূলবিন্দুগামী সরলরেখা হয়েছিল। ঐ সরলরেখার উপর যেকোনো একটি বিন্দু P নিয়েছিলাম। P বিন্দু থেকে x ও y অক্ষের উপর যথাক্রমে PQ ও PN লম্ব টেনেছিলাম। লেখচিত্র থেকে M = OQ ও। = ON-এর মান জেনে সমীকরণ (2)-এর সাহায্যে তারের উপাদানের ইয়ং-এর গুণাঙ্ক Y-এর মান নির্ণয় করেছিলাম।
পর্যবেক্ষণ
তারের আদি দৈর্ঘ্য L = 292.5 cm
ক্রু গজের লঘিষ্ঠ ধ্রুবক k = পিচ / বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা = 1 mm /100 = 0.01 mm
ভার্নিয়ার ধ্রুবক = মূল স্কেলের ক্ষুদ্র এক ভাগের মান / ভার্নিয়ার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা = S/n = 1mm / 20 = 0.05 mm
ছক ১: তারের ব্যাসার্ধ r নির্ণয়
ছক ২: দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি l নির্ণয়
হিসাব
r = 0.35 mm = 0.035 cm
লেখচিত্র থেকে, M = OQ = 1750 g; l = ON = 0.7 mm = 0.07 cm
Y=MgL / πr²l = (1750)(981)(292.5) / (3.14)(0.035)2(0.07) = 1.86 x 1012 dyne/cm² = 1.86 × 1011 N/m²
ফলাফল
পরীক্ষণীয় তারের উপাদানের (ইস্পাত) ইয়ং-এর গুণান্ধ Y = 1.86 × 1011 N/m²
ফলাফলের উপর আলোচনা
m~l গ্রাফের প্রকৃতি হলো এটি মূলবিন্দুগামী সরলরেখা। পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে অঙ্কিত m~l গ্রাফটিও মূলবিন্দুগামী সরলরেখা। সুতরাং Y-মান প্রায় সঠিক। ভালো ফলাফলের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল করেছিলাম।
- ১. তার দুটি একই পদার্থের নিয়েছিলাম।
- ২. পরীক্ষাধীন তারটি যাতে বাঁকা হয়ে না থাকে সেজন্য প্রথমেই তারের নিম্নপ্রান্তে কিছু ওজন দিয়ে তারটিকে টান টান করে রেখেছিলাম।
- ৩. তারটি যাতে স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে থাকে সেজন্য অসহ ওজনের অর্ধেকের বেশি ওজন কখনই তারে চাপাই নি।
- ৪. তারের ব্যাসার্ধ নির্ণয়ের সময় সতর্কতার সাথে পাঠ নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন ও উত্তর
১.প্রঃ ক্রু গজ কী? এই যন্ত্রকে মাইক্রোমিটার ক্রু গজ বলা হয় কেন?
উঃ এটি একটি যন্ত্র যা দ্বারা খুব ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য (1 mm-এর একশত ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত) পরিমাপ করা যায়। এজন্য একে মাইক্রোমিটার ক্রু গজ বলে।
২. প্রঃ পিচ কাকে বলে?
উঃ বৃত্তাকার স্কেলটি সম্পূর্ণ এক বার ঘুরালে এটি রৈখিক স্কেল বরাবর যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে পিচ বলে।
৩. প্রঃ লঘিষ্ঠ ধ্রুবক কাকে বলে?
উঃ ক্রু গজের সাহায্যে ক্ষুদ্রতম যে দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায় তাকে এর লঘিষ্ঠ ধ্রুবক বলে। বৃত্তাকার স্কেলকে মাত্র এক ঘর ঘুরালে এটি রৈখিক স্কেল বরাবর যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে তা-ই লঘিষ্ঠ ধ্রুবক। পিচকে স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে ধ্রুবকের মান পাওয়া যায়।
৪. প্রঃ "ক্রু গজের লঘিষ্ঠ ধ্রুবক 0.01 mm"- অর্থ কী?
উঃ ঐ ক্রু গজের সাহায্যে 1 mm-এর একশত ভাগের এক ভাগ মাপা যায়।
৫. প্রঃ তারের বিভিন্ন স্থানের ব্যাস পরিমাপ করতে হয় কেন?
উঃ তারটির ব্যাস সুষম নাও হতে পারে। বিভিন্ন স্থানে ব্যাস পরিমাপ করে গড় নিলে প্রায় সঠিক ব্যাস পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ বয়েলের সূত্র যাচাই। (ব্যবহারিক)
৬. প্রঃ তারের ব্যাস মাপার সময় প্রতিটি স্থানে সমকোণে দুই বার পাঠ নিতে হয় কেন?
উঃ কোনো এক স্থানে তারের প্রস্থচ্ছেদ পুরোপুরি বৃত্তাকার না হয়ে কিছুটা চাপা হতে পারে। ঐ স্থানে সমকোণে ব্যাস পরিমাপ করে গড় নিলে এ ত্রুটি দূর হয়।
৭. প্রঃ স্ক্রু গজে কী কী ত্রুটি থাকতে পারে?
উঃ ক্রু গজে দুই ধরনের ত্রুটি থাকতে পারে। যথা: যান্ত্রিক ত্রুটি ও পিছট ত্রুটি (backlash error)।
৮. প্রঃ যান্ত্রিক ত্রুটি কী? এটি কিভাবে নির্ণয় করতে হয়?
উ: ক্রু গজের বর্ণনা দেখ।
৯. প্রঃ পিছট ত্রুটি কী? এই ত্রুটি কিভাবে পরিহার করা যায়?
উঃ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ক্রু গজের ক্রু কিছুটা ঢিলে হয়ে পড়ে। ফলে স্কুকে উভয় দিকে একই পরিমাণ ঘুরালে সমান দূরত্ব যায় না। একে পিছট ত্রুটি বলে। পাঠ নেওয়ার সময় ক্রুকে একই দিকে ঘুরিয়ে এই ত্রুটি পরিহার করা যায়।
১০. প্রঃ স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে?
উঃ বাইরে থেকে বল প্রয়োগে কোনো বস্তুর আকার বা আয়তনের পরিবর্তনের সময় বস্তু যে ধর্মের জন্য ঐ পরিবর্তনে বাধা দেয় এবং প্রযুক্ত বল অপসারণ করলে বিকৃত বস্তু পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে বা আসতে চায় তাকে স্থিতিস্থাপকতা বলে।
১১. প্রঃ স্থিতিস্থাপক সীমা কী?
উঃ সর্বোচ্চ যে বল প্রয়োগ করে তা অপসারণ করলে বস্তুটি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে তাকে স্থিতিস্থাপক সীমা বলে।
১২. প্রঃ হুকের সূত্র কী?
উঃ স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর উপর প্রযুক্ত পীড়ন এর বিকৃতির সমানুপাতিক।
১৩. প্রঃ স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক কত প্রকার ও কী কী?
উঃ তিন প্রকার। যথা: ইয়ং-এর গুণাঙ্ক, আয়তন গুণাঙ্ক ও দৃঢ়তার গুণাঙ্ক।
১৪. প্রঃ ইয়ং-এর গুণাঙ্কের সংজ্ঞা দাও।
উঃ স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে দৈর্ঘ্য পীড়ন ও দৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাতকে ইয়ং-এর গুণাঙ্ক বলে। অর্থাৎ ইয়ং-এর গুণাঙ্ক Y = দৈর্ঘ্য পীড়ন দৈর্ঘ্য বিকৃতি
১৫. প্রঃ অসহ পীড়ন ও অসহ ওজন বলতে কী বোঝ?
উঃ একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট কোনো তারের প্রান্তে সর্বনিম্ন যে বল প্রয়োগ করলে তারটি ছিঁড়ে যায় তাকে অসহ পীড়ন বলে। কোনো তারের প্রান্তে সর্বনিম্ন যে ওজন প্রয়োগ করলে তারটি ছিড়ে যায় তাকে অসহ ওজন বলে। অসহ ওজন = অসহ পীড়ন × তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল।