কার্বনেট বাফার দ্রবণ প্রস্তুতকরণ এবং পৃথকভাবে এসিড ও ক্ষার দ্রবণ যোগ

হাইড্রোক্লোরিক এসিডের 250 মি.লি. (M/10) বা 0.1 M আসন্ন দ্রবণ প্রস্তুতকরণপরীক্ষাকার্য- কার্বনেট বাফার দ্রবণ প্রস্তুতকরণ এবং পৃথকভাবে এসিড ও ক্ষার দ্রবণ যোগ করে এর কার্যকারিতা প্রমাণ।
কার্বনেট বাফার দ্রবণ প্রস্তুতকরণ এবং পৃথকভাবে এসিড ও ক্ষার দ্রবণ যোগ করে এর কার্যকারিতা প্রমাণ।

কার্বনেট বাফার দ্রবণ প্রস্তুতকরণ এবং পৃথকভাবে এসিড ও ক্ষার দ্রবণ যোগ করে এর কার্যকারিতা প্রমাণ


মূলনীতি (Theory) যে দ্রবণে অল্প পরিমাণ অম্ল, ক্ষার বা দ্রাবক যোগ করলেও দ্রবণের pH অপরিবর্তীত থাকে তাকে বাফার দ্রবণ (Buffer Solution) বলে। সাধারণতঃ কোন দুর্বল অম্ল বা ক্ষার এবং এর লবণ দিয়ে বাফার দ্রবণ তৈরি হয়। যেমন- CH₃COOH + CH₃COONa অম্লীয় বাফার; H₂CO₃ + NaHCO₃ ক্ষারীয় বাফার। দ্বিতীয়টি কার্বনেট বাফার বা কার্বনেট-বাইকার্বনেট বাফার নামে পরিচিত।

বিভিন্নভাবে কার্বনেট বাফার প্রস্তুত করা যায়। যেমন- 4 মি.লি. 0.2M H₂CO₃ দ্রবণকে 46 মি.লি. 0.2M NaHCO₃ দ্রবণের সাথে মিশিয়ে একে পাতিত পানিযোগে লঘু করে দ্রবণের আয়তন 200 মি.লি. করলে কার্বনেট বাফার প্রস্তুত হয় যার pH হবে 9.2। বাফার দ্রবণে H₂CO₃ ও NaHCO₃ নিম্নরূপে আয়নিত হয়ঃ

H₂CO₃ (aq) H (aq) + HCO₃ (aq)
NaHCO₃ (aq) → Na (aq) + HCO₃ (aq)

এ বাফার দ্রবণে অম্ল অর্থাৎH+যোগ করলে তা দ্রবণে বিদ্যমান HCO₃ -এর সাথে বিক্রিয়া করে H₂CO₃ উৎপন্ন করে। উৎপন্ন H₂CO₃ একটি দুর্বল তড়িৎ-বিশ্লেষ্য বলে তা খুবই অল্প পরিমাণে বিয়োজিত হয়। অর্থাৎ দ্রবণের pH একই থাকবে।
H(aq) + HCO₃(aq) H₂CO₃ (aq)
আবার এ বাফার দ্রবণে ক্ষার অর্থাৎ OH যোগ করলে তা দ্রবণে উপস্থিত H₂CO₃-এর সাথে বিক্রিয়া করে পানি ও HCO₃ উৎপন্ন করে। সুতরাং এক্ষেত্রেও দ্রবণের pH একই থাকবে।
OH (aq) + H₂CO₃ (aq) HCO₃ (aq) + H₂O (1)
কার্বনেট বাফার দ্রবণে (যার pH জানা আছে) সামান্য পরিমাণ অম্ল বা ক্ষার যোগ করার পর দ্রবণের pH মেপে বা নির্দেশকের বর্ণ দেখে এর বাফার কৌশল বোঝা যায়।
যন্ত্রপাতি (Apparatus)
  • (১) 100 মি.লি.-এর ৩টি (দ্রবণ সরবরাহ করলে একটি) মাপক ফ্লাক্স,
  • (২ পরীক্ষানল ৩টি,
  • (৩) একটি পরীক্ষনল ধারক,
  • (৪) 10 মি.লি.-এর পিপেট একটি এবং
  • (৫) ড্রপার দুটি।
রাসায়নিক দ্রব্যাদি (Chemicals)
  • (১) আর্দ্র সোডিয়াম কার্বনেট (Na₂CO₃.10H₂O),
  • (২) সোডিয়া বাইকার্বনেট (NaHCO₃),
  • (৩) পাতিত পানি,
  • (৪) HCl দ্রবণ,
  • (৫) NaOH দ্রবণ ও
  • (৬) সর্বজনীন নির্দেশক দ্রবণ
কার্যপ্রণালী (Procedure)
এই পরীক্ষাকার্যটি নিম্নের দুটি/তিনটি ধাপে সম্পন্ন করতে হয়ঃ
  • i) সোডিয়াম কার্বনেটের 0.1 M ও সোডিয়াম বাইকার্বনেটের 0.1M দ্রবণ প্রস্তুতকরণ। (দ্রবণ সরবরাহ করলে এ ধাপ করতে হবে না)
  • ii) বাফার দ্রবণ প্রস্তুতকরণ।
  • iii) অম্ল ও ক্ষার যোগের মাধ্যমে বাফার দ্রবণের কার্যকারিতা পরীক্ষা।

সোডিয়াম কার্বনেটের 0.1 M ও। সোডিয়াম বাইকার্বনেটের 0.1 M দ্রবণ প্রস্তুতকরণ


আর্দ্র সোডিয়াম কার্বনেটের (Na₂CO₃.10H₂O) আণবিক ওজন= 286 গ্রাম মোল অতএব, 1000 মি.লি. 1M দ্রবণ প্রস্তুতিতে 286 গ্রাম আর্দ্র সোডিয়াম কার্বনেট প্রয়োজন
100 মি.লি. 0.1 M দ্রবণ প্রস্তুতিতে 286/(10×10) = 2.86 গ্রাম আর্দ্র সোডিয়াম কার্বনেট প্রয়োজন আবার, সোডিয়াম বাইকার্বনেটের (NaHCO₃) আণবিক ওজন = 84 গ্রাম মোল' 100 মি.লি. 0.1 M দ্রবণ প্রস্তুতিতে 0.84 গ্রাম সোডিয়াম বাইকার্বনেট প্রয়োজন
100 মি.লি. আয়তনের একটি মাপক ফ্লাক্সকে ভালভাবে পাতিত পানি দিয়ে ধুয়ে এর মুখে একটি পরিষ্কার ফানেল বসাও। একটি পরিষ্কার ও শুষ্ক ওয়াচ গ্লাসে 2.86 গ্রাম আর্দ্র সোডিয়াম কার্বনেট লও। ওয়াশ বোতলের পাতিত পানি দিয়ে ওয়াচ গ্লাসের সমস্ত কেলাস মাপক ফ্লাক্সে নিয়ে এর মুখ হতে ফানেলকে সরিয়ে নাও। 

এরপর মাপক ফ্লাক্সের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ পাতিত পানি দিয়ে মুখ লাগিয়ে ভালভাবে ঝাঁকাও যেন কেলাস সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হয়। এখন মাপক ফ্লাক্সের মুখ খুলে পাতিত পানি দিয়ে ফ্লাক্সের 100 মি.লি. দাগ পর্যন্ত পূর্ণ কর। মুখ বন্ধ করে ফ্লাক্সটিকে ভালোভাবে ঝাঁকালে সমসত্ত প্রমাণ দ্রবণ প্রস্তুত হবে। এর সঠিক ঘনমাত্রা হবে 0.1 M. অনুরূপভাবে, 0.84 গ্রাম সোডিয়াম বাইকার্বনেট ওজন করে 100 মি.লি. মাপক ফ্লাক্সে নিয়ে পাতিত পানি দিয়ে দ্রবীভূত করে ফ্লাক্সের গলার দাগ পর্যন্ত পূর্ণ করলে প্রস্তুতকৃত দ্রবণের ঘনমাত্রা হবে 0.1 M.

[ বিঃ দ্রঃ 1.06 গ্রাম অনার্দ্র Na₂CO₃-কে (আণবিক ওজন =106 গ্রাম মোল) পাতিত পানিতে দ্রবীভূত করে এর আয়তন 100 মি.লি. করেও 0.1 M Na₂CO₃ দ্রবণ প্রস্তুত করা যায়।]

বাফার দ্রবণ প্রস্তুতকরণঃ 


একটি 100 মি.লি. মাপক ফ্লাক্সে 10 মি.লি. পিপেটের সাহায্যে 20 মি.লি. 0.1 M সোডিয়াম কার্বনেটের দ্রবণ লও। এবার সোডিয়াম বাইকার্বনেটের 0.1 M দ্রবণ একটি বীকারে নিয়ে মাপক ফ্লাক্সটির মধ্যে ঢাল ও গলার দাগ পর্যন্ত পূর্ণ কর (শেষের দিকে ড্রপারের সাহায্য নিতে পার)। মিশ্রণটিকে উত্তমরূপে ঝাঁকালে কার্বনেট বাফার দ্রবণ প্রস্তুত হবে। (এ বাফার দ্রবণের pH সীমা 9.2 – 10.8)।

অম্ল ও ক্ষার যোগের মাধ্যমে বাফার দ্রবণের কার্যকারিতা পরীক্ষাঃ


(১) তিনটি পরীক্ষানল পরিষ্কার করে মার্কার কলম দ্বারা ১, ২ ও ৩ নম্বর দিয়ে চিহ্নিত কর।
(২) প্রত্যেক পরীক্ষানলে পিপেটের সাহায্যে 5 মি.লি. করে প্রস্তুতকৃত বাফার দ্রবণ যোগ কর।
(৩) এবার ড্রপারের সাহায্যে ৩ ফোঁটা করে সর্বজনীন নির্দেশক দ্রবণ প্রত্যেক পরীক্ষানলে যোগ কর (চিত্র- ৪)। পরীক্ষানল সামান্য ঝাঁকিয়ে বর্ণ লক্ষ্য কর ও তা খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
(৪) এখন ড্রপারের সাহায্যে ১ ফোঁটা লঘু HCl (1 M) পরীক্ষানল ২-এ যোগ কর। পরীক্ষানল সামান্য ঝাঁকিয়ে বর্ণ লক্ষ্য করে খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
(৫) পরিশেষে ড্রপারের সাহায্যে ১ ফোঁটা লঘু NaOH (1 M) পরীক্ষানল ৩-এ যোগ কর। পরীক্ষানল সামান্য ঝাঁকিয়ে বর্ণ লক্ষ্য কর ও তা খাতায় লিপিবদ্ধ কর।

চিত্র-৪ঃ কার্বনেট বাফার দ্রবণের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ।


কার্বনেট বাফার দ্রবণের কার্যকারিতা

উপাত্ত সমূহ (Data) [নমুনা মাত্র Specimen only]:
কক্ষ তাপমাত্রা = 26.3°C
100 মি.লি. প্রস্তুতকৃত কার্বনেট বাফারে গৃহীত
0.1 M সোডিয়াম কার্বনেটের দ্রবণের আয়তন = 20 মি.লি.
এবং 0.1 M সোডিয়াম বাইকার্বনেটের দ্রবণের আয়তন = ৪০ মি.লি.

টেবিল- অম্ল ও ক্ষারযুক্ত বাফার দ্রবণের pH-এর মান।


পরীক্ষানল নম্বর

পরীক্ষানলে উপস্থিত দ্রবণ

সর্বজনীন নির্দেশকের বর্ণ

সম্ভাব্য pH মান


সিদ্ধান্ত


কার্বনেট বাফার

নীল

৯ - ১১ (প্রায় ১০.৪)

বাফারটি ক্ষারীয় প্রকৃতির

কার্বনেট বাফার + অম্ল

নীল

৯ - ১১ (প্রায় ১০.৪)

বাফার অম্লকে প্রশমিত করেছে

কার্বনেট বাফার + ক্ষার

নীল

৯ - ১১ (প্রায় ১০.৪)

বাফার ক্ষারকে প্রশমিত করেছে

ফলাফল (Result): 26.3°C তাপমাত্রায় প্রস্তুতকৃত কার্বনেট বাফারটির সম্ভাব্য pH-এর মান ৯ - ১১ (প্রায় ১০.৪)। সামান্য পরিমাণ লঘু অম্ল বা ক্ষার যোগ করলেও এর pH-এর মান প্রায় অপরিবর্তীত থাকে।
ব্যাখা (Explanation): প্রস্তুতকৃত কার্বনেট বাফারের pH-এর মান ১০.৪ নির্দেশ করে যে, বাফারটি ক্ষারীয় প্রকৃতির। বাফার দ্রবণে H₂CO₃ ও NaHCO₃ নিম্নরূপে আয়নিত হয়ঃ
H₂CO₃ (aq) H+(aq) + HCO₃ (aq)
NaHCO₃ (aq) → Na+ (aq) + HCO₃ (aq)
এ বাফার দ্রবণে অম্ল অর্থাৎ H' যোগ করলে তা দ্রবণস্থিত HCO₃-এর সাথে বিক্রিয়া করে H₂CO₃ উৎপন্ন করে। উৎপন্ন H₂CO₃ দুর্বল তড়িৎ-বিশ্লেষ্য হওয়ায় তা খুবই অল্প পরিমাণে বিয়োজিত হয়। অর্থাৎ দ্রবণের pH একই থাকবে।
H+(aq) + HCO₃ (aq) H₂CO₃ (aq)
আবার এ বাফার দ্রবণে ক্ষার অর্থাৎ OH যোগ করলে তা দ্রবণস্থিত H₂CO₃-এর সাথে বিক্রিয়া করে পানি ও HCO₃ উৎপন্ন করে। সুতরাং এক্ষেত্রেও দ্রবণের pH একই থাকবে।
OH (aq) + H₂CO₃ (aq) HCO₃ (aq) + H₂O (1)
এ বাফার দ্রবণে সামান্য অম্ল বা ক্ষার যোগ করে দ্রবণের pH মেপে এর উপরোক্ত বাফার কৌশল বোঝা যায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
(১) সর্বজনীন নির্দেশকের অভাবে pH পেপার দিয়েও পরীক্ষণটি সম্পন্ন করা যায়। সেক্ষেত্রে ১, ২ ও ৩ নং দ্রবণের ১ ফোঁটা করে pH পেপারে দিয়ে বর্ণ পর্যবেক্ষণ করে pH-এর মান লিখবে।
(২) Na₂CO₃, H₂CO₃-এর উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
(৩) সাধারণতঃ কক্ষ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বাফরের pH-এর মান হ্রাস পায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url