শিখা পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধাতব আয়ন (Na+, K+, Ca2+, Cu2+) সনাক্তকরণ
পরীক্ষাকার্য- শিখা পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধাতব আয়ন (Na+, K+, Ca2+, Cu2+) সনাক্তকরণ।
শিখা পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধাতব আয়ন (Na+ , K+ , Ca2+ , Cu2+ ) সনাক্তকরণ
মূলনীতি (Theory): পরিষ্কার প্লাটিনাম দন্ডে স্থাপিত গাঢ় HCI-এ সিক্ত অজৈব লবণকে বুনসেন দীপের জারণ শিখায় উত্তপ্ত করে শিখার বর্ণ পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট লবণের ক্ষারকীয় মূলক সনাক্তকরণকে শিখা পরীক্ষা (Flame Test) বলে। এ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া প্রধানতঃ ক্ষার ও মৃত্তিকা ক্ষার ধাতু এবং কিছু অবস্থান্তর ধাতু সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়।
গাঢ় HCI, লবণের সাথে বিক্রিয়া করে প্রথমে কঠিন ধাতব ক্লোরাইড উৎপন্ন করে যা বুনসেন দীপের উত্তাপে উদ্বায়িত বা বাষ্পীভূত হয়। বাষ্পীভূত অবস্থায় ধাতব ক্যাটায়ন পার্শ্ববর্তী অ্যানায়ন বা অন্য অণু। পরমাণু থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতুর পরমাণুতে পরিণত হয়। এ পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ স্তরের (Ground State) এক বা একাধিক ইলেকট্রন বুনসেন দীপের তাপশক্তি গ্রহণ করে উত্তেজিত হয় এবং বিভিন্ন উচ্চ শক্তির স্তরে (Excited States) গমন করে। তথায় উত্তেজিত ইলেকট্রন অতিরিক্ত শক্তি আলোকশক্তি হিসাবে নির্গমন করে পূর্বের ন্যায় স্থির অবস্থায় ফিরে আসে (চিত্র-১৬(ক))। নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘের এ আলোকশক্তিই বৈশিষ্ট্যমূলক বিভিন্ন রং প্রদান করে।
MX (s) + HCl (গাঢ়) → তাপ MCI (g) + HX
(যেখানে, M = একযোজী ধাতব ক্যাটায়ন এবং X = একযোজী অ্যানায়ন)
MCI (g) → তাপ M+(g) + Cl(g)
M+ (g) + e → M(g)
M (g) → M* (g) → আলোকশক্তি, M(g)
(যেখানে, M* হলো উত্তেজিত গ্যাসীয় ধাতব পরমাণু)
প্রক্রিয়াটি নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।
চিত্র-(ক) শিখা পরীক্ষায় ধাতব পরমানুস্থ ইলেকট্রনের স্থানান্তর [(ক) উত্তেজিতকরণ ও (খ) প্রশমণ]
- (১) একটি বুনসেন বার্ণার,
- (২) একটি ওয়াচ গ্লাস ও
- (৩) একটি কাঁচদন্ডে সংযুক্ত প্লাটিনাম তার (বা নিকেল-ক্রোম তার)।
রাসায়নিক দ্রব্যাদি (Chemicals):
- (১) গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিড এবং
- (২) কতিপয় অজৈব লবণ (যেমন- Na2CO3, KCl, CaCl2, CuSO4, FeSO4, FeCl3, ইত্যাদি)।
পরীক্ষাকার্য পদ্ধতি (Experimental Procedure):
(১) একটি ওয়াচ গ্লাসে সামান্য গাঢ় HCI লও।
(২) অতঃপর কাঁচ-নলযুক্ত একটি প্লাটিনাম তারকে (অভাবে নিকেল-ক্রোম তার) উক্ত গাঢ় HCI-এ ডুবিয়ে বুনসেন দীপের দীপ্তিহীন শিখায় উত্তপ্ত কর। যতক্ষণ পর্যন্ত তারটি শিখার সাথে রঙের সৃষ্টি করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত বারংবার উপরের পদ্ধতিতে তারটিকে উত্তপ্ত করতে থাক। যখন তারটি শিখার সাথে কোন রঙের সৃষ্টি করবে না তখন বুঝবে যে তারটি পরিষ্কৃত হয়েছে।
(৩) এবার তারটিকে গাঢ় HCI-এ পুনরায় সিক্ত কর। এসিডে সিক্ত প্লাটিনাম তারের মাথায় সামান্য পরিমাণ লবণ লাগিয়ে দীপ্তিহীন জারণ শিখায় উত্তপ্ত কর (চিত্র-১৬ (খ))।
(৪) খালি চোখে ও নীল কাঁচের মাধ্যমে শিখার রং লক্ষ্য কর।
চিত্র-১৬ (খ) শিখা পরীক্ষা।
পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত (Observations and Conclusions):
ব্যাখা (Explanation): বুনসেন দীপের জারণ শিখায় সংশ্লিষ্ট লবণ, গাঢ় HCl-এর সাথে বিক্রিয়া করে উদ্বায়িত বা বাষ্পীভূত ধাতব ক্লোরাইড উৎপন্ন করে। বাষ্পীভূত অবস্থায় ধাতব ক্যাটায়ন পার্শ্ববর্তী অ্যানায়ন বা অন্য অণু/পরমাণু থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতুর পরমাণুতে পরিণত হয়। এ পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ স্তরের এক বা একাধিক ইলেকট্রন (Na, Ca, Fe ও Cu-এর ক্ষেত্রে যথাক্রমে 3s', 4s², 3d°4s² ও 3d 4s' ইলেকট্রন)।
আরো পড়ুনঃ পানির ডাইপোলের উপস্থিতির প্রমাণ
বুনসেন দীপের তাপশক্তি গ্রহণ করে উত্তেজিত হয় এবং বিভিন্ন উচ্চ শক্তির স্তরে গমন করে। তথায় উত্তেজিত ইলেকট্রন অতিরিক্ত শক্তি আলোকশক্তি হিসাবে নির্গমন করে পূর্বের ন্যায় স্থির অবস্থায় ফিরে আসে। নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘের এ আলোকশক্তিই বৈশিষ্ট্যমূলক বিভিন্ন রং প্রদান করে।
বিঃ দ্রঃ ১) শিখা পরীক্ষায় প্লাটিনাম তারের অভাবে অ্যাসবেস্টস সূতা (Asbestose thread) বা ম্যাচের কাঠিও ব্যবহার করা যেতে পারে করা যেতে পারে।
২) শিখা পরীক্ষায় Pb ও Ba সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত নয়।