ব্যাসবাক্য সহকারে সমাস - সমাসের সাহায্যে শব্দ গঠন
ব্যাসবাক্য সহকারে সমাস। সমাসের সাহায্যে শব্দ গঠন
১। সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য
অথবা , সন্ধি ও সমাসের পাঁচটি পার্থক্য উদাহরণসহ লেখো।
উত্তরঃ সন্ধি ও সমাসের পার্থক্যঃ বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে সন্ধি ও সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিচের ছকে সন্ধি এবং সমাসের পার্থক্য দেখানো হলোঃ
২। সমাস কাকে বলে? সমাসের প্রয়োজনীয়তা
অথবা, সমাস কাকে বলে? বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ অন্বয়যুক্ত দুই বা বহুপদের একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তাঃ বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তা নিচে আলোচনা করা হলো-
- ১. বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য ও অপরিসীম। সমাসের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে ভাষাকে সহজ-সরল, সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ও শ্রুতিমধুর করা। ভাষার আবেদন শ্রুতিমধুর না হলে সেই ভাষা শুনতে যেমন বিরক্তিবোধ হয় তেমনই তা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। যেমন-
- 'বউ পরিবেশিত যে ভাত' না বলে যদি বলা হয় 'বৌ-ভাত' তাহলে ভাষা সুন্দর ও শ্রুতিমধুর হয়।
- ২. অল্প কথায় ভাবকে ব্যাপকভাবে প্রকাশ করতে হলে সমাসের একান্ত প্রয়োজন।
- ৩. পারিভাষিক শব্দ তৈরির ক্ষেত্রেও সমাস বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন- 'তিন ফলের সমাহার' না বলে বলা হয় 'ত্রি- ফলা'। ত্রি-ফলা একটি পারিভাষিক শব্দ।
- ৪. যথার্থভাবে গুরুগম্ভীর ভাবকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করতে সমাসবদ্ধ পদ ব্যবহৃত হয়।
- ৫. ভাষাকে প্রাঞ্জলতা দান ও সহজভাবে উচ্চারণের ক্ষেত্রে সমাসের জুড়ি মেলা ভার।
- ৬. সমাসের মাধ্যমে বক্তব্য অর্থবহ, তাৎপর্যপূর্ণ ও ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে।
৩। সমাস কাকে বলে? সমাসে শ্রেণিবিভাগ
অথবা, সমাস কাকে বলে? সমাস প্রধানত কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার সমাসের উদাহরণসহ সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ সমাসঃ পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ অন্বয়যুক্ত দুই বা বহুপদের একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।
সমাসের প্রকারভেদঃ সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথা-
- ১. দ্বন্দ্ব,
- ২. কর্মধারয়,
- ৩. তৎপুরুষ,
- ৪. বহুব্রীহি,
- ৫. দ্বিগু ও
- ৬. অব্যয়ীভাব।
উদাহরণসহ সমাজগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. দ্বন্দ্ব সমাসঃ যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন-
- তাল ও তমাল = তাল-তমাল,
- দোয়াত ও কলম = দোয়াত-কলম
দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বোঝানোর জন্য ব্যাসবাক্যে এবং, ও, আর- এ তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়।
২. কর্মধারয় সমাসঃ যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন-
- নীল যে পদ্ম= নীলপদ্ম,
- শান্ত অথচ শিষ্ট = শান্তশিষ্ট।
৩. তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
- বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন।
এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি 'কে' লোপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ।
৪. বহুব্রীহি সমাসঃ যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনো পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন-
- আশীতে বিষ যার = আশীবিষ।
এখানে আশীতে (দাঁতে) যার বিষ আছে বোঝাতে যেকোনো বিষদাঁত বিশিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে না বুঝিয়ে সাপকে বোঝায়।
- পীত অম্বর যার = পিতাম্বর
- নীল অম্বর যার = নিলাম্বর ইত্যাদি হয়।
৫. দ্বিগু সমাসঃ সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিগু সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন-
- তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল,
- চৌ রাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা।
৬. অব্যয়ীভাবঃ পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়ের অর্থের প্রাধান্য থাকে, তবে তাকে অব্যয়ীভাব বলে। অব্যয়ীভাব সমাসে কেবল অব্যয়ের অর্থযোগে ব্যাসবাক্যটি রচিত হয়। যেমন-
- জানু পর্যন্ত লম্বিত (পর্যন্ত শব্দের অব্যয় 'আ') = আজানুলম্বিত (বাহু),
- মরণ পর্যন্ত = আমরণ।
কতিপয় শব্দের ব্যাসবাক্য সহ সমাস নির্ণয়
৪। নঞ তৎপুরুষ ও নঞর্থক বহুব্রীহি সমাসের মধ্যে পার্থক্য
অথবা, নঞ তৎপুরুষ ও নঞর্থক বহুব্রীহি সমাসের পার্থক্য লেখ।
উত্তরঃ নঞ তৎপুরুষ ও নঞর্থক বহুব্রীহি সমাসের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
৫। অলুক দ্বন্দ্ব, অলুক তৎপুরুষ ও অলুক বহুব্রীহি সমাস
অথবা, অলুক দ্বন্দ্ব, অলুক তৎপুরুষ ও অলুক বহুব্রীহি সমাস উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর
১. অলুক দ্বন্দ্বঃ যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলোর বিভক্তি লুপ্ত না হয়ে সমস্ত পদেও যুক্ত থাকে তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: দুধে ও ভাতে দুধেভাতে, বনে ও বাদাড়ে = বনেবাদাড়ে, হাতে ও পায়ে হাতে-পায়ে ইত্যাদি।
২. অলুক তৎপুরুষ সমাসঃ যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ হয় না, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: ঘিয়ে ভাজা = ঘিয়েভাজা, খেলার মাঠ = খেলারমাঠ ইত্যাদি।
৩. অলুক বহুব্রীহিঃ পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তাকে অলুক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: মাথায় পাগড়ি যার = মাথায় পাগড়ি।