প্রবন্ধ নিবন্ধ রচনা অধ্যবসায়
প্রবন্ধ নিবন্ধ রচনা শুদ্ধাচার এখানে ক্লিক করুনপ্রবন্ধ নিবন্ধ রচনা অধ্যবসায়
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায়ঃ
মানবজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়
সরকারের ভূমিকা অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় → ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব → অধ্যবসায় ও প্রতিভা অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত উপসংহার
ভূমিকাঃ
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, সাফল্যের চাবিকাঠি। এই পরিশ্রম তথা অধ্যবসায় ব্যক্তিকে সার্থকতার ও সুন্দর জীবনের অধিকারী হতে সহায়তা করে। এটি মহৎ গুণ। অধ্যবসায় ছাড়া কারও জীবনে সাফল্য আসে না। জগতে যাঁরা প্রতিষ্ঠিত ও বরণীয় হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই কঠোর অধ্যবসায় করেছেন। কারণ জগতে মহৎ কোনোকিছুই সুলভ নয়। কঠোর শ্রম, ত্যাগ ও অধ্যবসায় দ্বারা অর্জন করতে হয়। জগৎ-সংসারের নিরবধি বাধা আর প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই মানুষকে সামনে অগ্রসর হতে হয়। এই অগ্রসর হবার মূল প্রেরণা হলো অধ্যবসায়। কবির ভাষায়-
"কেন পান্থ ক্ষান্ত ও হেরি দীর্ঘ পথ
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?"
অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তাঃ
মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে রয়েছে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা। মানবজীবনের যেসব গুণ জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তুলতে পারে তার মধ্যে অধ্যবসায় হলো অন্যতম। মানবজীবনের যে কোনো কাজে ব্যর্থতা আসতে পারে। এ কারণে হতাশ হওয়া উচিৎ নয়। কারণ ব্যর্থতাই সফলতার প্রথম সোপান। এই ব্যর্থতা থেকে শিখে সফলতা অর্জন করতে হয়।
ব্যর্থতা থেকে সাধনার শুরু, আর সফলতার মাধ্যমে তার শেষ। তাই মানবজীবনে সাধনা বা অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। অধ্যবসায়ী মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে। এমনকি অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে। সুতরাং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ব্যর্থতা ঢেকে সফলতা আসে।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ঃ
মানুষের জীবনে অধ্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ছাত্রজীবনই ভবিষ্যৎ গড়ার উপযুক্ত সময়। এ সময় ব্যর্থ হলে সম্পূর্ণ মানবজীবনই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যে ছাত্র অধ্যবসায়ী, সাফল্য তার হাতের মুঠোয়। অলস ছাত্র-ছাত্রী মেধাবী হলেও পড়াশোনায় কখনো সফল হতে পারে না। কঠোর অধ্যবসায় ছাড়া কোনো কাজেই জয়ী হওয়া যায় না। ছাত্রজীবনেই এ সত্য উপলব্ধি করে নিজেকে অধ্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ এর ভাষায়ঃ
পারিব না একথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার,
পাঁচ জনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না পার কর যতন আবার,
একবার না পারিলে দেখ শতবার।
ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ
যেকোনো ব্যক্তির জীবনে অধ্যবসায় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকল মানুষের শক্তি বা ক্ষমতা এক রকম নয়, কিন্তু প্রত্যেককে উন্নত জীবনের সন্ধান পেতে হয়। সেখানে যদি অধ্যবসায়ের যথার্থ প্রয়োগ করা যায় তবে শক্তির স্বল্পতা সাফল্যের পথে কোনো বাধা হয়ে থাকতে পারে না। কাজের আগ্রহ, বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ, সুদৃঢ় সংকল্প এসব যদি ঠিক থাকে তবে কোনো ব্যক্তিই কোনো কাজে ব্যর্থ হয় না। মানুষকে তার প্রয়োজনীয় উপকরণ নিজের যোগ্যতা দিয়ে সংগ্রহ করে নিতে হয়। আর তাই ব্যক্তিজীবনে নিরলস অধ্যবসায় প্রয়োজন।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সে জাতির সকল নাগরিককে অধ্যবসায়ী হতে হবে। সবাই একনিষ্ঠভাবে জাতীয় স্বার্থ সাধনের জন্য সর্বশক্তি নিয়ে আত্মনিয়োগ করলেই মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জন করা সম্ভব। অবশ্য ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের ফল জাতীয় জীবনের বৃহত্তম কল্যাণে আসে।
বিশ্বের জ্ঞানী, মনীষী, আবিষ্কারক, ধর্মপ্রবর্তক, রাষ্ট্রনায়ক, কবি, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক সকলেই অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছেন। একেবারেই ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জনের পেছনে অধ্যবসায় কেমন কাজ করেছে তার নিদর্শন বিশ্বের বহু মনীষীর জীবনে বিদ্যমান। অধ্যবসায় ছাড়া সাফল্যের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব নয়।
অধ্যবসায় ও প্রতিভাঃ
অধ্যবসায় ছাড়া প্রতিভা মূল্যহীন। অধ্যবসায় প্রতিভার চেয়ে অনেক বড়। মনীষী ভলতেয়ারের ভাষায় 'প্রতিভা বলে কোনো কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।' ডালটন বলেছেন, 'লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে; কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া আর কিছু জানি না।'
বিজ্ঞানী নিউটনের উক্তি, আমার আবিষ্কার প্রতিভা-প্রসূত নয়, বহু বছরের অধ্যবসায় ও নিরবচ্ছিন্ন সাধনার ফল।' এ থেকেই বোঝা যায়, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম ছাড়া শুধু প্রতিভার কোনো মূল্য নেই। প্রতিভাবান ব্যক্তিরা অধ্যবসায় দ্বারাই নিজের কাজকে সুসম্পন্ন করে তোলেন। আবার অধ্যবসায়ের দ্বারা অনেকে প্রতিভাবান হিসেবে সুনাম অর্জন করেন।
অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্তঃ
পৃথিবীর সকল মনীষী সাফল্য অর্জন করেছেন অধ্যবসায়ের 'মাধ্যমে। অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই অমরত্ব লাভ করেছেন। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ও ফ্রান্সের বিখ্যাত ঐতিহাসিক কার্লাইল অধ্যবসায়ের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। রবার্ট ব্রুস বারবার ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়েও যুদ্ধ-জয়ের আশা ও চেষ্টা ত্যাগ করেননি।
ষষ্ঠবার পরাজিত হয়ে তিনি যুদ্ধ চিন্তায় মগ্ন আছেন, এমন সময় দেখতে পেলেন একটি মাকড়সা বারবার কড়িকাঠে সুতা বাঁধবার চেষ্টা করছে এবং ব্যর্থ হচ্ছে। এইভাবে ছয়বার ব্যর্থ হয়ে সপ্তমবারে মাকড়সাটি সফল হলো। এই দেখে রবার্ট ব্রুসও সপ্তমবার যুদ্ধ করে ইংরেজদের পরাজিত করেন এবং স্কটল্যান্ডের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন।
মনীষী কার্লাইল তাঁর লেখা ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি এক বন্ধুকে পড়তে দিয়েছিলেন। বন্ধুর বাড়ির কাজের মহিলা সেটিকে বাজে কাগজ ভেবে পুড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু কার্লাইল একটুও ভেঙে পড়েননি। তিনি আবার চেষ্টা করে বইখানা লিখে বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছিলেন।
সম্রাট নেপোলিয়ন, আব্রাহাম লিঙ্কন, ক্রিস্টোফার কলম্বাস প্রমুখ মনীষীর জীবনও অধ্যবসায়ের এক বিরাট সাক্ষ্য। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় অধ্যবসায়ের গুণেই আজ বিশ্ববিখ্যাত। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
উপসংহারঃ
অধ্যবসায় মহৎগুণ যার মাধ্যমে মানুষ সফলতা লাভ করে। এটি ছাড়া কোনো ব্যক্তি, কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। জীবনের চলার পথ সুগম নয়, দুর্গম। তাই বলে সেই পথ অতিক্রম করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। জীবনকে প্রস্তুত করতে হবে সেই বাঁধা অতিক্রম করার জন্য। সুতরাং সকল কাজে অধ্যবসায় জীবনের ব্রত হতে হবে। অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই সফলতা আসে। কবি বলেছেন-
মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে।