কমিউনিকেশন সিস্টেম এর ধারণা এবং এ সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
কমিউনিকেশন সিস্টেম এর ধারণা এবং এ সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১। সর্বোচ্চ গতির মাধ্যমটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ সর্বোচ্চ গতির মাধ্যম হলো ফাইবার অপটিক বা অপটিক ফাইবার যা 100 GHz এরও কিছু বেশি ব্যান্ডউইথে ডেটা ট্রান্সমিশনে সক্ষম। ফাইবার অপটিক ক্যাবল বিশেষভাবে পরিশুদ্ধ কাঁচের অথবা প্লাস্টিক বা অন্য কোনো স্বচ্ছ মাধ্যমের তৈরি অত্যন্ত সূক্ষ্ম তত্ত্ব। ফাইবার অপটিক ক্যাবলে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হিসেবে সিগনাল পাঠানো হয়। ফাইবার অপটিকের সাধারণত তিনটি অংশ থাকে। যথাঃ
- ১। কোরঃ ভিতরের ডাই ইলেকট্রিক কোর যার ব্যাস ৮ থেকে ১০০ মাইক্রোন। এর প্রতিসরাঙ্ক বেশি।
- ২। ক্ল্যাডিংঃ কোরকে আবৃত করে থাকা বাইরের ডাই ইলেকট্রিক আবরণটিকে ক্ল্যাডিং বলে। এর প্রতিসরাঙ্ক কম।
- ৩। জ্যাকেটঃ এটি সাধারণত আবরণ হিসেবে কাজ করে।
২। ডেটা ট্রান্সমিশনে সিনক্রোনাস সুবিধাজনক ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ সিক্রোনাস ডেটা ট্রান্সমিশন বেশি সুবিধার। এর কারণ হলঃ
- (i) সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের দক্ষতা (Efficiency) অ্যাসিনক্রোনাস এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি।
- (ii) অবিরাম ট্রান্সমিশন কাজ চলতে থাকার ফলে তার ট্রান্সমিশন গতি অপেক্ষাকৃত বেশি।
- (iii) প্রতি ক্যারেক্টারের শুরু ও শেষে Start এবং Stop bit এর প্রয়োজন হয় না।
- (iv) প্রতি ক্যারেক্টারের পর টাইম ইন্টারভেল এর প্রয়োজন হয় না।
- (v) তুলনামূলকভাবে কম সময় লাগে।
৩। স্যাটেলাইটে ব্যবহৃত ওয়েভ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ স্যাটেলাইটে ব্যবহৃত ওয়েভ হল মাইক্রোওয়েভ নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলঃ
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের 300MHz থেকে 300GHz পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড মাইক্রোওয়েভ নামে পরিচিত। কার্যতঃ মাইক্রোওয়েভ এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ যা সেকেন্ডে প্রায় ১ গিগা বা তার চেয়ে বেশি কম্পনবিশিষ্ট।
মাইক্রোওয়েভ সংযোগ ব্যবহার করে ডেটা স্থানান্তর অর্থাৎ কম্পিউটার প্রদত্ত ডেটা, কথা এবং ছবি ইত্যাদি স্থানান্তর সম্ভব। মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম মূলত দুটো ট্রান্সসিভার (Transceiver) নিয়ে গঠিত। এর একটি সিগন্যাল ট্রান্সমিট (Transmit) এবং অপরটি সিগন্যাল রিসিভ (Receive) করে। মাইক্রোওয়েভ বাঁকা পথে চলাচল করতে পারে না।
তাই প্রেরক ও গ্রাহক কম্পিউটারের মধ্যে কোন বাধা থাকলে সংকেত পাঠানো মাইক্রোওয়েভ বাঁকা পথে চলাচল করতে পারে না। তাই প্রেরক ও গ্রাহক কম্পিউটারের মধ্যে কোন বাধা থাকলে সংকেত পাঠানো যায় না। এজন্য মাইক্রোওয়েভ অ্যান্টেনা বড় কোনো ভবন বা টাওয়ারের ওপর বসানো হয়। মাইক্রোওয়েভ যোগাযোগ দু'ধরনের হতে পারে। যথা- (১) টেরেস্ট্রিয়াল (Terrestrial) মাইক্রোওয়েভ (২) স্যাটেলাইট (Satellite) মাইক্রোওয়েভ।
৪। যে টপোলজিতে সবগুলো কম্পিউটারের সাথে সবগুলো কম্পিউটার সংযুক্ত তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মেশ টপোলজির ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের অধীনস্থ প্রত্যেকটি কম্পিউটার একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। মেশ টপোলজি ব্যবহারের সুবিধাসমূহ-
- ১। যেকোনো দুইটি নোডের মধ্যে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সংকেত আদান-প্রদান করা যায়। সহজে নেটওয়ার্কে খুব বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় না।
- ২। কোনো কম্পিউটার বা সংযোগ লাইন নষ্ট হয়ে গেলে তেমন কোন অসুবিধা হয় না।
- ৩। এতে ডেটা কমিউনিকেশনে অনেক বেশি নিশ্চয়তা থাকে।
- ৪। নেটওয়ার্কের সমস্যা খুব সহজে সমাধান করা যায়।
- ৫। অবকাঠামো অনেক শক্তিশালী।
মেশ টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধাসমূহঃ
- ১। এই টপোলজিতে নেটওয়ার্ক ইনস্টলেশন ও কনফিগারেশন বেশ জটিল।
- ২। সংযোগ লাইনগুলোর দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় খরচ বেশি হয়।
তাছাড়া নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত লিঙ্ক স্থাপন করতে হয় বিধায় খরচ আরও বেড়ে যায়।
৫। নন মেটালিক ক্যাবল মাধ্যমটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ নন মেটালিক ক্যাবল মাধ্যমটি হল অপটিক্যাল ফাইবার। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল হল এক ধরনের আলো পরিবাহী তার যা এক বা একাধিক অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়। এই অপটিক্যাল ফাইবার বৈদ্যুতিক অন্তরক বা ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ দিয়ে তৈরি এক ধরনের আঁশ বা ফাইবার-যা আলো নিবন্ধনকরণ ও পরিবহনে সক্ষম। এই ফাইবার দেখতে মানুষের চুলের চেয়ে সরু হয়ে থাকে। অপটিক্যাল ফাইবার বিদ্যুৎ অপরিবাহী হলেও আলো পরিবহনে অত্যন্ত দক্ষ।
৬। চৌম্বক প্রভাবমুক্ত ক্যাবলটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ চৌম্বক প্রভাবমুক্ত ক্যাবলটি হলো ফাইবার অপটিক ক্যাবল। অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল হল এক ধরনের আলো পরিবাহী তার যা এক বা একাধিক অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনালের পরিবর্তে আলোক বা লাইট সিগনাল ট্রান্সমিট করে যার ফলে এর মধ্য দিয়ে গিগাবাইট রেঞ্জ বা তার বেশি গতিতে ডেটা চলাচল করতে পারে। এতে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে ডেটা উৎস থেকে গন্তব্যে গমন করে।
৭। IEEE 802.16 স্ট্যান্ডার্ডের প্রযুক্তিটি বুঝিয়ে লেখ?
উত্তরঃ IEEE 802.16 স্ট্যান্ডার্ডের প্রযুক্তিটি WiMAX।
WiMAX এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Worldwide Interoperability for Microwave Access। প্রচলিত DSL (Digital Subscriber Line) এবং ক্যাবল ইন্টারনেটের পরিবর্তে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানকারী সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। ১৯৯৮ সালে IFF802.16 গ্রুপ ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (WMAN) এর জন্য মানটি আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এটি অপেক্ষাকৃত অধিক মানসম্মত ও অধিক নিরাপত্তা সুবিধা সংবলিত ওয়্যারলেস প্রোটোকল। এই প্রোটোকলের ডেটা ট্রান্সমিশন রেট 70 mbps।
৮। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে কম ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে কম। ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে একটি ইন্টারনেট সেবা যা কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কম্পিউটিং এর চাহিদাকে পূরণ করে। ইহা এমন একটি প্রযুক্তি যা সহজতরভাবে কম সময়ে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন অনলাইন কম্পিউটিং সেবা প্রদান করে থাকে।
ক্লাউড ব্যবহারের মূল সমস্যা হলো ডেটা, তথ্য অথবা প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। একবার ক্লাউডে তথ্য পাঠিয়ে দেওয়ার পর তা কোথায় সংরক্ষণ হচ্ছে বা কীভাবে প্রসেস হচ্ছে তা ব্যবহারকারীদের জানার উপায় থাকে না। ক্লাউডে তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে এবং তথ্য পাল্টে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
৯। কোন টপোলজিতে নোডসমূহ পরস্পর তুলনামূলকভাবে দ্রুত গতিতে ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মেশ টপোলজিতে নোডসমূহ পরস্পর তুলনামূলকভাবে দ্রুত গতিতে ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে। মেশ টপোলজির ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের অধীনস্থ প্রত্যেকটি নোড (কম্পিউটার বা ডিভাইস) একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যেকোনো একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত।
উল্লেখ্য যে, মেশ টাপোলজিতে যদি n সংখ্যক নোড (কম্পিউটার বা অন্য ডিভাইস) থাকে তাহলে প্রতিটি নোডে (n-1) টি সংযোগের প্রয়োজন হয় এবং এই নেটওয়ার্কে মোট তারের সংখ্যা হবে - n(n-1)/2 টি।
যে সকল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সফারে দ্রুত গতি কাম্য ও ডেটা যোগাযোগের নির্ভরশীলতাই মুখ্য এবং নেটওয়ার্ক স্থাপনের ব্যয় বা খরচ যেখানে গৌণ সেসব ক্ষেত্রে মেশ টপোলজি ব্যবহার করা হয়। যেমন ব্যাংক কিংবা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মেশ ব্যবহৃত হতে পারে।
১০। আলোক সিগন্যালে ডেটা স্থানান্তরের মাধ্যমটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আলোক সিগন্যালে ডেটা স্থানান্তরের বিষয়টি হল মূলত অপটিক্যাল ফাইবার। এ পদ্ধতিতে অতি স্বচ্ছ কাঁচের মধ্যে দিয়ে আলোক সিগন্যাল প্রেরণ করা হয়।
- রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কমিউনিকেশনঃ ওয়াইড-রেঞ্জ কমিউনিকেশন।
- মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশনঃ মিডিয়াম-রেঞ্জ কমিউনিকেশন।
- ইনফ্রারাড (Infrared-IR): শর্ট-রেঞ্জ কমিউনিকেশন।
ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহারের বৈশিষ্ট্যঃ
- তারের সাহায্যে প্রথাগত যোগাযোগ পদ্ধতিতে তারের সক্ষমতার দূরত্বগত কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই এই সীমাবদ্ধতাকে জয় করা যায়।
- সাধারণ নেটওয়ার্কের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ব্যাকআপ কমিউনিকেশন লিংক (Backup communication link) প্রদান করে।
- স্থানান্তরযোগ্য অথবা ক্ষণস্থায়ী ওয়ার্ক স্টেশনকে সংযুক্ত করে।
- সাধারণ ক্যাবলিং করা যেখানে দুরূহ বা অর্থনৈতিকভাবে অবাস্তব সে সকল পরিস্থিতিতে ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত।
- প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল ব্যবহারকারী বা নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে।
এভাবে ওয়্যারলেস মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়।
১১। 'হাবের চেয়ে সুইচ উত্তম'-ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ MAC Address ব্যবহার অধিক নিরাপত্তা এবং দ্রুতগতির কারণে হাবের চেয়ে সুইচ উত্তম। হাব এর বুদ্ধিমত্তা অপেক্ষাকৃত কম। কোনো এক ডিভাইস হতে বার্তা প্রেরণ করা হলে এটি সংশ্লিষ্ট সব ডিভাইসে ডেটা প্রেরণ করে।যার কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। অন্যদিকে সুইচ প্রতিটি ডিভাইস এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য নিজের কাছে সংরক্ষণ করে। ফলে ডেটা কাঙ্ক্ষিত ডিভাইসে প্রেরিত হয় যা অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাই বলা যায় হাবের চেয়ে সুইচ উত্তম।