বর্তনীতে রোধের প্রয়োজনীয়তা - চলতড়িৎ CQ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর

চলতড়িৎ CQ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর

0১. বর্তনীতে কোষের তড়িৎচালক বল সম্পূর্ণ কার্যকর হয় না কেন? ব্যাখ্যা কর।

বর্তনীতে কোষের তড়িৎচালক বল সম্পূর্ণ কার্যকর হয় না কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ কোষের ভেতর তড়িৎ প্রবাহের দিক কোষের ঋণাত্মক পাতে (-ve) থেকে ধনাত্মক পাতের (+ve) দিকে। এই পাতদ্বয়ের মধ্যকার বিভিন্ন উপাদান তড়িৎ প্রবাহকে বাধা প্রদান করে। ফলে কোষের ভিতর কিছুটা বিভব পতন হয় এবং অবশিষ্ট বিভব বাকি বর্তনীর মধ্যদিয়ে পতন হয়। সেই সাথে অভ্যন্তরণ রোধেরও কিছুটা বিভব পতন হয়। তাই বলা যায়, কোনো বর্তনীতে কোষের তড়িৎচালক বল সম্পূর্ণ কার্যকর হয় না। কিছু বল কোষের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের সময় ব্যয় হয়।

0২. বর্তনীর প্রান্তিক বিভব তড়িচ্চালক বলের চেয়ে ছোট হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ কোষের অভ্যন্তরীণ রোধের কারণে প্রান্তীয় বিভব বর্তনীর তড়িচ্চালক বল অপেক্ষা ছোট হয়। তড়িৎ কোষের দুই প্রান্তের মধ্যকার উপাদান, কোষের অভ্যন্তরে তড়িৎ প্রবাহে বাধা প্রদান করে। এই বাধাকে কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ বলে।
পাশের বর্তনীতে, কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ। হলে, তুল্যরোধ, R' = R + r
I = E/R' = E / (R+r) = IR+Ir =E
E = V + I... ... ... (i)
এখানে, R হলো রোধ, V এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য অর্থাৎ প্রান্তীয় বিভব।: V = E - Ir
যখন বর্তনীর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ ঘটে, তখন প্রান্তীয় বিভব বর্তনীর তড়িচ্চালক বল অপেক্ষা Ir পরিমাণ কম হয়। অতএব, কোষের অভ্যন্তরীণ রোধের কারণে প্রান্তীয় বিভব বর্তনীর তড়িচ্চালক বল অপেক্ষা ছোট হয়।

০৩. বর্তনীতে ফিউজ ব্যবহার করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

বর্তনীতে কোষের তড়িৎচালক বল সম্পূর্ণ কার্যকর হয় না কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ বর্তনীর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিরাপত্তার জন্য বর্তনীতে ফিউজ ব্যবহার করা হয়। ফিউজ বর্তনীর তড়িৎ যন্ত্রগুলো সর্বোচ্চ যে মাত্রার তড়িৎ প্রবাহ সহ্য করতে পারে, তার চেয়ে কম তড়িৎ প্রবাহেই গলে গিয়ে বর্তনী বিচ্ছিন্ন করে তড়িৎ যন্ত্রগুলো নিরাপদ রাখে। সাধারণত বিশুদ্ধ ধাতুর গলনাঙ্ক বেশি হয়। তাই ফিউজ হিসেবে কম গলনাঙ্কের সংকর ধাতু (যেমন: টিন ও সীসার সংকর) দিয়ে ফিউজ তৈরি করা হয়। অতএব, বর্তনীর তড়িৎ যন্ত্রগুলোর নিরাপত্তার জন্যই বর্তনীতে ফিউজ ব্যবহার করা হয়।

০৪. তড়িচ্চালক শক্তি ও বিভব পার্থক্যের মধ্যে পার্থক্য লেখ।


উত্তরঃ তড়িচ্চালক শক্তি ও বিভব পার্থক্যের মধ্যে পার্থক্য 
তড়িচ্চালক শক্তি ও বিভব পার্থক্যের মধ্যে পার্থক্য

তড়িচ্চালক শক্তি ও বিভব পার্থক্যের মধ্যে পার্থক্য


০৫. একই তাপমাত্রায় ভিন্ন উপাদানবিশিষ্ট পরিবাহীর আপেক্ষিক রোধ ভিন্ন হয়- ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একক দৈর্ঘ্য ও একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট কোনো পরিবাহীর রোধকে ঐ পরিবাহীর উপাদানের আপেক্ষিক রোধ বলে। আপেক্ষিক রোধ দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যথা: (i) তাপমাত্রা (ii) উপাদান
তাপমাত্রা নির্দিষ্ট থাকলে আপেক্ষিক রোধ শুধুমাত্র উপাদানের ওপর নির্ভর করে। তাই একই তাপমাত্রায় ভিন্ন উপাদানবিশিষ্ট পরিবাহীর আপেক্ষিক রোধ ভিন্ন হয়।

০৬. শান্ট কীভাবে গ্যালভানোমিটারকে রক্ষা করে? ব্যাখ্যা কর।

বর্তনীতে রোধের প্রয়োজনীয়তা - চলতড়িৎ CQ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
উত্তরঃ অধিক পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ গিয়ে যাতে গ্যালভানোমিটারকে নষ্ট করতে না পারে তার জন্য গ্যালভানোমিটারের সাথে সমান্তরাল সংযোগে যে অল্পমানের রোধ সংযুক্ত করা হয় তাকে শান্ট বলে। সব গ্যালভানোমিটারের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের একটি ঊর্ধ্বসীমা আছে যার চেয়ে বেশি মাত্রার তড়িৎ প্রবাহিত হলে ঐ গ্যালভানোমিটারটি নষ্ট হয়ে যাবে। 
এজন্য উচ্চ প্রবাহযুক্ত বর্তনীতে যখন গ্যালভানোমিটার যুক্ত করা হয় তখন গ্যালভানোমিটারের সাথে অল্প মানের রোধের একটা শান্ট সমান্তরাল সমবায়ে যুক্ত করা হয়। এতে মূল বর্তনীর সবটুকু প্রবাহ গ্যালভানোমিটার দিয়ে যায় না। বরং অধিকাংশই ঐ কম মানের রোধটির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। ফলে গ্যালভানোমিটারে প্রবাহ ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করে না এবং গ্যালভানোমিটারটি রক্ষা পায়।

০৭. বর্তনীতে রোধের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা-কর।


উত্তরঃ কোনো পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় তাকে ঐ পরিবাহীর রোধ বলে। কোনো বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোধ ব্যবহার করা হয়। বিভব পার্থক্যবিশিষ্ট কোনো পরিবাহীর রোধ R হলে, তড়িৎ প্রবাহ, I = । এখানে, V স্থির থাকলে R এর মানের ওপর নির্ভর করে তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তিত হয়। এজন্য তড়িৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে বর্তনীতে রোধ ব্যবহার করা হয়।

০৮. দুটি বিন্দুর বিভব পার্থক্য 6V বলতে কী বুঝায়?


উত্তরঃ একক ধনাত্মক আধানকে বর্তনীর এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানান্তর করতে সম্পন্ন কাজের পরিমাণ কে ঐ দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য বলে। দুটি বিন্দুর বিভব পার্থক্য 6V বলতে বোঝায় যে, ঐ তড়িৎক্ষেত্রে একক ধনাত্মক আধানকে উদ্দিষ্ট এক বিন্দু হতে অপর বিন্দুতে সরাতে 6] কাজ সম্পন্ন হয়।

০৯. হারানো ভোল্টের মান 2V বলতে কী বুঝ?

বর্তনীতে কোষের তড়িৎচালক বল সম্পূর্ণ কার্যকর হয় না কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ কোষের অভ্যন্তরীণ রোধের কারণে কোষের ভিতরে যে পরিমাণ বিভব পতন ঘটে, তাকে হারানো ভোল্ট বলে। আমরা জানি, E = V + Ir
যখন কোষের অভ্যন্তরীণ রোধের মান ।, তখন হারানো ভোল্টের মান 2V বলতে বুঝায়, যদি বর্তনীতে 10V তড়িৎচালক শক্তি, E প্রয়োগ করা হয়, তবে বর্তনীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ। চললে, । এর জন্য কোষের ভেতর বিভব পতন 2V হবে এবং তড়িৎ কোষের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য, I
VE-Ir = 102=8V হবে।

১০. তড়িৎ প্রবাহের ফলে বর্তনীতে তাপ উৎপন্ন হয় কি? ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ হ্যাঁ; তড়িৎ প্রবাহের ফলে বর্তনীতে তাপ উৎপন্ন হয়।জুলের সূত্র হতে আমরা জানি, কোনো বর্তনীতে বিভব পার্থক্য ও সময় স্থির থাকলে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপ এর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তড়িতের বর্গের সমানুপাতিক। । সময় ধরে V বিভব পার্থক্যবিশিষ্ট কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে। পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহিত হলে উৎপন্ন তাপ, H = I2Rt। সুতরাং, তড়িৎ প্রবাহিত হলে বর্তনীর রোধে তাপ উৎপন্ন হয়।

১১. উচ্চ অভ্যন্তরীণ রোধ বিশিষ্ট একাধিক ব্যাটারীর কোন ধরনের সংযোগে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ পাওয়া যাবে-ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ উচ্চ অভ্যন্তরীণ রোধ বিশিষ্ট একাধিক ব্যাটারির সমান্তরাল সংযোগে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ পাওয়া যায়।
Ip = (mE/mR+r) -যদি r >> mR হয় তবে, Ip = mE/r = m.E/r
অর্থাৎ m গুণ প্রবাহমাত্রা পাওয়া যায় পূর্বের তুলনায়। তাই উচ্চ অভ্যন্তরীণ রোধের ক্ষেত্রে সমান্তরাল সংযোগে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ পাওয়া যায়।

১২. শান্টের রোধ শূন্য বা অসীম হয় কিনা? ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ অধিক পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ গিয়ে যেনো গ্যালভানোমিটারকে নষ্ট করতে না পারে তার জন্য স্বল্প মানের যে, রোধ সমান্তরাল সমবায় যুক্ত করা হয় তাকে শান্ট বলে। যখন বর্তনীতে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন স্বল্প রোধবিশিষ্ট শান্টের মধ্যে দিয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে যন্ত্রপাতিকে সুরক্ষিত রাখে। 
এখন শান্টের রোধ শূন্য হলে সব বিদ্যুৎ শান্টের মধ্যে দিয়ে যাবে ফলে যন্ত্রপাতি বা গ্যালভানোমিটার কাজ করবে না। অন্যদিকে রোধ অসীম হলে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ যন্ত্রপাতির মধ্যে দিয়ে যাবে ফলে অধিক বিদ্যুৎপ্রবাহে তা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শান্টের রোধ শূন্য বা অসীম হয় না।

১৩. পরিবাহীর অতি পরিবাহীতা ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ নিম্ন তাপমাত্রায় যেসকল পরিবাহীর রোধ শূন্যে নেমে আসে তাদের পরিবাহীতাকে অতি পরিবাহীতা বলে। সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায় এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেলে পরিবাহীর রোধ হ্রাস পায়। আবার কিছু কিছু পদার্থের ক্ষেত্রে নিম্ন তাপমাত্রায় রোধ শূন্যে নেমে আসে। এরা অতিপরিবাহী। এ ধর্মের কারণে অতিপরিবাহী বর্তনীর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে রোধজনিত তাপ ক্ষয় না থাকার কারণে বিদ্যুৎ কোনো নতুন উৎস ছাড়াই প্রবাহিত হতে থাকবে।

১৪. নিরাপত্তা ফিউজে কেন বিশুদ্ধ ধাতু ব্যবহৃত হয় না তা ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ বিশুদ্ধ ধাতুর গলনাঙ্ক অনেক বেশি হওয়ায় নিরাপত্তা ফিউজে বিশুদ্ধ ধাতু ব্যবহার করা হয় না।
নিরাপত্তা ফিউজে সংকর ধাতু (যেমন: কাসা) ব্যবহার করা হয়। সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক বিশুদ্ধ ধাতুর তুলনায় কম হওয়ায় এর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট মানের অধিক তড়িৎ প্রবাহিত হলে ধাতু গলে দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে বর্তনী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা পায়। বিশুদ্ধ ধাতুর গলনাঙ্ক বেশি বলে এমনভাবে গলে যেতো না। তাই নিরাপত্তা ফিউজে বিশুদ্ধ ধাতু ব্যবহার করা হয় না।

১৫. বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে শান্ট ব্যবহার করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ শান্ট হচ্ছে একটি অল্পমানের রোধ যা বর্তনীতে সমান্তরাল সংযোগে যুক্ত করা হয়। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে, বিশেষ করে গ্যালভানোমিটারে শান্ট ব্যবহৃত হয়। গ্যালভানোমিটারে বেশি তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা হলে এটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, স্প্রিং ছিঁড়ে যেতে পারে, পুড়ে যেতে পারে। তাই এটিকে রক্ষা করতে এর সাথে সমান্তরালে অল্প মানের একটি রোধ সংযোগ করা হয় ফলে সান্টের রোধ কম হওয়ায় অধিক প্রবাহ এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং যন্ত্রটিকে রক্ষা করে।

১৬. কোনো পরিবাহীর রোধ 10 বলতে কী বুঝায়?


উত্তরঃ পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় তাকে ঐ পরিবাহীর রোধ বলে।
আমরা জানি, I = R = এখানে, V = 1 Volt ও I = 1A হলে, R = 10। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো পরিবাহীর যে মানের রোধের জন্য এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য 1 Volt হলে 1A প্রবাহ পাওয়া যায় তাকে 10 রোধ বলে।

১৭. পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ উৎপন্ন হয় কেন?

বর্তনীতে রোধের প্রয়োজনীয়তা
উত্তরঃ পরিবাহীর রোধের কারণে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। কোনো একটি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন পরিবাহীর রোধ কর্তৃক তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরিবাহকের দুই বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হলে মুক্ত ইলেকট্রন আন্তঃআণবিক স্থানের মধ্য দিয়ে চলার সময় অণু পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলে রোধের সৃষ্টি হয়। এ কারণেই তাপ উৎপন্ন হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন