বিলাসী গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
'বিলাসী' গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। এডেন কীসের জন্য বিখ্যাত?
উত্তরঃ এডেন সামুদ্রিক লবণ তৈরির জন্য বিখ্যাত।
০২। ন্যাড়ার সন্ন্যাসীগিরি ইস্তফার কারণ কী?
উত্তরঃ ন্যাড়ার সন্ন্যাসীগিরি ইস্তফার কারণ মশার কামড় সহ্য করতে না পারা।
০৩। 'বিলাসী' গল্পে মৃত্যুঞ্জয় কোন ক্লাসে পড়ত?
উত্তরঃ 'বিলাসী' গল্পে মৃত্যুঞ্জয় থার্ড ক্লাসে পড়ত।
০৪। 'বিলাসী' গল্পটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ 'বিলাসী গল্পটি প্রথম 'ভারতী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
০৫। মৃত্যুঞ্জয়ের কত বিঘার বাগান ছিলো?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের কুড়ি-পঁচিশ বিঘার বাগান ছিল।
০৬। 'বিলাসী' গল্পের গল্প কথকের নাম কী?
উত্তরঃ 'বিলাসী' গল্পের গল্প কথকের নাম ন্যাড়া।
০৭। 'বিলাসী' গল্পে কোন মোগল সম্রাটের নাম উল্লেখ আছে?
উত্তরঃ 'বিলাসী' গল্পে মোগল সম্রাট হুমায়ূনের নাম উল্লেখ আছে।
০৮। ন্যাড়ার মাদুলি-কবচ কবরে দেওয়ার পরে তার কাছে আর কী অবশিষ্ট রইলো?
CQ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। "ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের মত।" ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ বিলাসীর বর্ণনা দিতে গিয়ে ন্যাড়া একথা বলেছিল।
মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা শুশ্রুষা করে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে এনেছিল বিলাসী। মৃত্যুঞ্জয়ের জন্যে খাটতে খাটতে বিলাসীর নিজের শরীর রুগ্ন, ভগ্ন হয়ে গিয়েছিল। যেন ফুলদানিতে ভিজিয়ে রাখা বাসি ফুলের মতো। হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই ঝরে পড়ে যাবে।
০২। অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।" ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে। বলতে হিন্দু সমাজের নানা বিধি-ব্যবস্থার কোনো রকম টিকে থাকার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।
প্রাচীন হিন্দুসমাজে বেশ কিছু নিয়ম-নীতি, বিধি-ব্যবস্থা ছিল যা মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে হরণ করছিল। এসব বিধি-ব্যবস্থাকে সমাজ থেকে দূর করতে নানা বিপ্লব-সংগ্রাম করতে হয়েছিল সে সময়কার মানুষদের। কিন্তু এর মাঝেও কিছু কিছু রীতি এখনো টিকে আছে যাকে তেলাপোকার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এমনভাবে টিকে থাকা না থাকবার মতোই। কেবল প্রচলিত রীতি-নীতি আর সমাজের রক্ষণশীলতার জোরে এসকল প্রথা ও এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের টিকে থাকা মোটেই গৌরবের নয়।
০৩ । "স্বদেশের মঙ্গলের জন্য সমস্ত অকাতরে সহ্য করিয়া তাহাকে হিড়হিড় করিয়া টানিয়া লইয়া চলিলাম।" -ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ 'স্বদেশের মঙ্গলের জন্য সমস্ত অকাতরে সহ্য করিয়া তাহাকে হিড়হিড় করিয়া টানিয়া লইয়া চলিলাম।" বলতে বিলাসীকে গ্রাম ছাড়া করার বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে।
নিচুজাতের মেয়ে হয়েও মৃত্যুঞ্জয়কে বিয়ে করার কারণে গ্রামের সকলে বিলাসীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। একদিন সকলে মিলে তাকে টেনে হিঁচড়ে গ্রাম ছাড়া করতে উদ্যত হল। এতে তাদের সমাজ শুদ্ধ থাকবে। গল্পের কথকও এই সমাজের কল্যাণ চেয়ে সেই দলে ছিলেন। বিলাসীর দুঃখ দেখে কষ্ট পেলেও সমাজ ও জাতের কাছে তার হাত-পা বাঁধা ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
০৪ । 'বিলাসী' গল্পে বর্ণিত মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির পরিবেশ কেমন ছিল?
উত্তরঃ 'বিলাসী' গল্পে বর্ণিত মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির পরিবেশ ছিল জঙ্গলের মতো।
মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবার বলতে কেউ ছিল না। গ্রামের এক প্রান্তে একটি প্রকাণ্ড আম-কাঁঠালের বাগান আর তার মাঝে একটি বড়ো পোড়োবাড়ি ছিল তার। তার পোড়োবাড়িতে প্রাচীরের বালাই নেই। অন্ধকার রাতে এ বাড়ির পরিবেশ কেমন ভূতুড়ে অবস্থা সৃষ্টি করে।
০৫ । "একদিন এই মন্ত্রের সত্য-মিথ্যার চরম মীমাংসা হইয়া গেল।" -উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ "একদিন এই মন্ত্রের সত্য-মিথ্যার চরম মীমাংসা হইয়া গেল।"- বলতে মন্ত্রের অকার্যকারিতা বোঝানো হয়েছে। সাপুড়েরা বিষহরির আজ্ঞা হিসেবে বিষ ছাড়াতে একটি মন্ত্র পাঠ করেন। তাদের মতে যা দিয়ে সাপকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর কোনো সত্যতা নেই। সাপের কামড়ে যখন মৃত্যুঞ্জয় মারা যাচ্ছিল তখন এই মন্ত্র পাঠ করে কোনো কাজে আসেনি। মৃত্যুঞ্জয় মৃত্যুবরণ করেন। এতে প্রমাণিত হয় এই মন্ত্র মিথ্যা।
০৬। মৃত্যুঞ্জয়ের জাত-বিসর্জনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের জাত- বিসর্জনের কারণ খুড়ার চক্রান্ত এবং নিচু জাতের মেয়ের হাতে অন্ন গ্রহণ।বিলাসীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল মৃত্যুঞ্জয়। নিচু জাতের মেয়েকে বিয়ে করে তার হাতে অন্ন গ্রহণ করার কারণে এবং তার খুড়ার চক্রান্তে সমাজের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করে। গ্রামের মানুষ বিলাসীর ওপর চরম অত্যাচার চালায়। এসব সহ্য না করতে পেরে মৃত্যুঞ্জয় জাত বিসর্জন দেয় এবং মালো সমাজের সাপুড়ে হিসেবে জীবন যাপন শুরু করে।
০৭ । "ওরে বাপরে! আমি একলা থাকতে পারব না।"- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ "ওরে বাপরে! আমি একলা থাকতে পারব না-উক্তিটি ন্যাড়ার এক মৃত আত্মীয়ের স্ত্রীর। ন্যাড়ার আত্মীয় মারা যাওয়ার পর ন্যাড়া এবং সেই আত্মীয়ের স্ত্রী ছাড়া বাড়িতে কেউ ছিলো না। ন্যাড়া পাড়া- প্রতিবেশীকে তার আত্মীয়ের মৃত্যুর খবর জানাতে বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই সেই আত্মীয়ের স্ত্রী ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে। কারণ সে মৃত লাশের সাথে একা থাকতে পারবে না।
০৮। "গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম"- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ নানা প্রয়োজনে গ্রামের মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ের সাহায্য নিলেও ভদ্র সমাজে তাকে কেউ মেনে নিতে চাইত না- এ বিষয়টি বোঝাতে ব্যঙ্গার্থে উক্তিটি করা হয়েছে।
মৃত্যুঞ্জয় ছিল নিঃসঙ্গ একা একটি ছেলে। বিশাল আম, কাঁঠালের বাগান থাকায় তার আর্থিক সচ্ছলতাও কিছুটা ছিল। তাই গ্রামের নানা লোক প্রয়োজনে তার কাছ থেকে সাহায্য নিত। গ্রামের তথাকথিত সভ্য সমাজে তারাই আবার তাকে অস্বীকার করত। আলোচ্য উক্তিটি তাই মূলত ভদ্র সমাজে মৃত্যুঞ্জয়ের অগ্রহণযোগ্যতার দিকটিকে প্রতিফলিত করে।
০৯। "একলা যেতে ভয় করবে না তো?"-কে, কাকে এবং কেন এই উক্তিটি করেছিল বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ রাতের অন্ধকারে বিশাল আম বাগান পেরিয়ে একা যেতে ন্যাড়ার ভয় করবে কি-না তা জানতে বিলাসী তাকে প্রশ্নটি করে।
মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ জেনে ন্যাড়া তাকে দেখতে তার আম বাগানের ভেতরের বাড়িটিতে যায়। কিন্তু ফেরার সময় রাত হয়ে যায়। আম বাগানটি ছিল বিশাল এবং জঙ্গলের পথে নানা বিপদ-আপদের শঙ্কা থাকতে পারে। ফলে এই অন্ধকার পথে ন্যাড়ার একা যেতে ভয় করবে কি-না তা জানতেই বিলাসী তাকে প্রশ্নটি করে।