আঠারো বছর বয়স কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
'আঠারো বছর বয়স' কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। 'আঠারো বছর বয়স' কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তরঃ 'আঠারো বছর বয়স' কবিতাটি 'ছাড়পত্র' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
০২। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্র' কত সালে প্রকাশিত?
উত্তরঃ সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্র' প্রকাশিত হয়েছে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে।
০৩। সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'আঠারো বছর বয়স' কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
উত্তরঃ সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'আঠারো বছর বয়স' কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
০৪। 'আঠারো বছর বয়স' বিপদের মুখে কী?
উত্তরঃ আঠারো বছর বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী। ।
০৫। আঠারো বছর বয়স কী জানে?
উত্তরঃ আঠারো বছর বয়স জানে 'রক্তদানের পুণ্য'।
০৬। আঠারো বছর বয়স পদাঘাতে কী ভাঙতে চায়?
উত্তরঃ আঠারো বছর বয়স পদাঘাতে পাথর বাধা ভাঙতে চায়।
০৭। সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক নিবাস কোন জেলায়?
উত্তরঃ সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈত্রিক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলায়
০৮। সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থটির নাম কী?
উত্তরঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থটির নাম 'আকাল'।
০৯। 'আকাল' সুকান্ত ভট্টাচার্যের কী ধরনের রচনা?
উত্তরঃ 'আকাল' সুকান্ত ভট্টাচার্যের সম্পাদিত একটি কাব্যগ্রন্থ।
১০। 'ছাড়পত্র' কাব্য গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত 'দৈনিক স্বাধীনতা' পত্রিকার কিশোরসভা অংশের সম্পাদক ছিলেন।
CQ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। আঠারো বছর বয়স দুর্যোগে হাল ঠিক রাখতে পারে না কেন?
উত্তরঃ আঠারো বছর বয়স দুর্যোগে হাল ঠিক রাখতে পারেনা কারণ এ সময়টিতে তাদের শারীরিক ও মানসিক নানান পরিবর্তন হয়। আঠারো বছর বয়স তরুণদের জীবনের এমন এক সময়ের সন্ধিক্ষণ যখন তাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়।
এই সময়ে সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে।
০২। "এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।"- কবির এ প্রত্যাশার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ জাতীয় জীবনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা ও জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে প্রগতি ও অগ্রগতির পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে চান বলে কবি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
আঠারো বছর বয়সের বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জড়, নিশ্চল ও প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি প্রভৃতি গুণাবলি তার মধ্যে অন্যতম। কবি প্রার্থনা করেন, এ সকল বৈশিষ্ট্যই যেন জাতীয় জীবনের চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণেই তিনি এদেশের বুকে আঠারো নেমে আসার প্রত্যাশা করেন।
০৩। 'তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি।'- চরণটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ অজস্র ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে আঠারো বছর বয়স মানবজীবনের কালো অধ্যায় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও কবি শেষ পর্যন্ত এ বয়সেরই জয়গান গেয়েছেন।
আঠারো বছর বয়সেরই থাকে জড়, নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা। কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি-প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের জোরে আঠারো বছরের তরুণরাই পারে অসাধ্য সাধন করতে। তাই সকল নেতিবাচকতার উর্ধ্বে কবি এ বয়সের জয়ধ্বনিই শুনতে পান।
০৪। আঠারো বছর বয়সকে কবি 'দুঃসহ' বলেছেন কেন?
উত্তরঃ আঠারো বছর বয়সে তরুণদের অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয় এবং নানা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় বলে কবি এ বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।
আঠারো বছর বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়, কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। অন্যদের উপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। ফলে এসময়ে তাকে এক কঠিন ও দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। তাই কবির মতে, এ বয়স দুঃসহ।
০৫। 'সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে'- এখানে তরুণদের কোন বিশেষ দিকটির প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে? বুঝিয়ে বল।
উত্তরঃ এখানে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তরুণদের আত্মত্যাগের দিকটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেইসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে, নিত্য নতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তরুণ-প্রাণ এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য, সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য তারা নিজের আত্মাকে সঁপে দেয়।
০৬। "এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।"-লাইনটিতে কবি কী বুঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত লাইনটি দ্বারা কবি বুঝিয়েছেন, আঠারো বছর বয়সেই তরুণেরা ভালো মন্দ, ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা তত্ত্ব, মতবাদ ও ভাব-ধারণার সাথে পরিচিত হতে শুরু করে।
আঠারো বছর বয়স মানুষের জীবনের এক সন্ধিক্ষণ। এসময়ে তরুণেরা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এসময় তারা পরনির্ভরশীলতা পরিহার করে আত্মনির্ভরশীল হবার চেষ্টা চালায়। মুক্ত জগতের সাথে পরিচিত হয়। ফলে তারা নতুন নতুন নানা তত্ত্ব ও মতবাদের সাথে পরিচিত হয়। এ সময় সচেতন না থাকলে তাদের পদস্খলন হতে পারে।
০৭। "এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য।" এ কথার তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য তরুণেরা যে রক্তমূল্য দিতে জানে এ বিষয়টিই উল্লিখিত পঙ্ক্তিটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে তরুণেরাই এগিয়ে এসেছে সবথেকে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবিলায়।
প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানবার জন্য। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে তরুণদের আত্মোৎসর্গের এ বিষয়টিকে নির্দেশ করতেই পড়ক্তিটিতে বলা হয়েছে-এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য।
০৮। কবি কেন যৌবন শক্তির জয়গান গেয়েছেন?
উত্তরঃ আঠারো বছর বয়সের তরুণেরা আত্মপ্রত্যয়ী হয় বলে এ বয়স মাথা নোয়াবার নয়। আঠারো বছর বয়স কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের বয়স। এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসে জীবনের ঝুঁকি নেবার উপযোগী। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপদকে পেরিয়ে যাওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত। এমনকি, দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগেও তারা কুণ্ঠাবোধ করেনা। এ বয়স তাই মাথা নোয়াবার নয়।