বিদ্রোহী কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
'বিদ্রোহী' কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃমহাবিপ্লব হেতু
এই হৃষ্টার শনি মহাকাল ধুমকেতু।
সাত সাতশ নরকজ্বালা জ্বলে মম ললাটে।
আমি স্রষ্টার বুকে সৃষ্টি পাপের অনুতাপ-তাপ হাহাকার
আর মর্ত্যে সাহারা-গোবি ছাপ
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ।
(গ) উদ্দীপকের সঙ্গে 'বিদ্রোহী' কবিতার সাদৃশ্য তুলে ধর।
উত্তরঃ উদ্দীপকের সঙ্গে 'বিদ্রোহী' কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে অন্যায়ের ও অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মনোভাব প্রদর্শনে। উদ্দীপকের চরণাংশটুকুতে কবি নিজের বিদ্রোহী সত্তা প্রকাশ করেছেন। তিনি যুগে যুগে ফিরে আসেন সকল অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটাতে। তার ললাটে সাত সাতশ নরকজ্বালা জ্বলে। তিনি স্রষ্টার বুকে সৃষ্ট পাপের অনুতাপে হাহাকার করেন। তিনি তিক্ত অভিশাপ হয়ে সকল অনাচারের মুখোমুখি হতে চান।
'বিদ্রোহী' কবিতায় কবি আপন সত্তার সগর্ব প্রকাশ করেছেন। কবি নিজেকে চিরবিদ্রোহী বলে অভিহিত করেছেন। তার শির প্রত্যক্ষ করে হিমালয়ের শিখর পর্যন্ত মাথা নত করে থাকে। তিনি নিজেকে ধ্বংস বলেছেন কারণ তিনি সকল অসাম্য ও অন্যায় অনিয়ম ভেঙে চুরমার করে দেন। তিনি চান যেন উৎপীড়িত জনতার ক্রন্দন- রোল প্রশমিত হয়। তাই চির বিদ্রোহী অভ্র- ভেদী চির উন্নত শিররূপো তিনি বিরাজ করতে চান, যা উদ্দীপকের চরণাংশটুকুতে কবির মনোভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
(ঘ) উদ্দীপকের মতো বিদ্রোহী কবিতারও দ্রোহের স্বাক্ষর নিহিত।"- কথাটি মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ 'উদ্দীপকের মতো 'বিদ্রোহী' কবিতায়ও দ্রোহের স্বাক্ষর নিহিত।"-উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের কবিতাটিতে বিদ্রোহী চেতনার অনন্য অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের কবি বারবার বিপ্লব করতে চেয়েছেন সকল অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। তিনি সরাসরি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হতে চান অনাচারের বিরুদ্ধে।
'বিদ্রোহী' কবিতায়ও একই রকম দ্রোহের সুর ধ্বনিত হয়েছে। কবিতায় সগর্বে কবি নিজের বিদ্রোহী কবিসত্তার প্রকাশ ঘটিয়ে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের শাসকদের শাসন ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছেন। এ কবিতায় সংযুক্ত হয়েছে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কবির ক্ষোভ ও দ্রোহ। তাই তিনি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে গিয়ে বিভিন্ন ধর্ম, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও পুরাণের শক্তি উৎস থেকে উপকরণ নিয়ে নিজের বিদ্রোহী সত্তার অবয়ব রচনা করেছেন।
বিদ্রোহী কবি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল যতদিন পর্যন্ত প্রশমিত না হবে ততদিন তার বিদ্রোহী কবিসত্তা শান্ত হবে না। কবিতায় দ্রোহ প্রকাশিত হয়েছে অপশাসন ও অচলায়তনের বিরুদ্ধে, যা উদ্দীপকেও বিধৃত করা হয়েছে। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটিকে যথার্থ বলা যায়।
০২। আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিরাগী-
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি,
দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।
(গ) উদ্দীপকের কবির বক্তব্য বিষয়ের সাথে 'বিদ্রোহী' কবিতার বৈসাদৃশ্যের দিকটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ উদ্দীপকের কবির বক্তব্যে বিভেদ হিংসা হানাহানির বিপরীতে এক প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। কিন্তু 'বিদ্রোহী' কবিতার কবি অত্যাচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদের বাণী উচ্চারণ করেছেন।
উদ্দীপকের কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীটাকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করার স্বপ্ন দেখেছেন, তাই কবিকে যে পর করেছে, কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান। যে তাঁর ঘুম হরণ করেছে, তার জন্যই তিনি রাত জাগেন। যে কবির ঘর ভেঙে দিয়েছে, কবি তার ঘর বেঁধে দিতে চান।
কিন্তু 'বিদ্রোহী' কবিতার কবির মনোভাব এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কবিতায় কবি নিজের বিদ্রোহী সত্তার প্রকাশ ঘটিয়ে অত্যাচারী ঔপনিবেশিক শাসকদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সকল অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। ধর্ম, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও পুরাণের উৎস থেকে শক্তি নিয়ে তিনি নিজের বিদ্রোহী সত্তার অবয়ব রচনা করেছেন।
তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যতদিন উৎপীড়িত জনতার ক্রন্দন রোল প্রশমিত হবে না, ততদিন কবির বিদ্রোহী সত্তাও শান্ত হবে না। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকের কবি তাঁর অনিষ্টকারীকে শুধু ক্ষমা করার মাধ্যমে নয়, বরং তার উপকারে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার স্বপ্ন দেখেছেন, যেখানে 'বিদ্রোহী' কবিতার কবি অত্যাচারীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের মাধ্যমে সমাজকে কলুষমুক্ত করতে চেয়েছেন। আর এ কারণে বলা যায়, তাঁদের লক্ষ্য এক হলেও তা বাস্তবায়নের পদ্ধতির দিক থেকে উদ্দীপকের কবির বক্তব্য ও 'বিদ্রোহী' কবিতা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
(ঘ) "উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রতিফলিত চেতনা 'বিদ্রোহী' কবিতার মর্মকথারই প্রতিরূপ।”- বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ উদ্দীপকের কবি প্রতিহিংসার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। অপরদিকে বিদ্রোহী কবিতার কবির লক্ষ্য ছিল তীব্র প্রতিবাদের মাধ্যমে সমাজকে বৈষম্যমুক্ত করা। তাই চেতনাগত দিক থেকে তাঁদের উভয়ের লক্ষ্য মূলত একই এ কথা বলাই যায়। উদ্দীপকের কবিতাংশের দিকে তাকালে লক্ষ করা যায়, এখানে কবি ব্যক্তি স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মাধ্যমেই যে প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা লাভ করা যায়, সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। অনিষ্টকারীকে ক্ষমা ও তার উপকারে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে ভালোবাসাপূর্ণ, সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন কবি এখানে।
এই একই স্বপ্ন আমরা বিদ্রোহী কবিতার কবির মাঝেও লক্ষ করি। তিনিও এই পৃথিবীতে অত্যাচারের অবসান কামনা করেছেন, আর তা অবসানের লক্ষ্যে তিনি সামাজিক বৈষম্য ও উৎপীড়নকারীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তিনি উচ্চকণ্ঠে ঘোষণায় জানিয়ে দিয়েছেন, যতদিন উৎপীড়িত জনতার ক্রন্দনরোল প্রশমিত না হবে, ততদিন তাঁর বিদ্রোহী সত্তাও শান্ত হবেনা।
অর্থাৎ উদ্দীপকের কবিতাংশে ও বিদ্রোহী কবিতায়, উভয় স্থানেই সাধারণ মানুষের জন্য একটি সুন্দর, নিরপদ ও বৈষম্যমুক্ত পৃথিবীর প্রত্যাশা করা হয়েছে। সেই পৃথিবী অর্জনের জন্য উদ্দীপকের কবিতাংশের কবি ও 'বিদ্রোহী' কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আলাদা পন্থা অবলম্বন করলেও তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এক। এ কারণেই বলা যায়, "উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রতিফলিত চেতনা 'বিদ্রোহী' কবিতার মর্মকথারই প্রতিরূপ।"- কথাটি যথার্থ।
CQ জ্ঞানমূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। অর্ফিয়াসের ভালোবাসার পাত্রীর নাম কী ছিল?
উত্তরঃ অর্ফিয়াসের ভালোবাসার পাত্রীর নাম ছিল ইউরিডিস।
০২। 'বিদ্রোহী' কবিতার কবিকে রুষে উঠতে দেখে কী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে নিভে যায়?
উত্তরঃ 'বিদ্রোহী' কবিতার কবিকে রুষে ওঠতে দেখে হাবিয়া দোজখ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে নিভে যায়।
CQ অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। কবি 'অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল' কেন?
উত্তরঃ কবি 'অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল' কারণ তিনি কোনো অন্যায়, অসাম্য মানেন না।
যথার্থ আত্মজাগরণ প্রত্যেকটি ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয়। কবি নিজেকে উচ্ছৃঙ্খল বলেছেন সকল পরাধীনতা, অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। যে সকল নিয়ম ভেদাভেদ সৃষ্টি করে সেসব নিয়ম তিনি মানেন না। সেসব মিথ্যা শৃঙ্খলেও তিনি নিজেকে আবদ্ধ করেন না।
০২। কবি নিজেকে বেদুঈন বলেছেন কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিজের বিদ্রোহী সত্তার অবয়ব রচনা করতে কবি নিজেকে বেদুঈন বলে সম্বোধন করেছেন। বেদুঈনরা হলো আরবদেশের একটি যাযাবর জাতি যারা মরুর বুকে যাযাবর জীবন যাপন করে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এদের নানা প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়।
কবিও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামকে বেদুঈনের এই নিরন্তর জীবন সংগ্রামের সাথে তুলনা করেছেন। সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে নিজের অনমনীয় ও শক্তিশালী অবস্থানকে বোঝাতেই কবি নিজেকে বেদুঈন বলে উল্লেখ করেছেন।