ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথেই রুমার নজর পড়ে আম গাছটির দিকে। ওদিকে তাকাতেই তার মনে পড়ে তার প্রতিবাদী বুবুর কথা। কেননা ঐ গাছটাতেই বুবু রীণার গলায় দড়ি দেয়া লাশ পাওয়া গিয়েছিল। কয়েকটা বখাটে যুবক তাকে প্রায়ই বিরক্ত করত। তাই একদিন সে প্রতিবাদ করেছিল এবং জুতা দেখিয়েছিল। সেই কারণে পরের দিনই তার প্রতিবাদী বুবু রীণার লাশ ঐ গাছটাতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
(গ) উদ্দীপকের চেতনা 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার কোন বিষয়টির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের চেতনা ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার যে বিষয়টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সেটি হল শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। উদ্দীপকে একজন প্রতিবাদী নারী চরিত্র রীণার কথা স্মরণ করা হয়েছে। রুমা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসার পথে আম গাছটির দিকে তাকায়। এ গাছটির দিকে তাকালেই তার রীণা বুবুর কথা মনে পড়ে।
কারণ ঐ গাছটাতেই তার দড়ি দেয়া লাশ পাওয়া গিয়েছিল। কয়েকজন বখাটে যুবক তাকে প্রায়ই বিরক্ত করত। তাই একদিন সে প্রতিবাদ করেছিল এবং জুতা দেখিয়েছিল। সেই কারণে পরের দিনই তার প্রতিবাদী বুবুর লাশ ঐ গাছটাতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। শুধু প্রতিবাদ করার কারণে তাকে এ করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল।
'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতাতেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চেতনা প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তানি সরকারের জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ১৯৬৯-এ। বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ চিত্রকলা এখানে অঙ্কিত হয়েছে। তবে এর বিনিময়ে রক্ত দিতে হয়েছে আপামর জনসাধারণকে। এই একই চেতনা দেখা যায় উদ্দীপকে রীণার ক্ষেত্রেও।
(ঘ) উদ্দীপকের রীণা আর 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার শহিদরা একই প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক।"-উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ (ঘ) 'উদ্দীপকের রীণা আর 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার শহিদরা একই প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক। মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকের রীণাকে কয়েকজন বখাটে বিরক্ত করত। তাই একদিন রীণা প্রতিবাদ করে এবং তাদেরকে জুতা দেখায়। সেই কারণে পরের দিনই রীণার লাশ গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে বখাটেরা তাকে মেরে ফেলে। কিন্তু রীণা সকলের কাছে প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকে।
'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় সংগ্রামী চেতনা প্রকাশিত হয়েছে অন্যায়-অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে। শহরের পথে থরে থরে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়ার লাল রং আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহিদ হওয়া বীরদের কথা। তাই এই লাল রং কে আমাদের চেতনার রং বলা হয়। পাকিস্তানিদের অত্যাচারে বাঙালিরা যখন অতিষ্ঠ তখন ঘাতকের অশুভ আস্তানা ভেঙে দিতে এদেশের সাধারণ মানুষ নিজেদের উৎসর্গ করে।
তারা মাথা নত রেখে অন্যায় সহ্য করতে রাজি হয়নি। দারুণ বিপ্লবে ফেটে পড়ে গোটা জাতি। শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ মিলে গিয়ে প্রতিবাদ করাই ছিল তখন একমাত্র উদ্দেশ্য। একুশের রক্তঝরা দিনগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জীবন সংগ্রাম করে জীবন দেয়া এই বীরেরাই প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক, যা উদ্দীপকের রীণার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তাই বলা যায় যে, "উদ্দীপকের রীণা আর 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার শহিদরা একই প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক।"
০২। পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনিকো আমি উদ্যত কোন খড়গের!
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসি মুখে বাজিয়েছি বাঁশি গলায় পড়েছি ফাঁস
আপস করিনি কখনোই আমি-এই হলো ইতিহাস।
(গ) উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গ এবং 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার ঐতিহ্য চেতনার সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গ এবং 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার ঐতিহ্য চেতনার সাদৃশ্য হল অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। উদ্দীপকে বলা হয়েছে বাঙালির ইতিহাস বরাবরই গর্বের। যে কারণে বাঙালি কোনো ভয় পেয়ে মাথা নত করেনা। তারা স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি শত্রুর সাথে লড়াই করেছে। শস্য চাষের পাশাপাশি অস্ত্রে শান দিয়েছে।
বাঙালির ইতিহাস কখনো আপস না করার ইতিহাস। ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতাটি দেশপ্রেম, গণজাগরণ ও সংগ্রামী চেতনার কবিতা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হয়েছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে। সে আন্দোলনে শহিদ হয়েছিল অনেক বীর বাঙালি। অনেক মা হারিয়েছিলেন তাদের সন্তানকে। তবুও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে বলেননি।
এরই ধারাবাহিকতায় জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ১৯৬৯-এ। দেশকে ভালোবেসে আত্মদান ও আত্মাহুতির এ যেন অবিস্মরণীয় ইতিহাস। বাঙালি তাদের স্বর্বস্ব ত্যাগ করেছে কিন্তু অত্যাচারীর কাছে কোনো কালেই মাথা নত করেনি। যা উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গেও আমরা দেখতে পাই।
(ঘ) “উদ্দীপক এবং 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতা বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ শিল্পভাষ্য"- বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপক এবং 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতা বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ শিল্পভাষ্য মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকের আলোচ্য অংশটুকুতে বাঙালির সংগ্রামী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। বাঙালির ইতিহাস রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস এই ইতিহাস বরাবরই গর্বের। বাঙালি স্বপ্নের সাথে বাস করে, শত্রুর সাথে লড়াই করতে জানে। শস্য চাষের পাশাপাশি অস্ত্রেও শান দিতে জানে। কখনো আপস না করে ইতিহাস রচনা করতে জানে।
অপরদিকে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতাটি বাঙালির ইতিহাস ও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সংগ্রামী চেতনা ধারণ করার প্রেক্ষাপটে রচিত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে জীবন দেয়া শহিদদের রক্ত যেন শহরের পথে পথে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুল। যা আমাদেরকে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে শেখায়। নিজেদের অধিকার আদায় করতে শেখায়।
এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ১৯৬৯-এ। বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ এক শিল্পভাষ্য কবিতাটিতে প্রকাশ পেয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণভ্যুত্থানকে এমনভাবে উজ্জীবিত করেছিল যে সে সময় পুলিশের গুলিতে আসাদুজ্জামান, মতিউর, ড. শামসুজ্জোহা প্রমুখের মতো মানুষেরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠিত হননি। তাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন, যা উদ্দীপকের ইতিহাস চেতনায়ও প্রতিফলিত হয়েছে।
তাই সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
০৩। একটি পতাকার জন্য কত রক্ত চাই।
একটি মানচিত্রের জন্য কত অশ্রু চাই।
রক্তের বুদবুদ ওঠে বিষণ্ণ বাতাসে চির সবুজের দেশে আপ্লুত আমুদে।
জলপাই রঙের ট্যাংক বেড়ায় দাপিয়ে, শহরে কী বন্দরে সময়-অসময়।
গর্জে উঠেছে সন্তান ভয়হীন সপ্রাণ, বাহুতে কলিজা বেঁধে করেছে সংগ্রাম।
(গ) উদ্দীপকটিতে 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকে 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষের সংগ্রামের দিকটি ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকের চরণগুলোতে দেখা যায় একটি পতাকার জন্য বহু মানুষ রক্ত দিচ্ছে, একটি মানচিত্রের জন্য মানুষ তার অশ্রু ঝরাচ্ছে। হানাদার বাহিনী ট্যাংক নিয়ে অতর্কিত হামলা চালাচ্ছে সময়-অসময়ে। তাদের অবর্ণনীয় শোষণের শিকার হচ্ছে এদেশের সাধারণ মানুষ। আর এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সকলে বাহুতে কলিজা বেঁধে গর্জে উঠেছে।
'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় আমরা দেখতে পাই জাতিগত শোষণ নিপীড়নের শিকার বাংলার সাধারণ মানুষ। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ সকলে। সব যখন সহ্যের বাইরে চলে গেছে তখন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে জনতা। দেশের নানা প্রান্তের মানুষ জড়ো হয় ঢাকার রাজপথে। এতে বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের সংগ্রামী চেতনা প্রকাশ পায়। অতএব, 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় শোষণের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল সে দিকটি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
(ঘ) উদ্দীপকের কবি ও 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার কবি একই মন্ত্রে দীক্ষিত।"-মন্তব্যটির সত্যতা বিচার কর।
উত্তরঃ (ঘ) 'উদ্দীপকের কবি ও 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার কবি একই মন্ত্রে দীক্ষিত" - মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার আশায় মানুষ রক্ত বিসর্জন দিচ্ছে, অশ্রু ঝরাচ্ছে। হানাদার বাহিনীর প্রতিনিয়ত শোষণ আর হামলার বিরুদ্ধে বাংলার সূর্য সন্তানরা গর্জে উঠেছে। তারা দেশকে মুক্ত করতে প্রাণ বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত।
'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতাটিতেও দেশপ্রেম, সংগ্রামী চেতনা ও গণজাগরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ১৯৬৯-এ যে গণআন্দোলন হয়েছিল কবিতাটি সেই গণজাগরণের পটভূমিতে রচিত। এসময় জাতিগত শোষণের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ। বিচিত্র শ্রেণি পেশার মানুষ দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসে জড়ো হয় ঢাকার রাজপথে। দেশমাতৃকার প্রতি বিপুল ভালবাসা কবিতাটিতে প্রকাশ পেয়েছে। এই একই বিষয়ের প্রতিফলন আমরা উদ্দীপকের চরণগুলোতে কবিকে প্রকাশ করতে দেখতে পাই। সুতরাং, উদ্দীপকের কবি ও 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার কবি একই মন্ত্রে দীক্ষিত।
০৪। "কপালে কব্জিতে লাল সালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক
হাতের মুঠোয় মৃত্যু চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্নবিত্ত, করুণ কেরানি, নারী, বৃদ্ধ, ভবঘুরে
আর তোমাদের মতো শিশু পাতা কুড়ানিরা দল বেঁধে।"
(গ) উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার বক্তব্যের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হল যুদ্ধে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ। 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় আমরা দেখতে পাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দ্বারা শোষিত হতে হতে এক সময় জনগণ দারুণ বিপ্লবে ফেটে পড়েছে। সালাম রাজপথে নেমে শূন্যে ফ্ল্যাগ তোলে, বরকত ঘাতকের থাবার মুখে বুক পেতে দেয়। জনসাধারণ সে বিপ্লবে যোগ দেয়। সর্বোপরি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে যোগ দেয় সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
উদ্দীপকেও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই। বিপ্লবে যোগ দিতে কপালে কজিতে লাল সালু বেঁধে মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, কেরানি, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই। অতএব, এ থেকে প্রতীয়মান হয় বিচিত্র শ্রেণি পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ চিত্র উদ্দীপক এবং 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতা উভয় স্থানেই ফুটে উঠেছে।
(ঘ) উদ্দীপকে 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার খণ্ডাংশ প্রতিফলিত হয়েছে।"- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকে 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার খণ্ডাংশ প্রতিফলিত হয়েছে-মন্তব্যটি যথার্থ। 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতাটি ভাষা আন্দোলনের প্রেরণায় সংঘটিত '৬৯ এর গণআন্দোলনের একটি চিত্র প্রকাশ করেছে। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল সেটিই এ কবিতায় চিত্রিত হয়েছে। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের বিষয়টিই এ কবিতার মূল উপজীব্য।
অপরদিকে উদ্দীপকে এমন কোনো পটভূমি বা আন্দোলনের কথা উল্লেখ নেই। প্রতিবাদের জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণ একত্রিত হয়েছেন সেই চিত্রটি প্রকাশ পেয়েছে। 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় একুশের চেতনা ও গণআন্দোলনের পাশাপাশি ঘাতকের আস্তানা, অত্যাচার, কমলবন তছনছ হওয়া সহ নানাদিক আলোচিত হয়েছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। অতএব, এ থেকে বুঝা যায় যে, উদ্দীপকে 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার খণ্ডাংশ প্রতিফলিত হয়েছে।
CQ জানমূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় শহরের পথে থরে থরে কী ফুটেছে?
উত্তরঃ শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে।
০২। ' ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় কোন ফুলের উল্লেখ রয়েছে?
উত্তরঃ 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের উল্লেখ রয়েছে।
০৩। ঘাতকের থাবার সম্মুখে বুক পাতে কে?
উত্তরঃ ঘাতকের থাবার সম্মুখে বুক পাতে বরকত।
০৪। 'কমলবন' শব্দটির অর্থ কী?
উত্তরঃ কমলবন শব্দটির অর্থ পদ্মবন।
০৫। 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কোন কাব্যগ্রন্থের কবিতা?
উত্তরঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ 'নিজ বাসভূমে' কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
০৬। 'হরিৎ উপত্যকা' অর্থ কী?
উত্তরঃ 'হরিৎ উপত্যকা' অর্থ সবুজ প্রান্তর।
CQ অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। 'সেই ফুল আমাদের প্রাণ' বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ 'সেই ফুল আমাদের প্রাণ' বলতে বাংলা ভাষাকে বোঝানো হয়েছে।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁদের এ ত্যাগ ও মহিমা পরবর্তী নানা আন্দোলনকে বেগবান করেছিল। এই বাংলাকে, বাংলা ভাষাকে শাসকের অত্যাচারী হাত থেকে রক্ষা করতেই বাঙালি এত ত্যাগ স্বীকার করেছিলো। কারণ এই বাংলা ভাষাকে মানুষ প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।
০২। দুঃখিনী মাতার অশ্রুজলে ফোটে ফুল" বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ "দুঃখিনী মাতার অশ্রুজলে ফোটে ফুল" বলতে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে যে অনেক মায়ের চোখের জল ফেলতে হয়েছিল তা বোঝানো হয়েছে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে আমাদের দেশের অনেক বীরকে রক্ত দিতে হয়েছিল। ছেলেহারা হয়েছিলেন অনেক মা। ছেলেদের দেশের জন্য উৎসর্গ করে তাঁরা তাঁদের বাকি জীবন চোখেরজলে কাটিয়েছেন। এই প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
০৩। "এ রঙের বিপরীতে আছে অন্য রং"- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ "এ রঙের বিপরীতে আছে অন্য রং"- বলতে ভাষা আন্দোলনের চেতনার ধারক কৃষ্ণচূড়ার লাল রং-এর বিপরীতে অন্য রঙের কথা বলা হয়েছে যা ঘাতকের অশুভ চেতনাকে ধারণ করে।
কবিতায় কৃষ্ণচূড়া ফুলকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে যা আলাদা জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিষ্ঠালাভের বিষয়টির ইঙ্গিত বহন করে। তবে এর বিপরীতেও রয়েছে এক অশুভ শক্তি যা আমাদের এই স্বাধিকার চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। প্রশ্নোল্লিখিত পঙক্তিটি এই বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করে।
০৪। অবিনাশী বর্ণমালা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ কবি অবিনাশী বর্ণমালা বলতে বাংলা বর্ণমালা তথা রাষ্ট্রভাষার ধারক চিহ্নের অমরত্ব বুঝিয়েছেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিল সালাম, বরকতসহ অনেকেই। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাকে "রাষ্ট্রভাষা করা। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদেরকে গুলি করে হত্যা করতে পারলেও বর্ণমালায় স্পর্শও করতে পারেনি। রাষ্ট্রভাষার এ স্মারকচিহ্ন অবিনাশী হয়ে নক্ষত্রের মতো ঝরে পড়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
০৫। 'সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা বলতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও অত্যাচার যে সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে সে বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলার মানুষের শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, অর্থনীতি-সকল বিষয়ের অধিকার হরণ করে। তাদের অত্যাচারে- শোষণে জর্জরিত হয় বাংলার প্রতিটি মানুষ। আর এভাবেই সারা বাংলা পরিণত হয় তাদের আস্তানায়।
০৬। "সালামের মুখ আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা"-ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা যেন ভাষা আন্দোলনের চেতনারই অন্যরূপ। তাই গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী রূপের মাঝে কবি যেন সালামের মুখের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান।
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মূল প্রেরণা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য। ভাষা আন্দোলনের শহিদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বাররাই ছিলেন '৬৯-এর আন্দোলনের প্রেরণা-পুরুষ। তাই কবি কল্পনায় এই নতুন বিপ্লবীদের মাঝে সালামের মুখাবয়ব দেখতে পান।