সারাদিনের দুআ ও যিকির সংক্রান্ত আলোচনা

সারাদিনের দুআ ও যিকির সংক্রান্ত আলোচনা

সারাদিনের দুআ ও যিকির সংক্রান্ত আলোচনা
আমাদের জীবনের কাজের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী আলোচনা হবে। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দুআর আলোচনা দিয়ে শুরু করে ঘুমানো পর্যন্ত দুআগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব। এরপর রাতে জাগ্রত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করব। আল্লাহ তাওফিকদাতা।

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দুআ


রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- মানুষ ঘুমালে শয়তান তার মাথার পেছনে তিনটি গিট দেয়। প্রত্যেক গিটে এই বলে ফুঁ দেয়- 'তুমি ঘুমিয়ে থাকো, রাত্রি এখনো বাকি আছে'। এরপর সে উঠে আল্লাহর যিকির করলে একটি গিট খুলে যায়। অযু করলে আরেকটি গিট খুলে যায়। এরপর নামায আদায় করলে সবগুলো গিট খুলে যায়। ফলে সে সকালে ফুরফুরে থাকে। উক্ত কাজগুলো না করলে সকালে তার মন অলস ও উদাসীন থাকে।'
হযরত হুযায়ফা বিন ইয়ামান ও হযরত আবু জর রা. থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর জন্য বিছানায় গিয়ে এই দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার নামেই ঘুমাই, তোমার নামেই জাগ্রত হই।

আর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই দুআ পড়তেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহয়ানা বা'দা মা-আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।

অর্থঃ সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি মৃত্যুর পর পুনরায় আমাদের জীবন দান করেন। তাঁর কাছেই সকলকে ফিরে যেতে হবে।'

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই দুআ পড়বে-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ عَلَيَّ رُوْحِي، وَعَافَانِي فِي جَسَدِي، وَأَذِنَ لِي بِذِكْرِهِ

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি রাদ্দা আলাইয়া রুহি, ওয়া আফানি ফি জাসাদি, ওয়া আজিনা লি বিজিকরিহি।

অর্থঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে আমার রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমার শরীর সুস্থ ও নিরাপদ রেখেছেন। এবং আমাকে তাঁর যিকিরের তাওফীক দিয়েছেন।
সারাদিনের দুআ ও যিকির সংক্রান্ত আলোচনা
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নিচের দুআটি পড়লে, আল্লাহ তাআলা তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন, সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ হলেও। দুআটি হলো-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

অর্থঃ এক আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- কোনো ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নিচের দুআটি পাঠ করলে আল্লাহ বলেন, 'আমার বান্দা সত্য বলেছে'। দুআটি হল-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ النَّوْمَ وَالْيَقْلَةَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بَعَثَنِي سَالِمًا سَوِيًّا. أَعْهَدُ أَنَّ اللهَ يُحْيِي الْمَوْتَى، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

সহিহ বুখারি: ৬৩১২, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৪৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪১৩ • ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ। ৮৬৬, নাসাঈ, সুনানে তিরমিজি

উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি খালাকান নাউমা ওয়াল ইয়াকযাহ, আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি বাআসানি সালিমান সাভিয়্যান, আশহাদু আন্নাল্লাহা ইয়ুহয়িল মাউতা, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি ঘুম ও জাগরণকে সৃষ্টি করেছেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সুস্থ ও নিরাপদে আমাকে জাগ্রত করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আল্লাহই মৃতকে জীবিত করেন। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।'
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে ১০বার 'আল্লাহু আকবার', ১০ বার 'আলহামদুলিল্লাহ', ১০ বার 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি', ১০ বার 'সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস', ১০ বার 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলতেন। এবং ১০বার 'ইস্তেগফার' করতেন। এরপর এই দুআটি ১০ বার পড়তেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ ضِيْقِ الدُّنْيَا، وَضِيقِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন দ্বিকিদ্দুনইয়া, ওয়া যিকি ইয়াওমিল কিয়ামাহ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়ার সংকীর্ণতা এবং কেয়ামতের সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি চাই।
এরপর তিনি নামায শুরু করতেন।
সারাদিনের দুআ ও যিকির সংক্রান্ত আলোচনা


হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই দুআটি পড়তেন-

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ أَسْتَغْفِرُكَ لِذَنْبِي، وَأَسْأَلُكَ رَحْمَتَكَ، اللَّهُمَّ زِدْنِي عِلْمًا، وَلَا تُزِغْ قَلْبِي بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنِي، وَهَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, আল্লাহুম্মা আসতাগফিরুকা লিযাম্বি, ওয়া আসআলুকা রহমাতাকা, আল্লাহুম্মা যিদনি ইলমান, ওয়ালা তুযিগ কালবি বা'দা ইযহাদাইতানি, ওয়াহাবলি মিন লাদুনকা রাহমাহ, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। গুনাহের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আপনার রহমত চাচ্ছি। আমার ইলম বাড়িয়ে দিন। হেদায়াত দেওয়া পর আমার অন্তরকে বক্র করে দিবেন না। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে বিশেষভাবে রহমত দান করুন। আপনিই সবচেয়ে বড় দাতা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন