আমার পথ গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
'আমার পথ' গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির ওপর কী আসে?
উত্তরঃ নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে।
০২। কে বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পায়না?
উত্তরঃ অন্তরে যাদের গোলামির ভাব তারা বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পায়না।
০৩। 'কুহেলিকা' কাজী নজরুল ইসলামের কোন ধরনের রচনা?
উত্তরঃ 'কুহেলিকা' কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাস।
০৪। 'আমার পথ' প্রবন্ধ অবলম্বনে কোনটি সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধ অবলম্বনে পরাবলম্বন সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব।
০৫। 'কর্ণধার' শব্দটির অর্থ কী?
উত্তরঃ কর্ণধার' শব্দের অর্থ নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তি।
০৬। 'আমার পথ' প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
উত্তরঃ আমার পথ প্রবন্ধটি রুদ্র-মঙ্গল গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
০৭। 'মেকি' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'মেকি' শব্দের অর্থ মিথ্যা / কপট।
০৮। 'সম্মার্জনা' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'সম্মার্জনা' অর্থ ঘষে-মেজে পরিষ্কার করা।
০৯। কাজী নজরুল ইসলামের মতে কে মিথ্যাকে ভয় করে?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের মতে যার মনে মিথ্যা, সে-ই মিথ্যাকে ভয় করে।
১০। সবচেয়ে বড়ো ধর্ম কোনটি?
উত্তরঃ মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম।১১। 'আমার পথ' প্রবন্ধে নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস করতেই শেখাচ্ছিলেন কে?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধে নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস রাখতে শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধীজি।
১২। 'আমার পথ' প্রবন্ধ অনুযায়ী আত্মাকে চিনলেই কী আসে?
উত্তরঃ আমার পথ প্রবন্ধ অনুযায়ী আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।
১৩। 'কুর্নিশ' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ কুর্নিশ শব্দের অর্থ অভিবাদন বা সম্মান প্রদর্শন।
১৪। 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক কাকে সালাম জানিয়েছেন?
উত্তরঃ লেখক তাঁর সত্যকে সালাম জানিয়েছেন।
১৫। "আমার পথ' প্রবন্ধে আমার পথ আমাকে কী দেখাবে?
উত্তরঃ আমার পথ আমাকে আমার সত্য দেখাবে।
CQ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। 'একেই বলে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব।'-ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ 'একেই বলে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব' বলতে পরাবলম্বন- কে বোঝানো হয়েছে।
নিজেকে চিনে, নিজেই নিজেকে পথ দেখাতে পারলে মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। কিন্তু তা না করে আমরা সর্বদা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি। সহায়ককে যদি কেউ একমাত্র অবলম্বন ভাবে সেখানেই চরম ভুলটি হয়। এই পরাবলম্বনই মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সে সর্বদা দাসত্বের মনোভাব নিয়েই বাঁচে।
০২। 'আমি সে দাসত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত'। ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আমি সে দাসত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত বলতে কবি সত্য-মিথ্যের বিভেদ করে নিজের সত্যকে চিনতে পারার শক্তি প্রকাশ করেছেন। কবি কখনো কারো বাণীকে বেদবাক্য হিসেবে মেনে নেন না। প্রমাণ ছাড়া তিনি কখনো কারো কথা বিশ্বাস করেন না। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলবার সাহস তাঁর আছে কারণ তিনি আত্মনির্ভর, নিজেকে চিনেন এবং পরাবলম্বনকে প্রশ্রয় দেন না। তিনি এই দাসত্ব থেকে মুক্ত।
০৩। "ও রকম বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক-অনেক ভালো।"-প্রাবন্ধিকের এ উক্তির কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ও রকম মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো' বলতে কবি যেকোনো অবস্থায় সত্যকেই প্রাধান্য দিতে বলেছেন।
মানুষ যখন নিজেকে চিনে নিজের সত্যকে পথপ্রদর্শক মেনে এগিয়ে যায় তখন অনেকেই একে দন্ত হিসেবে নেয়। কিন্তু লেখকের মতে সরলতা দেখাতে গিয়ে মিথ্যা বিনয় প্রকাশ করার কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি বিনয় অনেক সময় সত্যকে অস্বীকার করে ফেলে যা মানুষকে ছোটো করে ফেলে। তাই তাঁর মতে এমন বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক ভালো।
০৪। "যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়।" ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ নজরুলের মতে, মানুষের অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকলে বাইরের ভয় মানুষকে কাবু করতে পারেনা।
সত্যই মানুষের প্রাণ প্রাচুর্যের উৎস বিন্দু। তাই নিজের সত্যকে চিনতে পারলেই মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে। অপরদিকে যার মনে মিথ্যা, সে-ই মিথ্যাকে ভয় করে। নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে না চিনলে মানুষ পরনির্ভরশীল ও ব্যক্তিত্বহীন হয়ে পড়ে, তার মনে গোলামির ভাব তৈরি হয়। আর এ গোলামির মনোভাব তাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
০৫। "মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।"-উক্তিটির তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ ধর্ম, মত, পথের ভেদাভেদ ভুলে সকল মানুষকে সমান হিসেবে গণ্য করাকেই লেখক মানুষ-ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে লেখক ধর্ম ও মতের পার্থক্যকে ভুলে সকল মানুষকে সমানচোখে দেখতে বলেছেন। মানুষ মানুষকে শ্রদ্ধা করলে, একে অপরের প্রতি সহনশীল হলে সম্প্রীতিময় ও শান্তিপূর্ণ মানবসমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আর এর মাধ্যমেই মানুষ-ধর্মের মহিমা বিকশিত হবে।
০৬। কবি নিজেকে 'অভিশাপ রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন কেন?
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক নিজেকে অভিশাপ রথের সারথি বলেছেন কারণ সমাজ পরিবর্তন করতে তিনি নিজেই রথচালক তথা সারথির আসনে বসেছেন।
সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেল বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজ রক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। এ কথা জেনেও নজরুল তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আর্বিভূত হয়েছেন।
০৭। "যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।"- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এখানে কাজী নজরুল ইসলাম সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন।
কোনো ব্যক্তি যদি নিজ ধর্মের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস স্থাপন করে তবে সে অন্য সকল ধর্মে কোনো বৈষম্য বা ভেদাভেদ টেনে আনবে না- অন্য ধর্মের প্রতি কোনো বিদ্বেষ বা অবহেলা থাকবে না। কারণ পৃথিবীর সকল ধর্মই মানবতার পক্ষে। তাই মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে পারলে এক ধর্মের সঙ্গে অপর ধর্মের বিরোধ মিটে যাবে।
০৮। "আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে"- বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ "আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে" বলতে প্রাবন্ধিক বুঝিয়েছেন নিজেকে চিনলে নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে।
মানুষ যখন সত্য পথের পথিক হয় তখন নিজের মধ্যে আপনা আপনি এমন এক জোর আসে যে, সে যে কোনো ধরনের পরনির্ভরতা থেকে মুক্তি পায়। এই মুক্তির বোধ তার অন্তরের শক্তিকে জাগ্রত করে। এই আত্মনির্ভরশীলতার কারণেই সে তখন অসাধ্য সাধন করতে পারে।
০৯। লেখক নিজ সত্যকে সালাম জানিয়েছেন কেন?
উত্তরঃ লেখকের নিজেই নিজের কর্ণধার হবার পথে তাঁর পথ দেখাবে তাঁর সত্য। তাই তিনি সত্যকে সালাম জানিয়েছেন। লেখকের মতে, নিজেকে জানলে, নিজের সত্যকে চিনলে, সত্যের পথে অটুট থাকলে রাজভয়, লোকভয়- কোনো ভয়ই তাঁকে বিপথে নিয়ে যেতে পারবে না।
অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকলে বাইরের কোনো ভয়ই তাঁকে পদানত করতে পারবে না। তাঁর মতে, সত্যকে নিজের পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমেই আত্মাকে চেনা যায়। এসকল কারণেই লেখক সত্যকে সালাম জানিয়েছেন।
১০। কাজী নজরুল ইসলাম 'আমার সত্য' বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম আমার সত্য বলতে তাঁর অন্তরের সত্যের উপলব্ধিকে বুঝিয়েছেন।
নজরুলের মতে, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস তৈরি হয়। আর এই আত্মবিশ্বাসই মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলে। আর নিজেকে চেনার উপায় হচ্ছে নিজের সত্যকে জানা। 'আমার সত্য কথাটি দ্বারা নজরুল তাঁর এই আত্মা বা বিবেকের শক্তিকে চেনার বিষয়টিকে নির্দেশ করেছেন।