বাংলা ১ম পত্রঃ রেইনকোট গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
বিগত বোর্ড পরীক্ষাসমূহের প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
CQ প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। "বাজারে মিলিটারি ঢোকার পর থেকেই কলিমদ্দি দফাদারের ওপর বোর্ড অফিস খোলার ভার পড়েছে। অপেক্ষাকৃত কমবয়স্ক চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান মিলিটারির ভয়ে পারতপক্ষে এদিকে আসেন না। মেম্বারগণও আত্মগোপন করেছেন। কিন্তু বোর্ড অফিস নিয়মিত খোলা রাখার হুকুম জারি আছে। কলিমদ্দি এ কাজ করার জন্য বাজারে আসে। খান সেনারা ওকেই ওদের অভিযানে সঙ্গী করে নেয়। সে সরকারি লোক, নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং যা হুকুম তা পালন করে। সুতরাং সন্দেহের কারণ নেই।" তাই এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাক-ক্যাম্পের খবর মুক্তি বাহিনীর নিকট সরবরাহ করাসহ পাক হানাদারদের বিপথে চালিত করতে পারে কলিমদ্দি।
(গ) 'রেইনকোট' গল্পে বর্ণিত কলেজের পরিস্থিতির সাথে উদ্দীপকের বোর্ড অফিসের পরিস্থিতির তুলনা কর।
উত্তরঃ (গ) 'রেইনকোট' গল্পে বর্ণিত কলেজের পরিস্থিতির সাথে উদ্দীপকের বোর্ড অফিসের পরিস্থিতির সাদৃশ্য রয়েছে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, বাজারে মিলিটারি ঢোকার পর থেকেই কলিমদ্দি দফাদারের ওপর বোর্ড অফিস খোলার ভার পড়েছে। মিলিটারির ভয়ে সহজে কেউ এ দিকে আসেনা। কিন্তু বোর্ড অফিস নিয়মিত খোলা রাখার হুকুম থাকার কারণে সে বাজারে আসে। খান সেনারা তাই তাকেই তাদের অভিযান সঙ্গী করে নেয়।
অপরদিকে, 'রেইনকোট' গল্পেও কলেজের দেয়াল ঘেঁষে প্রিনসিপ্যালের কোয়ার্টারের পাশে কলেজের জিমনেশিয়াম মিলিটারি ক্যাম্প করে। যার কারণে ক্লাস বন্ধ। ছাত্ররা কেউ আসেনা। কিন্তু শিক্ষকদের প্রতিদিন হাজিরা দিতে হয়। তবুও বহু শিক্ষক গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু নুরুল হুদা প্রতিদিন কলেজে যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই সে প্রতিদিন হাজিরা দেয়। যে থমথমে পরিবেশ গল্পে ব্যক্ত করা হয়েছে সেই একই পরিবেশ উদ্দীপকের বোর্ড অফিসেও দেখা যায়। তাই বলা যায় যে, উভয় পরিস্থিতির সাদৃশ্য রয়েছে।
(ঘ) উদ্দীপকের কলিমদ্দি ও 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদার মতো সাধারণ ব্যক্তিরাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা"। মন্তব্যটি যাচাই কর।
উত্তরঃ (ঘ) 'উদ্দীপকের কলিমদ্দি ও 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদার মতো সাধারণ ব্যক্তিরাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা''- মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকের কলিমদ্দি মুক্তিযুদ্ধের সময় বোর্ড অফিস খোলা রাখার দায়িত্ব পায়। বাজারে নিয়মিত আসার কারণে পাকবাহিনী বিশ্বাস করে তাদের অভিযানে তাকে সঙ্গী করে নেয়।
সে সরকারি লোক, নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং যা হুকুম পায় তা পালন করে। তাই কেউ তাকে সন্দেহ করে না। এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে সে ক্যাম্পের খবর মুক্তিবাহিনীর নিকট সরবরাহ করে। অপরদিকে, 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদা সাধারণ ভীতু প্রকৃতির লোক ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে সবসময় নিজেকে ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইতো।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সন্দেহ করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তখন তার গায়ে মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোটটি ছিল, যা তার মাঝে দেশপ্রেম ও সাহসের সঞ্চার ঘটায়। শত অত্যাচার সে চুপচাপ সহ্য করেছিল, তবুও মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে কোনো তথ্য সে পাক-বাহিনীকে দেয়নি। একজন সাধারণ ব্যক্তিই অসাধারণ কাজ করে ফেলেছিল কেবল দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে।
উদ্দীপকে কলিমদ্দি ও 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদা চাইলেই নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারতো, তথ্য গোপন না রেখে। কিন্তু তারা জীবনকে বাজি রেখেছিলেন শুধু দেশকে ভালোবেসে। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করতে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের কলিমদ্দি ও নুরুল হুদার মতো সাধারণ ব্যক্তিরাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা।
০২। শওকত ওসমানের 'জাহান্নাম হইতে বিদায়' উপন্যাসে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী এ দেশকে বিভীষিকাময় নরককুণ্ডে পরিণত করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন তৎপরতার কথাও আছে। প্রবীণ স্কুলশিক্ষক গাজী রহমান স্বীয় প্রাণ সংশয়াপন্ন দেখে আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু এ পলাতক জীবন নিয়ে তিনি বিব্রত। তিনি যেন তাঁর নিজের কাছেই অপরিচিত জন। দেড় মাসের পলাতক জীবনে তাঁর সঙ্গে পরিচয় ঘটে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার। অসীম সাহসী এ সকল মানুষের সাথে মিশে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্ভীকচিত্তে তিনি পা রাখেন বাস্তবের কঠিন কর্তব্যভূমিতে।
(গ) উদ্দীপকের গাজী রহমানের সাথে 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের গাজী রহমানের সাথে 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো ভীত অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটা এবং হঠাৎ করেই দেশপ্রেম ও সাহসের সঞ্চারণ।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, শওকত ওসমানের 'জাহান্নাম হইতে বিদায়' উপন্যাসে একটি চরিত্র প্রবীণ স্কুলশিক্ষক গাজী রহমান। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় তিনি স্বীয় প্রাণ নিয়ে সংশয়াপন্ন দেখে আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু পলাতক এ জীবন নিয়েও তিনি বিব্রত ছিলেন। দেড় মাসের পলাতক জীবনে তিনি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সংস্পর্শে আসেন এবং অনুপ্রাণিত হয়ে নির্ভীকচিত্তে পা রাখেন
বাস্তবের কঠিন কর্তব্য ভূমিতে।
'রেইনকোট' গল্পে নুরুল হুদাও একজন ভীরু প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর তার বাসায় আসা-যাওয়া থাকার কারণে তিনি বারবার বাসা পরিবর্তন করতেন। কিন্তু কলেজে কুলিদের আগমনের ঘটনায় তাকে সন্দেহ করা হয়। প্রথমে ভয়ে তটস্থ হলেও শ্যালক মিন্টুর রেইনকোটটি পরে তার মধ্যে সাহস ও দেশপ্রেমের সঞ্চার হয় এবং সে সিদ্ধান্ত নেয় পরিস্থিতি যা-ই হোক সে মিলিটারিদের কোনো তথ্য দিবেনা। এই একই সাহসের সঞ্চার উদ্দীপকের গাজী রহমানের ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই।
(ঘ) উদ্দীপকে 'রেইনকোট' গল্পের বিষয়বস্তু কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকে 'রেইনকোট' গল্পের আংশিক বিষয়বস্তু প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে প্রবীণ স্কুলশিক্ষক গাজী রহমান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে স্বীয় প্রাণ সংশয়াপন্ন দেখে আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু পলাতক এ জীবন নিয়েও তিনি বিব্রত ছিলেন। এসময় তিনি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সংস্পর্শে আসেন যাদের সাথে মিশে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্ভীকচিত্তে তিনি পা রাখেন বাস্তবের কঠিন কর্তব্য ভূমিতে।
এখানে একজন ভীত ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হওয়ার দৃশ্য অঙ্কিত হয়েছে।
অপরদিকে, 'রেইনকোট' গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে রচিত। মুক্তিযুদ্ধের তখন শেষ পর্যায়। ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ শুরু হয়েছিল। তারা বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত আক্রমণ করছিল। যার কারণে মিলিটারিরা বিভিন্ন স্থানে অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
কলেজে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংসের ঘটনায় সকল শিক্ষককে তলব করা হয়। নুরুল হুদা প্রথমে ভীত তটস্থ থাকলেও পরিধান করা মিন্টুর রেইনকোটটি তার মাঝে সাহসের সঞ্চার করে। সে নিজে অত্যাচারিত হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের ঠিকানা জানিয়ে দিয়ে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাই বলা যায়, ভীরু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝে সাহস সঞ্চারের দিক থেকে উদ্দীপকের সাথে গল্পের মিল থাকলেও মক্তিযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি, রাজাকারদের তৎপরতা, প্রভৃতি বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে রেইনকোট গল্পের আংশিক প্রতিফলিত হয়েছে।
০৩। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রতনপুর গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে পরিণত হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাতেম আলী হয়ে ওঠেন হানাদার বাহিনীর আশ্রয়দাতা ও সাহায্যকারী। তিনি এ কাজে সহকর্মীদেরও বাধ্য করেন এবং কেউ সম্মত না হলে তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। অধিকাংশ শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের কাজকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন কিন্তু ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। সহকারী প্রধান শিক্ষক বাছেদ মিয়া ভীরু প্রকৃতির মানুষ হলেও তিনি ছিলেন মনে-প্রাণে একজন দেশপ্রেমিক মানুষ। তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। তাঁর পরামর্শে মুক্তিযোদ্ধারা রাতের অন্ধকারে হাতেম আলীকে ধরে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করেন।
(গ) উদ্দীপকের হাতেম আলী 'রেইনকোট' গল্পের কোন চরিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং কেন?
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের হাতেম আলী 'রেইনকোট' গল্পের প্রিনসিপাল ডক্টর আফাজ আহমদ চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপকের হাতেম আলী একজন প্রধান শিক্ষক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তার বিদ্যালয়টি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে পরিণত হয়। হাতেম আলী হয়ে ওঠেন হানাদার বাহিনীর আশ্রয়দাতা ও সাহায্যকারী।
তিনি এ কাজে সহকর্মীদেরও বাধ্য করেন। কেউ সম্মতি প্রদর্শন না করলে তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। অর্থাৎ তিনি পাকিস্তানিদের সহায়তা করে দেশদ্রোহীরতার পরিচয় দিয়েছেন। অপরদিকে, রেইনকোট' গল্পে প্রিনসিপাল ডক্টর আফাজ আহমদ পাকিস্তানিদের দোসর ছিলেন। কলেজের জিমন্যাশিয়ামে মিলিটারি ক্যাম্প স্থাপন করা হলে তিনি তাদের সাহায্য করেন।
এই প্রিনসিপ্যালই মিলিটারির বড়ো কর্তাদের নিবেদন করেছিলেন যেন স্কুল- কলেজ থেকে সব শহিদ মিনার হটিয়ে দেয়া হয়। তার মতে এগুলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা। তিনি সবসময় চাইতেন 'হিন্দুস্তান ও মিক্রিয়ান্টদের অবশ্যম্ভাবী পতন'। তিনি এতটাই হীন হয়েছিলেন যে নিজের সহকর্মীদেরও বিপদে ফেলতে একবার ভাবেননি। তার এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ উদ্দীপকের হাতেম আলীর মাঝেও বিদ্যমান।
(ঘ) উদ্দীপকের ঘটনার পরিণতি প্রত্যাশিত কিন্তু 'রেইনকোট' গল্পের পরিণতি থেকে ভিন্ন।" উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের ঘটনার পরিণতি প্রত্যাশিত কিন্তু 'রেইনকোট' গল্পের পরিণতি থেকে ভিন্ন।" মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকে হাতেম আলী ছিলেন পাকিস্তানিদের আশ্রয়দাতা ও সাহায্যকারী। তিনি এ কাজে সহকর্মীদেরও বাধ্য করেন এবং কেউ সম্মতি প্রদান না করলে তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। অধিকাংশ শিক্ষক এ ধরনের কাজকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন কিন্তু ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেন না।
সহকারী প্রধান শিক্ষক বাছেদ মিয়া ভীরু প্রকৃতির মানুষ হলেও তিনি ছিলেন মনে-প্রাণে একজন দেশপ্রেমিক মানুষ। তাঁর পরামর্শে মুক্তিযোদ্ধারা রাতের অন্ধকারে হাতেম আলীকে ধরে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করেন। তাদের এ সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক এবং প্রত্যাশিত। 'রেইনকোট' গল্পের পরিণতি ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। সাধারণ ও ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদা মিলিটারিদের ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকতেন।
তিনি এসব ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চাইলেও কলেজে কুলিদের আগমনের ঘটনা তাকে মিলিটারিদের মুখোমুখি হতে বাধ্য করে। এসময় ভীতু নুরুল হুদার মনে সাহসের সঞ্চারণ ঘটায় মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট। মুক্তিযোদ্ধাদের ঠিকানা ও কুলিদের আস্তানা সম্পর্কে না বলার কারণে তার ছোটোখাটো শরীরটাকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ছাদে লাগানো আংটার সাথে।
তারপর চাবুকের বাড়ি পড়ে তার শরীরে। তবে এগুলো তার কাছে শুধু উৎপাত বলে মনে হয়। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যত অত্যাচারই হোক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সে বিশ্বাসঘাতকতা করবেনা। এভাবেই চাবুকের মার সহ্য করতে থাকে নুরুল হুদা। যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ছিল।
উদ্দীপকের শিক্ষকেরা অন্যায়ের বিচার করতে পারলেও নুরুল হুদার ক্ষেত্রে চুপচাপ অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলনা।
০৪। কলিমদ্দি দফাদার ষাটোর্ধ্ব। তিনি সরকারি চাকরি করেন; পাক-সেনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া তাঁর ডিউটি। তাই মানুষ তাঁকে রাজাকার ভাবে। মুক্তিসংগ্রামে যেতে না পারায় তাঁর মনে দুঃখ। কিন্তু সুযোগ পেয়ে একবার একদল পাক হানাদার বাহিনীকে ভুল পথ দেখিয়ে বিপদে ফেলেছিলেন। এটাও তাঁর মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ, কলিমদ্দি স্বস্তি পায় দেশের পক্ষে কাজ করতে পেরে।
(গ) কলিমদ্দি দফাদারের সাথে 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদার বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।
উত্তরঃ (গ) কলিমদ্দি দফাদারের সাথে 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদার চারিত্রিক নানা দিক থেকে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদার সরকারি চাকরি করেন। তার ডিউটি ছিল পাক সেনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাই লোকজন তাকে রাজাকার ভাবে। কিন্তু মনে মনে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ অবলম্বন করতেন।
সংগ্রামে অংশ নিতে না পারার কারণে তার মনে দুঃখও ছিল। একবার সুযোগ পেয়ে একদল পাক হানাদার বাহিনীকে ভুল পথ দেখিয়ে বিপদে ফেলেছিলেন। এটাও তার একধরনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। দেশের পক্ষে কাজ করতে পেরে তিনি স্বস্তি পান। অপরদিকে, 'রেইনকোট' গল্পে নুরুল হুদা একটি ভীতু ও সাধারণ চরিত্র।
সে সর্বদা নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করত। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে কোনো পক্ষই অবলম্বন করেনি। কিন্তু তার মধ্যে বিশাল এক পরিবর্তন আসে মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট পরার পর। রেইনকোটটি গায়ে দিয়ে নুরুল হুদার মধ্যে সঞ্চারিত হয় উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম। মুক্তিযুদ্ধে সে অংশ না নিলেও পরোক্ষভাবে সে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য গোপন রেখে মুক্তিযোদ্ধাদেরই সাহায্য করেছিল।
সে নিজে অত্যাচার সহ্য করে দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছিল। যা কলিমুদ্দি দফাদারের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলাদা ধরনের। কলিমদ্দি দফাদার শুরু থেকেই সাহসী হলেও নুরুল হুদার মাঝে রেইনকোট পরিধানের পর সাহস সঞ্চারিত হয়েছে।
(ঘ) ঘটনার বৈপরীত্য থাকলেও উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পের চরিত্রগুলোর মধ্যে প্রবল দেশপ্রেম উজ্জীবিত ছিল।"- সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ (ঘ) ঘটনার বৈপরীত্য থাকলেও উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পের চরিত্রগুলোর মধ্যে প্রবল দেশপ্রেম উজ্জীবিত ছিল মন্তব্যটি যথার্থ। কলিমুদ্দি দফাদার পাক বাহিনীকে সহায়তা করেছিলন তার দায়িত্বের খাতিরে। যেহেতু সে সরকারি চাকরি করে এটি তাঁর ডিউটি ছিল। কিন্তু মনে মনে সেও চাইতো মুক্তিসংগ্রামে অংশ নিতে, মুক্তিসংগ্রামে যেতে না পারায় তাঁর মনে দুঃখ।
তিনি চাইছিলেন যেকোনো ভাবে এই যুদ্ধে শামিল হতে। তাই দায়িত্বের জায়গা ঠিক রেখে তিনি একবার একদল পাক হানাদার বাহিনীকে ভুল পথ দেখিয়ে বিপদে ফেলেছিলেন। তার দিক থেকে এটাও তাঁর মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ। তিনি স্বস্তি পান দেশের পক্ষে কাজ করতে পেরে। 'রেইনকোট' গল্পটিতে নুরুল হুদা একজন সাধারণ ভীতু প্রকৃতির লোক।
যুদ্ধের সময় সে নিজেকে সবদিক থেকে নিরাপদে রাখতে চাইতো। তার শ্যালক মিন্টু সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিলেও সে যায়নি। কিন্তু মুক্তিযোদদের খবর তার কাছে ছিল। তাই সন্দেহের শিকার হয়ে তাকে যেতে হয় মিলিটারি ক্যাম্পে। যাওয়ার সময় শ্যালক মিন্টুর রেইনকোটটি তার মধ্যে দেশকে উষ্ণতা ও সাহসের সঞ্চার করে।
প্রশ্নের জবাব না পেয়ে মিলিটারিরা যখন তাকে বুলিয়ে মেরেছিল তখনও সে নিশ্চুপ থেকেছে। শরীর থেকে রেইনকোটটি খুলে ফেললেও তার ওম তখনও তার শরীরে লেগে ছিল। যদিও সে কুলিদের আস্তানা, মিসক্রিয়েন্টদের ঠিকানা জানতো তবুও তার মুখ থেকে একটি শব্দও মিলিটারিরা বের করতে পারেনি।
তার এ নীরবতাও যুদ্ধে অংশগ্রহণের সমতুল্য। উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদার এবং রেইনকোট গল্পের নুরুল হুদা উভয়ের কেউই সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি। তাদের এ অংশগ্রহণ ছিল পরোক্ষ অংশগ্রহণ। নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। এ দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে তাদের মাঝে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে। তাই বলা যায় যে, আলোচ্য উক্তিটি যথার্থ।