রেইনকোট গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
বিগত বোর্ড পরীক্ষাসমূহের প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
রেইনকোট গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। মাস তিনেক পর শহরে গেরিলা অপারেশন করতে এসে রাজাকারের হাতে ধরা পড়ে মিনহাজউদ্দিন। ওকে ক্যাম্পে এনে বকুল গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। উলঙ্গ। শাস্তি সকালে দশ বেত। বিকেলে দশ বেত। এমন দৃশ্য রহমত আলীর জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দ। শুধু জানালায় বসে থাকলে এ দৃশ্য পুরোপুরি উপভোগ করা যায় না। বেত মারার আগেই বকুলতলায় এসে দাঁড়ায়। দু'কান ভরে মিনহাজউদ্দিনের গোঙ্গানি শোনে। বেঈমানের এমন চরম শাস্তিই তো পাওয়া উচিত। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার জন্য ভীতু লোকটা সাহসী হয়ে গিয়েছিল। পালিয়েছিল বাড়ি থেকে।
(গ) উদ্দীপকে বর্ণিত নির্যাতন চিত্র 'রেইনকোট' গল্পের মিলিটারির বর্বরোচিত আচরণের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত।"-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকে বর্ণিত নির্যাতন চিত্র রেইনকোট গল্পের মিলিটারিদের বর্বরোচিত আচরণের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত"-মন্তব্যটি যথার্থ। 'রেইনকোট' গল্পে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বিবৃত হয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনা। এসময় জনজীবন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে।
মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ পেতে নুরুল হুদাসহ আরো অনেককে ধরে নিয়ে যায় মিলিটারিরা। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ জানতে নুরুল হুদার ওপর চালিয়েছিল অমানবিক অত্যাচার। এছাড়াও ঢাকার রাস্তায় মিলিটারিরা গাড়ির প্যাসেঞ্জারদের নামিয়ে দাঁড় করিয়ে স্টেনগান তাক করে তল্লাশি করছিল, সন্দেহভাজনদের জিপে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
তাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অপরদিকে উদ্দীপকে মিনহাজউদ্দিন গেরিলা অপারেশন করতে এসে রাজাকার রহমত এর হাতে ধরা পড়ে। শাস্তিস্বরূপ তাকে বকুল গাছের সাথে উলঙ্গ ঝুলিয়ে সকালে বিকালে দশবার করে বেত্রাঘাত করা হয়। এতে জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দ পান রহমত আলী। তার মতে বেঈমানের এরকম শাস্তি হওয়া উচিত।
অথচ মিনহাজউদ্দিনই ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। এখানেও আমরা পাকিস্তানপন্থিদের অত্যাচারের চিত্র দেখতে পাই। উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত নির্যাতনের চিত্র 'রেইনকোট' গল্পের মিলিটারির বর্বরোচিত আচরণের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত।
(ঘ) 'রেইনকোট' গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের যে গেরিলা আক্রমণের সার্থক চিত্র পাই-তা উদ্দীপকে নেই।"-মন্তব্যটির সাথে তুমি কি একমত? যুক্তি দিয়ে বিচার কর।
উত্তরঃ (ঘ) 'রেইনকোট' মুক্তিযোদ্ধাদের যে গেরিলা আক্রমণের সার্থক চিত্র পাই-তা উদ্দীপকে নেই"- মন্তব্যটির সাথে আমি পুরোপুরি একমত। 'রেইনকোট' গল্পে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সফলভাবে গেরিলা হামলা চালিয়েছিল। তারা কলেজের দেয়াল ঘেঁষে বোমা ফাটিয়েছে, ইলেকট্রিক ট্রান্সফর্মার উড়িয়ে দিয়েছে।
আর যাওয়ার সময় প্রিন্সিপালের বাড়িতে গ্রেনেড মেরে গেট ভেঙে ফেলেছে। মিরপুরের বিল দিয়ে দুই নৌকা বোঝাই করে গেরিলারা এসে একটা মিলিটারিদের জিপ উড়িয়ে দিয়েছে। কমপক্ষে পাঁচটা খানসেনা মারা গেছে। এছাড়া রংপুর-দিনাজপুরের বেশিরভাগ জায়গা স্বাধীন করে ফেলেছে তারা। অর্থাৎ তারা কোনোভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা না পড়ে তাদের অভিযান সফলভাবে সম্পাদন করতে পেরেছে।
অপরদিকে উদ্দীপকের মিনহাজউদ্দিন মাস তিনেক পর শহরে গেরিলা অপারেশন করতে এসে রাজাকারের হাতে ধরা পড়ে যায়। পরে তারা তাকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। সে তার অভিযান সফল করতে পারেনি। এ কারণে বলা যায় যে, রেইনকোট গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের যে সার্থক চিত্র পাই তা উদ্দীপকে নেই।
০২। দেশ মাতৃকার মুক্তির শপথ নিয়ে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেয় হুমায়ুন সাহেবের পাঁচ ছেলে। রাজাকারের মাধ্যমে এই খবর জানতে পেরে পাক হানাদার বাহিনী হুমায়ুন সাহেবের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। অবশেষে ক্যাম্পে ধরেও নিয়ে যায় তাকে, বারবার জানতে চায় তাঁর ছেলেদের ঠিকানা। হুমায়ুন সাহেব চুপ করে থাকলে তাঁর পিঠের উপর প্রচণ্ড জোরে চাবুকের আঘাত করে। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন তিনি। রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত হয় তাঁর শরীর। তবু তিনি মুক্তিবাহিনীর কোনো খবর দেননা হানাদার বাহিনীকে।
(গ) উদ্দীপকের হুমায়ুন সাহেবের সাথে 'রেইনকোট' গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র কোনটি? আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের হুমায়ুন সাহেবের সাথে রেইনকোট গল্পের নুরুল হুদা চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
উদ্দীপকের হুমায়ুন সাহেবের পাঁচ ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। রাজাকারের মাধ্যমে হানাদার বাহিনী এই কথা জানতে পেরে হুমায়ুন সাহেবের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। বারবার তার কাছে ছেলেদের ঠিকানা জানতে চায়।
কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ চুপ করে থাকে। এতে হানাদার বাহিনী তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত হয়েও তিনি মুক্তিবাহিনীর কোনো খবর দেননি হানাদার বাহিনীকে। অপরদিকে 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদাকে প্রথমদিকে একজন ভীরু, সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখা যায়। মুক্তিবাহিনীর সাথে কোনো যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও হানাদার বাহিনী তাকে বাড়ি থেকে ডেকে ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য জানার জন্য তারা তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে তার মধ্যে এক ধরনের উষ্ণ দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। হানাদার বাহিনীর অমানবিক নির্যাতন তিনি সহ্য করেন কিন্তু মুখ খোলেননি। যা আমরা হুমায়ুন সাহেবের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। সুতরাং, উদ্দীপকের হুমায়ুন সাহেবের সাথে রেইনকোট গল্পের নুরুল হুদা চরিত্রের মিল রয়েছে।
(ঘ) “দেশকে মুক্ত করার জন্য বাঙালি জনসাধারণের আত্মত্যাগই উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পের মূল প্রতিপাদ্য।" মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
উত্তরঃ (ঘ) “দেশকে মুক্ত করার জন্য বাঙালি জনসাধারণের আত্মত্যাগই উদ্দীপক ও রেইনকোট গল্পের মূল প্রতিপাদ্য-মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য হুমায়ুন সাহেবের পাঁচ ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। হুমায়ুন সাহেব দেশের জন্য তার পাঁচ সন্তানকে উৎসর্গ করে দেন।
নিজে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বাড়ি ঘর হারান। অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো খবর হানাদার বাহিনীকে দেননি। দেশকে স্বাধীন করার জন্য আত্মত্যাগ করেন। 'রেইনকোট' গল্পে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিপীড়ন, শোষণের মধ্যে ঢাকা শহরের আতঙ্কিত মানুষের জীবন চিত্র বর্ণিত হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গল্পের মূল চরিত্র নুরুল হুদার উপর চলে ভয়াবহ নির্যাতন। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরে তার মধ্যে যে দেশপ্রেমের সঞ্চারণ হয়। সে শক্তি নিয়ে হানাদারদের প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে, শত অত্যাচার সহ্য করেন তিনি। দেশপ্রেমের অনুভূতি তাঁর মধ্যে এতটাই উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয় যে, চাবুকের বাড়িও তার কাছে স্রেফ উৎপাত বলে মনে হয়।
উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্প উভয় ক্ষেত্রেই দেশকে মুক্ত করার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের চিত্র প্রতিফলিত হয়। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
০৩। অযুত প্রাণের অগ্নিশিখার সূর্য-কুঁড়ি
ফৌজের হাঁকে কাঁপে খরধর দস্যুপুরী
নিমেষে ছড়ায় তারই আওয়াজ দিগন্তরে
মনে কি পড়ে?
(গ) অযুত প্রাণের অগ্নিশিখার সূর্য-কুঁড়ি বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 'রেইনকোট' গল্পের আঙ্গিকে আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত অযুত প্রাণের অগ্নিশিখার নতুন সূর্য কুঁড়ি দ্বারা রেইনকোট' গল্পে উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধাদের বোঝানো হয়েছে। উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, এ অগ্নিশিখার সূর্য কুঁড়ি ফৌজের হাঁকে দস্যুপুরী থরথর করে কেঁপে ওঠে। তাদের আওয়াজ দিগন্তজুড়ে ছড়িয়ে যায়। এ সূর্য কুঁড়ি সন্তানেরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধাদেরই প্রতীক।
'রেইনকোট' গল্পেও আমরা পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের চিত্র দেখতে পাই। গল্পে আমরা গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ঢাকায় পাকবাহিনীর নাস্তানাবুদ অবস্থা প্রত্যক্ষ করি। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝে কীভাবে সাহস ও দেশেপ্রেম সঞ্চারিত হয় তার ব্যঞ্জনাময় প্রকাশও আমরা গল্পটিতে দেখতে পাই।
পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুক্তিসেনাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই রেইনকোট গল্পের মূল কথা। উদ্দীপকের অগ্নিশিখার নতুন সূর্য-কুঁড়িদের মাঝেও আমরা সেই চেতনারই স্ফুরণ দেখতে পাই।
(ঘ) উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পে বাঙালিদের যে জাতীয় চেতনার স্ফুরণ ঘটেছে তা বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পে বাঙালিদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্ফুরণ ঘটেছে।
উদ্দীপকে একটি ফৌজের কথা বলা হয়েছে যাদের তুলনা করা হয়েছে অযুত প্রাণের অগ্নিশিখার সূর্য-কুঁড়ির সাথে। তাদের হাঁকে দস্যুপুরী যেন থর থর করে কেঁপে উঠছে। দিগন্ত জুড়ে তাদের হাঁক যেন নিমেষের মাঝেই ছড়িয়ে যাচ্ছে।
'রেইনকোট' গল্পেও আমরা এমনই একটি ফৌজের দেখা পাই যারা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা বাহিনী। তাদের হঠাৎ হঠাৎ আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রভাব বাঙালিদের মনে এতই বেশি ছিল যে, মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝেও উষ্ণতা ও সাহস সঞ্চারিত হয়।
তার মাঝে দেশপ্রেমের চেতনা জেগে ওঠে। উদ্দীপকের সূর্য-কুঁড়ির ফৌজ বা 'রেইনকোট' গল্পের গেরিলা যোদ্ধা উভয়ের মাঝেই দেশপ্রেম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের চেতনা লক্ষ করা যায় যা কেবল তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং ছড়িয়ে পড়েছে আরও হাজার হাজার মানুষের মধ্যে। তাদের এ চেতনার বলেই শত্রু বাহিনী হয়েছে পরাস্ত। তাই বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালিদের মধ্যে যে ঐক্যবদ্ধ মুক্তি চেতনা লক্ষ করা যায়, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পে।
০৪। ১০ মার্চ, ১৯৭১। রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি মিলিটারি। গুয়াতলী গ্রামের হিন্দু জনগোষ্ঠী ভয়ে ভারতে পাড়ি জমায়। শুধু ভিটে আঁকড়ে পড়ে থাকে কেষ্টবাবু। পাশের গ্রামে ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। স্থানীয় রাজাকার কাশেম মোড়ল কেষ্টবাবুকে সন্দেহের চোখে দেখে। সে মনে করে কেষ্টবাবু মুক্তি বাহিনীর লোক। এক বৃষ্টিমুখর দিনে গুয়াতলী গ্রামে মিলিটারি প্রবেশ করে এবং কাশেম মোড়লের ইশারায় হানাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তার পাশে জীবন্ত পুঁতে রেখে চলে যায়।
(গ) উদ্দীপকের কেষ্টবাবু 'রেইনকোট' গল্পের কোন চরিত্রকে স্মরণ করিয়ে দেয়? বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের কেষ্টবাবু 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদা চরিত্রকে স্মরণ করিয়ে দেয়। উদ্দীপকে দেখা যায়, কেষ্টবাবু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি মিলিটারির ভয়ে ভারতে পালিয়ে না যেয়ে নিজের ভিটে আঁকড়ে পড়ে থাকে। স্থানীয় রাজাকার কাশেম মোড়ল কেষ্টবাবুকে সন্দেহের চোখে দেখে। সে সন্দেহ করে মুক্তিবাহিনীর সাথে কেষ্টবাবুর কোনো যোগাযোগ আছে।
একদিন তারই ইশারায় হানাদার বাহিনী কেষ্টবাবুকে ধরে নিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে জীবন্ত পুঁতে রেখে চলে যায়। অপরদিকে 'রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদা ভীতু প্রকৃতির একজন নিরীহ ব্যক্তি। ঢাকা কলেজের সামনে গেরিলা আক্রমণের ঘটনায় পাকিস্তানি মিলিটারিরা কলেজের শিক্ষকদের তলব করে যাদের মধ্যে নুরুল হুদাও ছিলেন।
মিলিটারিরা সন্দেহ করেছিল মুক্তিবাহিনীর সাথে নুরুল হুদার কোনো যোগাযোগ ছিল। তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো খবর দিতে না পারায় তার ওপর তো অকথ্য নির্যাতন চালায়। উদ্দীপকের কেষ্টবাবুর পাকিস্তানিদের দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া এবং নিরপরাধ নূরুল হুদার পাকিস্তানিদের দ্বারা অত্যাচারিত হওয়ার চিত্র সম্পূর্ণ এক। তাই, উদ্দীপকের কেষ্টবাবু 'রেইনকোট' গল্পের নূরুল হুদার চরিত্রকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
(ঘ) উদ্দীপকটি 'রেইনকোট' গল্পের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।"-উক্তিটির সত্যতা যাচাই কর।
উত্তরঃ (ঘ) "উদ্দীপকটি 'রেইনকোট' গল্পের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র"- উক্তিটি যথার্থ। 'রেইনকোট' গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে রচিত। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তা, পাকবাহিনীর সহায়তায় নিয়োজিত লোকদের ভূমিকা, মিলিটারিদের অত্যাচার ও নৃশংসতা গল্পটিতে ফুটে উঠেছে।
উষ্ণতা, সাহস এবং দেশপ্রেম সঞ্চারণে রেইনকোটের প্রতীকী তাৎপর্যও ফুটে উঠেছে গল্পটিতে। গল্পের প্রধান চরিত্র নুরুল হুদা যখন তার মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরিধান করে তখন মনের অজান্তেই তার মধ্যে যে সাহস এবং দেশপ্রেমের সঞ্চারণ হয় সে দিকটি এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অপরদিকে উদ্দীপকে আমরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের একটি খণ্ডচিত্র দেখতে পাই, যেখানে গ্রামের ভিটে আঁকড়ে থাকা কেষ্টবাবু কোনো কারণ ছাড়াই রাজাকার কাশেম মোড়লের সন্দেহের চোখে পড়ে। কাশেম মোড়ল ভাবে সে মুক্তি বাহিনীর লোক। যার কারণে মোড়লের ইশারায় হানাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তায় জীবন্ত পুঁতে রেখে চলে যায়।
উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পের সামগ্রিকতা আলোচনা করে দেখা যায় যে উদ্দীপকটি 'রেইনকোট' গল্পের সামগ্রিক ভাব ধারণ করেনি। উদ্দীপকে নরুল হুদার সাহস, মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে স্পষ্টকোনো ধারণা নেই। তাই এটি 'রেইনকোট' গল্পের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।