বাংলা ১ম পত্র: রেইনকোট গল্পের অনুধাবনমূলক ক, খ, গ, ঘ প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
বাংলা ১ম পত্র: রেইনকোট গল্পের অনুধাবনমূলক ক, খ, গ, ঘ প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। "কোথা যাতে কোন পথে কেমন করে মুক্তিফৌজ আসে, আক্রমণ করে এবং প্রতিআক্রমণ করলে কোথায় যাওয়া হয়ে যায়, খাঁন সেনারা তার রহস্য ভেদ করতে পারে না। কখনও কখনও খতরনাক অবস্থার মধ্যে পড়তে হ্যা। হাট-বাজারের লোকজন, মিল-ফ্যাক্টরির শ্রমিক, লোকানদার, স্কুল মাস্টার, ছাত্র সকলকে কাতারবন্দি করে বন্দুকের নল উচিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, 'মুক্তি কিধার হ্যায় বোলো।' এক উত্তর, ওরা জানে না।"
(গ) উদ্দীপকের ঘটনা 'রেইনকোট' গল্পের সাথে কি সাদৃশ্যপূর্ণ?-ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের ঘটনা রেইনকোট গল্পের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 'রেইনকোট' গল্পে আমরা দেখতে পাই নূরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। মিলিটারি বাহিনী বুঝতেও পারেনা কীভাবে তারা আক্রমণ করে এবং পালিয়ে যায়।
মুক্তিবাহিনীদের ধরতে না পেরে তারা সন্দেহের বশে এবং কলেজের প্রিন্সিপাল ড. আফাজের কথায় কলেজের শিক্ষকদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এর মধ্যে নুরুল হুদাও ছিলেন। মিলিটারিরা নুরুল হুদাকে বার বার মুক্তিবাহিনীর খোঁজ দিতে বললেও সে দেয়নি। কারণ মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরে তার মধ্যে অসীম সাহস ও দেশপ্রেমের সঞ্চার ঘটে। এতে নুরুল হুদার উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।
উদ্দীপকে মুক্তিফৌজ কখন আসে, আক্রমণ করে এবং প্রতিআক্রমণ করলে পালিয়ে যায় তা খান সেনারা বুঝে উঠতে পারেনা। তাই জনসাধারণকে যেভাবে পারে সেভাবে তুলে এনে বন্দুকের নল উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে মুক্তিবাহিনী কোথায় আছে। তাদের একটাই উত্তর, তারা কিছু জানেনা। একই ঘটনা আমরা 'রেইনকোট' গল্পেও দেখতে পাই। এ থেকে বোঝা যায় যে, উদ্দীপকের ঘটনা 'রেইনকোট' গল্পের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
(ঘ) উদ্দীপকটি 'রেইনকোট' গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র।"-এ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকটি রেইনকোট গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র মন্তব্যটি যথার্থ।
রেইনকোট গল্পে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, বর্বরতা ও নিপীড়নের চিত্র প্রকাশের পাশাপাশি সে সময় ঢাকা শহরের পরিস্থিতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের তখন শেষ পর্যায় এবং ঢাকায় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ চলছে।
রাস্তাঘাটে মিলিটারিরা মানুষকে দাঁড় করিয়ে নানান জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ভয়ে কেউ কোনো কাজ ছাড়া বাড়িঘর থেকে বের হয়নি। এছাড়া পাকিস্তানি বাহিনী কলেজে সেনা ক্যাম্প করে প্রিন্সিপালের সহায়তায় লোকজন ধরে নিয়ে আসে। তার মধ্যে নুরুল হুদাও ছিলেন। যিনি ভীতু প্রকৃতির হলেও মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরিধান করে অসীম সাহস আর দেশপ্রেম অনুভব করেন। মূলত একজন ভীতু প্রকৃতির মানুষের মাঝে মুক্তির চেতনার জাগরণ এবং সাহস ও দেশপ্রেমের সঞ্চারণের বিষয়টিই 'রেইনকোট' গল্পের মূল প্রতিপাদ্য।
অপরদিকে উদ্দীপকের চিত্রে আমরা গেরিলাদের সফল আক্রমণের চিত্র দেখতে পাই। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে না পেরে হাট বাজারের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। তারা যতই অত্যাচার করে জানতে চায় মুক্তিযোদ্ধারা কোথায়, সাধারণ মানুষের একটাই উত্তর তারা জানেনা। যা আমরা 'রেইনকোট' গল্পের একটি অংশের চিত্রে দেখতে পাই।
কিন্তু, নুরুল হুদাকে নিয়ে তার স্ত্রীর চিন্তা, মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝে দেশপ্রেম জেগে ওঠার যে বর্ণনা গল্পে আছে তা উদ্দীপকে অনুপস্থিতে। এ সকল কারণে উদ্দীপককে 'রেইনকোট' গল্পের খণ্ডাংশ বলা যায়, পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়।
০২। মহাকাব্য 'রামায়ণ'-এ বর্ণিত হয়েছে রাবণ যখন রাম-লক্ষ্মণের আক্রমণ থেকে লংকা রাজ্য রক্ষায় সবংশে প্রাণপাত করে চলেছেন, তখন তাঁরই সহোদর বিভীষণ রামের পক্ষ অবলম্বন করে দেশের গোপন খবর ও নগরে প্রবেশের গোপন পথের সন্ধান রামকে জানিয়ে দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত রামের নিকট রাবণ পরাজিত হয়।
(গ) উদ্দীপকের বিভীষণ ও 'রেইনকোট' গল্পের প্রিনসিপ্যালের মধ্যে মিল আছে কি? বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ (গ) স্বদেশিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কারণে উদ্দীপকের বিভীষণ ও 'রেইনকোট' গল্পের প্রিনসিপ্যালের মধ্যে মিল রয়েছে। 'রেইনকোট' গল্পে আমরা প্রিনসিপ্যাল ডক্টর আফাজ আহমেদকে পাকিস্তানিদের অনুগত একটি চরিত্র হিসেবে দেখতে পাই। তিনি পাকিস্তান বাঁচাতে মিলিটারিদেরকে শহিদ মিনার ধ্বংস করার পরামর্শ দেন।
কলেজের ভেতরে মিলিটারি ক্যাম্প স্থাপন করতে পাকিস্তানিদের সহায়তা করেন। মিলিটারিদের হুকুমে সন্দেহভাজন লোকদেরকে ধরিয়ে দেন। তাঁর এরূপ আচরণের কারণে বলা যায়, তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় এদেশে থাকা বিশ্বাসঘাতক শ্রেণির প্রতিনিধি।
উদ্দীপকের বিভীষণের মাঝেও আমরা প্রিনসিপ্যালের এই বৈশিষ্ট্যেরই প্রতিফলন দেখতে পাই। তিনি রাবণের ভাই হওয়া সত্ত্বেও রাম- রাবণের যুদ্ধে রামের পক্ষ অবলম্বন করেন। দেশের গোপন খবর ও নগরে প্রবেশের গোপন পথ সম্পর্কে রামকে জানিয়ে দেন। তাঁর এরূপ কার্যকলাপের ফলেই শেষপর্যন্ত রাবণ রামের কাছে পরাজিত হয়। স্বদেশিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার এরূপ চরিত্রের কারণে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বিভীষণের সাথে 'রেইনকোট' গল্পের প্রিনসিপ্যালের চরিত্রের মিল আছে।
(ঘ) "পরিণতি বিচারে উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পে পার্থক্য বিদ্যমান।"-উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকে বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতার ফলস্বরূপ রাবণ পরাজিত হলেও মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ী হয়েছিলেন। তাই উক্তিটিকে যথার্থ বলা যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদেশে সাহসী ও দেশপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি আমরা কিছু স্বার্থান্বেষী বিশ্বাসঘাতক চরিত্রের মানুষের তৎপরতাও দেখতে পাই।
'রেইনকোট' গল্পেও আমরা এরূপ কিছু চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ করি। কলেজের প্রিনসিপ্যাল ডক্টর আফাজ আহমেদ, পিওন ইসাহাক মিয়া কিংবা উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদ এই বিশ্বাসঘাতক শ্রেণিরই প্রতিনিধিত্ব করে। তারা যুদ্ধকালীন নানাভাবে পাকিস্তানি মিলিটারিদের সহায়তা করে। তাদের সাহায্যের কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাজ অনেক কঠিন হয়ে যায়, অনেক নিরীহ মানুষ মৃত্যুবরণ করে, স্বাধীনতা অর্জনের পথ আরও কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু সকল প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে বাঙালিরা শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
কিন্তু উদ্দীপকে তা ঘটেনি। এখানে রাবণের ভাই বিভীষণ যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগ করে রামের পক্ষ অবলম্বন করে। দেশের গোপন খবর ও নগরে প্রবেশের গোপন পথ সম্পর্কে রামকে অবহিত করে। যার ফলে যুদ্ধে রামের পক্ষ অধিক সুবিধা লাভ করে এবং রাবণ পরাজিত হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপক এবং 'রেইনকোট' গল্প-উভয়ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতক শ্রেণির উপস্থিতি থাকলেও 'রেইনকোট' গল্পে উল্লিখিত
০১। 'রেইনকোট' গল্পে আসমা কে?
উত্তরঃ 'রেইনকোট' গল্পে আসমা নুরুল হুদার স্ত্রী।
০২। 'রেইনকোট' গল্পে ইসহাক কে?
উত্তরঃ 'রেইনকোট' গল্পে ইসহাক হল প্রিনসিপ্যালের পিওন।
০৩। অফিসের জন্য কয়টি আলমারি কেনা হয়েছিল?
উত্তরঃ অফিসের জন্য তিনটি আলমারি কেনা হয়েছিল।
০৪। কার জন্য নুরুলহুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়?
উত্তরঃ মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর জন্য নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়।
০৫। 'রেইনকোট' গল্পে পিয়নের নাম কী?
উত্তরঃ রেইনকোট গল্পের পিয়নের নাম ইসহাক মিয়া।
০৬। 'রেইনকোট' গল্পে উল্লিখিত ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপালের নাম কী?
উত্তরঃ 'রেইনকোট' গল্পে উল্লিখিত ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপালের নাম ডক্টর আফাজ আহমদ।
০৭। প্রিন্সিপাল কাকে তোয়াজ করতেন?
উত্তরঃ প্রিন্সিপাল উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদকে তোয়াজ করতেন।
০৮। 'রেইনকোট' গল্পটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ রেইনকোট গল্পটি ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।
০৯। 'রেইনকোট' গল্পের উর্দুর প্রফেসরের নাম কী?
উত্তরঃ উর্দুর প্রফেসরের নাম আকবর সাজিদ।
১০। নুরুল হুদা কোন বিষয়ের লেকচারার ছিলেন?
উত্তরঃ নূরুল হুদা রসায়নের/কেমিস্ট্রির লেকচারার ছিলেন।
১১। "আব্দুকে ছোটো মামার মতো দেখাচ্ছে"-উক্তিটি কার?
উত্তরঃ উক্তিটি নুরুল হুদার পাঁচ বছরের ছেলের।
১২। রাশিয়ার ছিল জেনারেল উইনটার, আমাদের জেনারেল-"। শূন্যস্থানে কী হবে?
উত্তরঃ শূন্যস্থানে ব্যবহৃত শব্দটি হবে- মনসুন।
১৩। 'মিসক্রিয়ান্ট' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'মিসক্রিয়ান্ট' শব্দের অর্থ দুষ্কৃতকারী।
১৪। 'বর্ষাকালেই তো জুৎ'-কথাটি কে বলেছিল?
উত্তরঃ এ কথাটি বলেছিল কুলির ছদ্মবেশে আসা মুক্তিযোদ্ধার।
১৫। উও আপ হি কহ সাকতা।" উক্তিটি কার?
উত্তরঃ কলেজের পিওন ইসহাক মিয়ার।
১৬। মিলিটারি পাস্তা কোথায় বসেছিল?
উত্তরঃ প্রিন্সিপালের সিংহাসন মার্কা চেয়ারে।
CQ অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। 'ওই ঘরে আজকাল সহজে কেউ ঘেঁষে না।'-কেন?
উত্তরঃ 'ওই ঘরে আজকাল সহজে কেউ ঘেঁষে না।' বলতে ড. আফাজ আহমদের ঘরকে বোঝানো হয়েছে। কলেজের পাশে প্রিনসিপ্যালের কোয়ার্টারের পাশে মিলিটারি ক্যাম্প হওয়ার কারণে ক্লাস বন্ধ। তবে শিক্ষকদের হাজিরা দিতে হয়। স্টাফ রুমে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আলোচনা হলেও ড. আফাজের রুমে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হতো এবং তাদের পতন নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করত। তাই এই ঘরে আজকাল সহজে কেউ ঘেঁষে না।
০২। "রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইনটার, আমাদের জেনারেল মনসুন।" উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ 'রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইনটার, আমাদের জেনারেল মনসুন বাক্যটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বর্ষা ঋতুর সহায়ক ভূমিকা প্রকাশ পেয়েছে।
আবহাওয়া জনিত কারণে বাংলায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয় বর্ষা ঋতুতে যার সাথে পাক-হানাদার বাহিনী নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছিল না। ফলে তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাশাপাশি প্রবল ঝড়-বৃষ্টি আর বর্ষা ঋতুর সাথেও লড়তে হয়েছিল। ঠিক যেমনভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচণ্ড শীতের কারণে জার্মান বাহিনী রাশিয়ার কাছে বিপর্যস্ত হয়েছিল।
০৩। 'মনে হচ্ছে যেন বৃষ্টি পড়ছে 'রেইনকোটের উপর'-উক্তিটি দ্বারা লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ নুরুল হুদার গায়ে চাবুকের আঘাতকে এখানে তুলনা করা হয়েছে রেইনকোটের ওপর বৃষ্টির ফোটা পড়ার মতো। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে ভীরু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝেও সাহস ও দেশপ্রেম সঞ্চারিত হয়। পাশাপাশি মুক্তিসেনারা পাকিস্তানি মিলিটারিদের কাছে কলেজের প্রফেসরদের মধ্যে তার নামই বলেছে জেনে তার ওপর মুক্তিসেনাদের আস্থার পরিচয় পেয়ে সে শিহরিত হয়।
তাই পাকিস্তানিরা তার গা থেকে রেইনকোট খুলে নিলেও তার মনে হয় গায়ে রেইনকোটের ওম এখনো লেগে আছে। মিলিটারির চাবুকের আঘাতকে তাই তার কাছে মনে হয় রেইনকোটের ওপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার মতো।
০৪। ঠান্ডা হাওয়ার ধাক্কা রেইনকোটের তাপে গরম হয়ে ওঠার কারণ কী?
উত্তরঃ ঠান্ডা হাওয়ার ধাক্কা রেইনকোটের তাপে গরম হয়ে উঠেছিল আতঙ্কে।
বাস চলতে চলতে এমন এক স্থানে এসে দাঁড়ায় যেখানে বাঁয়ের দিকে একটি নির্মাণাধীন মসজিদ ছিল। এই মসজিদের ছাদের দিক তাকিয়ে নুরুল হুদার মনে পড়ে ক্রাক ডাউনের রাতে ভোর হলেই মিলিটারির গুলিতে এই মসজিদের মুয়াজ্জিন ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল। এই ঘটনা মনে হতেই তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল আতঙ্কে। কারণ সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল সে।
০৫। 'ক্রাক-ডাউনের রাত' বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ ক্রাকডাউনের রাত বলতে ২৫শে মার্চের কালো রাতকে বুঝানো হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা পরিচালনা করে। এই রাতে তারা শত শত নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। গল্পে ক্রাকডাউনের রাত বলতে এই রাতকেই বুঝানো হয়েছে।
০৬। ভালোই হলো। তোমার গোড়ালি পর্যন্ত ঢাকা পড়েছে। পায়েও বৃষ্টি লাগবে না।"- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এ উক্তিটি নূরুল হুদার স্ত্রী আসমার। কলেজের ভেতর গ্রেনেড হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কলেজের সকল শিক্ষককে তলব করলে সেখানে নুরুল হুদারও ডাক পড়ে। সে সময় বাইরে প্রবল বৃষ্টি ছিল। এই বৃষ্টিতে ছাতায় কুলাতো না। নুরুল হুদার স্ত্রী তার ভাই মিন্টুর রেইনকোট তাকে পরতে দিয়েছিল। মিন্টু তার চেয়ে লম্বা। তাই রেইনকোট দিয়ে নুরুল হুদার গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে গিয়ে ছিল। ফলে তার গায়ে বৃষ্টির পানি লাগার সম্ভাবনা ছিল না।
০৭। উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদকে প্রিনসিপ্যাল আজকাল তোয়াজ করে কেন?- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ প্রফেসরের কাছ থেকে উর্দু শেখার জন্য আফাজ আহমদ আকবর সাজিদকে তোয়াজ করেন।
ড. আফাজ আহমদ পাকিস্তানপন্থি হলেও উর্দু ভাষার ওপর তাঁর যথেষ্ট দখল নেই। কিন্তু মিলিটারিদের তোষামোদ করতে হলে উর্দু ভাষাতেই করতে হয়। তাই তিনি উর্দু শেখার চেষ্টা করেন এবং উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদকে তোয়াজ করে চলেন।
০৮। "ভোর রাত থেকে বৃষ্টি”-এই 'বৃষ্টি' সম্পর্কে নুরুল হুদার অভিব্যক্তি বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ১৯৭১ সালের অস্থির পরিস্থিতির মাঝে ভোররাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি নুরুল হুদার মনে স্বক্তির আভাস নিয়ে এসেছিল। নুরুল হুদা বৃষ্টির ভাবগতিক দেখে মনে মনে হিসাব কষেছিলেন যে এই বৃষ্টির মেয়াদ কমপক্ষে তিনদিন। তিনি ধারণা করেন, এই তিনদিন অন্তত যুদ্ধ, গোলাগুলি বন্ধ থাকবে। আর তিনিও এই ফাঁকে নিশ্চিন্তে একটু আরাম করতে পারবেন।
০৯। "দেশে একটা কলেজে শহিদ মিনার আর অক্ষত নাই।"- কেন? আলোচনা কর।
উত্তরঃ শহিদ মিনার গুলোকে পাকিস্তানিরা নিজেদের শরীরের কাঁটা মনে করায় মিলিটারিরা সব শহিদ মিনার ধ্বংস করে দিয়েছে।
তাই একটাও শহিদ মিনার আর অক্ষত নেই। শহিদ মিনার ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনা বহন করে। মুক্তিযুদ্ধকালে এটি বাঙালিদের প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রিনসিপ্যাল আফাজ আহমদ পাকিস্তানিদের বোঝায় যে এটা হলো তাদের শরীরের কাঁটা। ফলে গ্রামে-গঞ্জে যেখানেই মিলিটারি গেছে, প্রথমেই শহিদ মিনার ধ্বংস করেছে। তাই একটা স্কুল-কলেজেও আর শহিদ মিনার আস্ত নেই।
১০। "এগুলো হলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা। "কথাটি বুঝিয়ে লিখ।
উত্তরঃ এখানে শরীরের কাঁটা বলতে শহিদ মিনারকে বোঝানো হয়েছে।
প্রিনসিপ্যাল ড. আফাজ পাকিস্তানিদের দোসর ছিলেন। তিনি নানাভাবে পাকিস্তানিদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন। তিনি জানেন ভাষ্য-আন্দোলনের স্মৃতি বহনকারী শহিদ মিনার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করে। বাঙালির জাতীয়তাবোধ প্রকাশ পায় এই শহিদ মিনারগুলোর মাধ্যমে। তাই সকল স্কুল কলেজ থেকে শহিদ মিনার সরিয়ে দিতে পাকিস্তানিদের বুদ্ধি দেন ড. আফাজ
১১। "সত্যি বলেছে? আমার নাম বলেছে?" -নুরুল হুদার এ উত্তেজনার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ছদ্মবেশে আসা মুক্তিযোদ্ধারা মিলিটারিদের হাতে ধরা পরার পর কলেজের টিচারদের মধ্যে নুরুল হুদার নাম বলেছে জানতে পেরে সে উত্তেজিত হয়।
নুরুল হুদার কলেজের অফিসের জন্য যে আলমারি কেনা হয় তা পৌঁছে দিতে মুক্তিযোদ্ধারা কুলির ছদ্মবেশে কলেজে ঢোকে। সেসময় নুরুল হুদার সাথে তাদের একজনের কথা হয়। পরবর্তীতে মিলিটারিদের কাছে ধরা পড়ার পর তারা মিলিটারিদের কাছে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে নুরুল হুদার নাম বলেছে জানতে পেরে সে তার প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের আস্থার পরিচয় পায়। আর এ কারণেই সে মনে মনে উত্তেজিত হয়।
১২। "টুপির তেজ কি পানিতেও লাগল নাকি?"-ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে ভীরু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝেও এক প্রকার তেজ অনুভূত হচ্ছিল। এ অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে।
প্রিনসিপ্যালের ডাকে নুরুল হুদাকে বৃষ্টির মধ্যেই কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হলে তার স্ত্রী তাকে তার মুক্তিযোদ্ধা ছোটো ভাইয়ের রেখে যাওয়া রেইনকোটটি পরিয়ে দেয়। সেই রেইনকোটের টুপিটি ছিল বারান্দা ওয়ালা। সেখান থেকে চুইয়ে পড়া এক ফোটা পানি নুরুল হুদা চেখে দেখে এবং তার মনে হয় তার শ্যালকের মতো তেজ এই পানিতেও পাওয়া যাচ্ছে। সে ভাবে, সে নিজেও যেহেতু রেইনকোট পরে আছে তাহলে তাকেও নিশ্চয়ই তেজোদীপ্ত দেখাচ্ছে।
১৩। নুরুল হুদার কাছে কোন বিষয়টিকে 'ব্লেফ উৎপাত' বলে মনে হয়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ চাবুকের বাড়িকে নুরুল হুদার কাছে স্রেফ উৎপাত বলে মনে হয়।
মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে ভীরু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝে সাহস সঞ্চারিত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা ধরা পড়ার পর কলেজের প্রফেসরদের মধ্যে তার নাম বলেছে শুনে তার ওপর মুক্তিবাহিনীর আস্থা দেখে সে শিহরিত হয়। তাই যখন পাকিস্তানি মিলিটারি তাকে ছাদের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে চাবুক মারে-সেই আঘাতকে তার কাছে স্রেফ উৎপাত বলে মনে হয়।
১৪। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুনরূপে সে ভ্যাবাচ্যাকা খায়।"-কে, কেন ভ্যাবাচ্যাকা খায়?
উত্তরঃ রেইনকোট গায়ে দিয়ে নূরুল হুদার মধ্যে যে পরিবর্তন এসেছে, আয়নায় তা দেখে সে নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খায়। বৃষ্টির মধ্যে কলেজে যেতে হবে বলে নুরুল হুদার স্ত্রী তাকে জোর করে তার ছোটো ভাই মিন্টুর রেখে যাওয়া রেইনকোট পরিয়ে দেয়। রেইনকোট পড়া নুরুল হুদাকে দেখে তার মেয়ে তাকে ছোটোমামার মতো লাগছে বলে জানায় এবং তার পাঁচ বছরের ছেলে সিদ্ধান্ত দেয় যে, সে মুক্তিবাহিনী। এসব শুনে পাকিস্তানিরাও তাকে মুক্তিবাহিনী ভেবে বসে কি-না সেই চিন্তায় নুরুল হুদা ভাবনায় পড়ে যায়। তাই সে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের চেহারা দেখে এবং নিজের নতুন রূপ দেখে সে নিজেও ভ্যাবাচ্যাকা খায়।