প্রতিদান কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রতিদান কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
বিগত বোর্ড পরীক্ষাসমূহের CQ প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। মালেকের ঘর তালেব পুড়িয়ে দেয়। মালেক প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তৎপর হয়। কিন্তু পরে তার এই স্পৃহা পরিবর্তিত হয়। তাকে ক্ষমা করে দেয়। এতে তালেব খুশি হয়ে মালেকের নতুন ঘর বেঁধে দেয়।
(গ) উদ্দীপকে মালেকের সঙ্গে 'প্রতিদান' কবিতার সাদৃশ্য কতটুকু? আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার দিক দিয়ে উদ্দীপকের সাথে 'প্রতিদান' কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে। 'প্রতিদান' কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে পরার্থপরতার মাঝেই তাঁর প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। তাই যে তাঁর ঘর ভাঙ্গে তিনি তার ঘর বেঁধে দেন। যে তাঁর বুকে আঘাত হানেন তিনি তাঁর জন্য কাঁদেন।
কেউ বিষে-ভরা বাণ দিলে তিনি তাকে বুক ভরা গান শোনান। যে তাঁকে পর করে দেয় তাকে আপন করতে তিনি কেঁদে বেড়ান। তার মতে ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে, নিরাপদ পথিবী নির্মাণ করতে পারে। তাই কেবল ক্ষমা করেই কবি শান্ত হননি, সেই সাথে অনিষ্টকারীর উপকার করার কথাও বলেছেন, যা উদ্দীপকের মালেকের চরিত্রেও দৃশ্যমান।
উদ্দীপকের মালেকের ঘর তালেব পুড়িয়ে দেয়। মালেক প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তৎপর হলেও পরে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তালেবকে ক্ষমা করে দিয়ে মহত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। অতএব বলা যায় অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার দিক দিয়ে উদ্দীপকের সাথে 'প্রতিদান' কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
(ঘ) উদ্দীপকের চেতনা এবং 'প্রতিদান' কবিতার মর্মকথা প্রায় একই।"-তুমি কি মনে কর? সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের চেতনা এবং 'প্রতিদান' কবিতার মর্মকথা প্রায় একই। মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকে পরার্থপরতার দিকটি ফুটে উঠেছে। অনিষ্টকারীকে শাস্তি না দিয়ে বরং ক্ষমা করে দেওয়ার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। তালেব মালেকের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও মালেক প্রতিশোধ না নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।
প্রতিদান কবিতার মূলভাবও এই দিকটির সাথে সংগতিপূর্ণ। 'প্রতিদান' কবিতায় কবি যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেটি হল ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত। সমাজ-সংসার বিভেদ হিংসা হানাহানি দ্বারা কলুষিত। এগুলো হটিয়ে মানুষে-মানুষে মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজে শান্তি বিরাজ করবে।
কারণ ভালোবাসাই পারে সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে। কবির মতে অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয় বরং প্রতিদান হিসেবে অনিষ্টকারীকে উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকেই সবচেয়ে বড়ো সত্য হিসেবে মানতে হবে। যা উদ্দীপকেও বিধৃত হয়েছে।
০২। অনুজের হস্ত ধরিয়া নিকটে বসাইয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, ভাই স্থির হও। আমি আমার বিষ দাতাকে চিনি। যাহা হউক ভাই, তাহার নাম আমি কখনোই মুখে আনিব না। তাহার প্রতি আমার রাগ, হিংসাদ্বেষ কিছুই নাই। ঈশ্বরের নামে শপথ করিয়া বলিতেছি, আমার বিষদাতার মুক্তির জন্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিব।
(গ) উদ্দীপকের সঙ্গে 'প্রতিদান' কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে কি? আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের সাথে 'প্রতিদান' কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে। উদ্দীপকের ঘটনায় দেখা যায়, হাসান তার ছোটো ভাইয়ের হাত ধরে নিকটে বসিয়ে তাকে স্থির হতে বললেন। তিনি জানান যে বিষদাতাকে তিনি চেনেন এবং যাই হোক তিনি তার নাম প্রকাশ করবেন না। বিষদাতার প্রতি তার রাগ, হিংসান্বেষ কিছুই নেই।
বরং তিনি বিষদাতার মুক্তির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবেন। এখানে তার ক্ষমার মহানুভবতা প্রকাশিত হয়েছে। 'প্রতিদান' কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে পরার্থপরতার মাঝেই তাঁর প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। তাই যে তার ঘর ভাঙে তিনি তার ঘর বেঁধে দেন। যে তার বুকে আঘাত হানেন তিনি তাঁর জন্য কাঁদেন।
কেউ তাকে বিষে-ভরা বাণ দিলে তিনি তাকে বুক ভরা গান শোনান। যে তাঁকে পর করে দেয় তাকে আপন করতে তিনি কেঁদে বেড়ান। তার মতে ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে, নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে। তাই কেবল ক্ষমা করেই কবি ক্ষান্ত হননি, সেই সাথে অনিষ্টকারীর উপকার করার কথাও তিনি বলেছেন, যা উদ্দীপকে হাসানের চরিত্রেও দৃশ্যমান।
(ঘ) উদ্দীপকের বিষদাতা 'প্রতিদান' কবিতার নিষ্ঠুর মানুষদের প্রতিনিধি মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের বিষদাতা 'প্রতিদান' কবিতার নিষ্ঠুর মানুষদের প্রতিনিধি। মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকে হাসানকে যিনি বিষ দিয়েছিলেন তাকে তিনি চেনেন এবং জানেন। বিষদাতা যে তার অতি আপনজন একথা তার বক্তব্যে স্পষ্ট। কারণ তিনি বলেছেন তিনি তার বিষদাতকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং ঈশ্বরের নিকট তিনি প্রার্থনা করবেন বিষদাতার মুক্তির জন্য।
অথচ নিষ্ঠুর সে ব্যক্তি একবার হাসানের জন্য দুঃখবোধ করেনি, বিষ দানের পূর্বে একবার ও মানবিক চিন্তা করেনি। 'প্রতিদান' কবিতায়ও আমরা এরূপ কিছু নিষ্ঠুর ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তারা কবির ঘর ভেঙে দেয়। তাকে পর করে দেয়। পথের বিরাগী করে ঘুম হরণ করে। তাদের শব্দবাণে জর্জরিত হন কবি।
কিন্তু একবারের জন্যেও কবির মনে তাদের জন্য প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার জাগরণ ঘটেনি। অথচ সমাজ সংসারে বিভেদ- হিংসা- হানাহানি যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যারা এ ধরনের কাজ করে তারা নিঃসন্দেহে অতি নিষ্ঠুর ব্যক্তি। অন্যের অনিষ্টতে কোনো শান্তি নেই। এটি সম্প্রীতি নষ্ট করে। আর একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে সম্প্রীতি নষ্ট করে সমাজে টিকে থাকা যায়না।
পরিবেশ সুস্থ রাখা যায়না। যারা সুস্থ পরিবেশে বাঁচতে চায়না তারা নিষ্ঠুরতার চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। যা উদ্দীপকে বিষদাতার ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের বিষদাতা 'প্রতিদান' কবিতার নিষ্ঠুর মানুষদের প্রতিনিধি।
০৩। যে পথে গিয়েছে তারা কালিদাস, দান্তে ও হোমার
অজেয় রবীন্দ্রনাথ, বেদব্যাস, খৈয়াম, হাফিজ
সুকান্ত-মিল্টন-শেলী অকাতরে ঢেলে মনসিজ
সেই পথে গেছে সেও। এই শান্তি আমার-তোমার।
হে মন, প্রফুল্ল হও। শোনো তার মৃত্যুহীন গান
মানুষ সকল সত্য। এই সত্যে আমি অনির্বাণ।
(গ) উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে 'প্রতিদান' কবিতার সাদৃশ্য দেখাও।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে 'প্রতিদান' কবিতার সাদৃশ্য হল মানবিক পৃথিবী গড়ার আহ্বান। উদ্দীপকে আমরা বেশ কয়েকজন কৃতি মানুষের নাম দেখতে পাই। কালিদাস, দান্তে, হোমার, রবীন্দ্রনাথ, বেদব্যাস, খৈয়াম, হাফিজ প্রমুখ। তাঁরা সকলেই পারস্পরিক শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা ছড়িয়ে গেছেন। কবির মতে এ শান্তি সকলের।
আর এ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মনকে প্রফুল্ল হতে হবে, মানুষকে সত্য বলে মানতে হবে। এই সত্যেই কবি অনির্বাণ। অপরদিকে, 'প্রতিদান' কবিতায় কবিও মানবিক পৃথিবী নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। তাঁর জন্য সবাই যদি সবাইকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে তবে নির্মাণ হতে পারে সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবীর।
প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারলে জীবনের প্রকৃত সত্য মানুষ অনুভব করতে পারবে। সে জীবন হবে সৌহার্দ্য, প্রীতি ও শান্তিতে পরিপূর্ণ। এর উপায় হিসেবে কবি বলেছেন ক্ষুদ্র স্বার্থকে ত্যাগ করতে হবে, অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করতে হবে। অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে করে তোলা সম্ভব সুন্দর ও বাসযোগ্য। তাই মনকে প্রফুল্ল করা অতীব জরুরি। উদ্দীপকের চরণাংশটুকুতেও এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত হয়েছে।
(ঘ) উদ্দীপকের 'এই শাস্তি তোমার আমার' ও 'মানুষ সকল সত্য' অংশই 'প্রতিদান' কবিতার মূল বক্তব্য।"-উদ্ধৃতিটুকু কতখানি যথার্থ? বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের 'এই শান্তি তোমার আমার' ও 'মানুষ সকল সত্য' অংশই 'প্রতিদান' কবিতার মূল বক্তব্য।"- মন্তব্যটি যথার্থ। ( উদ্দীপকের কবিতাংশটিতে কবি সকলকে শান্তির পথে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এই শান্তির পথ সুন্দর পৃথিবী নির্মাণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কারণ মানুষের চেয়ে বড়ো সত্য আর কিছু হতে পারে না। মানুষে মানুষে লড়াই হলে পৃথিবী কলুষিত হবে। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষকে সত্য বলে জানতে হবে।
'প্রতিদান' কবিতায় কবি যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেটি হল ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত। সমাজ-সংসার বিভেদ- হিংসা-হানাহানি দ্বারা কলুষিত। এগুলো হটিয়ে মানুষে মানুষে মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজে শান্তি বিরাজ করবে। কারণ ভালোবাসাই পারে সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে।
কবির মতে অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয় বরং প্রতিদান হিসেবে অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকেই সবচেয়ে বড়ো সত্য হিসেবে মানতে হবে। যা উদ্দীপকেও বিধৃত হয়েছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের 'এই শান্তি তোমার আমার' ও 'মানুষ সকল সত্য' অংশই 'প্রতিদান' কবিতার মূল বক্তব্য।
০৪। নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল।
গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান
কাঠ-দগ্ধ হয়ে করে পরে অন্নদান।
স্বর্ণ করে নিজ রূপে অপরে শোভিত,
বংশী করে নিজ সুরে অপরে মোহিত।
শস্য জন্মাইয়া নাহি খায় জল ধরে
সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত তরে।
(গ) উদ্দীপকে 'প্রতিদান' কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকে প্রতিদান কবিতার যে দিকটি প্রকাশিত হয়েছে তা হল ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নিজেকে নিবেদন করা। প্রতিদান কবিতায় কবির পরার্থপর চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। যে কবিকে বিষে ভরা বাণ দিয়েছে, কবি তাকে বুক ভরা গান দিতে চেয়েছেন, কাঁটা পেয়ে তিনি ফুল দান করতে চেয়েছেন। তিনি বুঝিয়েছেন, পরার্থপরতাই জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
অপরের স্বার্থে আত্মবিসর্জনকারী ব্যক্তিই প্রকৃত সুখী ব্যক্তি। নিজের সকল স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে অন্যের জন্য নিবেদন করাই প্রকৃত মনুষ্যত্ব। উদ্দীপকে আমরা দেখি নদী কখনো নিজের জল পান করেনা। নদীর জল পান করে পথিক বা লোকজন তৃপ্ত হয়। বৃক্ষ কখনো নিজের ফল খায়না। অন্যরা সে ফলের স্বাদ গ্রহণ করে।
ঠিক একইভাবে গাভী যেমন নিজের দুধ পান করেনা তেমনি স্বর্ণ নিজের রূপকে শোভিত করে না। এরা নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে অপরের জন্য। পরার্থপরতার মাধ্যমেই এরা জীবনের প্রকৃত সুখ খুঁজে পায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে প্রতিদান কবিতার যে দিকটি প্রকাশিত হয়েছে তা হল ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নিজেকে নিবেদন করা।
(ঘ) “উদ্দীপকের 'সাধু' 'প্রতিদান' কবিতার কবির আদর্শ" মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ (ঘ) 'উদ্দীপকে সাধুজন 'প্রতিদান' কবিতায় কবির কাঙ্ক্ষিত মানুষ" উক্তিটি যথার্থ। প্রতিদান কবিতায় কবি সমাজ সংসারে বিদ্যমান হিংসা বিভেদ, বৈষম্য, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা দূর করতে চেয়েছেন, সুন্দর সমাজ তৈরি করতে চেয়েছেন। তার প্রতি কেউ অন্যায়,
অবিচার আর হিংসা করলেও তিনি তাকে বুকে টেনে নেন। কারণ তিনি সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের পৃথিবী প্রত্যাশা করেন। কবি সমাজের সকল মানুষকে এই সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের পথে আসার আহ্বান করেছেন। এমন একজন মানুষ হয়ে গড়ে উঠেতে চেয়েছেন যার প্রাপ্তিতে নয়, বরং পরোপকারের মাধ্যমে প্রকৃত সুখ অনুভূত হয়।
উদ্দীপকের সাধুজন এমনই একজন ব্যক্তি। যার ঐশ্বর্য শুধু অন্যের উপকার করে। যিনি পরের উপকারে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। যার সৌন্দর্য প্রকাশ পায় পরের উপকার করে। এ সৌন্দর্য সত্য এবং সুন্দর। কল্যাণময় পৃথিবী রচনায় যার কোনো তুলনা হয় না। অতএব, এ থেকে বোঝা যায় যে, উদ্দীপকে সাধুজন প্রতিদান কবিতায় কবির কাঙ্ক্ষিত মানুষ।
CQ জ্ঞানমূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। 'প্রতিদান' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'প্রতিদান' শব্দের অর্থ দানের বদলে দান বা প্রত্যুপকার।
০২। ' নিরন্তর' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'নিরন্তর' শব্দের অর্থ নিয়ত বা অবিরাম।
০৩। 'বাণ ' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'বাণ' শব্দের অর্থ শব্দ/কথা/ধ্বনি।
০৪। 'মালঞ্চ' অর্থ কী?
উত্তরঃ 'মালঞ্চ' অর্থ ফুলের বাগান।
০৫। 'নকসী কাঁথার মাঠ' কী ধরনের রচনা?
উত্তরঃ নকসী কাঁথার মাঠ হল কাব্যগ্রন্থ।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
০১। কবি দীঘল রজনী জেগে থাকেন কেন?
উত্তরঃ কবি দীঘল রজনী জেগে থাকেন যে তার ঘুম হরণ করেছে তার জন্য।
'প্রতিদান' কবিতার মূল বক্তব্যই হল ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতা। ঘুম হরণ করা এখানে প্রতীকী অর্থে অন্যের অনিষ্ট সাধনের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে। কিন্তু কবি তার প্রতিদানে তার জন্য দীঘল রজনী জেগে থাকেন। সুন্দর, বাসযোগ্য পৃথিবী স্থাপন করতে চান বলে। প্রতিশোধ নেয়ার মানসিকতা কবির মাঝে অনুপস্থিত।
০২। যে কবির ঘর ভেঙেছে, কবি তার ঘর বাঁধতে চান কেন?
উত্তরঃ যে কবির ঘর ভেঙেছে, কবি তার ঘর বাঁধতে চান কারণ ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে তিনি অন্যের উপকার করতে চান। সমাজ সংসারে সবাই বিভেদ-হিংসা হানাহানিতে বিশ্বাসী। এর মধ্যেও কবির কণ্ঠে প্রতিহিংসার বদলে পরার্থপরতার বাণী ধ্বনিত হয়। তাই যে তার ঘর ভেঙেছে কবি তার ঘর বেঁধে দিয়ে তাকে সাহায্য করতে চান।
০৩। প্রতিদান' কবিতায় কবির কণ্ঠে কোন আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ 'প্রতিদান' কবিতায় কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ- প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা। আমাদের সমাজে সবাই একে অপরের প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে পড়ে যে কোনো ঘটনায়। ক্ষমা করবার মনোভাব অনেকাংশেই কম। বিভেদ, হিংসা হানাহানিতে সমাজ পরিপূর্ণ। তাই কবির আশা সকলেই এই প্রতিশোধ প্রতিহিংসার বলয় থেকে বেরিয়ে এসে সম্প্রীতির সৃষ্টি করবে।
০৪। কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ 'কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর' বলতে বুঝানো হয়েছে কবি কাঁটার আঘাত পেলেও এর বিনিময়ে ফুল দান করতে চান।
কারণ প্রতিশোধ কখনো পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলতে পারেনা বলে কবি বিশ্বাস করেন। তাই অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করে নয়, বরং তার উপকার সাধনের মাধ্যমে কবি এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন।