ই কমার্স ব্যবসা বাণিজ্যকে সহজ করেছে ব্যাখ্যা কর
ই কমার্স ব্যবসা বাণিজ্যকে সহজ করেছে ব্যাখ্যা কর আজকাল ঘরে বসেই মানুষ ব্যবসা করছে। ব্যবসা করার এত সহজ মাধ্যম এর আগে কখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আজকাল মানুষ বিনা পুঁজিতে অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে।
অনলাইন ব্যবসা যে কোনো ধরনেরই হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আজকাল মানুষের সবথেকে বেশি বিচরণ তাই মানুষ সহজেই কাস্টমার খুঁজে পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবসার নামে একটা আইডি বা পেজ খুলে নিজের পণ্যের প্রচারণা চালিয়ে থাকে।
ই কমার্স কি
ই কমার্স সাইট ডেভেলপমেন্ট অনলাইনে ব্যবসার জন্য দারুণ একটা মাধ্যম। এখানে নিজেদের তেমন কিছু করতেও হয় না। ই কমার্স সাইটের মাধ্যমে পণ্য, সেবা, চাকরি সকল কিছুই আদান-প্রদান করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু বিশ্বস্ততার। তবে যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই বিশ্বস্ততা বিশাল একটা ব্যাপার। অনেকেই ই কমার্স সাইটে যাচ্ছে তাই জিনিসপত্র দিয়ে থাকে। এসব করলে আগানো কঠিন হবে, কাজ হতে হবে একদম নিখুঁত এবং নিখাদ।
ই কমার্স কাকে বলে
ইলেকট্রনিক কমার্সকেই সাধারণ অর্থে ই-কমার্স (e-commerce or eCommerce) বলা হয়। ইন্টারনেট বা অন্য কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়, সরবরাহ, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি কাজকে সম্মিলিতভাবে ই-কমার্স বলে। পণ্য বা সেবার উপাদান, মার্কেটিং, ডেলিভারি, সার্ভিসিং, মূল্য পরিশোধের অনলাইন প্রক্রিয়াসমূহ সামগ্রিকভাবে ইলেকট্রনিক কমার্সের অন্তর্ভুক্ত।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং a to Z
কোনো গ্রাহক প্রচারণা দেখে আকৃষ্ট হলে পণ্য ক্রয় করে সেটার মূল্যও ডিজিটালভাবেই পরিশোধ সম্ভব। যথাসময়ে ব্যবসায়ীরা কুরিয়ার সার্ভিস বা হোম ডেলিভারি করার মাধ্যমে গ্রাহকের অর্ডারকৃত পণ্য তার কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে দেয়। এসকল সুবিধার কারণে দিন দিন ই-কমার্স ব্যবসায়ের প্রচুর বিস্তার লাভ করছে। দিন দিন অনলাইন থেকে পণ্য বা সেবা গ্রহণকারি গ্রাহকের সংখ্যা লক্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেদিন হয়তো আর খুব বেশি দূরে না, যেদিন আমাদের দেশের সব শপ ধীরে ধীরে পরিণত হবে একেকটি অনলাইন স্টোরে।
ই-কমার্স সেবার তালিকা
পণ্য বিক্রির প্লাটফর্ম অনলাইনে জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। এটার মাধ্যমে খুব দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব। নিজেদের রেস্টুরেন্ট না থেকেও ফুডপান্ডা বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো রেস্টুরেন্ট আর নিজেদের গাড়ি না ব্যবহার না করে উবার সবচেয়ে বড়ো গাড়ির মার্কেট। আসলে সবসময়ই যে টাকার প্রয়োজন হয় তা নয়।
অনেক সময় শুধুমাত্র আইডিয়াই বদলে দিতে পারে জীবন। একটা চাকরি জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে, ব্যবসা হয়তো টাকা দিতে পারে কিন্তু একটা আইডিয়া জীবনকে বদলে দিতে পারে। তাই হাওয়ার পিছনে না ঘুরে একটা নির্দিষ্ট জিনিস টার্গেট করা উচিত।
ই কমার্স ব্যবসা বাণিজ্যকে সহজ করেছে ব্যাখ্যা কর
ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা (B2B):
সাধারণত এটি সম্পাদিত হয় ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা অথবা একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। আমাদের দেশে একটা বড় অংশ ইলেকট্রনিক কমার্স ব্যবসা- থেকে-ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত।
ব্যবসা-থেকে-গ্রাহক/ভোক্তা (B2C):
এই প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের মধ্যে অর্থাৎ কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যখন তার পণ্যসেবা কোনো গ্রাহক বা ভোক্তাকে পৌঁছে দেয় তখন আমরা একে ব্যবসা-থেকে- গ্রাহক/ভোক্তা বলে থাকি।
ব্যবসা-থেকে-সরকার (B2G):
ব্যবসা-থেকে-সরকার ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় খাতের মধ্যে। এটি সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কেনা/বেচা, লাইসেন্সসংক্রান্ত কার্যাবলি, কর প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ব্যবসা করে কোটিপতি
গ্রাহক-থেকে-গ্রাহক (C2C):
গ্রাহক-থেকে-গ্রাহক অথবা একাধিক ব্যক্তি ও গ্রাহকের মধ্যে যখন কোনো ইলেকট্রনিক বাণিজ্য সম্পাদিত হয় আমরা তাকে গ্রাহক-থেকে-গ্রাহক (C2C) বলে থাকি। ইলেকট্রনিক কমার্স ও অনলাইন নিলামের মাধ্যমে সাধারণত এই ধরনের বাণিজ্য হয়।
গ্রাহক থেকে সরকার (C2G)
কখনো সরাসরি জনগণের কাছ থেকে সরকার বিভিন্ন সেবার বিনিময় ফি বা কর নিয়ে থাকে। ডিজিটাল গভর্নেন্স-এর আওতার এ ধরনের সেবা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ই কমার্স এর বৈশিষ্ট্য
পরিকল্পনাঃ যেকোনো ব্যবসা শুরুর আগে অবশ্যই সেই ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। যে ব্যবসা আমরা শুরু করতে চাই সেই ব্যবসা সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি, ব্যবসা করার জন্য যে মূলধন প্রয়োজন সেই পরিমাণ মূলধন আমাদের আছে কিনা এবং আমাদের পার্টনার, কর্মচারী সবার কাজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কে কোন কাজ সম্পাদন করবে সেটি আগে থেকে ঠিক করে নিতে হবে। কারণ ই-কমার্স ব্যবসা এমন যে, একা একা করা সম্ভব নয়, সবাই মিলে এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আবশ্যক।
আরো পড়ুনঃ মার্কেটিং করার কৌশল
সঠিক পণ্য নির্বাচনঃ ই-কমার্স ব্যবসার জন্য পণ্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ আপনি কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করতে চান সেটি আপনি নিজে ঠিক করুন। যে পণ্যগুলো সম্পর্কে আপনি ভালো জানেন এবং বোঝেন সেই পণ্যগুলো নিয়েই কাজ করা উচিৎ। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে এমন পণ্য নির্বাচন করতে হবে যে পণ্যগুলো মানুষের চাহিদার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পণ্যগুলোর উৎসঃ আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করতে চান সেই পণ্যগুলো আপনি কিভাবে পাবেন এবং ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবেন সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে আপনার পণ্য সরবরাহ যদি সঠিকভাবে করতে না পারেন তাহলে আপনার ব্যবসার উপর একটা খারাপ প্রভাব পড়বে, পরবর্তীতে ওই ক্রেতা আর ওই পণ্যটি অর্ডার করবেন না। তাই পণ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
বাজার বিশ্লেষণঃ চাহিদার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সবসময় কাজ করা উচিৎ। বাজারে যে পণ্যগুলোর চাহিদা সব থেকে বেশি সেই পণ্যগুলো নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এছাড়া নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে পারেন। এজন্য অবশ্যই মানুষের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন নতুন কোনো ইলেক্ট্রনিক পণ্য, হাতের তৈরি গহনা, হাতের কাজ, প্রসাধনী, দেশের বিভিন্ন স্থানের বিখ্যাত খাবার, পোশাক নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
পণ্য ও গুণগতমানঃ একটা সফল ব্যবসা নির্ভর করে পণ্য এবং তার গুণগতমান এবং সেবার উপর। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আমি যে পণ্যটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি সেই পণ্যটির গুণগতমান কেমন এবং ক্রেতা যে পণ্যটি অর্ডার করেছে সঠিক পণ্যটিই আপনি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
ইকমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতাঃ যেকোনো ব্যবসায় প্রতিযোগিতা থাকবেই, কারণ কোনো ব্যবসায়ই আপনি একা একা করতে পারবেন না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকবে যাদের সঙ্গে আপনার ব্যবসার মিল থাকবে এবং তাদের সঙ্গেই আপনার প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নিজের পণ্যগুলোর মান কমিয়ে বা মূল্য কমিয়ে বা বাড়িয়ে ব্যবসার ক্ষতি করা যাবে না। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করবেন না যেন মার্কেট নষ্ট হয়। আপনার যেমন অধিকার আছে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার তেমনি প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না এই বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা জরুরি।
বিজ্ঞাপন এবং বিক্রয়ঃ মার্কেটিং বা বিজ্ঞাপন একটি ব্যবসাকে প্রসারের জন্য অপরিহার্য বিষয়, কারণ আপনি অবশ্যই চাইবেন যে আপনার পণ্য সম্পর্কে সবাই অবগত হোক। আপনাকে এবং আপনার ব্যবসা সম্পর্ক সবাইকে অবহিত করা অপরিহার্য। মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন মাধ্যম এবং কৌশল রয়েছে যা সম্পর্কে আপনার অবহিত থাকতে হবে। আপনার প্রোডাক্টগুলোর সঠিক বিজ্ঞাপন/মার্কেটিং আপনার ব্যবসাকে সফল করবে এবং মুনাফা বাড়বে। মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম আছে যেমন বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ, সংবাদপত্র, টিভিসহ আরো অনেক মাধ্যমে আপনার পণ্য এবং ব্যবসা সবাইকে অবহিত করা সম্ভব, কারণ আপনার যদি ক্রেতা না থাকে তাহলে আপনার পণ্য বিক্রি হবে না।
সঠিক প্রযুক্তি নির্বাচনঃ ই-কমার্স বিজনেস করতে গেলে সবার প্রথম যে বিষয়টি মাথায় আসে তা হলো একটি ওয়েবসাইট, যা ব্যবহার করে সবাই কেনাকাটা করতে পারবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্লাটফর্ম এবং সঠিক প্রযুক্তি নির্বাচন করা। প্রযুক্তির ব্যবহার সঠিকভাবে জানতে এবং করতে হবে। ই-কমার্স বিজনেস মূলত নির্ভর করে প্লাটফর্ম এবং আপনার ওয়েবসাইট কতটুকু সুসজ্জিত তার উপর।
মনে করুন আপনার একটি দোকান আছে যেখানে অনেক ধরনের পণ্য আছে। কিন্তু আপনি আপনার পণ্যগুলোকে যদি সুসজ্জিত করে সাজিয়ে না রাখেন তাহলে ক্রেতা আপনার পণ্যটি খুঁজে পাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনার বিক্রি কম হবে। ই-কমার্স বিজনেস ঠিক তেমনই আপনি আপনার দোকানটিকে যেভাবে সাজিয়ে রাখেন ঠিক তেমন করে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটকে সাজিয়ে রাখতে হবে যেন একজন ক্রেতা আপনার ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করলে কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি খুঁজে পায়।
ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম
চাল-ডালের পর এবার গরু। অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে নতুন নতুন ক্রেতা তৈরি হচ্ছে। আসছে নতুন বিনিয়োগ। করপোরেটরা জোর দিচ্ছে অনলাইন কেনাকাটার ওপর। আলু-পটোলও যে অনলাইনে কেনা যায়, তা এই করোনাকাল শিখিয়ে দিল দেশের মানুষকে। বিশেষ করে রাজধানীবাসীকে। এখন অনেকেই অনলাইনে কাঁচাবাজার সারছেন।
ওষুধ কিনছেন। ইলেকট্রনিকস পণ্য, পোশাক, গৃহস্থালির বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার প্রবণতা আগেই ছিল, যেখানে ভাটা পড়ে এপ্রিল-মে মাসে, জুনে আবার গতি ফিরেছে। এমনকি যাঁরা এত দিন গরুর হাটে গিয়ে শিং দেখে, দাঁত দেখে, সঙ্গে দু- একটা গুঁতো খেয়ে গরু কিনতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাঁদের একাংশ অনলাইনেই গরু দেখা শুরু করেছেন।
ঘরে বসে পছন্দ করছেন খামারে থাকা গরু। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে সুসময় দেখছেন ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তারা। অনলাইনে কেনা ও লেনদেনের যে অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে, তার একটি অংশ ভবিষ্যতেও থাকবে। ক্রেতাদের একটা বড় অংশের অনলাইনে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা ছিল না। করোনাকালে তাঁরা অনলাইনে পণ্য কিনেছেন।
ফলে অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে তাঁদের একটা অংশ অনলাইনের ক্রেতা হিসেবে থাকবেন। সবার তো ক্রেডিট কার্ড নেই। তবে অনেকেরই মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব খোলা আছে। আমরা দেখছি, এখন আমাদের লেনদেনের ৪০ শতাংশের মতো হচ্ছে এমএফএসের মাধ্যমে। এটা করোনার আগে ২০ শতাংশ ছিল।
আরো পড়ুনঃ গেম খেলে টাকা আয় বিকাশে 2024
দেশের করপোরেটগুলোও বুঝতে পেরেছে যে আগামী দিনগুলোতে অনলাইনভিত্তিক বাজার বড় হবে। এ জন্য তারাও জোর দিচ্ছে অনলাইনভিত্তিক মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হতে। ফলে একটা প্রশ্ন সামনে আসছে যে ঢাকার অভিজাত এলাকায় বিপুল ব্যয়ে ভবনের স্পেস বা জায়গা ভাড়া নিয়ে দোকান খোলার প্রবণতা কি আগের মতো থাকবে, নাকি সেখান থেকে খরচ কমিয়ে ক্রেতাদের অনলাইনে আরেকটু কম দামে পণ্য সরবরাহ করবে করপোরেটরা।
দেশের মানুষ যদি কোরবানির গরু অনলাইনে কিনতে পারেন, তাহলে বাকি থাকবে কী? সুদিন আসছে কি না, দেখা যাবে আগামী দিনে। মনে রাখতে হবে, অন্য খাত যখন কর্মী ছাঁটাইয়ের চিন্তায়, ই-কমার্স তখন লোক নিয়োগ করছে। সবশেষে বড় কথা হচ্ছে, দেশে কোভিড সমস্যায় যখন সারাদেশ লকডাউন, ছোট বড় সব শপিং মল বন্ধ; ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির তখন অনলাইন বা ইকমার্স ব্যবসা চালু ছিল। কারণ এখানে মানুষের ভীড় নেই, বাসা থেকে মার্কেটে আসতে হয় না এবং সম্পূর্ণ সাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য কেনা-বেচা করা যায়।
ই কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা
ই-কমার্সের সুবিধাঃ গতানুগতিক ব্যবসায় মার্কেট বা বাজার হলো একটি নির্দিষ্ট জায়গা, যেখানে পণ্য কেনা-বেচা করা হয়। কিন্তু ই-কমার্সে বা অনলাইনে ব্যবসায় নির্দিষ্ট কোনো জায়গার প্রয়োজন নেই, এটি হলো সর্বব্যাপী। অর্থাৎ এটি সবসময় সব জায়গায় সহজলভ্য।
- ই-কমার্স ব্যবসা কোনো প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
- দ্রুত ক্রয়/বিক্রয় পদ্ধতি করা যায় এবং সহজে পণ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
- ব্যবসা পরিচালনায় খরচ খুব কম হয়।
- আর্থিক লেনদেনের খরচ কম হয়ে থাকে।
- ই-কমার্সের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিভিন্ন খরচ যেমন- পণ্য তৈরি করা, বিতরণ করা, সংরক্ষণ করা ইত্যাদি কার্যক্রমের খরচ ব্যাপকভাবে কমিয়ে থাকে।
- ই-কমার্স ব্যবসায় ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে খুব সহজেই ক্রেতার কাছে পৌঁছা যায়।
- ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে সহজে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করা যায়।
- ই-কমার্স কেনাকাটা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ওয়ার্কিং টাইম সেভ করে থাকে।
- ই-কমার্স ব্যবসায় অতি দ্রুত পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
- মোবাইলে বা ল্যাপটপে বা অন্য কোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে, যেকোনো জায়গায় বসে দ্রব্য কেনা-বেচা করা যায়।
- ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসা একটি নির্দিষ্ট টেকনিক্যাল মানদণ্ড মেনে চলে, যার অর্থ একে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বলে, যা সব দেশে সব জাতি দ্বারা গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত। পক্ষান্তরে গতানুগতিক ব্যবসার মান এলাকা থেকে এলাকা বা দেশভেদে পরিবর্তীত হয়।
- ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পণ্যের বিজ্ঞাপন। ইন্টারনেটের সাহায্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোনো পণ্যের স্থিরচিত্র, অভিজ্ঞ, ভিডিও, এনিমেশনের সাহায্যে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এমনকি ইউটিউবেও আজকাল খুব কম খরচে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাচ্ছে। এতে করে পণ্য বিপণনে যেমন কম খরচ পড়ে তেমনি আরও অধিক গ্রাহককে আকৃষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে।
- ই-কমার্স ব্যবসায়িক ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি ক্রেতার জন্য কেনাকাটার খরচ কমিয়ে দিয়েছে এবং কেনাকাটার গতির সঞ্চার করেছে।
- ই-কমার্স ব্যবসায় কাস্টমারকে উন্নত সার্ভিস প্রদানের সুবিধা দিয়ে থাকে।
- ই-কমার্স বাজারে নতুন ধরনের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করছে। যেমন- মাল্টিমিডিয়া ডেভেলপার, ডেটাবেস ডিজাইনার, প্রোগ্রামার ইত্যাদি
- ই-কমার্সের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহ পরস্পরের ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতি, সার্ভিস এবং মূল্য সম্বন্ধে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই জানতে পারে। ফলে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়ে থাকে।
- ই-কমার্স (e-commerce) ব্যবসায়ে স্বল্প সময়ে বাজার যাচাইয়ের সুবিধা প্রদান করে থাকে এবং তাৎক্ষণিক অর্ডার প্রদানের সুবিধা প্রদান করে থাকে।
ই-কমার্স ব্যবসায় যেমন সুবিধা আছে তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে। আসুন এবার আলোচনা করা যাক ই-কমার্স।
আরো পড়ুনঃ অনলাইন টাইপিং জব ডেইলি পেমেন্ট
ই-কমার্সের অসুবিধাঃ
- ব্যবসায়ে দক্ষ লোকবলের অভাব দেখা দিয়ে থাকে।
- ব্যবসায়ে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
- দূরবর্তী স্থানের অর্ডার ক্ষেত্রবিশেষ ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
- ব্যবসায়ে মাত্রাতিরিক্ত অর্ডার হলে সরবরাহের সমস্যা হয়।
- ব্যবসায়ে আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তার অভাব আছে।
- ক্রেতা বা বিক্রেতা অনেক সময় ই-কমার্সের কার্যক্রমের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না।
- ব্যবসায়ে আইন প্রণয়নকারী এবং প্রয়োগকারী উভয় পক্ষের জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ অত্যন্ত জটিল এবং কষ্টসাধ্য বিষয়।
- ই-কমার্সের জন্য অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক খরচাদি বেশি হয়ে থাকে এবং অভিজ্ঞতার অভাবে পণ্য ও সেবা পেতে দেরি হয়ে থাকে।
অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনার অন্যতম বড় অন্তরায় হলো ক্রেতার বিশ্বাস। কারণ বিক্রেতা একধরনের পণ্য প্রদর্শন করে আরেক ধরনের পণ্যও ক্রেতাকে ডেলিভারি দিতে পারে। আজকাল অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অনলাইনে ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট করে গ্রাহককে আকৃষ্ট করার জন্য চমৎকার সব বিপনণ কৌশল অবলম্বন করে।
তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নিয়ে থাকে এবং কিছু দিন পরে ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আজকাল বারবার এই পদ্ধতি অবলম্বন করে ক্রেতাকে ধোঁকা দিচ্ছে। যা-ই হোক, এসব দিক বাদ দিলে বর্তমানে অনলাইন ব্যবসা অন্যতম সেরা এক ব্যবসায়িক বাজার হিসেবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
এই আধুনিক সময়ে সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনলাইন ব্যবসাকে একটা বড় ব্যবসায়িক জায়গা হিসেবে বিবেচনা করছে। তাই অনেকেই অফলাইনে ব্যবসা করার পাশাপাশি অনলাইনেও ব্যবসা পরিচালনা করছে। কেউ কেউ আবার অনলাইনকেই তাদের ব্যবসার প্রধান বাজার হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। সে যাই হোক না কেন নতুন এই ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে বিক্রেতা- ক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা ঠিক থাকলে এই ব্যবসায়িক বাজার হয়ে উঠতে পারে সবথেকে ব্যবসার সেরা মাধ্যম।