লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর

বিগত বোর্ড পরীক্ষাসমূহের CQ প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর

০১। নারিপা গ্রামের একটা ভালা রাজা মেরামতের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নিকট ধর্ণা দিতে দিতে গ্রামের মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামেরই ছেলে বুলবুল একদিন গ্রামের ছেলেদের নিয়ে খাল থেকে মাটি তুলে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করে দিল। চেয়ারম্যান এসে ধমকের সুবে বুলবুলকে বললেন, "তুমি কার মাটি কার রাস্তায় ফেলছো? অনুমতি নিয়েছো? খালের পাড় ভেষে জমিজমা ঘরবাড়ি নষ্ট হবে না? এমন পাপের কাজে ছেলেদের জড়ালে কেন, ওদের মা-বাবার অনুমতি নিয়েছো? শিশুশ্রম নিষিদ্ধ জানো না? ভুল স্বীকার করে এ কাজে বিরত না হলে তোমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে এসেছো?"

(গ) উদ্দীপকের সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের তুল্য ঘটনার বর্ণনা দাও।


উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের তুল্য ঘটনাটি হচ্ছে-আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া এবং মজিদ ও খালেক ব্যাপারীর দ্বারা বাধাগ্রস্ত হওয়া।
'লালসালু' উপন্যাসে মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করে। পড়াশোনা করে সে কিছুদিন পাটের আড়তে চাকরি করেছে। পড়াশুনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য দস্তুর মতো চাঁদা তোলার চেষ্টা করতে লাগলো এবং করিমগঞ্জে গিয়ে কাওকে দিয়ে একটা জোরালো গোছের আবেদনপত্র লিখে সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিল। 
কিন্তু নিজের স্বার্থে আঘাত লাগায় মজিদ, খালেক ব্যাপারী ও গ্রামের অন্যান্য মুরুব্বিরা মিলে তার স্কুল বানানোর প্রচেষ্টা বানচাল করে দেয় এবং তাকে অপমান করে। অন্যদিকে উদ্দীপকের নারিশা গ্রামের ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত করার জন্য বুলবুল একটি ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করলে তাকে চেয়ারম্যানের দ্বারা ভর্ৎসনার শিকার হতে হয়। 

সুতরাং, 'লালসালু' উপন্যাসের আক্কাস এবং উদ্দীপকের বুলবুল দুজনেই সমাজ সংস্কার করতে গিয়ে ভর্ৎসনার শিকার হয়েছে। অতএব আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়াই হচ্ছে উদ্দীপকের সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের তুল্য ঘটনা।

(ঘ) উদ্দীপকের বুলবুলের কার্যক্রম আইন বিরোধী নয়, কর্তৃত্ববাদীদের জন্য অশনি সংকেত।'-'লালসালু' উপন্যাসের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।


উত্তরঃ (ঘ) 'উদ্দীপকের বুলবুলের কার্যক্রম আইন বিরোধী নয়, কর্তৃত্ববাদীদের জন্য অশনি সংকেত।' মন্তব্যটি যথার্থ।
লালসালু উপন্যাসের আক্কাস পড়াশোনা শেষ করে বেশ কিছুদিন চাকরি করে কিছু টাকা জমিয়েছে। সে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। গ্রামের সব মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলোকে ছড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু মানুষ শিক্ষিত হয়ে গেলে মজিদের মিথ্যাচার ও ভণ্ডামির রাজত্বে আঘাত লাগবে-এই ভয়ে মজিদ ও গ্রামের অন্যান্য প্রভাবশালীরা তার স্কুল প্রতিষ্ঠার এই মহান উদ্যোগকে বানচাল করে দেয়। 

তাকে অপমানের শিকার হতে হয়। অন্যদিকে উদ্দীপকের বুলবুল একটি ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত করার জন্য গ্রাম প্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। তাই সে নিজে উদ্যোগ নিয়ে গ্রামের কিছু ছেলেদের নিয়ে কাজটি সম্পাদন করতে গেলে চেয়ারম্যানের বাধার শিকার হয়। লালসালু উপন্যাসে আক্কাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। 

সে যদি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হত তাহলে মজিদের ধর্মীয় গোঁড়ামি, মিথ্যাচার ও ভণ্ডামির উপর প্রতিষ্ঠা করা সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যেত। অন্যদিকে উদ্দীপকের বুলবুল যদি রাস্তা মেরামতের কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারতো তাহলে গ্রামবাসীও বুঝতে পারতো কোনো কাজের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নিকট ধরনা দেওয়ার দরকার নেই। 

সমাজের সবাই যদি এক হয়ে যেকোনো কাজের উদ্যোগ নেয় তাহলে কর্তৃত্ববাদীরা সেখানে অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। ফলে তাদের জন্য এটি হবে অশনি সংকেত। সুতরাং, উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় লালসালু উপন্যাসের আক্কাস এবং উদ্দীপকের বুলবুল নতুন এক যুগের শুভ সুচনা করার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাই এ বিষয়টি যুক্তিক যে উদ্দীপকের বুলবুলের কার্যক্রম আইন বিরোধী নয়, কর্তৃত্ববাদীদের অশনি সংকেত।

০২। রহিম উদ্দিন মধ্যপ্রাচির গিয়ে অনেক টাকা উপার্জন করেন। এলাকার তাঁর গানে রাজা, সেতু, নলজিন, সন্দির নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু তাঁর সনে সুখ দেই। তিনি নিসান। অনেকেই তাঁকে বিজয় বিয়ে করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি বিজীর নিয়ে করেননি।

(গ) উদ্দীপকের রহিম উদ্দীনের সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের খালেক ব্যাপারী চরিত্রের কতটুকু মিল ও অসিল আছে বলে তুমি বলে কর? আলোচনা কর।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের রহিম উদ্দীনের সাথে লালসালু' উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর চরিত্রের মিল আছে, অনেক টাকা উপার্জন ও নিঃসন্তান থাকার দিক থেকে এবং আমিল রয়েছে সমাজ সংস্কারমূলক কাজ ও দ্বিতীয় বিয়ে না করার দিক থেকে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে রহিম উদ্দীন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে অনেক টাকা উপার্জন করেন। 

এলাকায় তার দানে রাস্তা, সেতু, মসজিদ, মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু নিঃসন্তান থাকার কারণে মনে সুখ নেই। অনেকেই তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করবার পরামর্শ দিলেও তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। 'লালসালু' উপন্যাসে খালেক ব্যাপারী চরিত্রটি উপন্যাসের অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র। ভূস্বামী ও প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী হওয়ায় তার হাতে ছিল মহব্বতনগরের নেতৃত্ব। 
কিন্তু কোনো ধরনের সমাজ সংস্কার কাজে তাকে পাওয়া যায় না। ধর্মব্যবসায়ীকে সাহায্য করে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করতেন তিনি। ব্যক্তি-জীবনে তিনিও ছিলেন নিঃসন্তান। যার কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু উদ্দীপকের রহিম উদ্দীন নিঃসন্তান থাকলেও দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। বরং এলাকার উন্নয়নে নিজের অর্থ ব্যয় করেছেন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের রহিম উদ্দীনের সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর মিল ও অমিল উভয়ই বিদ্যমান।

(ঘ) উদ্দীপকে প্রতিমাণিত ইতিবাচক জীবন চেকরা 'পালসালু' উপবাসে অনুপস্থিত।'-উক্তিটি বিদ্রোণ কর।


উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকে প্রতিফলিত ইতিবাচক জীবন চেতনা অর্থাৎ 'সমাজ সংস্কারের দিকটি' 'লালসালু' উপন্যাসে অনুপস্থিত।" লালসালু উপন্যাসে মজিদ জীবনধারণের জন্য মহব্বতনগর গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে সে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়। কিন্তু প্রতিবারই সমাজ সংস্কারের কথা উঠলে সে তার বিপক্ষে কথা বলে। সে নিজে সমাজ সংস্কারের কাজ তো করেই না বরং অন্য কেউ করতে গেলেও তার বিপক্ষে কথা বলে এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। 

গ্রামের ছেলে আক্কাস কিছুদিন বাইরে চাকরি করে কিছু টাকা পয়সা জমিয়েছে। সে গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু মজিদ গ্রামের অন্যদের নিয়ে তাতে বাধা প্রদান করে। কারণ এখানে তার ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত। গ্রামের মানুষের উন্নয়ন হলে তার ধর্মব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে। শিক্ষার আলো না পৌঁছালে কোনো সমাজই অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে না। 

উপন্যাসটিতে ইতিবাচক জীবনব্যবস্থা পুরোপুরি অনুপস্থিত। অন্যদিকে উদ্দীপকের রহিম উদ্দীন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে প্রচুর টাকা পয়সা উপার্জন করেছেন। এলাকায় তাঁর দানে রাস্তা, সেতু, মসজিদ, মন্দির অনেক কিছুই নির্মিত হয়েছে। তিনি অর্থ উপার্জন করে সমাজের সংস্কারের জন্য ব্যয় করছেন।

তাই বলা যায়, উদ্দীপকে প্রতিফলিত 'সমাজ সংস্কারমূলক ইতিবাচক জীবন চেতনা' 'লালসালু' উপন্যাসে অনুপস্থিত কেননা সমাজের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা এখানে পালন করা হয়নি। এবং কেউ সংস্কারমূল কাজ করার চেষ্টা করলে তার বিরোধিতা করা হয়েছে।

০৩। অজ পাড়াগাঁয়ের মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম নিজের মুদি দোকানের সামান্য উপার্জনে কোনোভাবে সংসার খরচ নির্বাহ করেন। অজ্ঞ গ্রামবাসী অসুখ-বিসুখে প্রায়শই তার কাছে আসে টাকা পয়সার বিনিময়ে পানিপড়া ও তাবিজ-কবজ নেয়ার জন্য। কিন্তু মাওলানা সাহেব তা না করে রোগীদের শহরের ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি গ্রামবাসীকে শিক্ষা দেন-ধর্ম ব্যাবসার বিষয় নয়, মানুষকে প্রতারণা বা নিপীড়নের জন্য নয়।

(গ) উদ্দীপকের ইমাম সাহেবের সঙ্গে 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদের আদর্শগত পার্থক্য নির্ণয় কর।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের ইমামের সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদের আদর্শগত পার্থক্য হচ্ছে মজিদ নিজ স্বার্থ ও প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেয় কিন্তু উদ্দীপকের ইমাম মানুষের কল্যাণের জন্যে উপযুক্ত কাজটিই করেন। 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ মানুষের ধর্মবিশ্বাস, ঐশী শক্তির প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য, ভয় ও শ্রদ্ধা, ইচ্ছা ও বাসনা সবই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। 

পাশের গ্রামে অন্য পিরের আবির্ভাব ঘটলে সে নিজের অস্তিস্ত সংকটে ভোগে। আবার খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী তার উপর বিশ্বাস না রেখে অন্য পিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করায় তার ক্রোধের শিকার হয়। মূলত মজিদ মানুষের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে ধর্মব্যাবসাকে তার উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিল। এলাকার মানুষকে বোকা বানিয়ে সে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে উদ্দীপকের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম অল্প উপার্জনে কোনোভাবে সংসার চালান। 
গ্রামের কেউ তার কাছে তাবিজ- কবজ ও পানি পড়ার জন্য আসলে তাদেরকে তিনি ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেন। সুতরাং 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদের লোভ-ধর্মব্যাবসার প্রাচুর্যকে ফেলে উদ্দীপকে ইমাম আবুল কালামের মানবিকতার মাধুর্যই তাদের মাঝে আদর্শগত পার্থক্য নির্ণয় করে। উদ্দীপকের মূলভাব অর্থাৎ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা এবং ধর্ম ব্যাবসাকে সমূলে উৎপাটনের বিষয়টি লালসালু উপন্যাসের

(ঘ) উদ্দীপকের মূলভাব পালসালু' উপন্যাসের রচয়িতার মানসচিন্তাকে ধারণ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন কর।


উত্তরঃ (ঘ) রচয়িতার মানসচিন্তাকে ধারণ করে। 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের মাধ্যমে ঔপন্যাসিক যুগ-যুগ ধরে শেকড়গাড়া কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুহ জীবনাকাঙ্ক্ষার দ্বন্দুকে তুলে ধরেছেন। গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ প্রতারণাজাল বিস্তারের মাধ্যমে কীভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তা নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন। 

এই বর্ণনার মাধ্যমে তিনি সমাজের বুকে ফেঁকে বসা এসব ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার করতে চেয়েছেন সাধারণ মানুষকে। তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য শিক্ষার গুরুত্বও তিনি আক্কাস চরিত্রের স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। মজিদের নিজ পরিবার থেকেই তার ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ নতুন যুগের আশু আবির্ভাবকেই ইঙ্গিত করে।

উদ্দীপকের অজ পাড়াগাঁয়ের ইমাম নিজের সামান্য উপার্জনে জীবন নির্বাহ করেন। অজ্ঞ গ্রামবাসী মাঝে মাঝেই তার কাছে টাকার বিনিময়ে টোটকা চিকিৎসার জন্য আসলেও তিনি তাদেরকে নাকচ করে দেন এবং ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি গ্রামবাসীকে ধর্মব্যাবসার বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলেন।
'লালসালু' উপন্যাসের রচয়িতার মানসিকচিন্তা হচ্ছে ভণ্ডামি ও ধর্ম ব্যাবসা মুক্ত এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। উদ্দীপকের ইমাম সাহেবও একই মূলমন্ত্র নিয়ে কাজ করেছেন। সুতরাং উদ্দীপকটি 'লালসালু' উপন্যাসিকের মানসচিন্তাকে ধারণ করে।

০৪। উদয়পুর গ্রামের মোড়ল সাহেবের ভৃত্য গফুর মিয়ার সন্তান সাফল্যের সাথে পিএসসি পাস করে। দূরবর্তী গ্রামে সন্তানকে পাঠিয়ে হাই স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য নেই বিধায় গফুর মোড়লের আর্থিক সাহায্য ও পরামর্শ চায়। কিন্তু মোড়ল তার সন্তানকে লেখাপড়ায় নিরুৎসাহিত করে এবং বলে গরিবের লেখাপড়া করে কী হবে? বরং আর্থিক সচ্ছলতার জন্য গফুরের সন্তানকে ঋণের মাধ্যমে অটোরিক্সা কিনে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। ভৃত্য গফুর মোড়লের এই পরামর্শ মেনে নিতে বাধ্য হয়। ফলে সন্তানের লেখাপড়ার ইতি ঘটে।

(গ) উদ্দীপকে 'মোড়লের অটোরিক্সা কিনে দেওয়ার পরামর্শ' এবং 'লালসালু' উপন্যাসের 'মজিদের মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাবের' সাদৃশ্য তুলে ধর।


উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকে 'মোড়লের অটোরিক্সা কিনে দেওয়ার পরামর্শ' এবং 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদের মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাবের সাদৃশ্য হচ্ছে নিজ স্বার্থে বাধা পড়ায় সুকৌশলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এমনকি, স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য আক্কাস যাতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে না পারে, সেজন্য মজিদ সুকৌশলে গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব দেয় এবং তাতে সকলের সহযোগিতা কামন করে। তার কৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায়।

লালসালু উপন্যাসে মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাস। সে পড়াশোনা করে কিছুদিন চাকরি করেছে এবং কিছু টাকা জমিয়েছে। গ্রামে ফিরে এসে সে একটি স্কুল নির্মাণ করার প্রস্তাব দিলে মজিদ তাকে শক্তভাবে প্রতিহত করে। মজিদের এ কাজে আক্কাসের বাবাও সমর্থন দেয়। অন্যদিকে উদ্দীপকের মোড়লের ভৃত্য গফুরের ছেলে ভালো ফলাফল করে। 
তার সন্তানকে আরো পড়াশোনা করানোর জন্য মোড়লের কাছে সাহায্য চাইলে মোড়ল তার ছেলেকে ঋণের মাধ্যমে অটোরিক্সা কিনে দিতে বাধ্য করে। কারণ পড়াশুনা করে এগিয়ে গেলে ভবিষ্যতে মোড়লের অসুবিধা হতে পারে। সুতরাং নিজ স্বার্থে বাধা আসার কারণে ভালো উদ্যোগকে প্রতিহত করার দিক থেকে 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ এবং উদ্দীপকের উদয়পুর গ্রামের মোড়লের সাদৃশ্য রয়েছে।

(ঘ) প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের সমাজ বাস্তবতাই যেন 'লালসালু' উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে? মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।


উত্তরঃ (ঘ) 'প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের সমাজ বাস্তবতাই 'লালসালু' উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে।' মন্তব্যটি যথার্থ। 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে এসে মানুষের সরলতা এবং ধর্মভীরুতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের এক সামাজ্য স্থাপন করে। তার ভণ্ডামি ও প্রতারণাকে কাজে লাগিয়ে সে নিজের স্বার্থ হাসিল করে। 

আক্কাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সে তাতে বাধা প্রদান করে। গ্রামের মানুষ পড়াশোনা করলে তার ভণ্ডামি ধরে ফেলবে এজন্য সে স্কুল প্রতিষ্ঠায় বাধা প্রদান করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে বিভিন্ন ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেয়। গ্রামের কোনো সংস্কার হোক তা সে চায় না। অর্থাৎ ব্যক্তি- স্বার্থ হাসিলে ভালো কাজে বাধা প্রদান করার ছিল তার কাজ। 

সে চাইত সমাজের সবাই যেকোনো প্রয়োজনে তারই দ্বারস্থ হবে এবং ধর্মকে পুঁজি করে সে আরো প্রতিপত্তির অধিকারী হবে। উদয়পুর গ্রামের মোড়লের ভৃত্য গফুর মিয়ার সন্তান সাফল্যের সাথে পিএসসি পাশ করলে হাই স্কুলে পড়ানোর জন্য গফুর মিয়া মোড়লের আর্থিক সাহায্য ও পরামর্শ চান। কিন্তু মোড়ল তার নিজের স্বার্থে বাধা পড়ার হুমকি ভেবে গফুরের সন্তানকে পড়ালেখার জন্য নিরুৎসাহিত করেন। 

এভাবে তার সন্তানের লেখাপড়ায় ইতি ঘটে। সুতরাং উদ্দীপকের এবং 'লালসালু' উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের সমাজ বাস্তবতা অর্থাৎ 'নিজ স্বার্থের জন্য' ভণ্ডামি ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার চিত্রটি 'লালসালু' উপন্যাসের সাথে একইরকম।

০৫। ওয়াজ করিবার সময় পির সাহেবের প্রায়ই জযবা আসিত। সে জববাকে মুরিদগণ 'ফানাফিল্লাহ' বলিত। এই 'ফানাফিল্লাহ'র সময় পির সাহেব 'জ্বলিয়া গেলাম', 'পুড়িয়া গেলাম' বলিয়া চিৎকার করিয়া চিৎ হইয়া শুইয়া পড়িতেন।...............তাই জযবার সময় একখণ্ড কালো মখমল দিয়া পির সাহেবের চোখমুখ ঢাকিয়া দিয়া তাহার হাত-পা টিপিয়া দিবার ওসিয়ত ছিল।

(গ) উদ্দীপকের পির সাহেব 'লালসালু' উপন্যাসের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? আলোচনা কর।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের পির সাহেব 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের প্রতিনিধি। উদ্দীপকে দেখা যায় যে, ওয়াজ করবার সময় পির সাহেবের প্রায় জযবা আসত। সে জযবাকে মুরিদগণ 'ফানাফিল্লাহ' বলত। এই ফানা ফিল্লাহ'র সময় পির সাহেব 'জ্বলিয়া গেলাম', 'পুড়িয়া গেলাম' বলে চিৎকার করতেন চিৎ হয়ে শুয়ে। তাই এ সময় একখণ্ড কালো মখমল কাপড় দিয়ে পির সাহেবের চোখমুখ ঢেকে দিয়ে তার হাত-পা টিপে দেয়ার ওসিয়ত ছিল। 
তার এ আচরণ মূলত ভণ্ডামি এবং ধর্মব্যাবসা টিকিয়ে রাখার কৌশল। অপরদিকে 'লালসালু' উপন্যাসে মজিদ ও একজন ভণ্ড, প্রতারক এবং মাজার ব্যবসায়ী। গ্রামের মানুষের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে সে মোদাচ্ছের পিরের মাজার গড়ে তুলে। জিকির করতে করতে মজিদ প্রায়ই অজ্ঞান হয়ে যেত। এ ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। তখন লোকেরা তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। 

কেউ হাওয়া করে, কেউ বুকফাটা আওয়াজে হা-হা কার আফসোস করে। কেউ বা এ হট্টগোলের সুযোগে মজিদের অবশ পদযুগল চুম্বনে-চুম্বনে সিক্ত করে দেয়। এছাড়া আরো নানা অদ্ভুত ঘটনা মাজারকে কেন্দ্র করে সে ঘটায়। লোকজন এগুলোকে খোদার ইশারা বলে বিশ্বাস করে আর মাজারে যার যা আছে দান-খয়রাত করতে থাকে। এই ধর্মব্যবসা ও অন্ধবিশ্বাসের চিত্রটি উদ্দীপকেও দৃশ্যমান। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের পির সাহের 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের প্রতিনিধি।

(ঘ) উদ্দীপকের বিষয়বস্তু 'লালসালু' উপন্যাসের সমাজচিত্রের প্রতি যে ইঙ্গিত প্রদান করে তা আলোচনা কর।


উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের বিষয়বস্তু 'লালসালু' উপন্যাসের সমাজচিত্রের প্রতি যে ইঙ্গিত প্রদান করে তা হল গ্রামীণ সমাজের অন্ধকারাচ্ছন্নতা এবং স্থবিরতা। উদ্দীপকের পির সাহেবের যখন জযবা আসত তখন তিনি 'জ্বলিয়া গেলাম', 'পুড়িয়া গেলাম' বলে চিৎকার করতেন। এই জযবার সময় একখণ্ড কালো মখমল কাপড় দিয়ে তার চোখমুখ ঢেকে হাত-পা টিপে দেওয়ার ওসিয়ত ছিল। যা সম্পূর্ণরূপে ভণ্ডামি এবং সাধারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ব্যাবসার শামিল।

'লালসালু' উপন্যাসের সমাজচিত্রেও সাধারণ মানুষের মাঝে আলৌকিকতা নিয়ে বিশ্বাস রয়েছে। যার ফলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী মজিদ তার শেকড় গেড়ে বসে মহব্বতনগর গ্রামে। মোদাচ্ছের পিরের মাজারের নামে চলে ধর্মব্যাবসা। প্রতারণা, শঠতা, শাসনের জটিলতার শেকড় গেড়ে সে শোষণ করছিল সাধারণ মানুষদের। 

মাজারের আয় দিয়ে অল্পদিনের মাঝেই মজিদ অনেক প্রতিপত্তির মালিক হয়। মজিদ ছাড়াও এই উপন্যাসে আওয়ালপুরের পিরের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যার ইশারার ছাড়া সূর্যও এক আঙুল নড়তে পারেনা বলে গ্রামের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এই পিরেরও আসল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসা করা। যা উদ্দীপকেও দৃশ্যমান। 

এখানে এই ধরনের ঘটনাগুলো সেসব সমাজেই প্রতিনিয়ত ঘটে থাকে যেখানে গ্রামবাসী ধর্মকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে এবং প্রচলিত বিষয়ে সমর্থন করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন