ছাদ বাগান করার পদ্ধতি - ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ
ছাদ বাগান করার পদ্ধতি এবং ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ এ সম্বন্ধে বিচারের তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি করতে পারেন।
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি সবজিভিত্তিক ছাদ বাগানে কি কি সবজি লাগাতে হবে এবং ছাদে বাগান করতে কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে? এছাড়া আরো আলোচনা করছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিকের সম্বন্ধে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা
ছাদে বাগান শব্দটা শুনলেই মনের ভেতর এক সবুজ অনুভূতি ভর করে। মনে হয় চারদিক গাছ গাছালি, ফুল, ফল এবং অন্য রকম ভালোলাগা। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও জানা নেই নিয়ম কানুন কিংবা পরামর্শ। সেসব বিবেচনা করে আমাদের ছাদে বাগান।
ছাদে বাগান
ছাদে বাগানের শুরু অনাদিকাল থেকে। যতটুকু জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সনে ছাদে বাগানের শুরু। এমনকি ইতিহাসখ্যাত পম্পের নগরীতে প্রথম শুরু হয়েছিল সিঁড়িতে গাছপালা রেখে বাগান করা। পরিকল্পিত উপায়ে বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত বাগানই ছাদে বাগান। যে বাগানে থাকবে সবজি, ফুল, ফল ও স্রাবজাতীয় গাছপালা।
আরো পড়ুনঃ ঢেঁড়শের বীজ বপনের পদ্ধতি
যাদের পরিচর্যার জন্য থাকবে পানি, পুষ্টি উপাদান, আলো, বাতাস এবং উদ্ভিদের বেঁচে থাকার সব অনুষঙ্গ। এ বাগানের মাধ্যমে একজন পাবে মনস্তাত্তিক ভালোলাগা। পাবে পারিবারিক পুষ্টি উপাদান এবং বিষমুক্ত সজীব নিঃশ্বাস। উল্লেখ্য যে, বামনাকৃতির বা খাটো জাতীয় যে কোন সবজি, ফল মূল ও ফুলজাতীয় গাছ ছাদে করা সম্ভব।
ছাদে বাগান কেন
আমরা ইচ্ছে করলেই ছাদে বাগান করতে পারি। পেতে পারি পারিবারিক পুষ্টি এবং অবসর বিনোদনের ব্যবস্থা। এছাড়া শুধু ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করলেই বুঝা যায়। কি এক অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। নিজের সমৃদ্ধি করার পাশাপাশি ঢাকা শহরের এবং বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলে উচ্চ তাপমাত্রা রুখে দিতে পারে ছাদ বাগান।
আরো পড়ুনঃ আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই
গবেষণা বলে শুধু ছাদে বাগান করে ৪-৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমিয়ে আনা যায়। পাওয়া যায় শীতল আবাস ভূমি। আর এ গবেষণা তথ্যটি ন্যাশনাল রিসার্স কাউন্সিল অব কানাডা থেকে প্রাপ্ত। আরেকটি পরোক্ষ উপকারের কথা হলো ছাদে বাগান বৃষ্টির পানির গতি কে ধীর করে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সময় নালা নর্দমা খুব তাড়াতাড়ি ভরে যায় না, বরং আস্তে আস্তে পানি গড়িয়ে নামে বলে পানি নিকাশ সহজতর হয়।
আধুনিক ছাদ বাগান
শহরের ছাদগুলোতে বাগান করলে তা থেকে পাওয়া যায় সতেজ সবজি, ফলমূল এবং শীতল আবহাওয়া। এছাড়া আমেরিকার ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির উদাহরণ দিলে বুঝা যায় যে তারা তাদের ছাদে বাগানের সবজি দিয়ে তাদের ক্যাফেটেরিয়া চালাতে পারে। আমরাও পারি। বিশেষ করে হাইড্রোপনিক এবং বিষমুক্ত সবজির খাদ্যাভ্যাস আমাদের বর্তমান সভ্যতায় ছাদে বাগানের সম্ভাবনাকে আরো বেশি উজ্জ্বল করেছে।
আর এতে করে আরেক ধরণের পেশাজীবী দলের সৃষ্টি হবে যা আমাদের জাতীয় জীবনে আনবে গতি। সবকিছু চিন্তা ভাবনা করলে ছাদে বাগানের সম্ভাবনা অপার। অনেক সময়ই আমরা ছাদে বাগান করতে চাই। কিন্তু সেটির কোনো অবয়ব না থাকার কারণে ইচ্ছেমতো করে থাকি। ফলে আশানুরূপ ফল পাই না। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। যা দেখে আমরা সহজেই পরিকল্পনার সাথে সাথে কল্পনার রঙ মেশাতে পারি। গড়তে পারি সুন্দর একটি ছাদ বাগান।
ছাদে বাগান করতে কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
ছাদে বাগান করার আগে ভাবতে হবে কিছু বিষয় নিয়ে। আর সেগুলো হলো- বাড়ির ছাদটি কি নতুন না পুরাতন? যদি পুরাতন হয় তাহলে এক ধরণের পরিকল্পনা। আর যদি নতুন হয় তবে আরেক ধরণের পরিকল্পনা। তারপর আসে ছাদের বাগানটিতে কি কি থাকবে? সেখানে শুধু ফুল, সবজি ও ফলের সমাহার হবে।
আরো পড়ুনঃ আলু চাষের জন্য সুষম সার ব্যবহার
না অন্য কিছু। ছাদে বাগানটিতে বেশি খরচ করবো না কম খরচে চাই নান্দনিক পাওনা। এসব ভেবে তারপরই না ছাদে বাগান গড়ার কাজে হাত দিতে হবে। তবে সুন্দর একটি পরিকল্পনা আমাদের দিতে পারে দৃষ্টিনন্দন এক ছাদ বাগান। যা দেখে আমাদের মন জুড়িয়ে যাবে।
ছাদ বাগান করার পদ্ধতি
ছাদে বাগান করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনোভাবেই ছাদের ক্ষতি না হয়। সেজন্য গাছের টব বা ড্রামগুলো ছাদের বিমের কাছে কিংবা কলামের কাছে রাখতে হবে। যাতে করে টব বা ড্রামের ওজন ছাদে সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় থাকে না। আরেকটি বিষয়, মনে রাখতে হবে সেটি হলো সরাসরি ছাদে।
টব বা হাফ ড্রাম না বসিয়ে এগুলো রিং বা ইটের উপর বসানো ভালো। নাহলে ছাদ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। বর্তমানে অনেকেই ছাদে পরিকল্পিত উপায়ে বাগান করার জন্য ছাদে নেট ফিনিসিং করে থাকে। এতে ছাদ ভালো থাকে আর কোনো ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকে না।
ছাদ বাগানে কি কি উপকরণ লাগবে
মাটি, পানি, জৈব সার, রাসায়নিক সার, কাঠের ফ্রেম, মাটির টব, হাফ ড্রাম, পাথর, পর্যাপ্ত সূর্যের আলো, বায়ুরোধী গাছ, বালাইনাশক, স্প্রে মেশিন, নিড়ানি, সিকেচার ইত্যাদি।
ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ
সবজিভিত্তিক ছাদ বাগানে কি কি সবজি লাগাতে হবে
শীতকালীনঃ ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, দেশি শিম, লাল বাঁধাকপি, ব্রোকলি, লেটুস, শালগম, মরিচ, লাউ, গাজর, বাংলা ধনিয়া, বিলাতি ধনিয়া, লালশাক, পালং শাক, মূলা, পুদিনা ইত্যাদি।
বর্ষাকালীনঃ চিচিঙ্গা, শসা, ঝিঙ্গা, কাকরোল, চালকুমড়া, বেগুন, বরবটি, ঢেড়শ, পুঁইশাক, লালশাক, ডাটা, পাটশাক এবং গিমা কলমি।
ফলভিত্তিক ছাদ বাগানে কি কি ফলগাছ লাগাতে হবে
ক. আম: বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম-২ (সিন্দুরি)
খ. পেয়ারা: বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১
গ. কুল: বাউকুল-১, ইপসা কুল-১ (আপেল কুল), থাই কুল-২
ঘ. লেবু: বারি লেবু-২ ও ৩, বাউ কাগজি লেবু-১
ঙ. আমড়া: বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-২
চ. করমচা: থাই করমচা
ছ, ডালিম
জ. কমলা ও মাল্টা: বারি কমলা-১, বারি মাল্টা-১
ঝ. জামরুল: বাউ জামরুল-১ (নাসপাতি জামরুল), বাউ জামরুল-২ (আপেল জামরুল)
টবে বাগান করার উপযোগীতা
সুপ্রাচীন কাল থেকে মিশর, রোম ও দূর প্রাচ্যের উদ্যানপ্রেমীরা টবে গাছ করে সৌন্দর্য্য উপভোগ করে আসছেন। টবে গাছ করার আদি ইতিহাস হলো চতুর্থ শতকে এক চীনা কবি সরকারি প্রকাশকের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর টবে চন্দ্রমল্লিকা করতে আরম্ভ করেন। এ ঘটনার আগে কেউ টবে গাছ করেছেন কি না তার উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুনঃ ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় আক্রমণ
টবে বাগান করার উপযোগীতা আগের চেয়ে অনেক বেশি এখন অনুভূত হচ্ছে। ভালো ফুল দেয় এমন কিছু সুখী প্রজাতির বীরুৎ ও বেঁটে ধরনের গুলা সাধারণত টবের উপযোগী বলে ধরা হয়, এর বাইরে অসংখ্য প্রজাতির গাছ টবে যে ভালোভাবে করা যায় সে ধারণা জন্মেছে জাপানিদের বনসাই করা দেখে।
ছাদ বাগানের টব
ছোট অগভীর পাত্রে শতাব্দীকাল ধরে কেমন করে যে এক বনস্পতি তার সুঠাম দেহ নিয়ে বিরাজ করতে পারে তা রীতিমতো এক বিস্ময় সন্দেহ নেই। বর্তমানে আর্থ সামাজিক কারণে সাধারণ লোকের পক্ষে বাগান করার সুযোগ ক্রমশ কমে আসছে। স্থানাভাবই তার প্রধান কারণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাগান করার শখ ও প্রয়োজনীয়তা কমছে না বরং বেড়েই চলেছে।
এ সমস্যাটির সমাধান পাওয়া গিয়েছে টবে বেশি করে গাছ করার মাধ্যমে। অল্প কয়েক বর্গমিটার জায়গায়ও শতাধিক টবে মৌসুমী বা স্থায়ী বাগান করা যায়। তাই এ কাজে খোলা ছাদ, বারান্দা বা উঠোন ব্যবহার করা হয়। জমিতে বাগান করার মতো সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বিশেষ কয়েকটি কারণে অনেকে টবে গাছ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
টবে বাগান করার সুবিধা
টবে বাগান করার সুবিধাগুলি হলো-
- ১. জমিতে বাগান করার মতো জায়গা না পাওয়া গেলে টবেই তা করা যায়।
- ২. অনেকে জমিতে বাগান করার মতো জায়গা থাকা সত্ত্বেও টবে ফুল করেন। টবের গাছের পরিচর্যা করা অপেক্ষাকৃত সহজ। শুধু তাই নয়, গাছ চুরি বন্ধ ও গরু ছাগলের থেকে গাছ রক্ষা করা একান্ত জরুরি। টবে গাছের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া যায়।
- ৩. টবের গাছকে সুবিধামতো এদিক ওদিক সরিয়ে রাখা যায়। তাছাড়া সারের অভাবজনিত কোনও অসুবিধা দেখা দিলে টবের ক্ষেত্রে তা অতি সহজে দূর করা সহজ।
- ৪. বাড়ি বদল করার সময় গৃহস্থালীর দ্রব্যসামগ্রীর সঙ্গে টবের গাছও নিয়ে যাওয়া যায়।
- ৫. উৎসবের দিন কিংবা অন্য কোনও প্রয়োজনে ঘর সাজাতে টবের গাছ খুবই উপযোগী।
- ৬. প্রদর্শনীর প্রতিযোগীতায় কয়েকটি বিশেষ বিভাগের জন্য টবে গাছ করা একেবারে অপরিহার্য।
- ৭. যেহেতু টবের গাছ বাড়ির উঠোন, বারান্দা কিংবা ছাদের ওপর থাকে তাই বাগান বা আশেপাশের অন্যান্য গাছ থেকে সহজে রোগ পোকার আক্রমণ সংক্রমতি হয় না। তাছাড়া সারাদিন কাজের পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ছাদে যা বারান্দায় টবের গাছের পরিচর্যা করা সহজ।
- ৮. গ্রীষ্মের প্রখর তাপ, বর্ষায় অতিবর্ষণ বা শীতের শৈত্যপ্রবাহ থেকে টবের গাছকে সুবিধাজনক স্থানে এনে রক্ষা করা যায়।
- ৯. বর্ষাকালে জমির বাগান আগাছামুক্ত অবস্থায় রাখা বেশ কষ্টসাধ্য বা ব্যয়বহুল। কিন্তু অধিক সংখ্যায় টবের গাছও এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় না।
- ১০. বাগানের গাছের চেয়ে টবের গাছের রোগ ও পোকামাকড় দূর করতে রাসায়নিক দ্রব্যের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
আশা করি আপনাদের ছাদ বাগান পদ্ধতি সম্পর্কে জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত এবং আপনাদের অনেক উপকার হবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।