ঘুমের সময় দুআ - যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন

হাদিস শরিফে ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সব দোয়া পড়তে না পারলেও ছোট এই দোয়াটি পড়া যায়

ঘুমের সময় দুআ

ঘুমের সময় দুআ - যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন
হযরত হুজায়ফা ও হযরত আবু জর রা. থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَحْيَا وَأَمُوْتُ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আহইয়া ওয়া আমুতু।

অর্থঃ হে আল্লাহ, তোমার নামে জাগ্রত হই এবং তোমার নামে ঘুমাই।

হযরত আলি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ও হযরত ফাতেমা রা.কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-তোমরা যখন ঘুমানোর। জন্য বিছানায় যাবে, তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ। এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলবে। কোন বর্ণনায় ৩৪ বার আল্লাহু আকবার। বলার কথা আছে। 
আলি রা. বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একথা শুনার পর একদিনও এ আমল ছুটেনি। হযরত আলি রাদিয়াল্লাহ আনহুকে বলা হল, সিফফিন যুদ্ধের রাতেও কি পড়েছেন? তিনি উত্তর দিলেন সিফফিন যুদ্ধের রাতেও পড়েছি।' হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা ঘুমানোর পূর্বে বিছানার চাদরের ভিতর পরিষ্কার করে নিবে। কারণ, জানা নেই এর নীচে কোন ক্ষতিকর বস্তু আছে কিনা? এরপর এ দুআ পড়বে-

بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ.

উচ্চারণঃ বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাতু যাম্বি ওয়াবিকা আরফাউহু, ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।

অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনার নামে আমি আমার পার্শ্ব এলিয়ে দিলাম, আপনার নামেই তা উঠাবো। আমার রূহ আটকে দিলে রহম করুন এবং ছেড়ে দিলে হেফাজত করুন, যেভাবে আপনার নেক বান্দাদের হেফাজত করে থাকেন।

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত-রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর পূর্বে তিন কূল (সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস) পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে মুছতেন।

অন্য বর্ণনায় আছে-ঘুমানোর আগে প্রতি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত একসাথে করে তিন স্কুল পড়ে উভয় হাতে ফুঁ দিয়ে যথাসম্ভব পুরো শরীরে মুছে দিতেন। মাথা থেকে শুরু করে চেহারা ও শরীরের সামনের অংশ এভাবে তিনবার করতেন।১

হযরত আবু মাসউদ আনসারি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-'সুরা বাকারা'র শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে, যে ব্যক্তি রাতে উক্ত দুই আয়াত পাঠ করবে, উক্ত দুই আয়াত তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদে থাকবে।২

হযরত বারা বিন আজেব রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন- যখন তুমি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে তখন নামাযের অযুর মত অযু করবে। ডান পাশে শয়ন করবে। এরপর এই দুআটি (নিম্নোক্ত দুআটি) পড়বে। যদি তুমি উক্ত রাতে মৃত্যুবরণ করো, তাহলে তুমি মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। দুআটি হল-

اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَى مِنْكَ إِنَّا إِلَيْكَ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আসলামতু নাফসি ইলাইকা, ওয়া ফাওয়াজতু আমরি ইলাইকা, ওয়া আলজাতু জাহরি ইলাইকা; রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা, লা মালযাআ ওয়া লা মানযা মিনকা ইল্লা ইলাইক। আমানতু বিকিতাবিকাল্লাজি আনজালতা ওয়া নাবিয়্যিকাল্লাজি আরসালতা।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আমাকে আপনার নিকট সঁপে দিলাম, আমার যাবতীয় বিষয়াদি আপনার জিম্মায় সোপর্দ করলাম, আমার দেহ-পিঠ আপনার আশ্রয়ে রেখে দিলাম। আপনার কাছে এই সমর্পণ আপনার সন্তুষ্টির আশায় এবং বিচ্যুতি ঘটে যাওয়ার আশঙ্কায়। আপনার পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য আপনার কাছে ফিরে আসা ব্যতীত আর কোন আশ্রয় কিংবা গন্তব্য নেই। ঈমান আনলাম আপনার নাজিলকৃত কিতাবের উপর এবং প্রেরিত নবির ওপর।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমজানের যাকাতের মাল হেফাজতের দায়িত্ব দিলেন। রাতে কেউ একজন এসে যাকাতের মাল জমা করতে লাগল। এই হাদিসের শেষাংশে আছে- নবীজি বলেছেন, যখন তুমি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। 
এটা পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে। সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ আগন্তুক তোমার সঙ্গে সত্য বলেছে, যদিও সে মিথ্যুক। সে হল, শয়তান।'
উম্মুল মুমিনিন হযরত হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাত গালের নীচে দিয়ে শয়ন করতেন। এরপর এ দুআ তিনবার পড়তেন-

اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা কিনি আজাবাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবাদাক।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনার শাস্তি থেকে আমাকে হেফাজত করুন, যে দিন আপনি আপনার বান্দাদের পুনরুত্থান ঘটাবেন।২

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর পূর্বে এ দুআ পড়তেন-


ঘুমের সময় দুআ - যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর পূর্বে এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنتَ اخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ اللَّهُمَّ أَنتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنَّا الدِّينَ وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বাল আরদি ওয়া রাব্বাল আরশিল আজিম। রাব্বানা ওয়া রাব্বা কুল্লি শাইয়িন। ফালিকাল হাব্বি ওয়ান্নাওয়া, ওয়া মুনজিলাত তাওরাতি ওয়াল ইঞ্জিলি ওয়াল ফুরকান। আউজুবিকা মিন শাররি কুল্লি শাইয়িন আনতা আখিজুন বিনাসিয়াতিহ। আল্লাহুম্মা আনতাল আউয়ালু ফালাইসা কাবলাকা শাইয়ুন, ওয়া আনতাল আখিরু ফালাইসা বাদাকা শাইয়ুন। ওয়া আনতাজ্জাহিরু ফালাইসা ফাওকাকা শাইয়ুন। ওয়া আনতাল বাতিনু ফালাইসা দুনাকা শাইয়ুন। ইকদি আন্নাদ্দাইনা ওয়া আগনিনা মিনাল ফাকরি।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আসমান-যমিনের প্রতিপালক, মহান আরশের অধিপতি, হে আমাদের ও সর্বসৃষ্টির পালনকর্তা, বীজ-দানা বিদীর্ণকারী, তওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনের অবতারক, আমি আপনার আশ্রয় কামনা করি আপনার নিয়ন্ত্রিত সকল প্রাণীর অনিষ্ট থেকে। হে আল্লাহ, আপনিই প্রথম, আপনার আগে কিছু নেই। আপনিই শেষ, আপনার পরে কিছু নেই। সকল বস্তুর উপরে আপনিই প্রকাশমান, আপনার উপর কেউ নেই। সবার কাছে আপনি গুপ্ত, আপনার থেকে গুপ্ত কেউ নেই। আমাদের ঋণ শোধের ব্যবস্থা করে দিন এবং দারিদ্র্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে হেফাজত করুন।১

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

ঘুমের সময় দুআ - যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন
হযরত আলি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِوَجْهِكَ الكَرِيمِ، وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا أَنَّكَ اخِذْ بِنَاصِيَتِهِ اللَّهُمَّ أَنتَ تَكْشِفُ المَغْرَمَ وَالمَأْثَمَ اللَّهُمَّ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ وَلَا يُخْلَفُ وَعْدُكَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِ مِنْكَ الجَدُّ، سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বি ওয়াজহিকাল কারিম, ওয়া কালিমাতিকাত তাম্মাতি, মিন শাররি মা আন্নাকা আখিজুন বি নাসিতিহ। আল্লাহুম্মা আনতা তাকশিফুল মাগরামা ওয়াল মাসাম। আল্লাহুম্মা লা যুহজামু জুনদুকা ওয়া লা যুখলাফু ওয়া'দুকা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু, সুবহানাকা ওয়াবি হামদিক।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনার সম্মানিত সত্তা এবং পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর মাধ্যমে সেসব অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, যার চাবিকাঠি আপনার হাতে। হে আল্লাহ, আপনিই অপরাধ ও ঋণ থেকে মুক্তি দেন। হে আল্লাহ, আপনার বাহিনী পরাস্ত হয় না এবং আপনার অঙ্গীকার ভঙ্গ হয় না। আর আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। আপনার স্বপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি।২

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-


হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَنَا وَسَقَانَا، وَكَفَانَا وَأَوَانَا، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهُ وَلَا مُثْوِيَ

উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি আতআমানা ওয়াসাকানা, ওয়া কাফানা ওয়া আওয়ানা, ফাকাম মিম্মান লা কাফিয়া লাহু, ওয়া লা মু'বিয়া।

অর্থঃ সকল প্রশংসা ঐ সত্তার যিনি আমাদের পানাহার করিয়েছেন। আমাদের বাসস্থান সহ সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন। কত মানুষ এমন আছে, যাদের জন্য যথেষ্ট কেউ নেই এবং যাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই।'

হযরত আবুল আযহার রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

بِسْمِ اللهِ، وَضَعْتُ جَنْبِي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَاخْسَأُ شَيْطَانِي، وَفُكَ رِهَانِي وَاجْعَلْنِي فِي النَّدِي الْأَعْلَى

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ওয়াদাতু যানবি, আল্লাহুম্মাগফিরলি যানবি, ওয়াখসা' শাইতানি, ওয়াফুক্কা রিহানি, ওয়াযআলনি ফিন্নাদিয়ি‍্যল আলা।

অর্থঃ আল্লাহর নামে শুলাম। হে আল্লাহ, আমার গুনাহ মাফ কর। আমার শয়তানকে লাঞ্চিত কর। আমাকে মুক্তি দাও। আমাকে উঁচু মর্যাদাবান ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত কর।
আরো পড়ুনঃ অযুর সময় দুআ
হযরত নওফেল আশযায়ি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন- তুমি 'সুরা কাফিরুন' পড়বে। এটি শেষ করেই ঘুমিয়ে যাবে। এটি শিরক থেকে মুক্তির ঘোষণা। মুসনাদে আবু ইলাতে হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমি কি তোমাদেরকে এমন কালিমা শিক্ষা দেব না, যা তোমাদেরকে শিরিক থেকে মুক্তি দিবে? তা হচ্ছে, তোমরা ঘুমানোর সময় 'সুরা কাফিরুন'পড়ে ঘুমাবে।

হযরত ইরবাদ বিন সারিয়া রা. থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর আগে যেসব সুরার সূরার শুরুতে "সাব্বাহা” শব্দ আছে সেগুলো পড়ে ঘামাতে যেতেন। ৪৫
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'সুরা বনি ইসরাঈল' ও 'সুরা যুমার' না পড়ে ঘুমাতেন না।

হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন শয়ন করার জন্য বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَفَانِي وَآوَانِي، وَأَطْعَمَنِي وَسَقَانِي، وَالَّذِي مَنَّ عَلَى فَأَفْضَلَ، وَالَّذِي أَعْطَانِي فَأَجْزَلَ الحَمْدُ للهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ، اَللَّهُمَّ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ وَإِلَهَ كُلِّ شَيْءٍ، أَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি কাফানি ওয়া আওয়ানি, ওয়া আত আমানি ওয়া সাকানি, ওয়াল্লাযি মান্না আলাইয়া ফাআফযালা। ওয়াল্লাযি আ'তানি ফাআজযালা। আলহামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল, আল্লাহুম্মা রাব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালিকাহ, ওয়া ইলাহা কুল্লি শাইয়িন। আউজু বিকা মিনান্নার।'

অর্থঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছেন। আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন। পানাহার করিয়েছেন। যিনি আমার উপর অনেক বেশি অনুগ্রহ করেছেন। যিনি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। সর্বাবস্থায় তাঁর প্রশংসা করি। হে আল্লাহ, আপনি সকল কিছুর প্রতিপালক ও মালিক। আপনি সবকিছুর ইলাহ। আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই।২

হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি ঘুমানোর জন্য বিছানায় শয়ন করে এই দুআ (নিম্নোক্ত দুআটি) তিনবার পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মাফ করে দেন, যাদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। তার গুনাহ তারকা পরিমাণ, বালুকারাশি পরিমাণ, দুনিয়ার দিবসের পরিমাণ গুনাহ হলেও আল্লাহ মাফ করে দেন। দুআটি হল-

أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِنَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহ। 

অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করি, যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি চিরজীবি শাশ্বত। আমি তার কাছে তাওবা করি।

আসলাম গোত্রের এক সাহাবি থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। তখন একজন সাহাবি এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাকে গতরাতে দংশন করেছে। ফলে আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কীমে তোমাকে দংশন করেছে? সাহাবি বললেন, বিচ্ছ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি সন্ধ্যাবেলায় এ দুআ পড়তে, তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমাকে অনিষ্ট স্পর্শ করতো না। দুআটি হল-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.

উচ্চারণঃ আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।

অর্থঃ আল্লাহর পরিপূর্ণ উক্তির মাধ্যমে তাঁর সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করি।১
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত-রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবিকে ঘুমানোর সময় 'সুরা হাশর' পড়ে ঘুমানোর জন্য নসিহত করলেন। আর বললেন, তুমি যদি ঐ রাতে মারা যাও, তাহলে শহিদের মর্যাদা পাবে। অথবা তিনি বলেছেন, তুমি জান্নাতবাসী হবে।'

হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন- যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন এ দুআটি পড়বে-

اللهُمَّ خَلَقْتَ نَفْسِي، وَأَنْتَ تَوَفَّاهَا ، لَكَ مَمَاتُهَا وَمَحْيَاهَا إِنْ أَحْيَيْتَهَا فَاحْفَظْهَا، وَإِنْ أَمَتَهَا فَاغْفِرْ لَهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা খালাকতা নাফসি, ওয়া আনতা তাওয়াফফাহা, লাকা মামাতুহা ওয়া মাহইয়াহা, ইন আহইয়াইতাহা ফাহফাজহা, ওয়া ইন আমাত্তাহা ফাগফির লাহা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াহ।

অর্থঃ হে আল্লাহ আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনিই মৃত্যু দানকরবেন। আপনার হাতে জীবন-মরণ। আপনি নিরাপদে জীবিত রাখুন। আপনি ক্ষমাসুন্দর মৃত্যু দিন। আপনার কাছে সবকিছুর নিরাপত্তা চাই। "এরপর আবদুল্লাহ বিন উমর রা.বলেন, এই দুআটি আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।৩  

হযরত শাদ্দাদ বিন আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-কোন মুসলমান যখন ঘুমানোর সময় বিছানায় গিয়ে কুরআনের কোন সুরা তিলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাজত করার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন। কষ্টদায়ক কোন কিছুই তার নিকটবর্তী হতে দেয় না। সে যখন জাগ্রত হতে চায়, তখন জাগিয়ে দেয়। ১ 

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-মানুষ যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যায়, তখন তার কাছে ফেরেশতা ও শয়তান আসে। ফেরেশতা এসে বলেন, 'হে আল্লাহ, তুমি তার শেষ ভালো করো। আর শয়তান বলে, হে আল্লাহ তুমি তার শেষ পরিণতি মন্দ করো। যদি ঐ ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে ঘুমায়, তাহলে ফেরেশতা তাকে পাহারা দেয়।২

হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয়ন করতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ رَبِّي وَضَعْتُ جَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذَنْبي

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা রাব্বি ওয়াযা'তু যাম্বি, ফাগফিরলি যামবি।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমার নামে ঘুমাচ্ছি, আমার গুনাহ মাফ করে দিন।
হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-যে ব্যক্তি পবিত্র হয়ে বিছানায় যায়, তন্দ্রা আসা পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করে। রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের যে কল্যাণ চাইবে, আল্লাহ তাকে তাই দিবেন।
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বিছানায় গিয়ে এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ أَمْتِعْنِي بِسَمْعِي وَبَصَرِي، وَاجْعَلْهُمَا الْوَارِثَ مِنِّي، وَانْصُرْنِي عَلَى عَدُوِّي وَأَرِنِي مِنْهُ فَأْرِي اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدِّينِ وَمِنَ الْجُوعِ، فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيعُ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আমতি'নি বি-সাময়ি ওয়া বাসারি, ওয়াযআলহুমাল ওয়ারিসা মিন্নি, ওয়ান সুরনি আলা আদুউয়ি ওয়া আরিনি মিনহু সা'রি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ্দাইনি ওয়া মিনাল জুয়ি, ফাইন্নাহু বি'সাদ্দাযিউ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে কান এবং চোখ দিয়ে উপকৃত করুন। এ দুটিকে আহত সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখুন। আমাকে আমার উপর শত্রুর বিরুদ্ধে মদদ করুন এবং তার থেকে আমার বদলা নিন। মুক্তি চাই ঋণগ্রস্থতা থেকে এবং ক্ষুধা থেকে। কেননা তা বড়ই খারাপ নিত্যসঙ্গী।'

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত– আমি তাঁর সঙ্গী হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে দেখেছি- তিনি ঘুমের আগে কাপুরুষতা, অলসতা, কৃপণতা অতিশয় বার্ধক্য, পরিবার ও সম্পদের মন্দ দৃশ্য, কবরের শাস্তি, শয়তান এবং তার শিরিকি কর্মকাণ্ড থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন।২

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ঘুমানোর পূর্বে এই দুআ পড়তেন। এই দুআ পড়ার পর সকাল পর্যন্ত বা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত আর কারো সাথে কথা বলতেন না। দুআটি হল-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ رُؤْيَا صَالِحَةٌ صَادِقَةٌ غَيْرَ كَاذِبَةٍ، نَافِعَةً غَيْرَ ضَارَّةٍ

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে বাস্তবসম্মত ও নেক স্বপ্নের আবেদন করছি, যা সত্য হবে; মিথ্যা হবে না। উপকারী হবে, ক্ষতিকারক হবে না।

হযরত আলি রা. থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, আমি প্রাপ্তবয়স্ক কাউকে দেখিনি যে 'সুরা বাকারা'র শেষ তিন আয়াত না পড়ে ঘুমিয়েছে।

হযরত আলি রা.থেকে আরো বর্ণিত আছে-কোন বুদ্ধিমান মুসলিম 'আয়াতুল কুরসি' না পড়ে ঘুমায় না।
হযরত ইবরাহিম নাখয়ি রহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম ঘুমানোর সময় 'সুরা ফালাক' ও 'সুরা নাস' পড়তেন। অন্য বর্ণনায় আছে, সাহাবায়ে কেরাম প্রতিরাতে তিন কূল তিনবার পড়া উত্তম মনে করতেন।আল্লাহর যিকির ছাড়া ঘুমানো মাকরুহ

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-যে ব্যক্তি কোন স্থানে বসে আল্লাহকে স্মরণ করল না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা। আর যে কোথাও শয়ন করে আল্লাহকে স্মরণ করল না, তার জন্যও লাঞ্ছনা।' রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর পুনরায় ঘুমালে যে দুআ পড়বে রাতে জাগ্রত হওয়া দুই ধরনের:

১. উঠার পর আর না ঘুমানো। এ প্রসঙ্গে পূর্বের অধ্যায়ে আলোচনা হয়েছে।
২. উঠার পর আবার ঘুমানো। এমন ব্যক্তির জন্য যিকির করা মুস্তাহাব। যতক্ষণ না ঘুম চলে আসে। এ প্রসঙ্গে অনেক যিকির-আযকার রয়েছে:-

হযরত উবাদা বিন সামেত রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে উঠে নিম্মোক্ত দুআটি পড়ে, অতঃপর বলে, 'হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো' অথবা অন্য কোন দুআ করে, তার দুআ কবুল করা হয়। অতঃপর অযু করে নামায পড়লে, তার নামাজও কবুল করা হয়। দুআটি হল-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ الحَمْدُ لِلَّهِ ، وَسُبْحَانَ اللهِ ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِالله

উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। ওয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়া সুবহানাল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজ্য ও প্রশংসা কেবল তারই। তিনি সবকিছুর উপর শক্তিমান। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনি পবিত্র। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি বড়। তাঁর সাহায্য ছাড়া গুনাহ হতে বাঁচার এবং নেক আমল করার শক্তি-সামর্থ নেই।'

যখন রাতে ঘুম থেকে উঠতেন

ঘুমের সময় দুআ - যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল যখন রাতে ঘুম থেকে উঠতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

لَا إِلَهَ إِنَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ أَسْتَغْفِرُكَ لِذَنْبِي، وَأَسْأَلُكَ رَحْمَتَكَ، اللَّهُمَّ زِدْنِي عِلْمًا وَلَا تُزِغْ قَلْبِي بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنِي، وَهَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ.

উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, আল্লাহুম্মা আসতাগফিরুকা লিযাম্বি, ওয়া আসআলুকা রহমাতাকা, আল্লাহুম্মা যিদনি ইলমা, ওয়ালা তুষিণ কালবি হাদাইতানি, ওয়াহাবলি মিন লাদুনকা রাহমাহ, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।"

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আপনি পবিত্র, আমার গুনাহের জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, আপনার রহমত কামনা করছি, আমার ইলম বৃদ্ধি করে দিন, হেদায়াত দান করার পর আমার মনকে বাঁকা করে দিবেন না। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে রহমত দান করুন। আপনিই সবচেয়ে বড় দাতা।১

যখন রাতে জাগ্রত হতেন


হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে জাগ্রত হতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ، رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ

উচ্চারণঃ লাইলাহা ইল্লাল্লাহুল ওয়াহিদুল কাহহার, রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, ওয়া মা বাইনাহুমাল আযিযুল গাফফার।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক ও ক্ষমতাধর। আসমান- যমিন এবং উভয়ের মাঝে যা আছে, সব কিছুর মালিক। তিনি ক্ষমতাধর ও ক্ষমাশীল।২

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন- যখন মুসলিম বান্দাকে আল্লাহ তাআলা রাতের বেলা তার রূহ ফিরিয়ে দেন (অর্থাৎ তাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করেন)তার উচিত হল তাসবিহ পড়া, ক্ষমা চাওয়া ও আল্লাহর কাছে দুআ করা। আল্লাহ তার দুআ কবুল করবেন।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- তোমাদের কেউ তার বিছানা হতে উঠার পর আবার বিছানায় শুতে গেলে সে যেন তার চাদরের কিনারা দিয়ে বিছানা তিনবার পরিষ্কার করে নেয়। কারণ, সে জানে না তার অনুপস্থিতিতে তাতে কী পতিত হয়েছে? আর শুয়ার পর যেন এ দুআটিপড়ে-

بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ رَدَدْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ

উচ্চারণঃ বিসমিকা আল্লাহুম্মা ওয়াদাতু যামবি, ওয়াবিকা আরফাউহু, ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন রাদাত্তাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।

অর্থঃ হে পালনকর্তা! আপনার নামে আমি আমার পার্শ এলিয়ে দিলাম, আপনার নামেই তা উঠাবো। আমার রুহ আটকে দিলে রহম করুন এবং ছেড়ে দিলে হেফাজত করুন, যেভাবে আপনার নেক বান্দাদের হেফাজত করে থাকেন।১
হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাতের মধ্যভাগে সজাগ হয়ে বলতেন-

نَامَتِ الْعُيُونُ، وَغَارَتِ النُّجُومُ، وَأَنْتَ حَيْ قَيُّومُ.

উচ্চারণঃ নামাতিল উয়ুনু, ওয়া গারাতিন্নুজুম, ওয়া আনতা হাইয়ুন কাইয়ুম।

অর্থঃ সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। তারকারাজি অস্তমিত হয়েছে। আর হে রব, আপনি শাশ্বত চিরঞ্জীব।
রাতে বিছানায় ছটফট করলে বা ঘুম না আসলে যা পড়বে

হযরত যায়েদ বিন সাবেত রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অভিযোগ করলাম, আমাকে অনিদ্রা পেয়ে বসেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি এই দুআটি পড়বে। যায়েদ বিন সাবেত রা. বলেন, উক্ত দুআটি পড়লে আমার অনিদ্রা রোগ দূর হয়ে যায়। দুআটি হল-

اللَّهُمَّ غَارَتِ النُّجُومُ، وَهَدَأَتِ الْعُيُونُ، وَأَنْتَ حَيَّ قَيُّومُ لَا تَأْخُذُكَ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ ، أَهْدِي لَيْلِي، وَأَنِمْ عَيْنِي

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা গারাতিন্নুজুম, ওয়া হাদাআতিল উয়ুন, ওয়া আনতা হাইয়ুন কাইয়ুম, লা তা'খুজুহু সিনাতুন ওয়ালা নাউম, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম, আহদি লাইলি ওয়া আনিম আইনি

অর্থঃ হে আল্লাহ, তারকারাজি অস্তমিত হয়ে গেছ এবং সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আর আপনি শাশ্বত চিরঞ্জীব। আপনার কোন তন্দ্রা কিংবা ঘুম আসে না। হে শাশ্বত চিরঞ্জীব! এই রাত কে শান্ত করে দিন এবং চোখে ঘুম পাড়িয়ে দিন।
মুহাম্মাদ বিন হাব্বান থেকে বর্ণিত-হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রা.এর

ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে যে দুআ পড়বে


হযরত আমর বিন শুআইবের সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে ভয়ের সময় এই দুআ পড়তে শিখিয়েছেন-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونَ

উচ্চারণঃ আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাজাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহ। ওয়া মিন হামাজাতিশ শাইয়াতিনি ওয়া আন ইয়াহদুরুন।

অর্থঃ আমি আল্লাহর পূর্ণ-দৃঢ় উক্তিসমূহের আশ্রয় নিচ্ছি তার ক্রোধ থেকে, তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কু-মন্ত্রণা ও আমার কাছে উপস্থিত হওয়া থেকে।

আবদুল্লাহ বিন আমর রা.তাঁর বুঝমান সন্তানদেরকে এ দুআ মুখস্ত করাতেন। আর অবুঝ বাচ্চাদের গলায় কাগজে লেখে ঝুলিয়ে দিতেন। অন্য বর্ণনায় আছে- এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে ঘুমে ভয় পাওয়ার অভিযোগ করলো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যখন ঘুমোতে যাবে, এই দুআ পড়বে। উক্ত সাহাবি এ দুআ পড়লে তাঁর ভয় কেটে যায়। দুআটি হল-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونَ

উচ্চারণঃ আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাজাবিহি ওয়া মিন শাররি ইবাদিহ। ওয়া মিন হামাজাতিশ শাইয়াতিনি ওয়া আন ইয়াহদুরুন।

অর্থঃ আমি আল্লাহর পূর্ণ-দৃঢ় উক্তিসমূহের আশ্রয় নিচ্ছি তার ক্রোধ থেকে, তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কু-মন্ত্রণা ও আমার কাছে উপস্থিত হওয়া থেকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন