মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় যে দুআ পড়বে

মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় যে দুআ পড়বে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে নিম্নের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি মসজিদে অবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ মাসায়েল এবংমসজিদে কবিতা, গান ইত্যাদি বলা নিষেধ। এছাড়া আরও আলোচনা করছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক এর সম্বন্ধে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

মসজিদে যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে


পূর্বে ঘর থেকে বের হওয়ার দুআ উল্লেখ করা হয়েছে। মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলে উক্ত দুআর সাথে নীচের দুআটিও পড়া মুস্তাহাব।
হযরত ইবনে আব্বাস রা থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খালা মায়মুনা রা. এর ঘরে রাত্রিযাপন করলেন। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ নামাযের কথা বর্ণনা করে বলেন,
যখন মুআজ্জিন ফজরের আযান দিল, তখন তিনি ফজর নামাযের জন্য বের হলেন, তখন তিনি এ দুআ পড়ছিলেন-

اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا ، وَفِي لِسَانِي نُورًا ، وَاجْعَلْ فِي سَبْعِي نُورًا ، وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِي نُورًا، وَمِنْ أَمَامِي نُورًا، وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِي نُورًا، وَمِنْ تَحْتِي نُورًا، اللَّهُمَّ أَعْطِنِي نُورًا

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজআল ফি কালবি নূরা, ওয়া ফি লিসানি নূরা, ওয়াজআল ফি সাময়ী নূরা, ওয়াজআল ফি বাসারি নূরা, ওয়াজআল ফি খালফি নূরা, ওয়া মিন আমামি নূরা, ওয়াজআল ফি ফাওকি নূরা, ওয়ামিন তাহতি নূরা, আল্লাহুম্মা আ'তিনি নূরা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমার অন্তরে, যবানে, কানে এবং চোখে নুর দান করুন। আমার পেছনে, সামনে, উপরে এবং নিচে নুর দান করুন। হে আল্লাহ! আমাকে নুর দান করুন।১

হযরত বিলাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের জন্য বের হলে এ দুআ পড়তেন-

بِسْمِ اللهِ . مَنْتُ بِاللهِ ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِنَّا بِاللَّهِ ، اللَّهُمَّ بِحَقِّ السَّائِلِينَ عَلَيْكَ ، وَبِحَقِّ مَخْرَجِيْ هُذَا ، فَإِنِّي لَمْ أَخْرُجْهُ أَشَرًا وَلَا بَطَرًا وَلَا رِيَاء وَلَا سُمْعَةً، خَرَجْتُ ابْتِغَاءَ مَرْ ضَاتِكَ، وَاتَّقَاءَ سَخَطِكَ ، أَسْأَلُكَ أَنْ تُعِيُذَنِي مِنَ النَّارِ وَأَنْ تُدْخِلَنِي الْجَنَّةَ.

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আমানতু বিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, আল্লাহুম্মা বিহাক্কিস-সা ইলিনা আলাইকা, ওয়া বিহাক্কি মাখরাজি হাযা, ফাইন্নি লাম আখরুজহু আশারান, ওয়া লা বাতারান ওয়া লা রিয়াআন, ওয়া লা সুম'আতান, খরাজতু ইবতিগাআ মারযাতিকা ওয়া ইত্তিকায়া সাখাতিকা, আসআলুকা আন তুঈযানি মিনান-নারি ওয়া আন তুদখুলানিল জান্নাতা।

অর্থঃ আল্লাহর নামে রওনা করলাম, ঈমান আনলাম আল্লাহর উপর এবং তার ওপরই ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া নেক কাজ করা বা খারাপ কাজ থেকে বাঁচার কোনো শক্তি নেই। হে আল্লাহ, আপনার কাছে সুওয়ালকারী ব্যক্তিদের এবং আমার এই বের হওয়ার ওসিলায় প্রার্থনা করছি। আমি উৎফুল্লতা, অহমিকা, লৌকিকতা ও সুখ্যাতির জন্য বের হইনি। বের হয়েছি কেবল আপনার সন্তুষ্টি অর্জন এবং অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য। আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান।২

মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় যে দুআ পড়বে

মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
মসজিদে প্রবেশের সময় নিম্নোক্ত দুআ পড়া মুস্তাহাব-

أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ الحَمْدُ لِلَّهِ اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلَّمْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

উচ্চারণঃ আউযু বিল্লাহিল আযিম ওয়া বি ওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া সুলতানিহিল কাদিম, মিনাশ শাইতানির রাজিম। আলহামদুলিল্লাহি, আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। আল্লাহুম্মাগফির লি যুনুবি ওয়াফতাহ লি আবওয়াবা রহমাতিকা।

অর্থঃ আমি মহান আল্লাহর কাছে, তাঁর মহৎ সত্ত্বার কাছে এবং তাঁর স্থায়ী ক্ষমতার কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পরিবারবর্গের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন। এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।

এরপর বিসমিল্লাহ বলে ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে। বের হওয়ার সময় আগে বাম পা দিয়ে বের হবে। বের হওয়ার সময়ও পূর্বোল্লিখিত দুআ পড়বে। তবে أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ )আবওয়াবা রাহমাতিকা) এর পরিবর্তে أَبْوَابَ فضلِك )আবওয়াবা ফাজলিকা) বলবে।
আবু হুমাইদ বা আবু উসাইদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- মসজিদে প্রবেশের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পড়বে। এরপর বলবে-

اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রহমাতিকা।

অর্থঃ আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।
আর মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বলবে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাযলিকা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ কামনা করছি।'
ইবনুস সুন্নির রেওয়ায়েতে এতটুকু বৃদ্ধি আছে, যখন বের হবে তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পড়বে। এরপর বলবে-

اللَّهُمَّ أَعِذْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আয়িযনি মিনাশ শাইতানির রাজিম।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে হেফাজত করুন।
হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় এই দুআ পড়তেন-

أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণঃ আউযু বিল্লাহিল আযিম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া সুলতানিহিল কাদিম, মিনাশ শাইতানির রাজিম।

অর্থঃ আমি মহান আল্লাহর কাছে, তাঁর মহৎ সত্ত্বার কাছে এবং তাঁর স্থায়ী ক্ষমতার কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন কেউ এই দুআ পড়ে তখন শয়তান বল, সে সারাদিনের জন্য আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল।
আরো পড়ুনঃ ঘুমের সময় দুআ
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় এ দুআ পড়তেন-

بِسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ।

অর্থঃ আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
আবার বের হওয়ার সময়ও এ দুআ পড়তেন-

بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ।

যিকির, নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।'

মসজিদে অবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ মাসায়েল

মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করলেও মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে অবস্থান করবে। এমনকি মসজিদে অবস্থান না করলেও, শুধু মসজিদে গেলেও ইতেকাফের নিয়ত করবে। যাতে ইতেকাফের ফজিলত অর্জিত হয়ে যায়। তবে উত্তম হল কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর মসজিদ থেকে বের হওয়া।

মসজিদে অবস্থানকারী সৎ কাজের আদেশ করবে। অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। অবশ্য এই কাজ মসজিদ ও মসজিদের বাইরে সব জায়গায় করা চাই। তবে মসজিদে বিশেষভাবে বলা হয়েছে মসজিদের সম্মান মর্যাদা এবং মসজিদ সবচেয়ে উত্তম জায়গা হিসেবে।
কেউ কেউ বলেন, যদি মসজিদে প্রবেশের পর কোন কারণে তাহিয়‍্যাতুল মসজিদ (মসজিদের প্রবেশের পর দুই রাকাত নামাজ) পড়তে না পারে তাহলে এ দুআটি চারবার পড়া মুস্তাহাব-

سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَإِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَاللهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

অর্থঃ আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করি। সকল প্রশংসা তারই। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ সর্ব মহান।

মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা ও ক্রয় বিক্রয় নিষেধ


আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- কেউ মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিলে বলবে:

لَارَدَّهَا اللهُ عَلَيْكَ

উচ্চারণঃ লা রাদ্দাহাল্লাহু আলাইকা।

অর্থঃ আল্লাহ তোমার হারানো বস্তু তোমার কাছে যেন ফিরিয়ে না দেন। কেননা মসজিদকে এসব কাজের জন্য নির্মাণ করা হয়নি।

হযরত বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি মসজিদে ঘোষণা করল, আমার একটি লাল উট হারানো গেছে। কেউ পেয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে
আরো পড়ুনঃ অযুর সময় দুআ
আমার কাছে পৌঁছে দেবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধমক দিয়ে বললেন, তোমার উট পাবে না। মসজিদকে যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদে তাই করতে হবে।'
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- মসজিদে কাউকে ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখলে বলবে- তোমার ব্যবসায় যেন লাভ না হয়। তেমনিভাবে কেউ হারানো জিনিসের ঘোষণা দিলে তাকে বলবে- আল্লাহ যেন তোমার হারানো জিনিস ফিরিয়ে না দেন।

মসজিদে কবিতা, গান ইত্যাদি বলা নিষেধ

মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাউকে মসজিদে অনর্থক কবিতা আবৃত্তি করতে দেখলে তাকে তিনবার বলবে-

فَضَّ اللهُ فَاكَ

উচ্চারণঃ ফাযযাল্লাহু ফাকা।

অর্থঃ আল্লাহ তোমার মুখ ভেঙ্গে দিন।

আশা করি আপনাদের মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় যে দুআ পড়বে এবং মসজিদে যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে এ সম্পর্কে জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত এবং আপনাদের অনেক উপকার হবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম মত ফলো করুন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন