মাসি-পিসি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর

'মাসি-পিসি' গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
মাসি-পিসি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
বিগত বোর্ড পরীক্ষাসমূহের CQ প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর

০১। সীমা শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়ে চাচার আশ্রয়ে ছিল। সেখানে থাকাকালীন তার বাল্যবিবাহ হয়। স্বামীর ঘরে অত্যাচার-নির্যাতন, পরে তালাক। চাচার তেমন সহযোগিতা না গেলেও দমেনি সীমা। টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে যায় সে। সীমা এখন মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।

(গ) উদ্দীপকের চাচা ও 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসি চরিত্রের তুলনামূলক অলোচনা কর।


উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের চাচা ও 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসি চারিত্রিক সাদৃশ্যের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত।
উদ্দীপকের সীমা শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়ে চাচার আশ্রয়ে থাকাকালীন তার বাল্যবিবাহ হয়। স্বামীর ঘরে অত্যাচার, নির্যাতন এবং পরে তালাক পাওয়ার পর সীমা তার চাচার কাছ থেকে তেমন কোন সহযোগিতা পায়নি।

অন্যদিকে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি পিতৃমাতৃহীন এক অসহায় নারী। দুর্ভিক্ষে সে তার পরিবার হারানোর পর মায়ের বোন মাসি আর বাপের বোন পিসি ছাড়া তার আপন বলতে কেউ নেই। বিয়ের পর স্বামী জগুর কাছে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয় আহ্লাদি। সেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদি তার মাসি-পিসির কাছে ফিরে আসে। 

মাসি-পিসি তাকে পরম মাতৃস্নেহে আগলে রাখে। মাসি-পিসি ধান চেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বেচে, হোগলা গেঁথে অনেক কষ্টে নিজেদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতো। তবুও তারা আহ্লাদিকে রক্ষায় সদা প্রচেষ্ট। স্বামীর বাড়িতে ফিরিয়ে না দেয়ার ব্যাপারে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে তারা আহ্লাদিকে সব ধরনের প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করে। 

যা উদ্দীপকের সীমার চাচার মধ্যে অনুপস্থিত। স্বামীর ঘরে অত্যাচার, নির্যাতন এমনকি তালাক পাওয়ার পরেও সীমা তার চাচার কোন সহযোগিতা পায়নি। সুতরাং বলা যায় যে, চরম দুর্দিনে আপন মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর দিক দিয়ে সীমার চাচা ও আহ্লাদির মাসি-পিসি সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের।

(ঘ) উদ্দীপকের সীমা এবং 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি উভয়েই নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি।”- বিশ্লেষণ কর।

মাসি-পিসি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের সীমা এবং 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি উভয়েই নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি" উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের সীমা শৈশবে তার মা-বাবাকে হারিয়ে চাচার আশ্রয়ে থাকাকালীন তার বাল্যবিবাহ হয়। স্বামীর ঘরে তাকে সহ্য করতে হয় নানা অত্যাচার, নির্যাতন এমনকি তার স্বামী তাকে তালাক দেয়।
অন্যদিকে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদিও পিতৃমাতৃহীন এক অসহায় তরুণী, সে কলেরা মহামারিতে তার পরিবার হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। 

জগু নামের এক ছেলের সাথে আহ্লাদির বিয়ে হয়। কিন্তু তার স্বামী ছিল বন্ধ মাতাল। সে দিনরাত মদ খেয়ে আহ্লাদির উপর অত্যাচার-নির্যাতন করতো। কখনো পেট শুকিয়ে লাথি ঝাঁটা মারা, কখনো কলকেপোড়ার ছ্যাঁকা দেওয়া, কখনো বা খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করতো। জণ্ডর এই নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদি তার মাসি-পিসির কাছে ফিরে আসে। 

সীমা ও আহ্লাদি উভয়েই নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি দুই অসহায় তরুণী। সীমা বাল্যবিবাহের শিকার এবং একই সাথে শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর নির্মম অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে তালাক দেয়া হয়, যা আমরা 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি চরিত্রে দেখতে পাই। আহ্লাদিও তার স্বামী জগুর অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসে।

আমাদের সমাজে এমন অনেক নারীই স্বামীর নির্যাতনের শিকার। আর তাদেরই প্রতিনিধি উদ্দীপকের সীমা ও 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি।

২। এইখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে।
এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালোবাসিত না মোটে,
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।

(গ) উদ্দীপকের বুজির সঙ্গে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির অবস্থার তুলনা কর।


উত্তরঃ (গ) শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতিত হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের বুজির সঙ্গে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির সহাবস্থান রয়েছে।
উদ্দীপকের উদ্ধৃত কবিতায় এক বৃদ্ধ দাদু তার নাতিকে তার মৃত বোনের কবর দেখিয়ে স্মৃতিচারণ করেছিলো। পরীর মতো দেখতে মেয়েটির বিয়ে দিয়েছিলো কাজিদের মতো বনিয়াদি ঘরে। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে মেয়েটি কারো ভালোবাসা পায়নি বরং তারা তাকে শারীরিক নির্যাতন না করলেও তিক্ত কথার মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন করতো প্রতিনিয়ত।

অপরদিকে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির বিয়ে হয় জণ্ডর সাথে। জণ্ড মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আহ্লাদির উপর শারীরিক নানা নির্যাতন করতো। পেট শুকিয়ে লাথি ঝাঁটা মারা, কলকেপোড়ার ছ্যাঁকা দেয়া, খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার মতো নির্মম নির্যাতন করতো। জগুর এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদি স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসে। 

উদ্দীপকের বুজি এবং 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি উভয়ই শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার। উদ্দীপকের মেয়েটি শারীরিক নির্যাতনের বদলে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। অন্যদিকে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু নির্যাতিত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান একই।

(ঘ) উদ্দীপকে 'মাসি-পিসি' গল্পের মূলভাব কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে? তোমার মতামত দাও।


উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকে 'মাসি-পিসি' গল্পের মূলভাব আংশিক প্রতিফলিত হয়েছে। 'মাসি-পিসি' গল্পের মূলভাব আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত।
উদ্দীপকে শুধু পরীর মতো মেয়েটির স্বামীর বাড়িতে মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে কারো প্রতিবাদ বা গৃহীত পদক্ষেপের কোন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
"মাসি-পিসি" গল্পে আহ্লাদি যখন তার স্বামী জণ্ডর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মাসি-পিসির কাছে ফিরে আসে তখন মাসি-পিসি তাকে পরম স্নেহে আগলে রাখে। 

নিজেরা ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বেচে, হোগলা গেঁথে অনেক কষ্টে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করলেও আহ্লাদিকে রক্ষার দায়িত্ব তারা যথাযথভাবেই পালন করে। জগু কৈলেশকে দিয়ে মামলার ভয় দেখালেও মাসি-পিসি আহ্লাদিকে ফেরত না পাঠানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকে। তাছাড়া আহ্লাদির ভরণপোষণের জন্য তারা সালতি বেয়ে শাকসবজি, ফলমূল নিয়ে শহরের বাজারে বেচতে যেত। 

সমাজের নানা দুষ্ট লোক, দারোগা, জোতদারের লালসার হাত থেকে আত্যুদিকে রক্ষা করতো মাসি-পিসি। জোতদার গোকুলের পেয়াদাকে বঁটি, রামদা হাতে তাড়া করে। আগাম বিপদের কথা আঁচ করে কাঁথা, কম্বল পানিতে চুবিয়ে রাখে, বঁটি আর দা হাতের কাছে রেখে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে মাসি-পিসি।।

উদ্দীপকে অত্যাচার, নির্যাতনের বিষয়টি উপস্থিত থাকলেও এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে কারো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের বিষয়টি অনুপস্থিত। যেটি 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসির মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে 'মাসি-পিসি' গল্পের আংশিক ভাব প্রতিফলিত হয়েছে।

(৩) সালমার বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় তার মা অসহায় হয়ে পড়ে। একদিকে অর্থকষ্ট, অন্যদিকে ষোল বছর বয়সি সালমার সামাজিক নিরাপত্তা, সব মিলিয়ে সালমার মা দিশেহারা হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সালমার বিধবা খালা তাদের বাড়িতে এসে সালমার দেখাশুনার ভার নেয়। সালমার মা-খালা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে নিজেদের খাওয়া পরা চালায়। এভাবেই তারা জীবনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করে।
মাসি-পিসি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর

(গ) উদ্দীপকের উপার্জনের পথ 'মাসি-পিসি' গল্পে মাসি-পিসির উপার্জনের পথ থেকে ভিন্নতর কেন?


উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের উপার্জনের পথ 'মাসি-পিসি' গল্পে মাসি-পিসির উপার্জনের পথ থেকে ভিন্নতর কারণ তারা ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করে নিজেদের উপার্জনের ব্যবস্থা নিজেরাই করে থাকে।
উদ্দীপকে সালমার বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় তার মা অসহায় হয়ে পড়ে। অর্থকষ্ট, সালমার সামাজিক নিরাপত্তা সব মিলিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় সালমার খালা তাদের বাড়িতে এসে সালমার দেখাশুনার ভার নেয় এবং সালমার মা-খালা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে নিজেদের খাওয়া পরা চালিয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করে।

আবার 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসির আহ্লাদি ছাড়া আপনজন কেউ নেই। তারা ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বেচে, হোগলা গেঁথে, শাকপাতা, ফলমূল, ডাঁটা কুড়িয়ে নিজেদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতো। তাছাড়া জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য তারা গেরস্তের বাড়তি শাক সবজি, ফলমূল নিয়ে সালতি বেয়ে শহরের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করতো। 

এভাবেই তারা নিজেদের উপার্জনের পথ বেছে নেয়। জীবন সংগ্রাম টিকে থাকার জন্য উদ্দীপকের সালমার মা-খালার উপার্জনের পথ এবং 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসির উপার্জনের পথ ভিন্ন কেননা তারা সবাই ভিন্ন ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে।

(ঘ) উদ্দীপকের নারীর যে সংগ্রামী চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা যেন 'মাসি-পিসি' গল্পের মূল ভাবকে ইঙ্গিত করে। মূল্যায়ন কর।


উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের নারীর যে সংগ্রামী চিত্র হলে ধরা হয়েছে, তা যেন 'মাসি-পিসি' গল্পের মূল ভাবকে ইঙ্গিত করে, মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকে সালমার বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় তার মা অসহায় হয়ে পড়েন। অর্থকষ্ট, সালমার সামাজিক নিরাপত্তা, সব মিলিয়ে সালমার মা দিশেহারা হয়ে পড়লে সালমার খালা তাদের বাড়িতে এসে সালমার দেখাশুনার ভার নেয়। সালমার মা ও খালা পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে নিজেদের খাওয়া পরা চালিয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করে।

তেমনি 'মাসি-পিসি' গল্পেও মাসি-পিসির জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার যে লড়াই তা পরিলক্ষিত হয়। তারা নিজেদের ভরণপোষণের জন্য ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বেচে, হোগলা গেঁথে, শাকপাতা, ফলমূল, ডাঁটা কুড়িয়ে জীবন ধারণ করে। এছাড়া তারা সালতি বেয়ে ফলমূল, শাকসবজি নিয়ে শহরের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করতো। নিজেদের পাশাপাশি আহ্লাদির ভরণপোষণেরও ব্যবস্থা করতেন। নারী হয়ে নৌকা চালনা, সবজির ব্যাবসা পরিচালনা নারীদের সংগ্রামী জীবনচিত্রই প্রকাশ করে।

উদ্দীপকে সালমার মা-খালা জীবন সংগ্রামে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। তেমনি 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসিও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য সব ধরনের প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে চলেছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের নারীর সংগ্রামী চিত্র 'মাসি-পিসি' গল্পের মূল ভাবকে ইঙ্গিত করে।

(৪) দীপ শিখা গার্মেন্টসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় গার্মেন্টস কর্মী দম্পতি জলিল ও রাবেয়া। তাদের একমাত্র মেয়ে জোবাইদা অনাথ হয়ে আশ্রয় নেয় বৃদ্ধ নানা-নানির সংসারে। গরিব নানা-নানি তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে তাকে বিয়ে দেয় পাশের গ্রামের আকিবের সাথে। কিন্তু সুখের মুখ দেখা হলনা জোবাইদার। আকিব তাকে মারধর করে এবং সারাদিন কিছু না খেতে দিয়ে ঘরে আটকে রাখে। স্বামীর এই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে আবার ফিরে আসে নানা-নানির কাছে। নানা-নানি এতে ভীষণ কষ্ট পায়, তবু পরম যত্নে আগলে রাখে অসহায় জোবাইদাকে।
মাসি-পিসি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর

(গ) উদ্দীপকের আকিব চরিত্রটি 'মাসি-পিসি' গল্পের কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? আলোচনা কর।


উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের আকিব চরিত্রটি 'মাসি-পিসি' গল্পের জণ্ড চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। দীপ শিখা গার্মেন্টেসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাবা মাকে হারিয়ে অনাথ জোবাইদা বৃদ্ধ নানা-নানির কাছে আশ্রয় নেয়। গরিব নানা-নানি সাধ্যমত চেষ্টা করে পাশের গ্রামের আকিবের সাথে জোবাইদার বিয়ে দেয়। কিন্তু সে বিয়েতে সুখ হয়নি জোবাইদার। 

আকিব তাকে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। স্বামীর এই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সে আবার নানা-নানির কাছে ফিরে আসে। অন্যদিকে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি কলেরায় বাবা মাকে হারিয়ে মাসি-পিসির কাছে আশ্রয় পায়। জগুর সাথে বিয়ে হলেও সে আহ্লাদির উপর অনেক অত্যাচার করত। 

সে আহ্লাদিকে কলকে পোড়া ছ্যাঁকা দিতো, খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতো। এসব সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদি আবার মাসি-পিসির কাছে ফিরে আসে। জগুর এরূপ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই উদ্দীপকের আকিবের মধ্যেও বিদ্যমান। অতএব, উদ্দীপকের আকিব চরিত্রের সাথে মাসি-পিসি গল্পের জণ্ডর চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

(ঘ) উদ্দীপকের নানা-নানির অবস্থা 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি ও পিসির মতই হৃদয় বিদারক।"-মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।


উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের নানা-নানির অবস্থা মাসি-পিসি গল্পের মাসি ও পিসির মতই হৃদয় বিদারক মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকে জোবাইদা এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তার বাবা মাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে যায়। অনাথ জোবাইদা আশ্রয় নেয় নানা-নানির কাছে। গরিব নানা-নানি তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে জোবাইদাকে বিয়ে দেয় পাশের গ্রামে। কিন্তু সে সংসারে শান্তি হয়না তার। স্বামীর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে আবার নানা-নানির কাছে ফিরে আসে। 

নানা-নানি এতে ভীষণ কষ্ট পায়, তবু পরম মমতায় আগলে রাখে জোবাইদাকে। নিজেদের কষ্ট হলেও যথাসাধ্য চেষ্টা করে জোবাইদাকে ভাল রাখার। 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদিও বিয়ের পর স্বামীর অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে সে যখন মাসি-পিসির বাড়ি ফিরে আসে তখন তারা আহ্লাদিকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে না দিয়ে পরম যত্নে আগলে রাখে। 

কিন্তু তারা নিজেরাও ছিল বিধবা ও নিঃস্ব। সংসারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা আয়ের বিকল্প পথ খুঁজে নেয়। তারা তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিরূপ বিশ্ব থেকে আহ্লাদিকে রক্ষার জন্য কঠিন সংগ্রাম পরিচালনা করে।

অর্থাৎ, উদ্দীপকের দরিদ্র নানা-নানিকে যেমন নিজেদের অসহায়ত্বের মাঝেও জোবাইদাকে রক্ষা করতে বৃদ্ধ বয়সে নতুন করে সংগ্রাম করতে হয়। 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসিকেও তেমনি নিজেদের অসহায়ত্বের মাঝেও আহ্লাদির জন্য আলাদা একটি সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের নানা-নানির অবস্থা 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসির মতোই হৃদয়বিদারক।

(৫) ১৯৭১ সাল। পাক বাহিনীর অত্যাচারে দিশেহারা, পর্যুদস্ত দেশ। মাঠ-ঘাট পেরিয়ে মিলিটারি-রাজাকারের চোখ এড়িয়ে ভারতের আশ্রয় শিবিরের উদ্দেশ্যে ছুটে চলার প্রাণান্তকর চেষ্টা বৃদ্ধা আদুরির। হঠাৎ খেতের মধ্যে গুলিবিদ্ধ মায়ের লাশের পাশে কান্নারত এক শিশুকে দেখে থমকে যায় আদুরি। নিঃস্ব কোলে তুলে নেয় অসহায় শিশুটিকে। আবারও ছুটতে থাকে আদুরি। 'শিশুটিকে যে বাঁচাতেই হবে'- ভাবতে ভাবতে সুদৃঢ় হয় বৃদ্ধার পদক্ষেপ।

(গ) উদ্দীপকে বর্ণিত শিশুটির সাথে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির মিল কোন দিক থেকে?-বুঝিয়ে দাও।


উত্তরঃ (গ) আহ্লাদির অসহায়ত্ব এবং তাকে রক্ষা করতে মাসি-পিসির ঐক্যবদ্ধ হবার দিক থেকে উদ্দীপকে বর্ণিত শিশুর মিল বিদ্যমান।
'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি এক অসহায় নারী। স্বামীর বাড়িতে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু কলেরা মহামারিতে তার পরিবারের সকলে মারা গেলে সে একেবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আবার তার এই অসহায়ত্বের কারণেই মাসি-পিসি নিজেদের বিভেদ ভুলে এক হয়। আহ্লাদিকে রক্ষার জন্য তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবন সংগ্রাম পরিচালনা করে। 

উদ্দীপকে বর্ণিত শিশুটির ক্ষেত্রেও আমরা এই একই বিষয় লক্ষ করি। শিশুটিও মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। আবার, তাকে রক্ষা করার জন্যই আদুরি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন। আর এভাবেই শিশুটি আহ্লাদি চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

(ঘ) ভাবতে ভাবতে সুদৃঢ় হয় বৃদ্ধার পদক্ষেপ।"-এ উক্তিটি দ্বারা 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসির চারিত্রিক দৃঢ়তা ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের অসহায় শিশুটিকে রক্ষার জন্য বৃদ্ধা আদুরির মাঝে যে দৃঢ়তা আমরা প্রত্যক্ষ করি, 'মাসি-পিসি' গল্পে আহ্লাদিকে রক্ষা করার জন্য মাসি-পিসির মাঝেও সেই একই দৃঢ়তা লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, মিলিটারির আক্রমণে পিতা মাতা হারানো অসহায় এক শিশুর কান্না দেখে বৃদ্ধা আদুরি তাকে কোলে তুলে নেন। অসহায় শিশুটিকে বাঁচাতে তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন।
'মাসি-পিসি' গল্পে আহ্লাদিকে রক্ষার ক্ষেত্রে মিসি-পিসির মাঝেও দৃঢ়তা লক্ষ করা যায়। স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃ-মাতৃহীন তরুণী আহ্লাদিকে বিরূপ বিশ্ব থেকে রক্ষা করতে বিধবা ও নিঃস্ব মাসি-পিসি নতুন এক জীবন যুদ্ধ শুরু করেন। অত্যাচারী স্বামী এবং লালসা-উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুন্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে আহ্লাদিকে নিরাপদ রাখার জন্য তারা বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী সংগ্রাম পরিচালনা করেন। তাঁদের নিজেদের মধ্যে একসময় বিভেদ থাকলেও আহ্লাদিকে রক্ষার প্রশ্নে তারা এক হন। তাঁদের দৃঢ়তার কারণেই আহ্লাদি তার অসহায়ত্বের মাঝেও নিরাপদ একটি জীবনের সন্ধান পায়।

সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের অসহায় শিশুটিকে রক্ষা করতে বৃদ্ধা আদুরি যেভাবে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন, আহ্লাদিকে রক্ষার ক্ষেত্রে মাসি- পিসি চরিত্রের মাঝেও আমরা সেই দৃঢ়তারই বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই।

০১। 'মাসি-পিসি' গল্পটির লেখক কে?

উত্তরঃ 'মাসি-পিসি' গল্পের লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

০২। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপ্রদত্ত নাম কী?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

০৩। 'ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়' উক্তিটি কার?

উত্তরঃ 'ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়' উক্তিটি 'মাসি-পিসি' গল্পের পিসির।

০৪। হাতে দুটো পয়সা এলে কার স্বভাব বদলে যায়?

উত্তরঃ হাতে দুটো পয়সা এলে কৈলাশের স্বভাব বদলে যায়।

০৫। 'মাসি-পিসি'-গল্পে উল্লিখিত বাবুর নাম কী?

উত্তরঃ 'মাসি-পিসি' গল্পে উল্লিখিত বাবুর নাম গোকুল।

০৬। 'সালতি' কী?

উত্তরঃ শালকাঠ নির্মিত বা তালকাঠের সরু ডোঙা বা নৌকা।

০৭। 'পাতাশূন্য শুকনো গাছটায়' কারা বসেছে?

উত্তরঃ পাতাশূন্য শুকনো গাছটায় শকুনরা এসে বসেছে।

০৮। "খুনসুটি রাখো দিকি কৈলেশ তোমার।"-উক্তিটি কার?

উত্তরঃ খুনসুটি রাখো দিকি কৈলেশ তোমার-উক্তিটি মাসির।

০৯। 'মাসি-পিসি' গল্পে চৌকিদারের নাম কী?

উত্তরঃ 'মাসি-পিসি' গল্পে চৌকিদারের নাম কানাই।

বিগত বোর্ড পরীক্ষাসমূহের CQ অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর

০১। আহ্লাদি স্বামীর বাড়ি যেতে চায় না কেন?


উত্তরঃ স্বামীর অত্যাচারের ভয়ে আহ্লাদি স্বামীর বাড়ি যেতে চায়নি।
'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদি স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক অসহায় তরুণী। সে শ্বশুরবাড়িতে তার স্বামী জগুর হাতে প্রতিনিয়ত নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়। জণ্ড আহ্লাদিকে পেট শুকিয়ে লাথি ঝাঁটা মারা, কলকেপোড়ার ছ্যাঁকা দেওয়া, খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখাসহ নানারকম শারীরিক নির্যাতন করতো। তার এই অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাসি-পিসির কাছে এসে আশ্রয় নেয় আহ্লাদি এবং তার স্বামীর বাড়িতে পুনরায় ফিরে যেতে চায় না।

০২। "বুড়ো রহমান ছলছল চোখে তাকায় আহ্লাদির দিকে।" ব্যাখ্যা কর।


উত্তরঃ আহ্লাদির দিকে তাকিয়ে নিজের মেয়ের কথা মনে করে বৃদ্ধ রহমানের চোখে জল চলে আসে। বৃদ্ধ রহমানের মেয়ে কিছুদিন আগে শ্বশুর-বাড়িতে মারা গেছে। মেয়েটি কিছুতেই শ্বশুরবাড়ি যেতে চায়নি, অনেক কেঁদেছে। তবু তার ভালোর কথা চিন্তা করে জোর করে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। যদিও আহ্লাদির সাথে তার মেয়ের চেহারায় কোনো মিল নেই, বয়সেও সে ছিল আহ্লাদির থেকে ছোটো। তবুও আহ্লাদির ফ্যাকাশে চেহারায় সে তার নিজের মেয়ের ছাপ দেখতে পায়।

০৩। "মোরা নয় মরব।"- পিসির এ উক্তি কীসের ইঙ্গিত বহনকারী? বুঝিয়ে দাও।


উত্তরঃ কানাইকে সতর্ক করে দেবার জন্য পিসি উক্তিটি করেছে।
আহ্লাদির ওপর গোকুলের কু-দৃষ্টি পড়লে সে দারোগার সাথে মিলে চক্রান্তে লিপ্ত হয়। নিজ লালসা চরিতার্থ করার জন্য সে কানাইকে দিয়ে মাসি-পিসিকে ডেকে পাঠায় এবং গ্রামের গুন্ডা-বদমাশদের দিয়ে আহ্লাদিকে তুলে আনতে পাঠায়। কিন্তু মাসি-পিসি তাদের এ চক্রান্ত বুঝতে পারে এবং কানাইয়ের সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। সে জোর করলে মাসি-পিসি দা-বঁটি উঠিয়ে কানাইয়ের দলকে পিছু হটতে বাধ্য করে এবং তাদেরকে সতর্ক করে দেয় যে, আহ্লাদিকে রক্ষা করতে তারা যেমন লড়াই করতে পারে, তেমনি নিজেদের জীবনও বিসর্জন দিতে পারে।

৪। "ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়"- এখানে 'পাষাণ' কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?


উত্তরঃ এখানে পাষাণ' কথাটি দ্বারা হৃদয়হীন, নির্দয় স্বামীকে বোঝানো হয়েছে
আহ্লাদির মতো তার পিসিও ছিল স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার। কিন্তু সন্তান কোলে আসতেই সেই নিষ্ঠুর স্বামীও কোমল হৃদয়ের মানুষে পরিণত হয়। তাই পিসি আহ্লাদিকে বোঝায় যে, স্বামী যতই ক্রুর হোক না কেন, সন্তানের মুখ দেখলে সে আর নিষ্ঠুর থাকতে পারে না।

০৫। "অতি সন্তর্পণে তারা বিছানা ছেড়ে ওঠে।"- কাদের সম্পর্কে এবং কেন বলা হয়েছে?


উত্তরঃ মাসি-পিসির সম্পর্কে উক্তিটি করা হয়েছে।
কানাই চৌকিদার ও তার সাথের লোকজনকে তাড়িয়ে দেবার পরও মাসি-পিসি নিশ্চিন্ত হতে পারে না। তাদের সন্দেহ হয় যে ওরা আবার আসতে পারে। তাই মাসি-পিসি সম্ভাব্য আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে বিছানা ছেড়ে ওঠে। কিন্তু বিছানায় আহ্লাদি ঘুমাচ্ছিল। তার ঘুমে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় এ কারণেই তারা অতি সন্তর্পণে বিছানা ছেড়ে ওঠে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন