সিজদার তাসবীহ ও দুআ - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন

সিজদার তাসবীহ ও দুআ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে নিম্নের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
সিজদার তাসবীহ ও দুআ - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু- সিজদায় এ দুআটি পড়তেন এবং সিজদা থেকে উঠার সময় ও দুই সিজদার মাঝের দুআ। এছাড়া আরও আলোচনা করছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক এর সম্বন্ধে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

সিজদার তাসবীহ ও দুআ


রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ পড়ে সিজদার জন্য তাকবির বলবে। আর মাটিতে কপাল রাখা পর্যন্ত তাকবির লম্বা করবে। এই তাকবির হল সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামায নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না। সিজদার অনেক দুআ রয়েছে। যেমন-
সিজদার তাসবীহ ও দুআ - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন
হযরত হুজায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাকাতে সুরা বাকারা, নিসা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করেছেন। রহমতের আয়াত তেলাওয়াত করলে আল্লাহর কাছে রহমত চেয়েছেন। আযাবের আয়াত তেলাওয়াত করলে আল্লাহর কাছে আযাব থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। এরপর তিনি সিজদা করেছেন। সিজদায় 'সুবহানা রাব্বিয়াল আলা' পড়েছেন। সিজদা করেছেন দাড়ানোর সমপরিমাণ।'
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু, সিজদায় খুব বেশি এ দুআটি পড়তেন-

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

উচ্চারণঃ সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ! আমি আপনার সপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করি। আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো।২

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু- সিজদায় এ দুআটি পড়তেন

সিজদার তাসবীহ ও দুআ - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন
হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু- সিজদায় এ দুআটি পড়তেন-

سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ

উচ্চারণঃ সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।

অর্থঃ মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা।
হযরত আলি রা.থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَة وَشَقَّ سَبْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু। তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনার জন্য সিজদা করলাম, আপনার ওপরই ঈমান আনলাম, আপনার সামনেই সমর্পিত হলাম। আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সিজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং বিদীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন। আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা।'
হযরত আউফ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ রুকু করলে নিচের দুআ পড়তেন। সেজদাতেও এমনটি করতেন-

سُبْحَانَ ذِي الجَبَرُوتِ وَالْمَلَكُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظْمَةِ.

উচ্চারণঃ সুবহানা যিল জাবারুতি ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ই, ওয়াল আযমাহ।

অর্থঃ শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লেখিত দুআ পড়তেন।২
হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেজদার মধ্যে তিনবার এ তাসবীহ পড়বে। এটিই সর্বনিম্ন স্তর:

سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আলা।

অর্থঃ আমি আমার মহা মহীয়ান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- এক রাতে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি খুঁজতে লাগলাম, হঠাৎ দেখলাম, তিনি রুকু বা সিজদারত অবস্থায় আছেন। তিনি তখন এ দুআ পড়ছিলেন-

سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِنَّا أَنتَ

উচ্চারণঃ সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা লাইলাহা ইল্লা আনতা।

অর্থঃ আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- আয়েশা রা. বলেন, আমার হাত তার পায়ে লাগল, তিনি নামাযের স্থানে ছিলেন এবং উভয় পা দণ্ডায়মান ছিল। তিনি তখন এ দুআ পড়ছিলেন-

اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ .

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আউজু বি রিজাকা মিন সাখাতিকা, ওয়াবি মুআফাতিকা মিন উকুবাতিক। ওয়া আউজুবিকা মিনকা, লা উহসি সানাআন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনার সন্তুষ্টি চাই। ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাই। শাস্তি থেকে মুক্তি চাই। আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। আপনি তেমনই মহিমান্বিত যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন।'

হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-তোমরা রুকুতে রবের পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর, বড়ত্ব প্রকাশ কর। আর সিজদায় বেশি বেশি দুআ করো। কেননা, সিজদায় দুআ বেশি কবুল হয়।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-সেজদায় বান্দা আল্লাহ তায়াআলার অধিক নিকটে থাকে। অতএব, তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দুআ করো।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন

সিজদার তাসবীহ ও দুআ - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ : دِقَهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَاخِرَةَ، وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যাম্বি কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আও ওয়ালাহু ওয়া আখেরাহু, ওয়া আলানিয়াহু ওয়াসিররাহু।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিন, ছোট-বড়, শুরু-শেষ, প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য সব গুনাহ মাফ করে দিন।'

উপরোক্ত সকল দুআ সিজদায় পড়া মুস্তাহাব। এক সময়ে না পড়তে পারলে বিভিন্ন সময়ে পড়বে। যেমনটি পূর্বে আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য দুআ পড়তে না পারলে সিজদার তাসবিহ পড়বে ও কিছু দুআ পড়বে। সিজদায়ও রুকুর মত কুরআন তেলাওয়াত করা মাকরুহ। অন্যান্য বিষয়ও রুকুর মতই।

নামাযে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম- এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীদের মতে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম। কেননা হাদিসে আছে উত্তম নামায যাতে কিয়াম দীর্ঘ হয়।২
এর দ্বারা বুঝা যায় কিয়াম উত্তম। তাছাড়া নামাযে কিয়াম দীর্ঘ হলে তাতে কুরআন বেশি পড়া হবে। আর সিজদা দীর্ঘ হলে তাসবিহ বেশি পড়া হবে। আর কুরআন শ্রেষ্ঠ। তাই দীর্ঘ কিয়ামও শ্রেষ্ঠ হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বেশি রাকাত উত্তম। কেননা হাদিসে আছে-সিজদার সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।

ইমাম তিরমিজি রহ. সুনানে তিরমিজিতে উল্লেখ করেন, উলামায়ে কেরাম উক্ত বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ দীর্ঘ কিয়ামকে উত্তম বলেছেন আর কেউ কেউ বেশি রাকাতকে উত্তম বলেছেন।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম আহমদ রহ. কোন ফায়সালা দেননি। ইসহাক রহ. বলেছেন, দিনের বেলা রুকু-সিজদা বেশি করা উত্তম আর রাত্রিবেলা দীর্ঘ কিয়াম উত্তম।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, ইসহাক রহ. এমনটি বলেছেন। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাযের বিবরণ হাদিসে এসেছে। তার সেসব বিবরণে দীর্ঘ কিয়ামের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর হাদিসে দিনের নামাযে রাতের নামাযের মতো বিবরণ আসেনি।

নামাযের সিজদায় যা পড়বে, তিলাওয়াতের সিজদাতেও তাই পড়া মুস্তাহাব। সেগুলোর সঙ্গে এ দুআটি পড়াও উত্তম-

اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا وَأَعْظِمْ لِي بِهَا أَجْرًا، وَضَعُ عَنِّي بِهَا وِزْرًا، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَائِدِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ আলহা লি ইনদাকা যুখরা, ওয়া আ'জিম লি বিহা আজরা, ওয়া দা” আন্নি বিহা বিযরা, ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাউদ আলাইহিস সালাম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! একে আমার জন্য আপনার কাছে সঞ্চয় করে রাখুন, এর পরিবর্তে আমাকে মহাপ্রতিদান দান করুন। এর মাধ্যমে আমার পাপ মার্জনা করে দিন। এটি আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন যেমনটা কবুল করেছিলেন দাউদ আলাইহিস সালাম থেকে।'
নিচের আয়াতটি পড়াও মুস্তাহাব-

سُبْحْنَ رَبَّنَا إِن كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا.

অর্থঃ আমাদের পালনকর্তা পবিত্র মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে।
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াতের সিজদায় এ দুআটি পড়তেন-

سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَةً وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ

উচ্চারণঃ সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু বিহাওলিহি ওয়া কুওয়াতিহ

অর্থঃ আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সেজদাহ করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং নিজ কুদরত ও শক্তিতে বিদীর্ণ করে চোখ, কান বের করেছেন।২
হাকেম রহ. উক্ত দুআর সঙ্গে “ফা-তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন” ও বৃদ্ধি করেছেন। ইমাম তিরমিজি রহ. আরো বলেন, ইমাম হাকেম রহ. যে অংশ বৃদ্ধি করেছেন তা ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্ত অনুযায়ী হয়েছে।

সিজদা থেকে উঠার সময় ও দুই সিজদার মাঝের দুআ

সিজদার তাসবীহ ও দুআ - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন
সিজদা থেকে মাথা উঠানো যখন শুরু করবে তখন থেকে তাকবির বলা শুরু করবে এবং সোজা হয়ে বসা পর্যন্ত তাকবির দীর্ঘ করবে। তাকবির শেষ করে সোজা হয়ে বসে যেসব দুআ পড়বে-
হযরত হুজায়ফা রা. থেকে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিয়াম করেছিলেন। সেই হাদিসের বিবরণে আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে নিচের দুআটি পড়েছিলেন। দুই সিজদার মাঝে তিনি সিজদার সমপরিমাণ বসেও ছিলেন। দুআটি এই-

رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي

উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন, আমাকে মাফ করে দিন।'
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রাতে তাঁর খালা মাইমুনা রা. এর ঘরে রাত যাপন করেন। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাযের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় নিচের দুআটি পড়তেন

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনি ওয়াজ বুরনি, ওয়াহ দিনি, ওয়ার জুকনি।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করুন, দয়া করুন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে রিজিক দান করুন এবং হেদায়াত দিন।

সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় “ওয়াআ ফিনি” (আমাকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখুন) অতিরিক্ত এসেছে।২

দ্বিতীয় সিজদার দুআ


দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার মত দুআ করবে। দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠার পর অল্প সময় আরাম করে বসবে। এরপর তাকবীর বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। আল্লাহ শব্দের লামকে দাঁড়ানো পর্যন্ত লম্বা করবে। এটাই শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের প্রসিদ্ধ মত। তাদের আরেকটি অভিমত রয়েছে যে, তাকবির বলা ছাড়াই বসবে। এরপর উঠার সময় তাকবির বলে উঠে দাঁড়াবে। 
সিজদার তাসবীহ ও দুআ - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন
তৃতীয় আরেকটি অভিমত রয়েছে, তাকবির বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। এরপর উঠে দাঁড়াবে তাকবির ছাড়া। তবে সকলের মতে, এক তাকবির বলবে। দুই তাকবিরের কথা কেউ বলেন না। শাফেয়িগণ প্রথম পদ্ধতিটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেন নামাযের কোনো সময় যিকির থেকে খালি না থাকে।

সিজদা থেকে উঠার পর কিছুক্ষণ বসা সুন্নাত। বুখারি শরিফসহ অন্যান্য কিতাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন বলে বর্ণিত আছে। শাফেয়ি মাযহাবে তা মুস্তাহাব। এটা প্রতি রাকাতে দ্বিতীয় সিজদার পর করতে হয়। সিজদায়ে তিলাওয়াতে উক্ত বৈঠক নেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

[হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, দ্বিতীয় তাকবিরের পরে সামান্য বসবে না; বরং সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। সুতরাং তাদের নিকট এসব মতানৈক্য নেই, বরং সেজদা থেকে উঠার সময়ের তাকবিরকে দীর্ঘ করে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। আর হানাফি মাযহাবে ২য় সিজদার পর উক্ত বৈঠক সুন্নাত নয় (হেদায়া ১/১১০)]

দ্বিতীয় রাকাতের দুআ ও যিকির


দ্বিতীয় রাকাতেও প্রথম রাকাতের মতই দুআ পড়বে। ফরজ নামায হোক বা নফল হোক। তবে কিছু দুআ ব্যতিক্রম আছে।
  • ১. প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা আছে, দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা নেই। দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে যে তাকবির বলা হয়ে থাকে, সেটি সেজদা থেকে উঠার তাকবির। আর সেটি সুন্নত।
  • ২. দ্বিতীয় রাকাতে শুরুর দুআ (সানা) পড়তে হবে না।
  • ৩. প্রথম রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে- এ বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল আউযুবিল্লাহ পড়া। [হানাফী মাযহাবের মত হল- আউযুবিল্লাহ পড়তে হবে না]
  • ৪. দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত প্রথম রাকাতের তুলনায় ছোট হবে। এটিই নির্ভরযোগ্য অভিমত। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।
সিজদার তাসবীহ ও দুআ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় এ দুআ পড়তেন এ সম্পর্কে জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত এবং আপনাদের অনেক উপকার হবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম মত ফলো করুন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন