নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ - ফজর নামাযের পর যিকির

নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ এবং ফজর নামাযের পর যিকির এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে নিম্নের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি জান্নাতে প্রবেশ করার আমল এবং মাগরিবের নামাযের পরে এই দুআটি সাতবার পড়বে। এছাড়া আরও আলোচনা করছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক এর সম্বন্ধে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ


উলামায়ে কেরামের মতে নামাযের পর যিকির করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল-
হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাস করা হল, কোন সময় দুআ বেশি কবুল হয়? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শেষ রাতের দুআ ও ফরয নামাযের পরের দুআ।২

হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত- আমি তাকবিরের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায শেষ হয়েছে বুঝতে পারতাম।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ফরয নামাযের পর লোকেরা উঁচু আওয়াজে তাকবির বলত। অন্য বর্ণনায় আছে- ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তাকবিরের আওয়াজ শুনে আমি বুঝতে পারতাম যে, নামায শেষ হয়েছে।'

হযরত সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করে তিনবার ইস্তিগফার করতেন। এরপর এ দুআটি পড়তেন-

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, তাবারাকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি দোষ-ত্রুটি থেকে চির মুক্ত, নিরাপত্তার মালিক। আপনার কাছ থেকেই আসে নিরাপত্তা। আপনি মহিমাময়, প্রতাপ ও অনুগ্রহের অধিকারী।
এই হাদিসের একজন বর্ণনাকারী ইমাম আওযাঈ রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন- কীভাবে তিনি ইস্তিগফার করতেন? তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-

أَسْتَغْفِرُ اللهَ أَسْتَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ।

অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।'

হযরত মুগিরা বিন শু'বা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শেষ করে এ দুআ পড়তেন-

لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ. اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِ مِنْكَ الْجَدُّ.

উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আ'তাইতা ওয়া লা মু'তিয়া লিমা মানা'তা, ওয়া লা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।

অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তার কোন শরীক নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না।

হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন। আর বলতেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি নামাযের পর এগুলো পড়তেন। দুআটি এই-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ.

উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। ওয়ালা না'বুদু ইল্লা ইয়াহু, লাহুন্নিমাতু ওয়া লাহুল ফাদলু, ওয়া লাহুস সানাউল হাসান। লা ইলাহা ইল্লাহু মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাও কারিহাল কাফিরুন।

অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তার কোন শরীক নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। প্রজ্ঞাময় পরাক্রমশালী আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, আমরা তাকে ছেড়ে কারো উপাসনাও করি না। সব নেয়ামত তার, সকল অনুগ্রহ তার এবং সুপ্রশংসাও কেবল তার। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই। আমরা খাঁটি অন্তরে তা স্বীকার করি, কাফেররা যতই একে খারাপ মনে করুক।'

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রাসুলের কাছে এসে বললেন, ধনী সাহাবায়ে কেরাম উঁচু মর্যাদা, স্থায়ী নেয়ামত লাভ করছেন- আমরা যেমন নামায পড়ি, তারাও নামায পড়ে। আমরা যেমন রোজা রাখি, তারাও রোজা রাখে। তবে তাদের রয়েছে অতিরিক্ত ধন-সম্পদ যা দ্বারা তারা হজ্ব, উমরা করে, জিহাদে অংশগ্রহন করে এবং দান করে। এগুলো দিয়ে তারা আমাদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। 
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন আমল শিখিয়ে দিব যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমান হতে পারবে এবং যারা তোমাদের পরে আছে তাদের থেকে এগিয়ে যেতে পারবে। এই আমল ছাড়া কেউ তোমাদের থেকে উত্তম হতে পারবে না। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবশ্যই।
নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর ৩৩ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলবে।'
হযরত কা'ব বিন উজরা থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ফরজ নামাযের পরে তাসবিহ পাঠকারী ব্যক্তি নিষ্ফল হয় না। আর তা হল, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া।২

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলে এবং একশত বার পূর্ণ হওয়ার পর নিচের দুআ পড়ে, তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। দুআটি এই-

لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়হদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইন কাদির।

অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।

হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি ফরজ নামাযের পর এই দুআ পড়তেন-

اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمَرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল যুবনি, ওয়া আউজুবিকা আন উরাদ্দা ইলা আরজালিল উমুরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ্দুনয়া ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কবর।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি কাপুরুষতা থেকে পানাহ চাই। একদম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে পানাহ চাই। দুনিয়ার ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।'

জান্নাতে প্রবেশ করার আমল

নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কোন মুসলমান ব্যক্তি দুটি আমলের প্রতি যত্নবান হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমল দুটি অতি সহজ এবং এর উপর আমলকারী খুবই কম।
  • ১ম আমল হল, প্রতি ফরয নামাযের পর ১০বার সুবহানাল্লাহ, ১০বার আলহামদুলিল্লাহ, এবং ১০ আল্লাহু আকবার বলা। পাঁচ ওয়াক্ত মিলে ১৫০ বার হয়, যা যবানে ১৫০ বার হলেও আমলের পাল্লায় হয় এক হাজার পাঁচশত বার।
  • ২য় আমল হল, ঘুমানোর সময় ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার। যবানে যদিও ১০০ শত হয়, কিন্তু আমলের পাল্লায় তা এক হাজার পরিমাণ সওয়াব।
ইবনে উমর রা. বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাতে গণনা করে পড়তে দেখেছি। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কীভাবে এটি সহজ কিন্তু আমলকারী কম? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘুমানোর সময় শয়তান তোমাদের কাছে এসে এই তাসবিহগুলো পড়ার পূর্বেই তোমাদের ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আবার নামাযের সময় তোমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, ফলে এগুলো পড়া হয় না।২
হযরত উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তে বলেছেন।
সুনানে আবু দাউদের এক বর্ণনায় 'আল-মুআউয়িজাত' শব্দটি এসেছে, তাই উক্ত দুটিসহ সুরা এখলাসও পড়া চাই।

হযরত মুআজ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরে বললেন, হে মুয়াজ! আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে মহব্বত করি।
হে মুয়াজ! আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর এ দুআটি পড়তে ভুলবে না-

اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكُرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা যিকরিকা ওয়া শোকরিকা ওয়াহুসনি ইবাদাতিক।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি যিকির, শোকর ও সুন্দর ইবাদতের ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাই।'
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করে ডান হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মুছতেন, এরপর এ দুআ পড়তেন-

أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ اللَّهُمَّ أَذْهِبْ عَنِي الْهَمَّ وَالْحَزَنَ

উচ্চারণঃ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর রাহমানুর রাহিম। আল্লাহুম্মা আজহিব আগ্নিল হাম্মা ওয়াল হাযান।

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই। তিনি অতি দয়ালু পরম করুণাময়। হে আল্লাহ, আমার টেনশন ও চিন্তা দূর করুন।২

হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আমি ফরজ ও নফল নামাযে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হলে তাকে এ দুআ পড়তে শুনতাম-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُونِي وَخَطَايَايَ كَلَهَا اللَّهُمَّ الْعَشْنِي وَاجْبُرْنِي، وَاهْدِنِي لِصَالِحٍ الْأَعْمَالِ وَالْأَخْلَاقِ إِنَّهُ لَا يَهْدِي لِصَالِحِهَا وَلَا يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِنَّا أَنتَ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি ওয়া খাতায়াইয়া কুল্লাহা, আল্লাহুম্মান আশনি ওয়ায বুরনি ওয়াহ দিনি লি সালিহিল আ'মালি ওয়াল আখলাক, ইন্নাহু লা ইয়াহদি লি সালিহিহা ওয়া লা ইয়াসরিফু সাইয়্যিয়াহা ইল্লা আনতা।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আমাকে তাওফিক দাও, সাহায্য করো। আমাকে সচ্চরিত্র ও নেক আমলের প্রতি পথনির্দেশ করো। তুমি ব্যতীত অন্য কেউ নেক আমল করার ও বদ আমল থেকে বেঁচে থাকার হেদায়েত করতে পারে না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করে এই দুআটি পড়তেন

নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শেষ করে এই দুআটি পড়তেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই দুআ সালামের আগে বলতেন নাকি পরে বলতেন আমার স্মরণ নেই।
দুআটি এরকম-

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ، وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.

উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইজ্জাতি আম্মা ইয়াসিফুন, ওয়া সালামুন আলাল মুরসালিনা, ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

অর্থঃ পবিত্র আপনার পরওয়ারদিগারের সত্তা, তারা যা বর্ণনা করে তিনি তা থেকে সম্মানিত ও পবিত্র। নবিদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর নিমিত্ত।'
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করে এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمُرِي آخِرَةَ، وَخَيْرَ عَمَلِي خَوَاتِمَهُ، وَاجْعَلْ خَيْرَ أَيَّامِي يَوْمَ أَلْقَاكَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ আল খায়রা উমরি আখেরাহু, ওয়া খাইরা আমালি খাওয়াতিমাহু, ওয়াজ আল খাইরা আইয়্যামি ইয়াওমা আলকাকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমার শেষ জীবনকে ভালো করো, শেষ আমলকে ভালো করো, তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের দিনটিকে আমার সেরা দিনে পরিণত করো।২
হযরত আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি ওয়া আযাবিল কাবরি।

অর্থঃ হে আল্লাহ, কুফর, দারিদ্রতা ও কবরের আজাব থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই।
হযরত ফাযালা বিন উবায়দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- নামায শেষে তোমরা প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করো, এরপর গুণকীর্তন করো, নবির উপর দরুদ পড়ো। এরপর তোমাদের যা ইচ্ছা চাও।'

ফজর নামাযের পর যিকির

নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ
দিনের বেলায় যিকিরের উত্তম সময় হল ফজরের নামাযের পর।
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামায পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে বসে যিকির করে, এরপর দুই রাকাত নামায পড়ে, সে পূর্ণ এক হজ্ব ও উমরার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
হযরত আবু জর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের পর কারো সাথে কথা বলার পূর্বে নিজের জায়গায় বসে নিম্নোক্ত দুআ দশবার পড়বে তার জন্য দশটি নেকি লেখা হবে, দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সে সারাদিন সকল অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকবে। শয়তান থেকে নিরাপদে থাকবে। ঐ দিন শিরিক ছাড়া অন্য কেনো গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হবে না। দুআটি নিম্নরূপ-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِ وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.

উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওয়া ইয়ুমিতু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি জীবন-মরণ দান করেন। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।

মাগরিবের নামাযের পরে এই দুআটি সাতবার পড়বে

নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ
হযরত মুসলিম বিন হারিস তামিমি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চুপিসারে বলেছেন- তুমি মাগরিবের নামাযের পরে এই দুআটি সাতবার পড়বে। যদি ঐ রাতে তোমার মৃত্যু হয় তাহলে এই দুআর উসিলায় তোমার জন্য নিরাপত্তা থাকবে। ফজরের নামাযের পরও এই দুআ পড়বে। যদি ঐ দিন তোমার মৃত্যু হয় তাহলে এই দুআর উসিলায় তোমার জন্য নিরাপত্তা থাকবে। দুআটি হল-

اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।'
হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُّتَقَبَّلًا.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ, ওয়া রিযকান তায়্যিবা, ওয়া আমালাম মুতাকাব্বালা।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করছি- উপকারী ইলম, মাকবুল আমল ও পবিত্র রিযিক।'
হযরত সুহাইব রা. থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর তার ঠোঁট নাড়াতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কী বলেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এ দুআ পড়ি-

اللَّهُمَّ بِكَ أُحَاوِلُ ، وَبِكَ أُصَاوِلُ ، وَبِكَ أُقَاتِلُ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিকা উহাবিলু ওয়াবিকা উসাবিলু, ওয়াবিকা উকাতিলু।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনার নামেই শত্রুর মোকাবেলা করি, আপনার নামেই দুশমনের উপর ঝাপিয়ে পড়ি এবং আপনার নামেই লড়াই করি।

এ বিষয়ে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। সামনে 'দিনের শুরুতে দুআ' নামক অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আবু মুহাম্মাদ রহ. তার "শরহুস সুন্নাহ" কিতাবে উল্লেখ করেছেন- আলকামা রহ. বলেন, আমরা একথা শুনেছি, ফজরের পর কোনো আলেম ঘুমালে জমিন আল্লাহর কাছে আর্তনাদ করে।

আশা করি আপনাদের নামায শেষ করার পর যিকির ও দুআ এবং ফজর নামাযের পর যিকির এ সম্পর্কে জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত এবং আপনাদের অনেক উপকার হবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম মত ফলো করুন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন